ছেলেবেলায় ছড়া শুনেছি-
খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো
বর্গী এল দেশে,
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে
খাজনা দেব কীসে?
আশৈশব মাথার ভিতরে ঘুরেছে ছড়ার কথাগুলি। ছড়ার কথায়, শব্দের অর্ন্তগত ধ্বনিগত দুলুনিতে কেমন এক ধরনের মনোরম বিষন্নতা লুকিয়ে আছে; যে মনোরম বিষন্নতা, যাকে আমি বলি, sublime sadness, বাংলা কাব্যের একটি অনিবার্য বৈশিষ্ট্য। যেমনটা আল মাহমুদ লিখেছেন
স্মরণে যার বুকে আমার জলবিছুটি
আমার ঘরে রাখল না সে চরণ দুটি। (যার স্মরণে, সোনালি কাবিন)
এ মনোরম বিষন্নতা ছাড়া আর কি। যা হোক। জ্ঞানবুদ্ধি হওয়ার পর বিষন্ন মনোরম ছড়ার সূত্র ধরে কৌতূহলী হলাম বর্গীদের নিয়ে। কারা ছিল বর্গী? বুলবুলিতে ধান খেয়েছে বুঝলাম, কিন্তু, কেনই-বা বর্গী নামে অদ্ভূত জন্তু বা জাতিকে খাজনা দেওয়ার কথা আসছে? ইতিহাসের পৃষ্ঠা উল্টিয়ে জানতে পারলাম, বর্গীরা আসলে মারাঠা জাতি এবং তারা কথা বলে মারাঠী ভাষায় । মারাঠী ভাষায় খাজনা শব্দটিকে বলা হয়: ‘চৌথ’। ক্রমশ আরও জানতে পারলাম লতা মুঙ্গেশকর মারাঠী। ঐ কিন্নরকন্ঠী গায়িকার পূর্বপুরুষগন বাংলায় চৌথ নিতে আসত? বা ঐ কিন্নরকন্ঠী গায়িকার পূর্বপুরুষকে চৌথ দিতে হত? রিয়েলি ইন্টারেষ্টিং! কাজেই মারাঠাদের সম্বন্ধে আরও কৌতূহলী হয়ে ওঠাই স্বাভাবিক।
ভারতবর্ষের মানচিত্র, সবুজ চিহ্নিত অংশ মহারাষ্ট্র
প্রথমেই বলে রাখছি মারাঠারা প্রধানত ভারতের মহারাষ্ট্রের অধিবাসী হলেও তারা ভারতবর্ষের গোয়া গুজরাট কর্নাটক অন্ধ্রপ্রদেশ তামিলনাড়– ও মধ্য প্রদেশেও বাস করে। সনাতন ধর্মের অনুসারী মারাঠারা মুগল আমলে ছিল ক্ষত্রিয় যোদ্ধা।
ছত্রপতি শিবাজী। মারাঠাদের অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন ছত্রপতি শিবাজী (১৯
ফেব্রুয়ারি, ১৬২৭-এপ্রিল ৩, ১৬৮০); তিনিই ১৬৭৪ সালে মহারাষ্ট্রের মারাঠী সাম্রাজ্যটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । মারাঠী সাম্রাজ্য রাজধানী ছিল মহারাষ্ট্রের রাইগাড। ১৮১৮ অবধি মারাঠী সাম্রাজ্যটি টিকে ছিল। পতনের কারণ? ভারতবর্ষে নতুন শক্তির আগ্রাসন।
ইনি মুগল সম্রাট আওরঙ্গজেব (নভেম্বর ৪, ১৬১৮-মার্চ ৩, ১৭০৭) সম্রাটের দক্ষিণ ভারতের সামরিক অভিযানের সময় মারাঠা সাম্রাজ্যটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে, যার ফলে মারাঠারা মুগল শাসনের প্রতি বিক্ষুব্দ হয়ে উঠতে থাকে। আমি আগেই একবার বলেছি যে, মুগল আমলে মারাঠারা ছিল হিন্দু ক্ষত্রিয় যোদ্ধা। সম্রাটদের মাথা গরম করলে চলবে কেন- সম্রাট আওরঙ্গজেব মনসব পদ দিয়ে মারাঠা সৈন্যদের মুগল সেনাবাহিনীতে অর্ন্তভূক্ত করে মারাঠাদের রোষ প্রশমিত করার চেষ্টা করেন। লাভ হয়নি।
অস্টাদশ শতকের ভারতবর্ষ
কিছু কিছু মারাঠা সেনাপতি যদিও সম্রাট আওরঙ্গজেব-এর অনুগত থাকলেও (ধরা যাক সমকালীন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই-এর মতন) বেশির ভাগ মারাঠা সৈন্যই রোষবশত ভারতবর্ষে মুগল শাসিত প্রদেশগুলিতে লুঠপাঠ আরম্ভ করে। রোষের শিকার মুগল শাসিত প্রদেশগুলিতে সুবা বাংলা ছিল অন্যতম। মারাঠা সেনাবাহিনীর সাধারণ সৈন্যরা বরগির নামে পরিচিত ছিল। মারাঠা নেতা ছত্রপতি শিভাজী মারাঠী প্রশাসন কর্তৃক এদের ঘোড়া ও অস্ত্র সরবরাহ করা হত। এই ‘বরগির’ শব্দ থেকেই বর্গী; এবং বাংলায় মারাঠা আক্রমনকারীরাই বর্গী নামে পরিচিত।
অস্টাদশ শতকের বাংলা
বাংলা মুগলশাসিত প্রদেশ বলেই ১৭৪২ থেকে ১৭৫১ সাল পর্যন্ত বার বার বাংলায় বর্গীদের আক্রমন সংঘটিত হতে থাকে। নওয়াব আলীবর্দী খান ১৭৪০ সালে বাংলার নওয়াব নিযুক্ত হন। ১৭৪২ সালের ১৫ এপ্রিল বর্গীরা বর্ধমান (বর্তমান পশ্চিম বাংলা) আক্রমন করে। জরুরি সংবাদ পেয়ে নওয়াব আলীবর্দী খান সসৈন্য বর্ধমানের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। বর্গীদের নেতা ছিল ভাস্কর পন্ডিত, তার নির্দেশে বর্গীরা নওয়াব-এর রসদ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ২৬ এপ্রিল বর্গী বেষ্টনী ছিন্ন করে কোনওমতে প্রাণে বাঁচেন নওয়াব ।
মুর্শিদাবাদের মানচিত্র । বর্গী আক্রমনকালে বাংলার রাজধানী ছিল মুর্শিদাবাদ। মুর্শিদাবাদ-এর অবস্থান ছিল কলকাতার ৩৪৭ কিলোমিটার উত্তরে এখনকার পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলায় । মুগল প্রাদেশিক শাসনের দুটি প্রধান শাখা ছিল নিজামত ও দীউয়ানি: নিজামত সাধারণ প্রশাসন এবং দীউয়ানি রাজস্ব প্রশাসন। বাংলার দীউয়ান মুর্শিদকুলী খান ১৭০৪ সালে দীউয়ানি প্রশাসনের কেন্দ্র ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে স্থানান্তর করেন।
মুর্শিদাবাদের নওয়াব-এর প্রাসাদ। ঢাকার আহসান মঞ্জিলের সঙ্গে মিল থাকা স্বাভাবিক। ঢাকার অবস্থান যেমন ছিল বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে, মুর্শিদাবাদ নগরটি ছিল ভাগীরথী নদীর তীরে। নাঃ, ভাগীরথী কোনও নতুন নদী নয়, গঙ্গার আরেক নামই ভাগীরথী।
৬ মে, ১৭৪২। মুর্শিদাবাদের দ্বারপ্রান্তে সশস্ত্র বর্গীরা এসে উপনীত হল। নওয়াব আলীবর্দী খান সে সময় মুর্শিদাবাদে ছিলেন না। নির্মম বর্গীরা মুর্শিদাবাদ নগরের বড় একটি বাজার পুড়িয়ে দেয়। এবং এভাবে বর্গীদের নির্বিকার ধ্বংসযজ্ঞ বাংলার মানসে চিরতরে প্রোথিত হতে থাকে: যে রুদ্ধশ্বাস অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছিল মনোরম বিষন্ন একটি ছড়ার আকারে ...
খোকা ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো
বর্গী এল দেশে,
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে
খাজনা দেব কীসে?
মুর্শিদাবাদ নগরে বাস করত জগৎ শেঠ নামে এক ধনী সওদাগর । বর্গীরা তার কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা আদায় করে নেয়। পরের দিনই, অর্থাৎ ৭ মে নওয়াব আলীবর্দী খান মুর্শিদাবাদ উপস্থিত হন। ততক্ষণে মুর্শিদাবাদের অনেকটা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খার করে বর্গীরা পালিয়ে গেছে আরও দক্ষিণে।
পশ্চিমবাংলার হুগলি ও বর্ধমান।
হুগলি জায়গাটি মুর্শিদাবাদের দক্ষিণে। ১৭৪২ সালের জুলাই মাসে, অর্থাৎ মুর্শিদাবাদ আক্রমনের ২ মাস পর হুগলি জেলায় বর্গীরা একটি সৈন্য শিবির স্থাপন করে এবং খাজনা আদায় করতে লাগল।(‘বুলবুলিতে ধান খেয়েছে’-এই লাইনটি একটি বিশেষ সময়ের প্রতীক। বাঙালির রসিক মনের গূঢ়তম অভিব্যাক্তি ...) বর্গীদের অমানুষিক অত্যাচারে তাঁতিরা বীরভূম থেকে পালিয়ে যায় । আমলে বর্গীদের স্বেচ্ছাচারিতার নমুনা দেখুন! তখন আমি বলেছি যে, দীউয়ানি ছিল রাজস্ব প্রশাসন। বাংলার দীউয়ানরা ঠিকমতো খাজনা কেন্দ্রে (দিল্লিতে) পাঠাতে পারলেই তো হল, বর্গীরা রাজ্যে আর্মি ক্যাম্প বসাক না কেন!
নওয়াব আলীবর্দী খান
(আড়ং শব্দটা ফারসি। আড়ং বলতে বড় আকারের বাজারকে বোঝায়) সপ্তদশ ও অস্টাদশ শতকে বাংলার রেশমি কাপড়ের আড়ংগুলি ছিল জমজমাট। বর্গী আক্রমনে আড়ংগুলি লোকশূন্য হয়ে পড়ে, আড়ংগুলি খাঁ খাঁ করতে থাকে। বাংলার অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়তে থাকে। বাংলাজুড়ে খাদ্যশস্যের অভাব দেখা দেয়, ব্যবসা-বানিজ্য বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। যা হোক। বর্গীরা চৌথ আদায় করতে থাকে এবং পুবের যশোর জেলা অবধি বর্গীদের খাজনা আদায় ক্রমেই স¤প্রসারিত হতে থাকে। বর্গীদের নির্মম অত্যাচারে বহু লোক ভিটেমাটির মায়া ত্যাগ করে গঙ্গার পূর্বাঞ্চলে ( বর্তমান বাংলাদেশে) চলে আসে। পূর্বাঞ্চলের বাঙালিরাও বর্গী লুন্ঠনের শিকার হয়। কেন? সম্রাট আওরঙ্গজেব দক্ষিণ ভারতের সামরিক অভিযানের সময় মারাঠা রাজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে মারাঠা সৈন্যরা রোষবশত ভারতবর্ষে মুগল শাসিত প্রদেশ গুলিতে লুঠপাঠ আরম্ভ করে। সুবা বাংলা ছিল যার অন্যতম।
বাংলাপিডিয়ায় মোহাম্মদ শাহ লিখেছেন, ‘ঘন ঘন মারাঠা হামলা বাংলাকে মহাবিপর্যয়ে নিপতিত করে। বাংলার জনগনের জন্য এটা এতটাই ধ্বংস আর দুঃখ বয়ে আনে যে, মারাঠা বর্গীদের হামলার ভীতিকর গল্প বাংলার শিশুদের ঘুমপাড়ানি গানে বিশেষ স্থান অধিকার করে। এর সাথে অজন্মা ও খরা মিলে বাংলার অবস্থা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। মারাঠা হানাদাররা লুন্ঠন, অগ্নি সংযোগ ও হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে বাংলার জনগনের মনে এমনি ত্রাসের সঞ্চার করেছিল যে, বহুলোক তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে গঙ্গার পূর্বদিকের জেলাগুলিতে পালিয়ে যায়। এতে উক্ত এলাকার জনসংখ্যার চাপ বৃদ্ধি পেয়ে মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করে। মূল এই অর্থনৈতিক সংকটই পরবর্তী সময়ে বাংলার নওয়াবকে বিপর্যস্ত ও পর্যুদস্ত করে।’
বাংলা ও ভারতবর্ষ
এবার বাংলার ইতিহাসের এক বিচিত্র প্রসঙ্গে আসি। মীর জাফরের আগেও বাংলায় আরও একজন বিশ্বাসঘাতক ছিল! বিশ্বাসঘাতক সেই পাষন্ড লোকটার নাম মীর হাবিব। পারস্য সেই অভিজাতটি এক সময় নওয়াব আলীবর্দী খানের ঘনিষ্ট ছিল ; অথচ, এই লোকটিই লোকাল এজেন্ট হিসেবে বর্গীদের সাহায্য করত! আসলে মীর হাবিব ছিল রাজাকার; বাংলা সম্বন্ধে খুঁটিনাটি জ্ঞান ছিল তার। বর্গীরা সে জ্ঞান প্রয়োগ করে সহজেই বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ত!
১৭৪২ সালের মাঝামাঝি বাংলা থেকে বর্গীদের নিমূর্ল করার কঠিন সিদ্ধান্ত নেন নওয়াব আলীবর্দী । নাঃ, নওয়াবের এ সিদ্ধান্ত বাঙালিদের ভালোবেসে নয়, দিল্লির প্রাপ্য খাজনায় বর্গীরা ভাগ বসাচ্ছিল বলেই। যা হোক। ১৭৪৩ সালে বর্গীরা মেদিনীপুর আক্রমন করে। নওয়াব আলীবর্দীর নেতৃত্বে মুগল সৈন্যরা মেদিনীপুরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ৯ ফেব্রুয়ারি দুপক্ষের তুমুল সংর্ঘষ হয়। নওয়াব আলীবর্দীর উন্নততর রণকৌশলের ফলে মেদিনীপুর থেকে বর্গীরা উৎখাত হয়ে যায়। তবে লাভ হয়নি। ১৭৪৪ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে বর্গী নেতা ভাস্কর পন্ডিত আবার বাংলা আক্রমন করে বসে। নওয়াব আলীবর্দী খান বাধ্য হয়ে এবার ষড়যন্ত্রের পথ ধরেন। বর্গী নেতা ভাস্কর পন্ডিত কে বৈঠকের আহবান জানান নওয়াব । বৈঠকে ২১ জন বর্গীসহ ভাস্কর পন্ডিত এলে তাঁবুর আড়ালে লুকিয়ে থাকা মুগল সৈন্যদের আক্রমনে বর্গীরা নিহত হয়। তবে লাভ হয়নি। ১৭৫০ সালের বর্গীরা আবার বাংলায় হানা দেয়। ১৭৫১ সালে বর্গী আক্রমনের তীব্রতা এতই বেড়ে যায় যে আলীবর্দী খানকে মারাঠা-বর্গীদের হাতে উড়িষ্যা ছেড়ে দিতে হয়।
তারপর? তারপর বর্গীদের কি হল?
আর মাত্র ৬ বছর পর ইংরেজদের করতলগত হয়ে যায় বাংলা । ওদিকে মারাঠা-বর্গীরা মুগলদের পরির্বতে নতুন এই শক্তির মুখোমুখি হতে হয়- যে শক্তিটি মুগলদের চেয়ে সহস্রগুণ চতুর খল ও শক্তিশালী।
এই সময়ের ছবি। কিন্তু যেন বাংলার সমস্ত দুর্যোগের প্রতীক। সমগ্র অস্টাদশ শতক জুড়ে বাংলায় বর্গী আক্রমন অব্যাহত ছিল। সেই কালবেলায় বাংলার মানুষের দুঃখ-দুর্দশা ছিল সীমাহীন; গানপ্রিয় শান্তিবাদী বাঙালির জীবনে নেমে এসেছিল ঘোর অন্ধকার। বাংলা বরাবরই তার গান, ধান ও মান নিয়ে তার নিভৃত শ্যামল কোণটিতে দু-বেলা দু-মুঠো শাক-ভাত খেয়ে সুখেশান্তিতে এই কুহকী জীবন কাটিয়ে দিতে চেয়েছে। পশ্চিমা লুঠেরারা বারংবার নির্জনতা প্রিয় বাঙালির শান্তি কেড়ে নিয়েছে, যুদ্ধের আগুনে পুড়ে গেছে তার সোনারবরণ শষ্যক্ষেত্রটি । আমরা দেখেছি অস্টাদশ শতকের বর্গীরাই বাংলার ইতিহাসে নির্মমতম শেষ অধ্যায় নয়-পশ্চিম থেকে আগত ব্রিটিশ ও পশ্চিম পাকিস্তানি শোষন ও গনহত্যা তখনও বাকি । ইতিহাসের এই অমোঘ ধারা এই ইঙ্গিতই দেয় যে- বাঙালির নিজস্ব একটি রাষ্ট্রের বড়ই প্রয়োজন ছিল ...

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




