somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাচীন গ্রিসের সান্তোরিনি দ্বীপের অগ্নৎপাত ও ইয়ানির একটি কম্পোজিশন .....

১৪ ই মে, ২০১০ সকাল ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ থেকে ৩,৬০০ বছর আগে এজিয়ান সাগরের সান্তোরিনি দ্বীপে এক ভয়াবহ অগ্ন্যৎপাত হয়েছিল। প্রাচীন গ্রিক ইতিহাসে এই অগ্নৎপাতটি ‘থেরা ইরাপশন’ বা ‘সান্তোরিনি ইরাপশন’ নামে পরিচিত। সান্তোরিনি দ্বীপের সেই অগ্নৎপাত প্রাচীন মিনিয় সভ্যতার পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, গ্রিক উপকথাকে প্রভাবিত করে এমন কী মিশরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সৃষ্টি করে ...এই প্রলয়ঙ্করী ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার ৩,৬০০ পর ঐ অঞ্চলেরই এক কৃতি সংগীত পরিচালক ইয়ানি তাঁর এক অবিস্মরনীয় কম্পোজিশনে সান্তোরিনি দ্বীপের কথাই যেন নতুন করে বলেন...



গ্রিসের মানচিত্র । দক্ষিণে ক্রিট দ্বীপের অবস্থান; এখানেই খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চদশ শতকে গড়ে উঠেছিল বিস্ময়কর মিনোয়ান সভ্যতা। ক্রিট দ্বীপের রাজধানী ছিল নসস। মূলত মিনোয়ান সভ্যতা ছিল নসস কেন্দ্রিক এবং
নৌ-নির্ভর সভ্যতা। যা ১৪০০ খ্রিস্টপুর্বের সান্তোরিনি দ্বীপের অগ্নৎপাতের সভ্যতাটি ফলে ধ্বংস হয়ে পড়েছিল।



ইউরোপীয় শিল্পীর আঁকা মিনিয় সভ্যতার কাল্পনিক ছবি। তখন বলেছি ক্রিট দ্বীপের রাজধানী ছিল নসস। এই ছবিটি নসস এর। নসস এর মূল বৈশিষ্ট্য ছিল-পুরো নগরটিই পাহাড় কেটে তৈরি করা একটি মূল প্রাসাদেরই বিস্তার। সান্তোরিনি দ্বীপের অগ্নৎপাতের ফলে ঘন ছাইয়ের স্তূপের তলায় ঢাকা পড়েছিল ...



মিনিয় সভ্যতা। এই ছবিটিও কাল্পনিক। তবে কল্পনাবিলাশ নয়, প্রাপ্ত তথ্যের ওপরই ভিত্তি করে নির্মিত। সে কালে নসস এ ষাঁড়ের লড়াইত হত। নসস নগরে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা এমন সব পাথরের নল পেয়েছেন, সে নলগুলি দিয়ে যেমন পানি প্রবাহিত হত, তেমনি রাজকীয় কক্ষকে শীতল রাখার জন্য প্রবাহিত হত বাতাস ...



সান্তোরিনি দ্বীপের মানচিত্র । আসলে এটি দক্ষিণ এজিয়ান সমুদ্রে অবস্থিত ক্ষুদ্র অর্ধবৃত্তাকার আগ্নেয় দ্বীপপুঞ্জ ।থেরা হল সবচে বড় দ্বীপ। মাঝখানে রয়েছে বিশাল অগভীর লবণাক্ত জলের উপহ্রদ বা লেগুন। সান্তোরিনি দ্বীপটি ক্রিট দ্বীপের সত্তর মাইল উত্তরে এবং গ্রিসের মূলভূমি থেকে ১২০ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত ।



সান্তোরিনি দ্বীপের মানচিত্র ।সেন্ট আইরিনের স্মরণে সান্তোরিনি নাম দেন একজন লাতিন সম্রাট। এর আগে দ্বীপটি থেরা বা কালিসটে নামে পরিচিত ছিল। তবে মনে রাখতে হবে, এখন যেমন দেখছেন, আজ থেকে ৩,৬০০ বছর আগে দ্বীপপুঞ্জটি দেখতে এরকম ছিল না। এটি সান্তোরিনি দ্বীপের অগ্নৎপাতের পরের অবস্থা।



সান্তোরিনি দ্বীপের এখনকার ছবি। এজিয়ান সমুদ্র আসলে তো মনোরম দ্বীপের সমষ্টি। ভ্রমন পিপাসুদের ভালো লাগবে অবশ্যই।

উন্নত মিনোয়ান সভ্যতার অংশ ছিল বলেই সেই খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ সালেও সান্তোরিনি দ্বীপের জনগনের জীবনযাত্রা ছিল উন্নত। বন্দরে জাহাজ, প্রান্তরে যব ক্ষেত, উদ্যান, দ্রাক্ষাকুঞ্জ। সুপ্রশস্ত সড়ক, দু’পাশে দ্বিতল ভবন, বহুতল অট্টালিকা, স্নানাগার, পয়নিস্কাশন প্রনালী। এমন কী নসস এর মতো বায়ূ নিষ্কাশন প্রনালী প্রত্নতত্ত্ববিদদের বিস্মিত করেছে।



সান্তোরিনি দ্বীপের ধ্বংসাবশেষ



সান্তোরিনি দ্বীপের নগর নকশা। এ জায়গাটা সান্তোরিনি দ্বীপের আকরোটিরি। এখানকার পরিকল্পিত নগর গবেষকদের অবাক করেছে। কারও কারও মতে সান্তোরিনি দ্বীপই ছিল প্লেটোকথিত আটলানটিস এবং এই বিষয়ে আমিও দ্বিমত পোষন করব না। কেননা, এতে করে আটলানটিস নিয়ে যুক্তিহীন রহস্যের ধোঁওয়া ছড়ায় না এবং আমরা আটলানটিস এর একটা বাস্তব ভিত্তি পেয়ে যাই। সান্তোরিনি দ্বীপের নগর নকশাটি আবার দেখুন।

এই সান্তোরিনি দ্বীপই ১৪০০ খ্রিষ্টপূর্বে এক ভয়াবহ অগ্নৎপাতের ফলে ধ্বংসহয়ে যায়। অগ্নৎপাতের ফলে সান্তোরিনিসহ আশেপাশের অঞ্চল ১০০ ফুট ছাইয়ের নিচে তলিয়ে যায়। কেবল থেরা দ্বীপটি কোনওমতে টিকে থাকে। পরবর্তীকালে গবেষকরা দীর্ঘদিন এই থেরা দ্বীপেই প্রাচীন অগ্নৎপাত নিয়ে গবেষনা করেন। ১৪০০ খ্রিষ্টপূর্বের সেই অগ্নৎপাতের ফলে মিশরে প্রবল ঝড়বৃষ্টি হয় ও মিশর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে।



সান্তোরিনি দ্বীপের ধ্বংসাবশেষ

আগেই বলেছি মিনিয় সভ্যতার কেন্দ্র ক্রিটদ্বীপেও ভয়াবহ ক্ষতি হয়। দুর্যোগ সত্ত্বেও যারা বেঁচে ছিল তারা মিশর কিংবা গ্রিসে পৌঁছতে সক্ষম হয়। গ্রিসের প্রথম সভ্যতা মিনোয়ান তথা ইজিয়ান সভ্যতা। পরে আমরা গ্রিসের মূলভূমিতে Mycenaean civilization এর উদ্ভব দেখি তা ঐ বেঁচে যাওয়া গ্রিকদের কৃতিত্ব বলে অনেকেরই ধারণা।
১৪০০খ্রিষ্টপূর্বে সংঘটিত সান্তোরিনি দ্বীপের সেই ভয়াবহ অগ্নৎপাতের ৩,৬০০ পর গ্রিক সংগীত পরিচালক ইয়ানি ‘সান্তোরিনি’ নামে একটি কম্পোজিশন করেন। ১৯৯৩ সালে ২৫ সেপ্টেম্বর ‘লাইভ অ্যাট অ্যাক্রপোলিস’ কনসার্টের মাধ্যমে ইয়ানি বিশ্ববাসীর সামনে নিজেকে উপস্থাপিত করেন। ‘লাইভ অ্যাট অ্যাক্রপোলিস’ কনসার্টের প্রথম কম্পোজিশনটিই ছিল ৬মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের ‘সান্তোরিনি’। বিশ্ববাসী সে কনসার্ট মনেপ্রাণে গ্রহন করেছিল। ৬৫ টি দেশের ৫০০ মিলিয়ন দর্শক দেখেছিল। ‘লাইভ অ্যাট অ্যাক্রপোলিস’ এর মিউজিক ভিডিওটি একটানা ২২৯ সপ্তাহে বিলবোর্ড চার্টের টপ পজিশনে ছিল! অ্যালবাম বিক্রি হয়েছিল ৭ মিলিয়ন ।



ইয়ানি । বর্তমান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুরকারদের একজন। জন্ম গ্রিসের কালামাতায় ১৪ নভেম্বর, ১৯৫৪। ছেলেবেলা থেকেই আর দশ জনের মতো পিয়ানো বাজাতেন। অল্প বয়েসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। মনোবিজ্ঞানে স্নাতক। সংগীতে প্রাতিষ্টানিক শিক্ষা নেই। তারপরও তাঁর কম্পোজিশনগুলি বিশ্বজুড়ে তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

ইয়ানির ‘সান্তোরিনি’ কম্পোজিশনে সেই চিরকালীন সুরটিই ফুটে উঠেছে।মিনিয়ান সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যায়, তবে গ্রিক সভ্যতা টিকে থাকে এবং Mycenaean civilization এর মাধ্যমে। এই মিকেনাই গ্রিকরাই ট্রয় যুদ্ধ করে মানবসভ্যতায় আরেক বিস্ময়কর অধ্যায়ের সংযাজন করেছিল। সভ্যতার এই যে অলীক বিস্তার, এই যে আশাবাদী দিক- ইয়ানির ‘সান্তোরিনি’ কম্পোজিশনে তাই ফুটে উঠেছে অত্যন্ত সার্থকভাবে।



অ্যাক্রোপোলিস। মানে উচুঁ নগরী। গ্রিসের এথেন্স শহরেই এর অবস্থান। এর শীর্ষে গ্রিক উপাসনালয় বা প্যানথিওন অবস্থিত। ভাবলে রীতিমতো অবাকই হতে হয় সংগীতের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর সামনে সান্তোরিনিকে তুলে ধরার জন্য ইয়ানি এই ঐতিহাসিক স্থানটিই বেছে নিয়েছিলেন।



সান্তোরিনি ; ইউটিউব ভিডিও


‘সান্তোরিনি’ এমপি থ্রি ডাউনলোড লিঙ্ক

http://www.mediafire.com/?hfzj1zrmdlg



ইয়ানি। শিল্পীরা এভাবেই অতীত ও ভবিষ্যতের মেলবন্ধন ঘটিয়ে সভ্যতার শিরাউপশিরায় রক্তসঞ্চালন করে মানুষের বেঁচে থাকার পরিবেশটিকে সুস্থ্য রাখেন।

ছবি ও তথ্যের উৎস: ইন্টারনেটে প্রাপ্ত বিভিন্ন ওয়েভসাইট।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১০ দুপুর ১:৪৯
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×