নারাম-সিন: সুপ্রাচীন আক্কাদিয় সভ্যতার ঈশ্বর-রাজা
প্রাচীন আক্কাদিয় সম্রাট নারাম-সিন। প্রাচীন আক্কাদিয় সভ্যতাটি গড়ে উঠেছিল মেসোপটেমিয়ায়। খ্রিস্টপূর্ব অষ্টাদশ শতকে ব্যবিলনিয় সভ্যতার উত্থানের পূর্বে মেসোপটেমিয়ায় প্রাচীন আক্কাদিয় সভ্যতাটি সমুজ্জ্বল হয়ে ছিল; যে সভ্যতার কেন্দ্রস্থল ছিল বর্তমান ইরাকের বাগদাদ শহরের নিকটে, যে সভ্যতাটির সঙ্গে প্রাচীন ভারতের সিন্ধুসভ্যতার ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল, যে সভ্যতার স্থপতি ছিলেন ইতিহাসখ্যাত সম্রাট সারগন দি গ্রেট। তাঁর পৌত্র নারাম-সিন (খ্রিস্টপূর্ব ২২৫৪-১৮) ছিলেন প্রাচীন বিশ্বের অন্যতম বীরযোদ্ধা, যিনি সাহসিকতা ও সামরিক কৌশলের সমন্বয় ঘটিয়ে আক্কাদিয় সাম্রাজ্যকে সুনিশ্চিত ধ্বংসে হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। নারাম-সিন শব্দটির আভিধানিক অর্থ: চন্দ্রদেবতার আর্শীবাদ। জীবৎকালে ঈশ্বরের সম্মান লাভ করেছিলেন নারাম-সিন ।
মেসোপটেমিয়ার মানচিত্র। মেসোপটেমিয়ায় অনেক সভ্যতার উত্থান পতন ঘটেছে। তার মধ্যে আক্কাদিয় সভ্যতা অন্যতম। সুমেরিয় সভ্যতা আক্কাদিয় সভ্যতার সময়সাময়িক। সুমেরিয় সভ্যতা বিকাশ লাভ করেছিল মেসোপটেমিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে; অপরদিকে আক্কাদিয় সভ্যতা বিকাশ লাভ করেছিল মেসোপটেমিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে।
আক্কাদিয় সভ্যতার উত্থান ঘটেছিল ২৩৫০ খ্রিস্টপূর্বে। সভ্যতাটির কেন্দ্রে ছিল আক্কাদ নগর । যে নগরটির অবস্থান ছিল ইউফ্রেতিস নদীর তীরে এবং সিপপার ও কিশ নগরের মাঝখানে। সিপপার ও কিশ - এই
নগর দুটি ছিল প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার অর্ন্তগত দুটি সমৃদ্ধশালী নগর। ঐ অঞ্চলের ভাষার নামও আক্কাদিয়, যা সেমেটিক ভাষাগোষ্ঠীর অর্ন্তগত।
আক্কাদ নগর (এ কালের শিল্পীর কল্পনায়)
আগেই একবার বলেছি, আক্কাদিয় সভ্যতার বিকাশে মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন সারগন দ্য গ্রেট। তাঁর জীবন ছিল উপকথার মতন। সারগানে মা ছিলেন এক জন সম্ভ্রান্ত নারীপুরোহিত এবং বাবা ছিলেন দরিদ্র উদ্যানপালক। ভূমিষ্ট হওয়ার পর কলঙ্ক এড়াতে নবজাতক সারগনকে ঝুড়িতে রেখে ইউফ্রেতিস নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল । যা হোক, দেবী ইশতার এর কৃপায় সারগন তৎকালীন রাজার আনুকূল্য লাভ করেছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব ২৩৩০ অব্দে সারগন Agade নগর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই নগরের নাম থেকেই আক্কাদ নামটি উদ্ভূত হয়েছে। প্রায় শতাব্দীকালব্যাপী আক্কাদসভ্যতা পরিনত হয়েছিল প্রাচীন বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতায়। সারগন অনেক নতুন পদ্ধতি প্রচলন করেছিলেন। যেমন, তাঁর আগে রাজা নির্বাচিত করতেন নগরের অভিজাতরা। সারগন রাজার ছেলের রাজা হওয়ার পদ্ধতি প্রচলন ঘটান।
আক্কাদিয় সভ্যতার মানচিত্র।
সারগন দ্য গ্রেট -এর যমজ পুত্র ছিল। এদের নাম যথাক্রমে - মানিশতুসু এবং রিমুশ । সারগন এর মৃত্যুর পর তার কনিষ্ট পুত্র রিমুশ আক্কাদের সিংহাসনে বসেন। (জ্যেষ্ট পুত্রের বদলে কনিষ্ট পুত্রের সিংহাসন লাভের পিছনে কী কারণ ছিল-সেটি জানতে পারিনি ) ...যা হোক। সারগনের মৃত্যুর পর আক্কাদিয় সাম্রাজ্যে ভয়ানক অরাজকতা দেখা দিয়েছিল। সম্রাট রিমুশ অত্যন্ত নিষ্ঠুর উপায়ে বিদ্রোহ দমন করে সাম্রাজ্যে শান্তি শৃখলা ফিরিয়ে আনেন। অবশ্য পরবর্তীতে তিনি এক প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে নিহত হন। তার ভাই মানিশতুসু আক্কাদের সম্রাট হন। তার সময়কালেও রাজ্যে ব্যাপক বিদ্রোহ দেখা দেয় এবং পরিনতিতে সম্রাট মানিশতুসু নিহত হন।
আক্কাদিয় সভ্যতার মানচিত্র।
যা হোক এক অরাজক পরিস্থিতিতে নারাম-সিন আক্কাদ এর ক্ষমতা লাভ করেন। নারাম-সিন ছিলেন বীরযোদ্ধা। তিনি বিদ্রোহ দমন করে আক্কাদ সাম্রাজ্যের সীমানা বৃদ্ধি করেন । সসৈন্য সামরিক অভিযান পরিচালনা করে বর্তমান সিরিয়া এবং লেবাননের সিডার পাহাড় জয় করেন । আনাতোলিয়ার (বর্তমান তুরস্ক) রূপা উৎপাদন হত। লেবাননের উত্তরে ছিল প্রাচীন বিশ্বের বানিজ্যপথ। নারাম-সিন এর বিজয় অভিযানের ফলে আনাতোলিয়ার নগরগুলিতে আক্কাদিয় বসতি গড়ে ওঠে এবং আক্কাদিয়রা আনাতোলিয়ায় রূপার একচেটিয়া বাণিজ্য সুবিধা লাভ করে। তখন একবার বলেছি: জীবৎকালে ঈশ্বরের সম্মান লাভ করেছিলেন নারাম-সিন । এর পিছনে অর্থনৈতিক কারণ নিহিত ছিল। যা হোক। তিনি টরাস (বর্তমান দক্ষিণ তুরস্ক) পাহাড়ে ট্রাইবাল বিদ্রোহও দমন করেন। নারাম-সিন দক্ষিণের ইলম রাজ্য থেকে পারস্য উপসাগর অবধি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেন। জারগোস (বর্তমান ইরান) অঞ্চলে গর্ভনর নিযুক্ত করেন। মাগান রাজ্যে (বর্তমান ওমান) বিদ্রোহ দেখা দিয়েছিল। নারাম-সিন স্বয়ং অভিযান পরিচালনা করে বিদ্রোহ দমন করেন।
পশ্চিম ইরানের দারবারড-ই-গাউর-এ বিজয় স্মারক । এটি রয়েছে ফ্রান্সের লুভর যাদুঘরে।
শক্তিশালী লাললুবি ট্রাইবটির বাসস্থান ছিল বর্তমান ইরানে। নারাম-সিন এর সবচে বড় বিজয় অর্জিত হয়েছিল লাললুবি গোত্রের বিরুদ্ধে। পশ্চিম ইরানের দারবারড-ই-গাউরে এই উপলক্ষে একটি বিজয়ের স্মারক নির্মাণ করা হয়েছিল। এক হাতে ধনুক অন্য হাতে তীর, নারাম-সিন পাহাড় বেয়ে উঠছেন, চারিদিকে শক্রপক্ষে শব। পিছনে আক্কাদিয় সৈন্যের দল। শিরস্ত্রাণ পরা নারাম-সিন এর দেহটি অন্যদের চেয়ে বড় । শিরস্ত্রাণ হল স্বর্গীয় প্রতীক। ওপরে আকাশ। যেখানে ঈশ্বরসদৃশ দুটি নক্ষত্র ঝলমল করছে, এর মানে নারাম-সিন কেবল স্বর্গের নয়, মত্যের শাসকও বটে। নারাম-সিন নিজেকে মহাবিশ্বের রাজা বলে দাবি করেছিলেন। এ নিবন্ধের প্রারম্ভে বলেছি- নারাম -সিন শব্দের অর্থ: চন্দ্রদেবতার আর্শীবাদ।
ইরাকে প্রাপ্ত নারাম-সিন এর শিলালিপি
নারাম-সিন এর শাসনকালে আক্কাদিয় সাম্রাজ্যে সমৃদ্ধ বৃদ্ধি পেয়েছিল । এর অন্যতম কারণ বিজিত রাজ্যগুলি থেকে অব্যাহত ভাবে অর্থসম্পদের সরবরাহ। তাঁর আমলে কূটনৈতিক সম্পর্কেরও অগ্রগতি হয়েছিল। নারাম-সিন সিরিয়ার রাজার সঙ্গে কন্যার বিবাহ দিয়েছিলেন। তা ছাড়া, প্রশাসন গতিশীলতা এসেছিল, পরিমাপ পদ্ধতি নির্ধারন করে দিয়েছিলেন, ফলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ অর্জিত হয়েছিল, যা ছিল আক্কাদিয় সভ্যতার ভিত্তি । তাঁর শাসনামলে নারী গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়েছিল। যেমন, গুরুত্বপূর্ণ নগরসমূহে নারীকে পুরোহিতের পদ দেওয়া হয়েছিল । ৫৬ বছর শাসন করেছিলেন নারাম-সিন। তাঁর জীবদ্দশায় আক্কাদিয় সাম্রাজ্যটি পশ্চিমে ভূমধ্যসাগরের লেবানন থেকে উত্তরে তুরস্ক এবং দক্ষিণে পারস্য উপসাগর অবধি বিস্তার লাভ করেছিল।
আক্কাদিয় সভ্যতার মানচিত্র।
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা
আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন
মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো
চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন
One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes
শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন
চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?
চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাঁচতে হয় নিজের কাছে!
চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু। লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন