somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাচীন মিশরের স্বর্ণাভ পদ্মের উপাখ্যান

১২ ই জুন, ২০১১ দুপুর ২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একদিন ফারাও সেনেফেরু রাজপ্রাসাদের মনোরম উদ্যানে ভ্রমন করিতেছিলেন। তিনি অত্যন্ত বিষন্ন বোধ করিতেছিলেন। তাহার কোনও কিছুই ভালো লাগিতে ছিল না। তিনি হৃদয়ের ভার লাঘব করিবার উপায় ভাবিতেছিলেন । সহসা তাহার জাদুকর যাযামানখ- এর কথা স্মরণ হইল। জাদুকর যাযামানখ ঐন্দ্রজালিক শক্তির অধিকারী। সে আশ্চর্য সব যাদুকরী ঘটনা ঘটাইতে পারে । সে কি আমার মনের ভার লাঘব করিতে পারিবে না? এই ভাবিয়া নিকটে দন্ডায়মান দাসকে ফারাও সেনেফেরু নির্দেশ দিলেন, যাঃ, যাদুকর যাযামানখ কে অতি সত্ত্বর ডাকিয়া লইয়া আয়।
দাসগন জাদুকর যাযামানখ-এর গৃহে ছুটিল।
হন্তদন্ত হইয়া কালো আলখাল্লা পরিহিত জাদুকর যাযামানখ আসিল।
আসিয়া নতজানু হইয়া বলিল, জীবন স্বাস্থ্য এবং শক্তি আপনার হউক।
ফারাও সেনেফেরু গম্ভীর কন্ঠে বলিলেন, সম্প্রতি আমি বড় নিরানন্দ বোধ করিতেছি হে জাদুকর। আমাকে আমোদিত করিবার ব্যবস্থা গ্রহন করুন।
জাদুকর যাযামানখ কী যে ভাবিল। তাহার পর বলিল, আমার স্থির বিশ্বাস আপনি নৌবিহার করিলে আপনার মনের ভার লাঘব হইয়া যাইবে ।
নৌবিহার?
হাঁ। নৌবিহার। তবে আমার পরামর্শ গ্রহন করিলে নৌবিহার অত্যন্ত আকর্ষণীয় হইয়া উঠিবে।
ফারাও নৌবিহারে আগ্রহী হইলেন না । বলিলেন, আমার প্রবল জলভীতি আছে।
জাদুকর যাযামানখ তখন বলিল, হে জগতের অধীশ্বর। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন । আমার নির্দেশত নৌবিহার অত্যন্ত আনন্দদায়ক ও ফলপ্রসূ হইবে। কেননা, রূপসী কুমারীগন নৌকার দাঁড় টানিবে । এই সব রূপসী কুমারীগন রাজকীয় নন্দিনীর অঙ্গন বাস করে । তাহারা প্রত্যেকেই অতীব সুন্দরী । আপনি তাহাদের দাঁড় টানিতে দেখিয়া মুগ্ধ হইয়া যাইবেন। ইহা ছাড়া হ্রদের উপরে উড্ডয়নশীল পাখি দেখিয়া, হ্রদের তীরের ফসলের মাঠ দেখিয়া এবং সবুজ ঘাস দেখিয়াও আপনি মুগ্ধ হইবে । ইহাতে আপনার মনের নিরানন্দ ভাব কাটিয়া যাইবে।
সেনেফেরু বলিলেন, হুমম। যাহা শুনিলাম তাহাতে নৌবিহার বেশ বৈচিত্রপূর্ণ হইবে বলিয়াই আমার মনে হইতেছে। আমি নৌবিহারের সমস্ত দায়িত্ব আপনাকে দিতেছি।
নৌভ্রমনের দায়িত্বপ্রাপ্ত হইয়া জাদুকর যাযামানখ আবলুস কাষ্ঠের স্বর্ণ খোচিত কুড়িটি দাঁড় নির্মান করিলেন । আর দাঁড় টানিতে সক্ষম এমন কুড়িটি সুন্দরী কুমারী রাজকীয় নন্দিনীর অঙ্গন হইতে নির্বাচিত করিলেন। প্রত্যেক কুমারীই দেখিতে লাবণ্যময়ী এবং তন্বী। তাহাদের পরনে সোনলী সুতার জাল এবং স্বর্ণের অলঙ্কার । চুলে ফিতা দিয়া বাধা স্বর্ণের পদ্মফুল।
দেখিতে দেখিতে নৌবিহারের সকল আয়োজন সমাপ্ত হইল।
ফারাও সেনেফেরু রাজকীয় নৌকায় রেশমী আসনে বসিলেন।
রাজকীয় নৌকা হ্রদের জলে ভাসিল।
কুমারী দাঁড়িগন হ্রদের উজ্জ্বল জলে স্বর্ণ খোচিত আবলুস কাষ্ঠের দাঁড় টানিতে লাগিল এবং গান গাহিতে লাগিল:

মেয়েটি দাঁড়িয়ে ওপারে
আমাদের মাঝে নীল নদের জল;
নীলাভ ওই গভীর জলের মাঝে
ভাসছে এক কুমীর ভয়ানক !

ফারাও সেই মনোরম দৃশ্য দেখিয়া এবং সংগীত শ্রবণ করিয়া তৃপ্ত হইলেন।
সহসা একটি দাঁড় একটি কুমারীর চুল স্পর্শ করিল। তাহাতে চুলে ফিতা দিয়া বাধা স্বর্ণের পদ্মফুলটি হ্রদের জলে পড়িয়া ডুবিয়া গেল।
কুমারীটি গান গাওয়া বন্ধ করিয়া দাঁড় টানা বন্ধ করিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে জলের দিকে ঝুঁকিয়া অশ্রু ফেলিতে লাগিল । ইহাতে অন্যান্য কুমারী দাঁড়িরা দাঁড় টানা বন্ধ করিয়া দিল।
দাঁড় টানা বন্ধ হইল কেন?
ফারাও সেনেফেরু অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হইয়া উঠিলেন।
রূপসী দাঁড়িগন তখন সমস্বরে বলিল, আমাদের ছোট্ট কুমারী দাঁড় টানিতেছে না।
কেন? কেন সে দাঁড় টানিতেছে না?
ছোট্ট কুমারী তখন বলিল, জীবন, স্বাস্থ্য এবং শক্তি আপনার হউক। দাঁড়ের আঘাতে আমার চুলের স্বর্ণের পদ্মফুলটি হ্রদের জলে পড়িয়া ডুবিয়া গিয়াছে।
ফারাও বলিলেন, তুমি দাঁড় টান। আমি তোমাকে আরেকটি স্বর্ণের পদ্মফুল দিব।
না, আমি তাহাই চাই যা আমার নিকট ছিল। আমি অন্য স্বর্ণের পদ্মফুল চাই না। বলিয়া ছোট্ট কুমারী কাঁদিতে লাগিল।
ফারাও সেনেফেরু বিচলিত হইয়া উঠিলেন। বলিলেন, কে হ্রদের গভীর হইতে স্বর্ণের পদ্মফুলটি তুলিয়া আনিতে পারিবে?
প্রত্যেকে নিরুত্তর রহিল।
সেনেফেরু তখন জাদুকর যাযামানখ-এর কথা স্মরণ হইল।
তিনি তাহার কাছে দাস পাঠাইলেন।
জাদুকর যাযামানখ আসিল।
ফারাও সেনেফেরু বলিলেন, জাদুকর যাযামানখ, আমি নৌবিহারে অত্যন্ত আনন্দিত হইয়াছি ঠিকই কিন্তু একটি স্বর্ণের পদ্মফুল হ্রদের জলে পড়িয়া যাওয়াতে বিঘ্ন ঘটিয়াছে । আপনি অতি সত্ত্বর তাহা তুলিয়া আনিবার ব্যবস্থা করুন।
জাদুকর যাযামানখ কুর্নিশ করিয়া বলিল, আপনার আদেশ শিরোধার্য। আমি কাল বিলম্ব না করিয়া স্বণার্ভ পদ্মখানি তুলিবার ব্যবস্থা করিতেছি।
এই বলিয়া জাদুকর যাযামানখ নৌকার সম্মূখভাগে দাঁড়াইল। দাঁড়াইয়া কী সমস্ত ঐন্দ্রজালিক মন্ত্র উচ্চারণ করিল। তাহার পর জলের উপর তাহার যাদুদন্ডটি ঘুরাইল। তাহাতে হ্রদের জল দুই ভাগ হইয়া গেল। যেনবা কেহ সুতীক্ষ্ম তরবারী দ্বারা হ্রদখানি দুই খন্ড করিয়াছে। হ্রদের দুই ধারে জলের সুউচ্চ খাঁড়ি সৃষ্টি হইয়া শুস্ক জমিনের সৃষ্টি করিল। রাজকীয় নৌকাখানি ধীরে ধীরে সেই শুস্ক অতলে নামিয়া আসিয়া যেইখানে স্বণার্ভ পদ্মখানি পড়িয়া ছিল, সেইখানে থামিল।
কুমারীগন স্বণার্ভ পদ্মখানি দেখিয়া হর্ষধ্বনি করিয়া উঠিল।
ছোট্ট কুমারী নৌকা হইতে নামিয়া পড়িল । তাহার পর স্বণার্ভ পদ্মখানি তুলিয়া চুলে বাঁধিয়া নৌকায় উঠিয়া পড়িল ।
জাদুকর যাযামানখ যাদুদন্ড ঘুরাইল।
হ্রদের জল ক্রমশ পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল।
এই সমস্ত যাদুকরী দৃশ্যাবলী দেখিয়া ফারাও সেনেফেরু অত্যন্ত প্রীত হইলেন। তাহার মনের সমস্ত ভার নামিয়া গেল।
কুমারী দাঁড়িগন হ্রদের উজ্জ্বল জলে দাঁড় টানিতে টানিতে গান গাহিতে লাগিল:

মেয়েটি দাঁড়িয়ে ওপারে
আমাদের মাঝে নীল নদের জল;
নীলাভ ওই গভীর জলের মাঝে
ভাসছে এক কুমীর ভয়ানক !

তবুও আমার সত্য মধুর প্রেম
যেনবা পেয়েছে মন্ত্রের গুপ্ত শক্তি;
নীলাভ নদের জল হয়ে গেছে মাটি
নিরাপত্তায় বহন করবে আমাকে ।

মেয়েটির অতি নিকটে আমি যাবো
আর আমরা রইব না পৃথক;
ধরব আমি তাহার কোমল হাত
রাখিব তাহারে হৃদয়ের অতি নিকটে ।

তথ্যনির্দেশ:

http://www.egyptianmyths.net/mythglotus.htm
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০১১ সকাল ৭:৪০
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×