somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণ ...

১৮ ই জুলাই, ২০১১ বিকাল ৪:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গাড়ি চালাতে চালাতে পল্লব বলল, অতনুদা অনেক বছর হল লন্ডন আছেন ।
ম্যানর পার্কের দিকে থাকেন । কলকাতার রাসবিহারী অ্যাভেনিউতে অতনুদার পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি।
কি করেন অতনুদা? তমাল জিজ্ঞেস করে।
পল্লব হেসে বলল, আরে, অতনুদা কি করেন না তাই বল। অতনুদা একাধারে কবি, লেখক, চলচ্চিত্রকার। তার ওপর অতনুদা চিরকুমার, বুঝলি। বলে চোখ টিপল পল্লব। তারপর বলল, ছন্নছাড়া ইকসেন্ট্রিক ধরনের মানুষ অতনুদা। দেশবিদেশ ঘুরে বেড়ান, শর্ট ফিলিম-টিলিম তৈরি করেন। ব্রিটিশ ইন্টেলেকচুয়াল মহলে বেশ জানাশোনা আছে। গানের গলা সুবিধার না হলেও চমৎকার তবলা বাজান। প্রায়ই বাড়িতে গানের আসর বসান। অনেক বছর বিলেতে থাকলেও অতনুদার বাঙালিয়ানা প্রবল। এককালে ব্রিটিশরা বাংলা শোষন করেছিল, এখন অতনুদা ব্রিটিশদের ধরে ধরে বাঙালিয়ানায় কনভার্ট করছেন।
বাঙালিয়ানায় কনভার্ট করছে মানে? তমাল অবাক।
বাঙালিয়ানায় কনভার্ট করছেন মানে অতনুদা ব্রিটিশদের দাওয়াত করে ভাত-ডাল খাওয়ায়, ভর্তা-ভাজি খাওয়ায়, বর্ষার মরসুমে ইলিশ মাছ খাওয়ায়। আজ দেখবি খাওয়ার আইটেমে ইলিশ মাছ আছে।
ওহ্ ।
অতনুদার ফ্ল্যাটে ঢুকতেই ইলিশ মাছ ভাজার ঝাঁঝালো গন্ধ পেল তমাল। নীল রঙের পাঞ্জাবি আর সাদা ধবধবে ধূতি পরে ছিলেন অতনুদা। চল্লিশের মতো বয়স মনে হল। গায়ের রংটি বেশ ফরসা। মাথার সামনের দিকে টাক। চোখে কালো রঙের প্লাস্টিকের ফ্রেমের চশমা। তমালকে দেখিয়ে পল্লব বলল, অতনুদা, এ হল তমাল রহমান , আমার স্কুল ফ্রেন্ড। লন্ডনে পরতে এসেছে।
অতনুদা আন্তরিক কন্ঠে বললেন, আয়, ভিতরে আয়।
ভিতরে ঢুকে তমাল হতভম্ব। এটা ড্রইংরুম না ফটো স্টুডিও ঠিক বোঝা গেল না। ঘরটি অবশ্য বেশ বড়সরো। জোরদার আলো জ্বলে আছে। এক কোণে একটা গ্র্যান্ড পিয়ানো। দেওয়ালে ঠেস দেওয়া সেতার-তারপুরা। দেওয়ালে টাঙানো সারেঙ্গি-এস্রাজ। তার পাশে পদ্মা নদীর সাদাকালো বিশাল একটি ছবি। সিলিং থেকে ঝুলছে বাবুই পাখির বাসা।
ড্রইংরুমে কয়েকজন অতিথি বসে। অতিথিদের মধ্যে ব্রিটিশও আছে। একজন মাঝবয়েসি ইংরেজ ভদ্রমহিলাকে দেখিয়ে অতনুদা বললেন, ইনি হচ্ছেন মিসেস লিডিয়া এথিড। ইনি ম্যানর পার্কে একটি স্কুলে পড়ান। স্কুলে পড়ানো ছাড়াও মিসেস লিডিয়া এথিড লেখালেখি করেন। লন্ডন শহরে কুর্দিদের উদ্বাস্তু জীবন নিয়ে একটি বই লিখেছেন। ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়ে মিসেস লিডিয়া এথিড-এর গভীর আগ্রহ আছে । গীতার কাছে শাড়ি পরা শিখছেন। বলে অতনুদা হাসলেন।
ভদ্রমহিলার বয়স পঞ্চাশের মতো হবে। সাদাকালো চুল পিছন দিকে টেনে বাঁধা। চোখে সোনালি ফ্রেমের চশমা। মুখখানা গবেষকদের মতো গম্ভীর। বসবার ভঙ্গিতে ভারি শান্ত ভাব।
অতনুদা বললেন, আর, এ গীতা ভাট। পড়াশোনা শেষ করে গীতা এখন লন্ডনেই সাংবাদিকতা করছে। ছোট গল্প লেখে গীতা। শি ইজ ফ্রম মুম্বাই, ইনডিয়া।
গীতা ভাট- এর বয়স ২৫/২৬ হবে। শ্যামলা। জিন্সের প্যান্টের ওপর পাঞ্জাবি পরে ছিল। তবে আহামরি সুন্দরী না। শরীর শীর্ণই বলা যায়।
একজন বৃদ্ধ ব্রিটিশকে দেখিয়ে অতনুদা বললেন, আর ইনি হলে কবি জাস্টিন রুপার্ট। ইনি ‘ইয়েটস’ নামে একটি কবিতা পত্রিকার সম্পাদক। ইনি লিভারপুল থাকেন। গতকালই লন্ডন এসেছেন।
জাস্টিন রুপার্ট হাসলেন। বয়স ষাটের কম না। মাথায় পাতলা রূপালী রঙের চুল, চোখে রুপালি ফ্রেমের চশমা। ঘিয়ে শার্টের ওপর ধূসর কোট পরেছেন। ভদ্রলোক পাইপ টানছিলেন।
অতনুদা বললেন, আর ইনি হলেন অধ্যাপক আসিফ বাট। হি ইজ ফ্রম করাচি, পাকিস্তান । মর্লি কলেজে কেমেষ্ট্রি পড়ান অধ্যাপক আসিফ বাট।
আসিফ বাট মাথা নাড়লেন। হাসলেন। চল্লিশের মতো বয়স তার । পাকিস্তানি হলেও ঠিক ফরসা নয়। বরং গায়ের রং কালোর দিকেই। মুখে বসন্তের দাগ। ইষৎ লালচে শক্ত চুল ব্যাক ব্রাশ করা । অনেকটা ক্রিকেটার ওয়াকার ইউনূসের মতো দেখতে রসায়নের অধ্যাপকটি।
অতনুদা বললেন, আর এ আদনান বাট, আসিফ বাট- এর ভাইয়ের ছেলে। সাউথওয়ার্ক কলেজে পড়ছে আদনান বাট । আদনান ওর চাচার সঙ্গেই থাকে । চমৎকার গজল গায় আদনান । আজ এই বৃষ্টিভেজা মনোরম সন্ধ্যায় আমরা এর গান শুনব।
তমালেরই সমবয়েসি আদনান বাট । মেরুন রঙের জরির কাজ করা পাঞ্জাবি পরে আছে । ফরসা। থলথলে শরীর। আয়ত চোখ। একমাথা কোঁকড়া চুল। মুখটি অনেকটা তবলাবাদক জাকির হোসেনের মতো দেখতে।
অতনুদা এবার তমাল আর পল্লবের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিলেন ।
তমাল আর পল্লব বাংলাদেশি শুনে লিডিয়া এথিড কৌতূহলী হয়ে উঠলেন। তার কারণ আছে। লিডিয়া এথিড-এর পিতামহ লরেন্স উইলিয়াম উনিশ শতকের মাঝামাঝি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারী ছিলেন । পোস্টিং ছিল ইস্ট বেঙ্গল। একবার নৌকাডুবি হয়ে ছিল পদ্মা নদীতে। এক বাঙালি মুসলিম মাঝি তাকে উদ্ধার করেছিল। লরেন্স উইলিয়াম মাসখানেক ছিলেন পদ্মা নদীর চরে। মাঝি পরিবারের মধুর ব্যবহারে লরেন্স উইলিয়াম মুগ্ধ হয়েছিলেন। লরেন্স উইলিয়াম এসব ঘটনা ডায়েরিতে লিখে গেছেন। ডায়েরিতে তিনি লিখেছেন: পৃথিবীর খাঁটি মানুষেরা ইস্ট বেঙ্গলে পদ্মা নামে এক বিশাল নদীর পাড়ে বাস করে। লিডিয়া এথিড কিছুদিন হল পিতামহ লরেন্স উইলিয়াম-এর জীবনের ওপর একটি উপন্যাস লেখার কথা ভাবছেন। এ জন্য অস্টাদশ - উনিশ শতকের বাংলা নিয়ে পড়াশোনা করছেন। সেই সঙ্গে ভারতীয় উপমহাদেশের নানা দিক সম্বন্ধে জানছেন। ভারতবর্ষের ইতিহাস-ঐতিহ্য, ধর্মসম্প্রদায়ের ইতিহাস, ব্রিটিশ শাসন, ভারত ভাগ, পাকভারত বিরোধ, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয়, পদ্মা নদী ... ; তা ছাড়া ইংরেজি অনুবাদে টেগোর পড়ে অভিভূত হয়েছেন। বাংলা ভাষা শেখার বিষয়টিও সিরিয়াসলি ভাবছেন লিডিয়া এডিথ। তার তমাল আর পল্লব এর প্রতি কৌতূহলী হয়ে ওঠার এই কারণ।
ড্রইংরুমের মেঝেতে নীল রঙের পুরু কার্পেট। তার ওপর একখানি সাদা রঙের চাদর পাতা। তারই ওপর হারমোনিয়াম আর তবলা।
অতনুদা বললেন, ঠিক আছে। এবার গান হোক।
আদনান বাট হারমোনিয়ামের সামনে এসে বসল । তবলায় অতনুদা । তবলায় চাপড় মেরে ধিকি ধিকি মধুর বোল তুললেন অতনুদা। হাতুরি দিয়ে ঠুকঠুক করে টিউনিংও করে নিলেন। আদনান বাট একবার মুখ ফিরিয়ে কাশল । হারমোনিয়ামের রিডের ওপর তার লম্বা সরু আঙুল প্রজাপতির মতো উড়ছে:

নি রে গা ক্ষা পা ধা নি র্সা

ড্রইংরুমে ইমন রাগের সুর ছড়ায়। নিমিষেই ঘরটায় পুরাতন যমুনা নদী তার দু’ পাড়ের ধূপ ছড়ানো ধ্যানী সন্ধ্যা উঠে আসে ।
আদনান বাট মেহেদী হাসান দিয়েই শুরু করল:

রানজিশ হে সাহি ...

তারপর মিনিট আটেকের জন্য এ ঘরের সবাই যেন সুরের সায়রে ডুবে গিয়েছিল। এমন কী কবি জাস্টিন রুপার্ট এর মুখেও যেন ফুটে উঠল বিশ্বজনীন সুরসম্ভোগের মধুর আত্বতৃপ্তি। এখন গানের রেশ কাটতেই তন্ময়তা ভাঙল। আদনান বাট-এর গায়কির ঢংটি চমৎকার। কন্ঠস্বর মধুর, গম্ভীর, ভরাট।
অতনুদা তবলায় শেষ বোল চাটি মেরে ‘সাধু,’ ‘সাধু’ বলে চিৎকার করে উঠলেন।
গীতা ভাট সোফায় বসে ছিল। গান শুরু হতেই কার্পেটের ওপর এসে বসেছিল । সুরের অভিঘাতে তার শ্যামলা মুখটি ঝকমক করছে। গীতা ভাট ভারতীয় হলেও এই মুহূর্তে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দীর্ঘকালীন বৈরীতা বিস্মৃত হয়। কেননা, গানটি মেহেদী হাসানের। গীতা ভাট চিৎকার করে ওঠে, শুকরিয়া, শুকরিয়া।
আদনান বাট নিজের ভিতরে গভীর আনন্দের স্রোত টের পেল। একজন ভারতীয় তার গানে মুগ্ধ হয়েছে ; এ তো অনেক বড় পাওনা।

গীতা ভাটের অনুরোধে আদনান বাট এবার গাইল:

বাত কারনি মুজে মুশকিল ...

গান শেষ হতেই তবলায় শেষ বোল মেরে ‘সাধু,’ ‘সাধু’ বলে চেঁচিয়ে উঠলেন অতনুদা। ‘শুকরিয়া,’ ‘শুকরিয়া’ বলে গীতা ভাটও চেঁচাল কতক্ষণ । আদনান বাটের গান শুনে মুগ্ধ পল্লব । সেই সঙ্গে তমালও বিস্মিত। চমৎকার সব নোট লাগাচ্ছে আদনান বাট। সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম সব ছুট আর তানের কাজ করছে। একবার অবরোহনে কৌশলে ‘ধা’ নোটটি স্কিপ করল।
পর পর আরও কটা গান গাইল আদনান বাট । তার মধ্যে নুসরাত ফতে আলী খান- এর ‘আফরিন’। কবি জাস্টিন রুপার্ট কেও মাথা নাড়তে দেখা গেল। অবশ্য লিডিয়া এথিড এর প্রতিক্রিয়া বোঝা গেল না।
পল্লব এবার ঝুঁকে অতনুদার কানে কানে কি যেন বলল। অতনুদা চশমার ডাঁটি ঠিক করতে করতে তমালের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে স্পষ্ট বাংলায় বললেন, এই তমাল , তুই যে চমৎকার গজল গাইতে জানিস সে কথাটি আমায় বলিসনি কেন । আজ তোর পাতে এক টুকরো ইলিশ কম পড়বে বলে রাখলাম। বলে আদনান বাটকে কে অতনুদা কি যেন বললেন। আদনান বাট তমালের দিকে হারমোনিয়াম ঠেলে দিয়ে হাসল। তারপর সরে বসে ।
তমাল আসলেই চমৎকার গজল গায়। ছোটবেলায় ওস্তাদ আখতার সাদমানীর কাছে রাগ সংগীতে তালিম নিয়েছে । তারপর যখন গজলের প্রতি আগ্রহ জন্মাল তখন তালিমের জন্য আজীমপুরে ওস্তাদ নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী বাড়িতে যেতে শুরু করে। গানটা তমালের রক্তে যেন মিশে আছে। লন্ডনে পড়তে এসেও প্রিয় হারমোনিয়ামটাও নিয়ে এসেছে। অবসর সময়ে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান করে। মেহদী হাসান, গুলাম আলী, জগজিৎ সিং, অজয় চক্রবর্তী, নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী।
একে একে মেহেদী হাসানের জনপ্রিয় গজলগুলো গাইল তমাল। জিন্দেগী মে তো সবি, রাফতা রাফতা হো মেরি, কিউ পুছতে হো কেয়া তুমছে কাহু, পেয়ার ভরে দো শর্মিলী নয়ন।
আসর রীতিমতো জমে উঠল।
‘গোলাম আলী’, ‘গোলাম আলী’ বলে আসিফ বাট চেঁচিয়ে উঠলেন। আবেগের চোটে উর্দুতে ভদ্রলোক বলেই ফেললেন, আরে তমাল ভাইয়া তুমি আল্লার নাম নিলে, নবীর নাম নিলে না ...
তমাল হাসে। পাকিস্তানি ভাষাটা সে মোটামুটি বোঝে। ও গোলাম আলীর ‘চুপকে চুপকে’ গানটি গেয়ে শোনাল।
আসিফ বাট মানুষটি ভারি উদার। তিনি গভীর আবেগে তমালকে জড়িয়ে ধরলেন । কবি জাস্টিন রুপার্ট অবাক। তিনি জানেন ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ কমবেশি আবেগ প্রবণ। ক্রিকেট নিয়ে ওদের আদিখেত্যা তিনি দেখেছেন।
তমালের গায়কিতে আদনান বাটও যে বিস্মিত তা তার চেহারা দেখেই বোঝা যায়। দেখা গেল মানুষ হিসেবে আদনান বাটও তার চাচার মতোই উদার। সে তমালের দিকে অভিনন্দনের উষ্ণ হাত বাড়িয়ে দিল। তমালের চোখ ভিজে যায় আর কি। মনে মনে ওস্তাদ আখতার সাদমানী এবং নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী কে সালাম দিল তমাল।
তমালের গান শুনে গীতা ভাটও কম বিস্মিত নয় । তবে সে জানে ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ, নৃত্যশিল্পী উদয়শঙ্কর, পন্ডিত রবিশঙ্কর, শচীনদেব বর্মন, সলিল চৌধুরী এবং রাহুল দেব বর্মন-এদের সবার শিকড় ভারতবর্ষের পূর্বাঞ্চলের বাঙালিসমাজে প্রোথিত । নিউ ওয়েভ মিউজিকের জনক আনন্দশঙ্করও বাঙালি। কাজেই এই বাংলাদেশি ছেলেটি যে গান গেয়ে মন ভরিয়ে দেবে সে তো বোঝাই যায়। গীতা ভাট জানে, বাঙালিরা প্রকৃতগতভাবেই কাব্য ও সংগীতের ক্ষেত্রে প্রতিভাবান। বছর কয়েক আগে হিন্দি গান গেয়ে ভারতীয় উপমহাদেশ কাঁপিয়ে দিলেন বাংলাদেশের জেমস ।
তমালের গান গাওয়ার বিষয়টি নিজের মতো করে বোঝার চেষ্টা করছেন লিডিয়া এথিড । তমাল নামে এক বাংলাদেশি বাঙালি ছেলে পাকিস্তানি উর্দু গান গাইল । এর মানে কি? ইস্ট পাকিস্তানের বাঙালিরা ফিফটি টুতে উর্দু কে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাঙালির ওপর চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে ভাষা আন্দোলন করেছিল- এই ঐতিহাসিক তথ্যটি লিডিয়া এথিড জানেন। তমাল সেই উর্দু ভাষার গান গেয়ে শোনাল এবং যে গান শুনে দুজন পাকিস্তানি মুগ্ধ । তাহলে? কিছুকাল ধরে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণ নিয়ে গভীর ভাবে ভাবছিলেন লিডিয়া এথিড । ভারতীয় উপমহাদেশের প্রতি আকর্ষন বোধ করেন বলেই লন্ডনে পাকিস্তানি কমিউনিটিতেও মেশেন লিডিয়া এথিড । তারা পাকিস্তান ভাঙার জন্য বাঙালিদের দোষ দেয়। দিন কয়েক আগে একজন পাকিস্তনি অধ্যাপক বললেন, ইস্ট পাকিস্তানের বাঙালিরা ষাটের দশকে পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় চিন্তাভাবনায় অনেক পিছিয়ে ছিল। তারা পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নত শাসন পদ্ধতি উপলব্দি করতে পারেনি নি। তার প্রধান কারণ ছিল উন্নত শাসন পদ্ধতি সম্পর্কে গেঁয়ো শেখ মুজিবের অজ্ঞতা। শেখ মুজিব-এর জন্ম হয়েছিল ইস্ট পাকিস্তানের পদ্মা নামে এক নদী পাড়ে একটি অনুন্নত গ্রামে। তার চিন্তাধারা ছিল অনুন্নত! সে আধুনিক রাষ্ট্রশাসনের কি বুঝবে?
এই কথা কি সত্য?
লিডিয়া এথিড শ্বাস ফেলেন।
ভদ্রমহিলার মনে পড়ে যায় ...পদ্মাপাড়ের মাঝি পরিবারের মধুর ব্যবহারে তাঁর পিতামহ লরেন্স উইলিয়াম মুগ্ধ হয়ে ডায়েরিতে লিখেছেন: পৃথিবীর খাঁটি মানুষেরা ইস্ট বেঙ্গলে পদ্মা নামে এক বিশাল নদীর পাড়ে বাস করে ...
সে কথা মনে করে গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেললেন লিডিয়া এথিড । গভীরভাবে কি যেন ভাবছেন তিনি। হঠাৎই আদনান বাটকে তিনি বললেন, এবার আপনার কাছে আমি একটা বাংলা গান শুনতে চাই।
আদনান বাট-এর ফরসা মুখটি লাল হয়ে ওঠে। মনে হল কে যেন তাকে থাপ্পড় মেরেছে।
কি হল? শোনান। লিডিয়া এথিড বলেন।
আদনান বাট চুপ করে থাকে।
লিডিয়া এথিড বললেন, মিঃ তমাল তো আজ আপনার মাতৃভাষায় গান গেয়ে শোনালেন। সে গান শুনে আপনি আর মিঃ আসিফ বাট প্রশংসাও করলেন।
ফ্যাসফ্যাসে কন্ঠে আদনান বাট বলল, আমার বেঙলিদের গান জানা নেই।
একটাও না?
জ্বী নেহি।
অন্তত এক লাইন? লিডিয়া এথিড সত্যের কাছাকাছি পৌঁছে বললেন।
আমি এক লাইনও বেঙলিদের গান জানি না। আদনান বাট সত্যি কথাই বলে।
ঠিক এই মুহূর্তেই লিডিয়া এথিড- এর কাছে আজ থেকে ৪০ বছর আগে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণটি পরিস্কার হয়ে যায় ...

উৎসর্গ: ত্রাতুল।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১১ সকাল ৯:২৪
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×