somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: এবার সুপ্তির পালা

০৬ ই জুলাই, ২০১২ সকাল ১০:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ওয়াসেক গং নিশিকে শহরের একটি পরিত্যক্ত স্কুল বিল্ডিংয়ে নিয়ে ধর্ষন করেছে । ওয়াসেক-এর স্যাঙ্গাতরা গ্যাং রেপ করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা নিশিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। আকাশ নিম আর বিলাতী শিরীষ গাছে ঘেরা পালপাড়ার নিরিবিলি রাস্তা দিয়ে নিশি স্কুল থেকে ফিরছিল। ওই ধর্ষন ওয়াসেক গংয়ের অনেক দিনের প্ল্যান নাকি আকস্মিক সিদ্ধান্ত -তা ঠিক বলা যাচ্ছে না। পরিত্যক্ত স্কুল বিল্ডিংটার ঠিক উলটো দিকে রায়চৌধুরীদের পুরনো দরদালানের দক্ষিণ দিকের এক্সটেনশন। তারই দোতলার ছাদ থেকে দীনদয়াল হাজরা সেই বিভৎসটি দেখে নির্বাক হয়ে পড়েছিল। তবে থানায় গিয়ে রিপোর্ট করার সাহস পায়নি। তবে দীনদয়াল হাজরার মুখ বন্ধ থাকেনি; শহরের লোকজন আগেই আঁচ করতে পেরেছিল, এবার তারা নিশ্চিত হল। তবে ওয়াসেক গং অর্থাৎ আসামীদের পলিটিক্যাল কানেকশন অত্যন্ত ষ্ট্রং হওয়ায় তারা অবশ্য ধরা-ছোঁওয়ার বাইরেই রয়ে গেল। শহরের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অবশ্য বেশ তৎপরতা দেখাল। তারা দিনে-দুপুরে রেললাইনের পাশের উত্তর পাশের হাজীর বস্তিতে রেইড দিল। তিন-চার জন হিরোইনখোরকে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তুলল। স্থানীয় সংবাদকর্মীরা প্রথামাফিক থানায় গিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের নানা প্রশ্ন করে। এস.আই রুহুল আমিন বললেন যে, তারা ধর্ষনের প্রকৃত আসামীদের ধরতে আন্তরিক।
নিশির বয়স ছিল দশ। পড়ত ক্লাস ফাইভে । তো ওই বয়েসের একটি বালিকাকে ওয়াসেক গং গ্যাংরেপের পর হত্যা করেছে; এতে সুপ্তি, নিশির চাচাতো বোন, প্রাথমিক শোক, বিস্ময় আর হাহাকার সামলে মৌন হয়ে যায়। সুপ্তি বিস্ময়ের সঙ্গে দেখে যে: ছোট মফস্বল শহরটি আগের মতেই আছে- ভোর হয়, দিনের আলো ফোটে, তারপর রাত নামে । ঋতুচক্রের ফেরে গ্রীষ্মের পালা শেষে বর্ষারম্ভ। মফস্বল শহরটির আকাশে মেঘ জমে, বৃষ্টি ঝরে, বৃষ্টি পর ওঠে হলুদবরণ রোদ; স্কুলের মাঠে হলদে প্রজাপতি নেচে বেড়ায়। সেই বৃষ্টি-ধোওয়া হলুদবরণ রোদের ভিতর ওয়াসেক গং শহরের রাস্তায় মোটর সাইকেলে করে ঘুরে বেড়ায়।
সুপ্তি, শহরের বেগম রোকেয়া কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে। কিছুটা ওরই উদ্যেগেই বলা যায় বেগম রোকেয়া কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রী এবং কর্মচারীরা একটি মানববন্ধনে অংশ নেয় । (তাতে শহরের নানা পেশার নারীপুরুষ স্বতস্ফূর্ত ভাবে অংশ গ্রহন করে ।) শহরের সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী একত্রিত হবে একটি মৌন মিছিল করে। (তাতে শহরের নানা পেশার নারীপুরুষ স্বতস্ফূর্ত ভাবে অংশ গ্রহন করে ।) মিছিলের সামনে কালো ব্যানারে সাদা অক্ষরে লেখা ছিল- ‘নিশি হত্যার বিচার চাই।’ ওয়াকার্স পার্টির উদ্যেগে সন্ধ্যার পর স্থানীয় শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্বলিত করা হয়। (তাতে শহরের নানা পেশার নারীপুরুষ স্বতস্ফূর্ত ভাবে অংশ গ্রহন করে ।) নিশি কিন্তু এ শহরে একেবারে অপরিচিত মুখ ছিল না। ও বহ্নিশিখা শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য ছিল; ওই বয়েসেই চমৎকার নজরুল সংগীত গাইত। নিশির গাওয়া এই গানটি শহরের কারও কারও মনে থাকার কথা -

আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ওই ...


নিশির স্মরণে মানববন্ধন, মৌনমিছিল এবং মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ইত্যাদি প্রতিবাদ কর্মসূচী স্তিমিত হয়ে এলে সুপ্তি গভীর বিস্ময়ের সঙ্গে দেখে যে ... মফস্বল শহরটি আগের মতোই রয়ে গেছে। ভোর হয়, দিনের আলো ফোটে, তারপর রাত নামে । ঋতুচক্রে গ্রীষ্মের পালার শেষে বর্ষারম্ভ। মফস্বল শহরটির আকাশে জমে ওঠে ঘন মেঘ । কখনও-বা বড় বড় ফোঁটায়, কখনও-বা ঝিরঝির করে বৃষ্টি ঝরে। নিশির কবর ভিজে যায়। সে কবরের পাশে একটি কামিনী গাছ। কবরের ওপর কামিনীর অজস্র ঝরাপাতা। যেন নিশিকে ঢেকে রাখতে চায় । বৃষ্টিতে কামিনীর সে পাতাগুলিও ভিজে যায়। কখনও-বা বৃষ্টির পর ওঠে হলুদবরণ ঝরঝরে রোদ । সেই হলুদবরণ ঝরঝরে রোদে ওয়াসেক গং ওদের বাপদাদার শহরে মটর সাইকেলে করে ঘুরে বেড়ায়। ভয়হীন। নিশ্চিন্ত ...

নিশির মৃত্যুর পর থেকে নিশির বাবা ফকরুদ্দীন চাচা, আর নিশির মা নাদিরা চাচী- কার্যত নির্বাক । মামলা-মোকদ্দমার কারণে সুপ্তির বাবা-মার সঙ্গে এদের দূরত্ব ছিল। নিশির মৃত্যুর পর দূরত্ব ঘুচল। সুপ্তি প্রায় প্রতিদিনই নিশিদের বাড়িতে আসে। দোওয়া-দরুদ পড়ে। নিশির কবর বসতভিটায় হয়েছে। বাড়ির পিছনে কলার বাগান। ফকরুদ্দীন চাচা আগে স্কুলের পড়াতেন। এখন চাষবাদ করেন। চাষবাদ মানে কলার চাষ। বাড়ির পিছনে কলাবাগান। তার উত্তর পার্শ্বে কাঁঠাল আর সজিনা গাছ। একটা বিলাতী গাব গাছও আছে । এক পাশে নাদিরা চাচী ধুন্দর আর বথুয়া শাক লাগিয়েছেন। নিশির কবর ওখানেই। কবরের শিয়রে একটা কামিনী গাছ। সুপ্তি কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আকাশ-পাতাল ভাবে। আর কাঁদে। নিশি বলত, মৌসুমী আপু।
বল।
রাতে তুমি যে কামিনী ফুলের গন্ধ পাও এই গাছের।
ধ্যাত, পাগলি! কামিনীর গন্ধ কি অত দূরে যায়?
কথা সত্য। সুপ্তিদের বাড়ি রেললাইন পেরিয়ে প্রেস ক্লাবের উলটো দিকে মালা সিনেমা হলের পাশের গলি। ওদের বাড়িতে অশোক গন্ধরাজ গোলাপ গাঁদা চামেলী চাঁপা জবা টগর পলাশ বকুল গাছ থাকলেও সত্যি সত্যিই কামিনী গাছ নেই। তবে সুপ্তি সত্যি সত্যি রাতের বেলা ওর ঘরের লাগোয়া বারান্দায় বসলে কামিনী ফুলের গন্ধ পায়। কিন্তু সে কথা নিশি কি করে জানল? আশ্চর্য! সেমন্তী একবার বলেছিল নিশির চেহারায় কেমন দেবী দেবী ভাব আছে। সুপ্তি এসব ভেবে ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সুপ্তির আজকাল কেন যেন মনে হয় কামিনী পাতায় ঢাকা নিশির কবর একটা দেশের, একটা শহরের এবং একটা সময়ের মৃত্যুর প্রতীক। যে দেশের মানুষ নির্লিপ্ত হয়ে উঠেছে, অন্যায় অত্যাচার সহ্য করে যাচ্ছে । নিশির মৃত্যুর পর শহরটি আগের মতেই আছে। শহরের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক। নিশি কিংবা নিশির মর্মান্তিক মৃত্যু আলোচনার কেন্দ্রে আর নেই। সর্বত্র কেমন এক স্বস্তি-বিপদটা আমাদের পরিবারের ওপর দিয়ে যায়নি-এমন একটা ভাব । (তবে কারও কারও মুখে দুঃখের ছাপও রয়েছে। নিশির কোনও বান্ধবী কিংবা শিক্ষক।) নিশির কবরের পাশে দাঁড়িয়ে এসবই ভাবতে ভাবতে আগরবাতির গন্ধে অপাথির্ব অনুভূতির বদলে বিকৃত গ্যাং রেপের দৃশ্যটা সুপ্তির মাথায় ভেসে ওঠে । ও কেঁপে ওঠে। হাজার চেষ্টা করেও ওই বিভৎস দৃশ্যটা মাথা থেকে সরাতে পারে না ...

সুপ্তি কলেজ যেতে যেতে ভাবে তাহলে নিশির জন্ম হয়েছিল কেন? এই জটিল প্রশ্নটিও ভাবে সুপ্তি। আমার কেন জন্ম হয়েছে? এই জটিল প্রশ্নটিও ভাবে সুপ্তি।। এভাবে পৃথিবী সৃষ্টির লাভক্ষতি অবধি পৌঁছে যায়। ঈশ্বরে বিশ্বাস আর আগের মতন অটল থাকে না। ওকে কেমন এলোমেলো আর বিভ্রান্ত মনে হয়। ঘরের বাইরে বেরুলে অপহরণের আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে থাকে । তবু কলেজ যেতে হয়। ঘরে ভালো লাগে না। মা অসুস্থ। কলেজে ঘন্টা কয়েক অন্যমনস্ক থাকে। তারপর অত্যন্ত ক্লান্ত বিমর্ষ ভঙ্গিতে বাড়ি ফিরে আসে।
সুপ্তি কখনও বাড়ি ফেরার পথে পাল পাড়ায় রণজিৎ কর স্যারের বাড়ি যায় । অর্থনীতির অধ্যাপক রণজিৎ কর স্যার ওর প্রিয় শিক্ষকদের একজন। পারিবারিক এক দুর্যোগের পর আর ক্লাস নিচ্ছেন না। স্যারের মেয়ে সেমন্তী কর ছিল সুপ্তির ক্লাসমেট। ক্লাস ওয়ান থেকে একই স্কুলে পড়েছে। সেই সেমন্তী কোথায় হারিয়ে গেল।
আকাশ মনি গাছে ঘেরা টিনসেডের ঘর। ঘরে ঢুকলেই ধূপের গন্ধ পায় সুপ্তি। স্যার ইদানীং ধর্মকর্মের দিকে। আগে ওয়ার্কাস পার্টি করতেন। বহ্নিশিখা শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এখন এসব থেকে দূরে। স্বেচ্ছা নির্বাসিত। স্যারের মাথা ভর্তি পাকা চুল । ফরসা মুখে খোঁচা খোঁচা পাকা দাড়ি। মুখে ঘন বিষাদের ছাপ।
এসো সেমন্তী।
সুপ্তি চমকে ওঠে। স্যারের জীবন থেকে সত্যিকারের সেমন্তী হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে স্যার ওকে সেমন্তী নামে ডাকে। স্যার যতবারই সুপ্তিকে সেমন্তী নামে ডাকে, সুপ্তি ততবারই চমকে ওঠে। যেন সেমন্তী নামে রূপসী এক কিশোরীর অভিন্ন পরিনতি ওর জন্যেও অপেক্ষা করছে।
বসো মা। কেমন আছো। স্যারের কি সুন্দর জলদ গম্ভীর কন্ঠস্বর!
সুপ্তি কেমন আছে তা কিন্তু বলে না। হাজার হলে স্যার পুরুষমানুষ। তিনি বুঝবেন না কী যন্ত্রণা সুপ্তিকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে, কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে । নিশির বয়স ছিল দশ ...
নিশি। বলে চুপ করে রইলেন স্যার।
সুপ্তি ও চুপ করে থাকে।
সুরবালা চা আর নিমকি নিয়ে আসে। সুরবালা স্যারের দূর সর্ম্পকের আত্মীয়া । স্যারের স্ত্রী (নিভা মাসি) মারা যাওয়ার পর বিপত্নীক স্যার গ্রাম থেকে সুরবালাকে নিয়ে এসেছেন। না এনে উপায় কী। স্যারের মেয়ে সেমন্তীও তো হারিয়ে গেল! ঘরসংসার গুছিয়ে রাখবে কে। মধ্যবয়েসি ফরসা ঢলোঢলো শরীর সুরবালার । কি মিষ্টি কন্ঠস্বর। সুপ্তিকে ভীষন আদর করে সুরবালা।
নিশির মৃত্যুর পর থেকেই সুপ্তি মানুষের যৌনবোধ নিয়ে গভীরভাবে ভাবছে। ভাবছে যৌনতায় বন্যতা পরিমানই কি বেশি? তাই মনে হয়। নইলে পাশের বাড়ি রেশমা ভাবী পেট্রল পাম্পের তরুন কর্মচারীর হাত ধরে পালিয়ে গেল কেন একটি সন্তান রেখে? নাজিম ভাইয়ের মুখের দিকে তাকানো যায় না। সংসার তছনছ। (রুমালীর কথা ভেবেই নাজিম ভাই আবার বিয়ে করতে চাইছেন। পাত্রী খুঁজছেন।) কিন্তু, কিন্তু, যৌনতায় বন্যতার পরিমান বেশিই যদি হয় তাহলে স্যারের প্রতি সুুপ্ত এক ভালোলাগার অনুভূতি এত পবিত্র কেন? ভাবতে নেই ... তবু ভাবনা চলে যায় ... স্যার যেন গভীর অথই শূন্যতায় সুরবালার কাছে মানসিক আশ্রয় পেয়েছেন। এই ভাবনা সুপ্তিকে চাপা কষ্টও দেয়। সুরবালা যেন কি রকম । ভারী স্তন, তার নীলশিরা আর কমলার কোয়ার মতন রাঙা ঠোঁট দুটো দেখেই বোঝে সুরবালা ভোগী। দু’বেলা নিরামিষ খেয়েও বিধবা আগুন নেভে নি।
সুপ্তি আজও জিজ্ঞেস করে, স্যার। আপনি আর ক্লাস নেবেন না?
অধ্যাপক রণজিৎ কর খোঁচা খোঁচা দাড়িতে হাত বুলিয়ে বলেন, না রে মা। আজকাল আমার কিছু মনে থাকে না। কি পড়াব? ছাত্র পড়িয়ে মাইনে নিই। ওদের ঠকালে চলে। এ শহর ছেড়ে চলেই যেতাম কাশী। শহরের মায়ার টানে যেতে পারি না। চল্লিশ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধ করেছি।
আমি এ শহর ঘৃনা করি। সুপ্তি হিসহিস করে বলে।
স্যার কেমন অদ্ভূত দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। খরখরে কন্ঠে বলেন, আমারও মনে হয় এ শহরে আর থাকা গেল না ...
কেন স্যার? সুপ্তি চমকে ওঠে । ওর কান্না পায়। স্যার এ শহর ছেড়ে চলে গেলে ওর জীবন যে গভীর শূন্যতায় ভরে উঠবে ।
আসলে আমার জমির ওপর চোখ পড়েছে। টেলিফোনে চাঁদা চেয়ে জ্বালাচ্ছে । তিরিশ লাখ।
কারা? প্রশ্নটা করেই থমকে গেল সুপ্তি। ও জানে কারা। কত?
তিরিশ লাখ।
ওহ্ ।
সুপ্তি জানে কারা চাঁদা চাচ্ছে। ওয়াসেক গং ছাড়া আর কে। ওদের পৃষ্ঠপোষক এ শহরের কেউকেটা ব্যবসায়ী আজিজ ইমদাদ। আজিজ ইমদাদ লোকটার ট্রান্সপোর্টের ব্যবসা ছাড়াও আছে পেট্রল পাম্প, সিএনজি ফিলিং স্টেশন, সিনেমা হল, রাইস মিল । এ শহরের লোজজন জানে লোকটা তলে তলে ফেনসিডিলের ব্যবসা করে । আজিজ ইমদাদ-এর ছেলে বাহরাম ওয়াসেক গং এর অন্যতম সদস্য । নীল রঙের একটা ইয়ামাহা মোটর সাইকেলে বাহরাম চড়ে ঘুরে বেড়ায়। সঙ্গে থাকে কখনও নূর, কখনও কুঞ্জ। অন্য মোটর সাইকেলে বায়োজিদ, হেমায়েৎ কিংবা লোকমান। এরা সবাই খুনি । শহরের লোকজন জানে। ওয়াসেক কে সচরাচর বাইরে দেখা যায় না। রেলস্টেশনের পাশে সুরভী নামে একটা আবাসিক হোটেলের চারতলায় থাকে ওয়াসেক। ওই হোটেলে- শহরের লোকজন জানে- রাতদিন অসামাজিক কার্যকলাপ চলে । সুরভী হোটেল থেকে থানা দুশো ফুটও না। তবে পুলিশ কখনও রেইড দেয়নি। সুরভী হোটেলের মালিক যে আজিজ ইমদাদ । তিনিই ওয়াসেক কে চারতলায় থাকার বরাদ্দ দিয়েছেন। আজিজ ইমদাদ গড ফাদার। এরকম গড ফাদার বাংলাদেশ জুড়ে রয়েছে। রাজনৈতিক দলের প্রধান মূলত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যেতে গড ফাদার এর নির্ভর করে। কাজেই বাংলাদেশ অথই শূন্যতায় ভাসছে। আজকাল এসব ভেবে ভেবে (আগে তেমন ভাবত না ) সুপ্তির শরীর কেমন হিম হয়ে আসে।

নিশির সঙ্গে সুপ্তির গার্লস স্কুলের সমানে কখনও কখনও দেখা হত। তখন কথা হত। দু’জনে চালতার আচার খেত। শহরের অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও নিশির সঙ্গে দেখা হত। জীবন তখন অন্যরকম ছিল। সুখ না হলেও স্বস্তি ছিল, সেমন্তী তখন বেঁচে ছিল; জীবন এখন দুঃসহ হয়ে উঠেছে। সামনে পরীক্ষা । পরীক্ষা ভালো হবে না। মাথায় গ্যাং রেপের দৃশ্যটা ভাসে। সুপ্তি হাজার চেষ্টা করেও দৃশ্যটা মাথা থেকে সরাতে পারে না। নিশার বয়স ছিল দশ মাত্র দশ। ঋতুবতী হওয়ার কথা না। কাজেই মৃত্যর আগের যন্ত্রনা ও আতঙ্ক মাথার মাথার ভিতরে বিমর্ষ চেতনায় মতন লেগে থাকে। সুপ্তির বয়স আঠারো। এই বয়েসের ওর অভিজ্ঞতা তো কম নয়। বাংলাদেশে ৯০% নারী যেখানে কোনও না কোনও ভাবে যৌননির্যাতনের শিকার এবং এর বেশির ভাগই লোকলজ্জার ভয়ে অপ্রকাশিত সেহেতু আঠারো বছর বয়েসের মধ্যেই অনেক মেয়েরই অনাকাঙ্খিত তিক্ত অভিজ্ঞতা অনিবার্য । সুপ্তি মাথা থেকে গ্যাংরেপের দৃশ্যটা হাজার চেষ্টা করেও সরাতে পারে না। কেননা, নিশির বয়স ছিল দশ; ... মাত্র দশ। ঋতুবতী হওয়ার তো কথা না। কাজেই সুপ্তি ওর অভিজ্ঞতাহেতু জানে যে পালপাড়ার ওই পরিত্যক্ত স্কুল বিল্ডিংয়ে নিশির ধর্ষনটা ছিল বিকৃতি, ছিল রক্তপাতের আকাঙ্খা । যদিও তাতে বালিকা-শরীর র্স্পশের নিষিদ্ধ আনন্দ ছিল হয়তো-বা। এসব ভেবে ভেবে সুপ্তি অবশ বোধ করে ... আশ্চর্য! এই দেশের সমাজে কুমারীত্ব বহুলভাবে প্রশংসিত এবং কাম্য। অথচ কুমারীত্ব রক্ষা করার স্বাভাবিক পরিবেশ নেই। সর্বত্র কামার্ত পুরুষ আর কামার্ত পুরুষ। পত্রিকায় পড়েছে সুপ্তি বাংলাদেশে অধিকাংশ যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটাচ্ছে ‘কাছের মানুষ’ । সমাজবিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলে এই ভয়ানক তথ্য জানা গেছে। সুপ্তি জানে এটা সত্যি। ওর কানে এ শহরের কত গোপন কথা ভেসে আসে। এ শহরের তথাকথিত ভদ্রলোক বালিকা কিংবা কিশোরী গৃহ পরিচারিকাকে বাই ফোস যৌনকর্মে বাধ্য করে, আসলে তো রেপই করে । (দরিদ্র গৃহকর্মীরা চরম অভাবে পড়ে কাজ করতে এসেছে। তারা ধর্ষিত হয়েও মুখ বুজে থাকে। প্রতিবাদ করলে তাড়িয়ে দেবে। তাহলে নির্ঘাৎ অনাহার কিংবা পথে ঘটে শস্তা পতিতাবৃত্তি ) ... ভদ্রলোকের মধ্যবয়েসি স্ত্রীর রুচি বিকৃত হলে অপকর্মে তারও সায় থাকে, পত্রিকায় এমন সংবাদও বেরোয়। ... এ শহরের সুশীল সমাজের অন্যতম একজন প্রতিনিধি আজিজুল হক। সুপ্তি লোকটাকে ‘আজিজ খালু’ বলে ডাকে। ভদ্রলোকের বাড়িতে কাজ করত শিখা; ফরসা মতন বছর পনেরোর বাড়ন্ত কিশোরী। গতবছর শিখা গর্ভবতী হলে শহরে আলোরণ উঠেছিল। আজিজুল হক দোষ চাপান তারই এক ভাগ্নের ওপর। এটা ঠিক যে মোজাম্মেল কয়েক সপ্তাহ তার মামার বাড়ি ছিল; মোজাম্মেল মালয়েশিয়া যাবে, টাকা পয়সার জন্য মামার কাছে ধর্না দিতে এসেছিল। ওই মোজাম্মেলই শিখার সর্বনাশ করল কিনা কে জানে। তো, শিখা ট্রেনের নীচে ঝাঁপিয়ে পড়ে মরল। আজিজুল হক -এর স্ত্রী (শাফিয়া খালাম্মা) পক্ষপাতগ্রস্থ। তার কিছুদিন পরই শাফিয়া খালাম্মা হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেলেন।
আজিজ চাচা আর শাফিয়া খালাম্মা নিঃসন্তান ছিলেন। শিখাকে শাফিয়া খালাম্মা আপন মেয়ের মতনই দেখতেন। শিখার মৃত্যু সহ্য করতে পারেন নি। তবে আজিজুল হক আজও নির্বিকার। রোজ ভোরে ছড়ি হাতে নীল ট্রাউজার আর সাদা টি-শার্ট পরে ভদ্রলোক হাঁটতে বেরোন পরানি নদীর দিকে । ছাদ থেকে সুপ্তি দেখে। সুপ্তির মন এসব ভেবে ভেবে অবশ হয়ে ওঠে। এসব অনাচারের সঙ্গে নতুন এক মাত্র যোগ হয়েছে।
যার জন্য জীবন দিতে হল সেমন্তী কে। সেমন্তী আত্মহত্যা করেছিল! সেমন্তী ভালোবাসত শিবতলার নীলোৎপল সাহাকে। নীলোৎপল বিট্রে করেছিল। নীলোৎপল ওদের ঘনিষ্ট মিলন দৃশ্য ভিডিও ফরমেটে শহরে ছড়িয়ে দিয়েছিল। অহেতুক। কোনওই দরকার ছিল না। একেবারেই দরকার ছিল না। পৃথিবীতে প্রতি মুহূর্তে বৈধ অবৈধ প্রণয় প্রতিমুহূর্তে ঘটছে। সেসব আড়ালেই থাক না। মৌসুমী জানত ... সেমন্তী নীলোৎপল কে বিশ্বাস করত। গভীরভাবে ভালোবাসত। (ও আর সেমন্তী তো নিছক ক্লাসমেট ছিল না। ওরা ছিল মেয়েবেলার সই। ) সেমন্তী যে নীলোৎপল কে বিশ্বাস করত এটা নীলোৎপল জানতই না। হায়। মেয়েরা এমন অবুঝ। আর ভালোবাসা এমনই যে তার জন্য মৃত্যুকে বরণ করা যায়। আর মৃত্যু এমনই যে তা কখনোই এ পৃথিবী ছাড়িয়ে যায় না, ... সেমন্তীর অনেক আছে মৌসুমীর অ্যাবামে।
মাঝরাতে সেমন্তী জীবন্ত হয়ে ওঠে।

গড ফাদারদের ভয়ে রণজিৎ কর স্যারের পাশে এ শহরের কেউ দাঁড়াল না। স্যার শহর ছেড়ে চলে গেছেন। চাঁদাবাজদের কাছ থেকে নিয়মিত হুমকি পাচ্ছিলেন। তিরিশ লাখ টাকা তিনি কোথায় পাবেন? স্যারের সঙ্গে চলে যাওয়ার আগে দেখা হয়েছিল। স্যার বলেছিলেন, জীবন এমনই সেমন্তী! তুমি বয়সে ছোট। আরও কত কত ঘাটে ভিড়বে তোমার তরী। এক ঘাটে তরী বেঁধে রাখা মানুষের নিয়তি না।

সুপ্তি কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে পালপাড়ার ওই আকাশ নিম আর বিলাতী শিরীষ গাছে ঘেরা নিরিবিলি পথটা দিয়ে হেঁটে যায় । আকাশ মনি গাছে ঘেরা টিনসেডের ঘরটি নেই। দেওয়াল ঘেরা জমিতে একটি বড় সাইনবোর্ড। তাতে লেখা: বহুতল হোটেল এর জন্য নির্ধারিত জমি । ইমদাদ গ্রুপ অভ ইন্ড্রাষ্টির সম্পত্তি ...সুপ্তি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। স্যারের স্মৃতি হৃদয়ে আজীবন থাকলেও স্যারকে তো আর কোনওদিনই দেখব না। এখন কি আমার জীবনে স্বাভাবিক প্রেম আসবে? স্যারের সঙ্গে ওর অদ্ভূত গোপন পবিত্র সর্ম্পকের কথা সেমন্তী (মেয়ে বলেই) টের পেয়েছিল। অনেকবারই যেন ইশারা- ইঙ্গিতে বলার চেষ্ট করেছিল, এই ঘোর ছাড় রে সুপ্তি। এই জন্যেই তোর জীবনে স্বাভাবিক প্রেম এল না। সুপ্তি ঘোর কাটাতে পারে না। বরং জানতে ইচ্ছে হয় স্যারের প্রিয় রং কি।

ওয়াসেক গং শহরের রাস্তায় বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
ফকরুদ্দীন চাচা দৃশ্যটি মেনে নিতে পারছেন না।
আজ পালপাড়ার দীনদয়াল হাজরা এসেছিল। থুত্থুড়ে বুড়োর বয়স সত্তরের মতন বয়স। কর্মজীবনে লোকনাথ বিদ্যানিকেতনের দপ্তরি ছিল। ফকরুদ্দীন চাচার মাছ ধরার নেশা। দীঘি, খাল- বিল আর পরানি নদীতে মাছ ধরেন চাচা। এই দীননাথ হাজরাই ফকরুদ্দীন চাচার সঙ্গী। তো, বুড়োই যে দৃশ্যটি স্কুলের ছাদ থেকে দেখেছে। সেই কথাই বলল শ্লেষ্মা জড়ানো কন্ঠে। পুলিশে বলতে সাহস পাচ্ছে না। ফরুদ্দীন চাচাও চাপ দিলেন না। মৌসুমী জানে লাভ হবে না। সটান বুড়োকে হাজতে পুড়বে। বুড়োর বদলে কথাটা আজিজ ইমদাদ বললে না হয় একটা কথা ছিল।
ফকরুদ্দীন চাচা সংবাদ সম্মেলন কথা ভাবলেন। ফকরুদ্দীন চাচার নার্ভের অসুখ। কাজেই প্রেস কনফারেন্সের লিখিত বক্তব্য সুপ্তিই লিখল। সংবাদ সম্মেলন করে লাভ হবে কিনা লিখতে লিখতে ভাবছিল । ওই আজিজ ইমদাদ- এর কারণেই ওয়াসেক গং এর পলিটিকাল কানেকশন স্ট্রং। আর আইন প্রয়োগকারীর সংস্থার অদৃশ্য নিয়ন্তা তো স্থানীয় গড ফাদার। অদৃশ্য কোনও স্থান থেকে তিনি রিমোট কন্ট্রলারের বাটন প্রেস করলেই তবেই এরা মুভ করে।

স্থানীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন । বিকেলে। বাইরে ঝমঝম বৃষ্টি । লোকজন খুব একটা বেশি হয়নি। অনেকেরই আসেনি। সুপ্তি হতাশ বোধ করে। নিশি এতই হতভাগী। রণজিৎ স্যার এ শহরে থাকলে বৃষ্টি উপেক্ষ করে অবশ্যই আসতেন। আজিজুল হক আর নীলোৎপল সাহা কে দেখে বিরক্ত হল । এরা কেন এসেছে। (দিন কয়েক আগে কাটপট্টির কাছে রিকশায় নীলোৎপল কে দেখল দরগা পাড়ার অনুভা রায়ের সঙ্গে ...আশ্চর্য! ) নিশির স্কুলের অনেকেই এসেছে। এসেছে বহ্নিশিখা শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্যরা; নীল রঙের শাড়ি পরে বসে আছেন বহ্নিশিখা শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নিবেদিতা দাশ পুরকাস্থ; তার পাশে কালো রঙের টিশার্ট পরে বসে আছেন নাজিম ভাই। বেগম রোকেয়া কলেজের অনেক ছাত্রছাত্রীও এসেছে। সুপ্তিই মূলত এদের অর্গানাইজ করেছে। এদের সঙ্গে স্থানীয় সাংবাদিকদের অনেককেই উপস্থিতি দেখা গেল।
ফকরুদ্দীন চাচা সাদা রঙের পায়জামা পাঞ্জাবি পরে সুপ্তির ডান পাশে বসে আছেন । নাদিরা চাচী কালো বোরখা পরে এসেছেন। মৌসুমী লিখিত বক্তব্য পড়ল। ১০ বছরের এক বালিকার গণধষর্ণকে একটি নজীরবিহীন কলঙ্কিত ঘটনা বলে উল্লেখ করল; সেই সঙ্গে শহরের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিরব ভূমিকাকে রহস্যময় বলল। শহরের মানুষ জানে কারা এই জঘন্য অপরাধ করেছে আর তারা জানেন না? তাদের ইনফরমাররা কি করে? কাজেই পুলিশের ভূমিকা শহরের আপামর জনগনের মধ্যে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। (পড়তে পড়তে সুপ্তি কামিনী ফুলের গন্ধ পায়)... সম্ভাব্য আসামীদের প্রতি ইঙ্গিত করে অতি শীঘ্র তাদের রিমান্ডে নেওয়ার কথাও বলল। নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের কথাও বলল। সামাজিক আচরণের পরিবর্তনের কথাও বলল। আরও বলল, গড ফাদার বাংলাদেশ জুড়ে রয়েছে ... রাজনৈতিক দলের প্রধান মূলত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যেতে গড ফাদার এর নির্ভর করে ...কাজেই বাংলাদেশ অথই শূন্যতায় ভাসছে।
সংবাদ সম্মেলনের পর ফকরুদ্দীন চাচা কে সাংবাদিকরা একটি দুটি প্রশ্ন করল। ফকরুদ্দীন চাচা উত্তর দিতে পারলেন না। কথা জড়িয়ে গেল। চোখে পানি। নাদিরা চাচীও চুপ করে রইলেন। প্রশ্নের উত্তর মৌসুমীই দিল । সম্ভাব্য আসামীদের প্রতি ইঙ্গিত করে অতি শীঘ্র তাদের রিমান্ডে নেওয়ার কথা বলল।
আজিজ ইমদাদ-এর অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত ‘সাপ্তাহিক দেশবার্তার’ মনিরুজ্জামান দোদুল প্রশ্ন করে, চিহ্নিত স্বন্ত্রাসী বলতে আপনি কাকে বোঝাচ্ছেন?
সুপ্তি চট করে উত্তর দেয়, এই প্রশ্ন তো আমি আপনাকেও করতে পারি । পারি না? আপনি এ শহরে বাস করেন। করেন না?
মনিরুজ্জামান দোদুল আর কোনও প্রশ্ন খুঁজে পায় না।
হলরুমের বাইরে বেড়িয়ে দেখে বৃষ্টি থেমে গেছে। ততক্ষণে সন্ধ্যাও ঘনিয়েছে। চাচা আর চাচীকে একটা রিকশায় তুলে দেয় সুপ্তি । তারপর হাঁটতে থাকে। ওদের বাড়ি কাছেই ।
নিবেদিতা দাশ পুরকাস্থ রিকশায় উঠছিলেন। সুপ্তিকে ডাকলেন। বললেন, সুপ্তি, তোমার ক্রিপ্টটা দাও তো, আমি জলজ এ ছাপানোর ব্যবস্থা করব।
সুপ্তি লেখাটা দেয়। সাংবাদিকদেরও কপি দিয়েছে ও। পুরাটা ছাপবে না। চাকরি চলে যাবে। তবে জলজ সাহিত্যপত্রিকা। সুপ্তি পুরো বক্তব্যই ছাপা হবে।
ভিজে সন্ধ্যেয় হাঁটতে-হাঁটতে বাড়ির দিকে যেতে থাকে ।হাঁটতে হাঁটতে ভাবল আসন্ন মৃত্যুর আগে এক লেখকের জন্ম হল।
বাড়ির সামনে গলিতে পানি। লোডশেডিং।
দরজা খুলল মমতা । মমতার হাতে মোমবাতি।
বাবা ফেরেনি? সুপ্তি জিজ্ঞেস করল।
না।
সুপ্তি দীর্ঘশ্বাস ফেলে মায়ের ঘরের দিকে যায়। অন্ধকার ঘরে উঁকি দেয়। মা ঘুমাচ্ছে। শাফিয়া খালাম্মার মৃত্যুর পর সুপ্তির মাও অসুখে পড়লেন। তার কারণ আছে। সুপ্তির মা এবং শাফিয়া খালাম্মা দু’জন সখি পাতিয়েছিলেন। আইনজীবি স্বামীর ব্যস্ততায় হয়তো মা নিঃসঙ্গ হয়ে গিয়েছিলেন। মা কি সব জানে? । শাফিয়া খালাম্মার মৃত্যু সহ্য করতে পারেন নি মা। দিনদিন মায়ের শরীর খারাপ হতে থাকে। মা আজ শয্যাশায়ী।
কাপড় বদলে নিয়ে ঘরের লাগোয়া বারান্দায় এসে বসল সুপ্তি।
অশোক গন্ধরাজ গোলাপ গাঁদা চামেলী চাঁপা জবা টগর পলাশ বকুল গাছ নিয়ে বাগানটা অন্ধকারে ডুবে আছে। গাছপালায় বৃষ্টিভেজা অস্থির বাতাসের দাপাদাপি । আবার বৃষ্টি আসবে? কে জানে।
মমতা এসে এক কাপ লেবু-চা দিয়ে গেল। সুপ্তি জানে নাজিম ভাই বাবার কাছে ওকে বিয়ে করার প্রস্তাব পাঠিয়েছে। সুপ্তির আইনজীবি বাবা বিষয়টি বিবেচনা করছেন। নাজিম ভাইয়ের প্রস্তাব শুনে সুপ্তি হেসেছে। বেশ তো- রুমালীর মা হওয়া যাবে। বাবা রাজি হলে কি আর করার আছে। বাবা কি রাজি হবেন? হতে পারেন। বাবা আর নাজিম ভাই একই রাজনৈতিক দল করেন।
চায়ে চুমুক দেয় সুপ্তি। ও জানে ওর আসলে রুমালীর মা হওয়া সম্ভব না। কেননা, এবার ওর পালা। ওরা আসবেই। ওয়াসেক গং! আমাকে কি ওরা পালপাড়ার সেই পরিত্যক্ত স্কুল বিল্ডিংয়ে নিয়ে যাবে ? যেখানে ওয়াসেক গং নিশিকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষন করেছিল? নাকি তুলে নিয়ে যাবে না রেলস্টেশনের পাশের সুরভী আবাসিক হোটেলের চারতলায়? যেখান থেকে থানার দূরত্ব দুশো ফুটও না। তবে আমার চিৎকার শুনে কেউই এগিয়ে আসবে না। একে কি বলে? নিয়তি? আমি কি আত্মহত্যা করছি?
সুপ্তি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে। অন্ধকার বৃষ্টিজল ছুঁয়ে বাতাস এসে আছড়ে পড়ে অন্ধকার বারান্দায়। আশ্চর্য এই রোদবৃষ্টিতে জীবনের আঠারোটা বছর কাটল এই তো অনেক। কে চেয়েছিল এই জীবন। ও ভাবল। সামনের ওই অন্ধকার বারান্দায় কামিনী গাছ নেই।
সুপ্তি কামিনী ফুলের গন্ধ পায় ...
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৩:৩২
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×