যার যার অবস্থানে থেকে তিন মিনিট দাঁড়িয়ে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে একাত্মতা জানাবে পুরো বাংলাদেশ
শাহবাগের নবজাগরণ মঞ্চ থেকে সোমবার এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
টানা সাত দিন ধরে চলে আসা এই আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ব্লগার ইমরান এইচ সরকার বলেন, “যে যেখানে আছেন, কল-কারখানা, গাড়ি বা রাস্তায়, মঙ্গলবার বিকেল ৪টা থেকে ৪টা ৩ মিনিট পর্যন্ত দাঁড়িয়ে যাবেন। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে বাংলাদেশকে স্তব্ধ করে দেন।”
শাহবাগে উপস্থিত হাজারো জনতা তার এই ঘোষণাকে হাত তুল সমর্থন জানায়।
জাতীয় সংসদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার শাহবাগের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করায় এবং সোমবার মন্ত্রিসভায় ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন পাওয়ায় এই আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয় হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন ইমরান।
কোনো ধরনের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সোমবার শাহবাগের এই আন্দোলনের কেন্দ্রস্থলে ১০০ ফুট বাই ৬০ ফুট মাপের বিশাল এক পতাকা টাঙিয়ে দেয়া হয়।
ভাষা সৈনিক আবদুল মতিনও এদিন শাহবাগে উপস্থিত হয়ে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমি অভিভুত। এটা সত্যিকার অর্থেই অসাধারণ। এমন আন্দোলন আমি কোনোদিনও দেখিনি।”
ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিচারণা করে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান এই ভাষা সৈনিক।
আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “সেই বৃটিশ আমল থেকে অসাম্প্রদায়িক একটি রাষ্ট্রের জন্য আমরা তিল তিল করে রক্ত দিচ্ছি। শাহবাগের এ গণজাগরণে পুরো দেশ এক জায়গায় এসেছে। সেই সাথে আমরা ভাষা সৈনিকরাও আপনাদের পাশে আছি।”
দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে এ আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান অশীতিপর এ ভাষা সৈনিক।
সপ্তম দিনেও যেন ক্লান্তি নেই বিক্ষোভকারীদের। দিন-রাত অবিরাম চলা ‘ফাঁসি চাই, যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি চাই/কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই’ স্লোগানে মুখরিত শাহবাগ এলাকা।
অন্য দিনের মতো এদিন সকাল থেকেই স্লোগান আর সংহতি প্রকাশে মধ্য দিয়ে চলছে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও যোগ দিচ্ছেন তাদের সঙ্গে।
গত তিনদিন ধরে শাহবাগে অবস্থান করছেন খুলনা থেকে আসা আব্দুল মজিদ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “যখন মুক্তিযুদ্ধ হয় তখন আমি ক্লাশ টুতে পড়তাম। ভালো করে অনেক কিছুই মনে নেই। তবে রাজাকারদের ভয়াবহতা এখনো মনে আছে। তাই এ প্রজন্মের সাথে সংহতি জানিয়ে তাদের ফাঁসির দাবিতে অবস্থান করছি।”
মজিদ জানান, রাতে শাহবাগেই থাকেন। মাঝে মাঝে দিনের বেলায় ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে গোসল, খাওয়া-দাওয়া ও কিছুটা সময় বিশ্রাম নেন।
ধানমন্ডি থেকে প্রতিদিন সকালে শাহবাগে চলে আসেন ফল ব্যবসায়ী ষাটোর্দ্ধ আব্দুল জব্বার।
তিনি বলেন, “তরুণরা রাজাকারদের বিচার চাচ্ছে, আমিও চাই। ওদের দেখলে নিজের যৌবনের কথা মনে পড়ে, তাই ওদের সাহস দিতে প্রতিদিন চলে আসি। ভোলো লাগে।”
বিক্ষোভের প্রথম দিনে থেকেই শাহবাগে অবস্থান করছেন ব্লগার মো. বাহারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “এ বিক্ষোভ এখন শুধু আমাদের নয়,বরং সারা দেশের আপামর জন সাধারণের। প্রত্যেক যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ অবস্থান চলবে।”
শুরু থেকে বিক্ষোভের সঙ্গে থাকা আরেক ব্লগার মিজানুর রহমান বলেন, মূলত দাবি দুটো- যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি, আর জামায়াতসহ সব ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা।
বর্তমান প্রজন্মকে একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের মতো দায়িত্ব পালন করতে হবে বলে মনে করেন আরেক ব্লগার তকী মোহাম্মদ।
তীব্র রোদের মধ্যেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল এসে দুপুর ১টার দিকেই শাহবাগ এলাকা ভরে তোলেন।
তাদের কাছ থেকে ভেসে আসে, ‘তোমার আমার ঠিকানা/পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘শহীদদের রক্ত/বৃথা যেতে দেবো না’, ‘জ্বালো, জ্বালো/আগুন জ্বালো’, ‘একটা একটা শিবির ধর/ধইরা ধইরা ধোলাই কর’ ইত্যাদি স্লোগান।
‘সাইবার যুদ্ধ’
রাজপথে বিক্ষোভের পাশাপাশি শাহবাগে চলছে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে ‘সাইবার যুদ্ধ’ও।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইটি সোসাইটি, স্লোগান ৭১ এবং ফেসবুক ভিত্তিক একটি গ্রুপ ‘আমজনতা’ যৌথভাবে এ ‘যুদ্ধ’ চালাচ্ছে।
শাহবাগে জাতীয় যাদুঘরের বিপরীতের সড়কদ্বীপের মধ্যে টেবিল চেয়ারে ল্যাপটপ ব্যবহারে করে জামায়াত-শিবির সমর্থিত ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ ও প্রোফাইল রিপোর্ট করছেন তারা। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে শাহবাগ বিক্ষোভ নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনারও জবাব দেয়া হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইটি সোসাইটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন, “আমরা প্রতিনিয়ত এই আন্দোলনের সঠিক চিত্র সাইবার বিশ্বের কাছে তুলে ধরছি। যারা এ আন্দোলন নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদের দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হচ্ছে। জামায়াত-শিবিরের ফেসবুক পেজ, ব্লগ প্রোফাইলের বিরু্দ্ধে রিপোর্ট করা হচ্ছে।”
রিপোর্ট করার মাধ্যমে রোববার পর্যন্ত প্রায় ৫০টি ফেসবুক পেজ এবং ২০টি ব্লগকে বন্ধ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সোর্সঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:৩৮