somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিড়ি বিক্রেতা সেই সুরুজ মিয়ার কোটিপতি বনে যাওয়ার নেপথ্যে

০৭ ই জুন, ২০১২ রাত ৮:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৮০ সালের গোড়ার দিকে বন্দরের মদনপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে চৌকি পেতে আকিজ বিড়ি, বিস্কুট, চকোলেট বিক্রি করতেন সুরুজ মিয়া। এলাকাটি মহাসড়কের পাশে হওয়ায় যানবাহনে ছিনতাই-ডাকাতি সংঘটিত করতে তাঁর মদদে গড়ে ওঠে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। যাদের নেতৃত্বে ছিল সুরুত আলী, কামু, কাবিলসহ ভয়ংকর সন্ত্রাসীরা। নিজের স্বার্থে একপর্যায়ে সুরুজ এ বাহিনীকে উসকানি দিয়ে বিভক্ত করে দেন। এক গ্রুপের নেতৃত্ব দেয় সন্ত্রাসী কামু ও অন্য গ্রুপের সুরুত আলী। তাদের ভয়ে ওই এলাকার মানুষ সব সময় তটস্থ থাকত। মদনপুর, চানপুর, মাধবপুর, কুড়িপাড়া, দেওয়ানবাড়ী, কেওঢালা প্রভৃতি এলাকা তারা দাবড়ে বেড়াত। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন, রাহাজানি_এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তাদের দ্বারা হতো না। আর এসব অপকর্মে পেছন থেকে উসকানি ও মদদ দিতেন সুরুজ মিয়া।
জানা যায়, সুরুজ মিয়া ১৯৮৪ সালের দিকে আকিজ বিড়ির ডিলারশিপ লাভ করেন। এরপর নাটকীয় আচরণ দ্বারা আকিজ গ্রুপেরও সুনজরে আসেন তিনি। ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় গুদামে রক্ষিত বিপুল পরিমাণ বিড়ি নষ্ট হয়ে গেছে_অজুহাত দেখিয়ে কম্পানির কাছ থেকে বিশাল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ আদায় করেন। এ ছাড়া একই সময়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আকিজ বিড়িবাহী একটি ট্রাক ছিনতাই হয়। সুরুজ মিয়ার ঘনিষ্ঠরা জানায়, এটাও তাঁর কাজ। পরে ওই মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে প্রথমে ঢাকা-দাউদকান্দি রুটে কয়েকটি পরিবহন ছাড়েন। এরপর গড়ে তোলেন সুরুজ মিয়া স্পিনিং মিল। সেই সুরুজ মিয়া এখন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের কর্ণধার। হাজার কোটি টাকার মালিক।
এলাকাবাসী আরো জানায়, সুরুজ মিয়ার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুললেই তাদের ওপর অত্যাচারের খৰ নেমে আসে। তাঁর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে এ পর্যন্ত ১০-১২টি খুন হয়েছে। এলাকাবাসীর বদ্ধমূল ধারণা, বিএনপির আমলে ১০ ট্রাক অস্ত্রের চোরাচালানের সঙ্গেও সুরুজ মিয়ার সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মদনপুর বাসস্ট্যান্ড বাজারের এক মুরগি ব্যবসায়ী জানান, সুরুজ মিয়া যখন অর্থবিত্তে দাপুটে হয়ে উঠছিলেন তখনই বিদ্রোহ করে বসে তাঁরই বিশ্বস্ত সুরুত আলী। তাকে শিক্ষা দিতে পেছনে লেলিয়ে দেওয়া হয় সুরুত আলীরই আত্মীয় কামু বাহিনীকে। এক সময় তারা একে অন্যকে ঘায়েল করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় সাত বছর আগে সুরুত আলী নিহত হয় কামু বাহিনীর হাতে। অন্যদিকে এর প্রতিশোধ নিতে কামুর বোন রেহেনাকে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। এ ছাড়া কামু বাহিনীর দুই সহোদর ভাই র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয়। এসব কর্মকাণ্ডে সুরুজ মিয়ার পরোক্ষ মদদ রয়েছে। প্রশাসনের কাছে সাধু সাজতে এবং তাঁর গোপন অপকর্ম যাতে ফাঁস না হতে পারে এ জন্য সন্ত্রাসী কামুকে বছরের পর বছর জেলহাজতে থাকতে হচ্ছে।
জানা যায়, কয়েক বছর ধরে সুরুজ মিয়া টাইটানিক হাউজিং ব্যবসা করতে গিয়ে মদনপুর এলাকার গরিব কৃষকদের শত শত বিঘা ফসলি জমি জবরদখল করে চলেছেন। নামমাত্র মূল্যে ওই সব জমি কৃষকদের কাছ থেকে কিনে নিলেও কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না। মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার আড়ালে তিনি বেপরোয়াভাবে জমি দখল করে চলেছেন। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বন্দরের মদনপুরে জমিয়তে রহমানিয়া মাইজভাণ্ডারিয়া দায়রা শরিফের জন্য লিজপ্রাপ্ত সম্পত্তিতে শিল্পপতি সুরুজ মিয়া জবরদখলের জন্য সাইনবোর্ড লাগানোর ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন দায়রা শরিফের তত্ত্বাবধায়ক হুমায়ূন কবির ভাণ্ডারী। এ ব্যাপারে দায়রা শরিফের তত্ত্বাবধায়ক হুমায়ূন কবীর ভাণ্ডারী কালের কণ্ঠকে জানান, সুরুজ মিয়ার জবরদখলের প্রতিবাদ করতে গেলে তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। বন্দর থানায় এ ব্যাপারে জিডি করার পরও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় অবশেষে আদালতে মামলা করি। হুমায়ূন কবীর আরো জানান, শিল্পপতি সুরুজ মিয়া ভয়ভীতি দেখিয়ে নিরীহ লোকজনের ফসলি জমি নামমাত্র মূল্যে জোরপূর্বক জমি দখল করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিচ্ছেন। হয়রানির ভয়ে সাধারণ মানুষ তাঁর এ অপকর্মের প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না।
বিশিষ্ট কবি ও বন্দর মদনপুর এলাকার সন্তান বাতেন বাহার কালের কণ্ঠকে জানান, সামছুল হক, নজরুলসহ প্রায় ১৩টি মানুষ খুনের সঙ্গে সুরুজ মিয়া প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। তিনি জানান, সুরুজ মিয়া মেডিক্যাল কলেজ করবেন ফুলহারে, অথচ তিনি জবরদখল করে চলেছেন কেওঢালা, মদনপুর, কুশাবো, উত্তর চানপুর মৌজার শত শত বিঘা জমি। সরকারকে ট্যাক্স ফাঁকি দিতে ও টাইটানিক হাউজিং ব্যবসা বাড়াতেই সুরুজ মেডিক্যালের নামে গরিব কৃষকদের এসব সম্পত্তি হাতিয়ে নিচ্ছে। মুরাদপুর এলাকার আলী আহমেদ তাঁর দুই ছেলে মকবুল ও সুমনকে হত্যার দায়ে সুরুজ মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করে জীবননাশের হুমকির মধ্যে রয়েছেন। তিনি জানান, পাওনা টাকা চাওয়ার অপরাধে সুরুজ তাঁর দুই ছেলেকে খুন করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বন্দর থানার মদনপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার ভেতরে চানপুর এলাকায় এশিয়ান হাইওয়ের পাশেই শত শত বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে সুরুজ মিয়া গ্রুপ। সেখানে রয়েছে সুরুজ মিয়া স্পিনিং মিল, সুরুজ মিয়া জুট স্পিনিং মিল, সুরুজ মিয়া প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ, টাইটানিক অয়েল মিলস, টাইটানিক সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, টাইটানিক ও মাস্টার্ড অয়েল মিলস। পুরো এলাকায় রয়েছে নিরাপত্তার চাদর। আকিজ বিড়ি ও আকিজ সিমেন্টের ডিলারশিপ ছাড়াও সেখানে রয়েছে তাঁর বিশাল জমির ব্যবসা। অভিযোগ আছে, এসব জমি গরিব কৃষকদের কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে জোর করে লিখে নিয়েছেন সুরুজ মিয়া। সব ব্যবসা মনিটরিংয়ের জন্য ঢাকায় সেনাকল্যাণ ভবনে নেওয়া হয়েছে অফিস। সেখানে বসেই সুরুজ মিয়া ব্যবসাসহ নানা অপকর্মের দেখভাল করেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মদনপুর-চানপুর এলাকায় সুরুজ মিয়া গ্রুপের ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে মিলগেটে সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই উপস্থিত সবাই সটকে পড়ে। এ সময় নিরাপত্তা কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বলেন, 'এখানে কারো সঙ্গে দেখা করা বা কথা বলা যাবে না। সাহেবের নিষেধ আছে।' মালিক সুরুজ মিয়ার মোবাইল ফোন নম্বর চাইলে তিনি বলেন, 'আমার কাছে নেই। আপনাদের কথা বলার থাকলে ঢাকায় সেনাকল্যাণ ভবনের অফিসে গিয়ে দেখা করেন।' এ ব্যাপারে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকতার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'শুনেছি সুরুজ মিয়া শিল্পপতি হলেও মানুষ ভালো নন। হোয়াইট ক্রিমিনাল প্রকৃতির। তিনি জানান, তাঁর বিরুদ্ধে থানায় দু-একটি জিডি থাকলেও কোনো মামলা নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০১২ রাত ৮:৩৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×