somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাথমিক স্কুলে ৩৭ হাজার দপ্তরি নিয়োগে টানা হেঁচড়া

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রায় ৩৭ হাজার দপ্তরি কাম প্রহরী নিয়োগ নিয়ে টানাহেঁচড়া চলছে। নীতিমালা উপেক্ষা করে নিয়োগদানের কার্যক্রম চলছে। আবার এসব নিয়োগকে কেন্দ্র করে অবাধ বাণিজ্যের সুযোগও তৈরি হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি। কিন্তু তাকে কোনো দায়িত্বে না রেখে প্রথমে এমপিকে পরামর্শক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিয়োগ কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে পরিপত্র জারি করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করা হলে সমপ্রতি নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের পরামর্শ নেয়ার বিধান রেখে আরেকটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরী নিয়োগকে কেন্দ্র করে শুধু বাণিজ্য নয়, দলীয় বিবেচনায় নিয়োগের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। আগে একজনকে অর্থাত্ এমপিকে তুষ্ট করলে হয়তো হতো, আর এখন উপজেলা চেয়ারম্যানকেও তুষ্ট করতে হবে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আগে এমপিদের পরোক্ষ হস্তক্ষেপের সুযোগ থাকলেও এখন উপজেলা চেয়ারম্যানরাও সে সুযোগ পাচ্ছেন।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন-অর-রশিদ হাওলাদার বলেছেন, মন্ত্রণালয়গুলো ইচ্ছাকৃতভাবে উপজেলা পরিষদে ঝগড়া-বিবাদ লাগিয়ে রাখছে। তাদের কারণেই উপজেলা কার্যকর হতে পারছে না। তিনি বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানরা উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি। শিক্ষা ক্ষেত্রের যাবতীয় কার্যক্রমে সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায়ই থাকবেন তারা। অথচ চেয়ারম্যানদের পরামর্শক করে প্রকৃতপক্ষে তাদের অমর্যাদা করা হচ্ছে। একাধিক ইউএনও বলেছেন, এমনিতেই নানা ইস্যুতে এমপিদের সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যানদের বিরোধ লেগে আছে। সামান্য নৈশ্যপ্রহরী কাম দপ্তরি নিয়োগ নিয়ে এখন আবার নতুন করে বিরোধ শুরু হবে। এসব ইউএনও'র মতে উপজেলা চেয়ারম্যানকে শিক্ষা কমিটির সভাপতি করে তাদের আবার পরামর্শক নিয়োগ করাটা ঠিক হয়নি। তাছাড়া এমপি যেখানে পরামর্শক সেখানে আবার উপজেলা চেয়ারম্যানরা পরামর্শক হন কীভাবে। এখন দুইজনের দুই রকম মত পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলবে বলে মত দেন তারা।
সরকার দেশের ৩৬ হাজার ৯৮৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সমসংখ্যক দপ্তরি কাম প্রহরী নিয়োগ দিচ্ছে। আউট সোর্সিং-এর মাধ্যমে সম্পূর্ণ স্থানীয়ভাবে এই নিয়োগের নীতিমালা প্রকাশ করা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়োগ দেবে। এসব ব্যবস্থাপনা কমিটি স্থানীয় এমপির মনোনীত প্রতিনিধি দ্বারা গঠিত। নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার একজন প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়ে তিন সদস্যের যাচাই-বাছাই কমিটি ২০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী চূড়ান্ত করবে। প্রতিটি পদের বিপরীতে তিনজনের একটি প্যানেল করে ক্রমিক নির্ধারণ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠাবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রথম ক্রমিকের ব্যক্তিকে নিয়োগ দেবেন। যদি কোনো কারণে প্রথম ব্যক্তি অনাগ্রহ প্রকাশ করে তবে দ্বিতীয় এবং একইভাবে তৃতীয় ব্যক্তির নাম আসবে। কিন্তু ক্রমিক অনুসরণে কোনো বাধ্যবাধকতা রাখা হয়নি নীতিমালায়। ফলে অনেকে আশংকা করছেন ক্রমিকের ফাঁদে ফেলে ক্ষেত্রবিশেষ এমপি-উপজেলা চেয়ারম্যানরা দরকষাকষির সুযোগ পাবেন। আর এতে দলীয়করণের পাশাপাশি সুযোগ তৈরি হবে বাণিজ্যের। চূড়ান্তভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত প্রার্থী মাসিক সাকুল্যে ৭ হাজার টাকা বেতন পাবেন।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের ওয়ার্ডের বাসিন্দা না হলে পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে প্রার্থী বাছাই করা যাবে। ১৫ দিনের সময় দিয়ে আবেদন আহবান করা হবে।
তিন দফায় মোট ৩৬ হাজার ৯৮৮ জন দপ্তরি কাম প্রহরী নিয়োগ হবে। প্রথম দফায় ১২ হাজার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে একজন করে নিয়োগ হবে। এসব বিদ্যালয় বাছাই প্রক্রিয়ায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপ। বছরের বৃত্তি, সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলসহ বেশকিছু যোগ্যতার ভিত্তিতে বিদ্যালয় বাছাই করার নিয়ম বেধে দেয়া হলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা মানা হয়নি। স্থানীয় এমপির দেয়া তালিকাই অনুমোদন করতে হয়েছে ইউএনও এবং শিক্ষা কর্মকর্তাকে। ক্ষেত্রবিশেষ একজন প্রার্থীও বৃত্তি পায়নি-এমন বিদ্যালয়ও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আবার সর্বোচ্চ বৃত্তিপ্রাপ্ত বিদ্যালয় বাদ পড়ার ঘটনাও রয়েছে। কোথাও কোথাও নীতিমালা উপেক্ষা করে নেয়া হচ্ছে লিখিত পরীক্ষা।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতিমধ্যে নিয়োগ নিয়ে রীতিমত দেনদরবার শুরু হয়ে গেছে। প্রতিটি পদের দাম হাঁকা হচ্ছে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা। রাজনৈতিক পরিচয়ে একটি চক্র গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে প্রতারণায় মাঠে নেমেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব এমএম নিয়াজউদ্দিন বলেন, অনিয়ম, অন্যায়ের কোনো সুযোগ দেয়া হবে না। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের মনোভাব অত্যন্ত কঠোর। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই তদন্তের ব্যবস্থা করে প্রয়োজনে নিয়োগ বাতিল করে দেয়া হবে। তিনি দালাল চক্র থেকে জনগণকে সাবধান থাকারও পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, নিয়োগ নিয়ে কোন ধরনের অভিযোগ তার কাছে এখনো আসেনি।

দেশের একাধিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, তারা অসহায়ের মধ্যে আছেন। নীতিমালা মেনে তাদের কিছুই করার সুযোগ নেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির নির্দেশনার বাইরে কিছু করা হলে হয়রানির ঝুক্কি রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তারা। অনেকে মোটা অংকের টাকাও হাতিয়ে নিচ্ছে বলে তারা জানতে পারছেন।
হায় রে দেশ । সার্কুল্য ৭০০০ টাকা বেতনের এক পিওন নিয়োগের দায়িত্ব আমরা ঠিক ভাবে করতে পারি না । নিয়োগের আগেই কিভাবে টানাটানি লাগছে ।
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:০৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

টের পেলে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×