ঐতিহ্যবাহী সিলেট পিঠা পুলিতে সমৃদ্ধ। যার অন্যতম চুঙ্গাপিঠা বা চুঙ্গাপোড়া। রুই, কাতলা, কৈ, মাগুর প্রভৃতি মাছ ভাজা দিয়ে চুঙ্গাপিঠা খাওয়া এককালে সিলেটের নান্দনিক ঐতিহ্য ছিল। বাড়িতে আসা মেহমান, নতুন বর, অতিথিকে চুঙ্গাপিঠা, মাছ ভাজা আর নারিকেলের ক্ষীরসা পরিবেশন করাটা ছিল গর্বের বিষয়। না করলে বড়ই লজ্জা! কিন্তু কালের আবর্তে ঐতিহ্যবাহী চুঙ্গাপিঠা ও হারিয়ে যেতে বসেছে। চুঙ্গাপিঠা তৈরীর প্রধান উপকরণ ঢলুবাঁশ ও বিন্নী (বিরন) চালের সরবরাহ এখন প্রায় নেই-ই। আগে যেখানে বড়লেখা, পাথারিয়া পাহাড়, কুলাউড়া, শ্রীমঙ্গল, রাজনগর, জুড়ি প্রভৃতি এলাকায় প্রচুর ঢলুবাঁশ উৎপন্ন হতো, এখন আর সে অবস্থা নেই। বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাওয়া, মানুষের অনীহা, অসচেতনতা প্রভৃতি কারণে ঢলুবাঁশ এখন বিলুপ্তির পথে। আর ঢলুবাঁশ ছাড়া চুঙ্গাপিঠা তৈরী অসম্ভব। কেননা ঢলুবাঁশে এমন এক ধরণের তৈলাক্ত পদার্থ থাকে যা বাঁশকে আগুনে পোড়া থেকে রক্ষা করে। ফলে আগুনে না পোড়েই বাঁশের ভেতর থাকা পিঠা সিদ্ধ হয়ে যায়। আধুনিকতা ও তথাকথিত অত্যাধুনিকতার ফাঁদে পড়ে আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্ত্ত একের পর এক হারিয়ে যাচ্ছে কালের অতল গহবরে। কোনো একদিন ঘুম ভেঙ্গে দেখবো আমাদের ‘নিজস্বতা’ বলতে কিছুই নেই!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:১১