somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৬৩ তম ঐতিহাসিক নানকার কৃষক বিদ্রোহ দিবস আজ

১৮ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের দেশে অনেক বিদ্রোহ ঘটে গেছে, যেমন- কৃষক বিদ্রোহ, সাঁওতাল বিদ্রোহ ইত্যাদি । এমনি এক কৃষক বিদ্রোহ এর নাম নানকার বিদ্রোহ ।
১৮ আগস্ট ১৯৪৯ সাল। মানব সভ্যতার ইতিহাসে জন্ম নিয়েছিল একটি নিমর্ম ইতিহাস। ১৯৩৭ সালের ঘৃন্য নানকার প্রথার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে গিয়েঐ দিন ঝরে পড়ে ৬টি তাজাপ্রাণ। ব্রজনাথ দাস (৫০) কটুমনি দাস (৪৭) প্রসন্ন কুমার দাস (৫০) পবিত্র কুমার দাস (৪৫) অমূল্য কুমার দাস (১৭) ও রজনী দাস নামের এই ছয়জন কুষক তাদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে পূর্বসূরীদের ঋণ শোধ করেন। রক্তাক্ত পরিসমাপ্তি ঘটে নানকার আন্দোলনের। আর তারই

ধারাবাহিকতায় ১৯৫০ সালে সরকার জমিদারী প্রথা বাতিল ও নানকার প্রথা রদ করে কুষকদের জমির মালিকানার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। বাঙালি জাতির সংগ্রামের ইতিহাসে বিশেষ করে অধিকারহীন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যে সকল গৌরবমন্ডিত আন্দোলন বিদ্রোহ সংগঠিত হয়েছিল তার মধ্যে নানকার বিদ্রোহ অন্যতম।
উর্দূ শব্দ নান এর বাংলা প্রতিবাদ ‘রুটি’। আর রুটির বিনিময়ে যারা কাজ করতেন তাদেরকে বলা হত নানকার। বৃটিশ আমলে সামন্তবাদী ব্যবস্থার সবচেয়ে নিকৃষ্টতম শোষণ পদ্ধতি ছিল এই নানকার প্রথা। নানকার প্রজারা জমিদারের দেওয়া বাড়ি ও সামান্য কৃষি জমি ভোগ করতো। কিন্তু ঐ জমি বা বাড়ির উপর তাদের মালিকানা ছিল না। তারা বিনা মজুরিতে জমিদার বাড়িতে বেগার খাটত। চুন থেকে পান খসলেই তাদের উপর চলতো অমাুষিক নির্যাত॥ নানকার প্রজার জীবন ও শ্রমের উপর ছিল জমিদারের সীমাহীন অধিকার।
নানকার আন্দোলনের সংগঠক কমরেড অজয় ভট্টাচার্যের দেওয়া তথ্য মতে, সে সময় বৃহত্তর সিলেটের ৩০ লাখ জনসংখ্যার ১০ ভাগ ছিল নানকার এবং নানকার প্রথা মূলত: বাংলাদেশের উত্তর থেকে পূর্বাঞ্চলে অর্থাৎ বৃহত্তর সিলেটে চালু ছিল। ১৯২২ সাল থেকে ১৯৪৯ সাথে পর্যন্ত কমিউটিষ্ট পার্টি ও কৃষক সমিতির সহযোগিতায় বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, বড়লেখা কৃলাউড়া, বালাগঞ্জ, ধর্মপাশা থানায় নানকার আন্দোলন গড়ে ওঠে।
ঐতিহাসিক নানকার বিদ্রোহের সূতিকাগার ছিল বিয়ানীবাজার থানা। সামন্তবাদী শোষণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিয়ানীবাজার অঞ্চলের নানকার ও কৃষকরা সর্বপ্রথম বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। লাউতা বাহাদুরপুর অঞ্চলের জমিদারা ছিল অতিমাত্রায় অত্যাচারী। তাদের অত্যাচারে নানকার, কৃষক সবাই ছিল অতিষ্ঠ। লোক মুখে শোনা যায়, বাহাদুরপূর জমিদার বাড়ির সামনে রাস্থায় সেন্ডেল বা জুতা পায়ে হাঁটা যেত না। ছাতা টাঙ্গিয়ে চলা ও ঘোড়ায় চড়াও ছিল অপরাধমূলক কাজ। যদি কেউ এর ব্যতিক্রম করতো তবে তাকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হতো। জমিদারদের এহেন অত্যাচারে অতিষ্ঠ হলেও তার শক্তির সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করার সাহস কারোরই ছিল না। শোনা যায় নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করেও কেউ জমিদারদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পেত না।
দিনে দিনে জমিদারদের অত্যাচার বাড়ত থাকে সেই সাথে বাড়তে থাকে মানুষের মনের ক্ষোভ, এই অনাচারের প্রতিকার চায় সবাই। তাই গোপনে গোপনে চলে শলাপরামর্শ। কেউ কেউ আবার সাহস সঞ্চার করে এ সময় নানকার ও কৃষকদের সংগঠিত করতে কষক সমিতি ও কমিউনিষ্ট পার্টি সক্রিয় হয়। অজয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে চলতে থাকে নানকার কৃষকসহ সকল নির্যাতিত জনগনকে সংগঠিত করার কাজ। নিপীড়িত মানুষকে সংগঠিত করতে সে সময় অজয় ভিট্টাচার্যের সাথে কাজ করেছেন শিশির ভট্টাচার্য (লাউতা), ললিতপাল (লাউতা), জোয়াদ উল্ল্যা (নন্দিরপল), আব্দুস সোবহান (দক্ষিণ পট্টি) ও শৈলেন্দ্র ভট্টাচার্য (লাউতা) সহ আরও কয়েকজন। তাদের নেতৃত্বে নানকার কৃষক ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রকাশ্য বিদ্রোহ করে জমিদারের বিরুদ্ধে। বন্ধ হয়ে যায় খাজনা দেওয়া এমনকি জমিদারদের হাট-বাজারের কেনাকাটা পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়া হয়। বিভিন্ন জায়গায় জমিদার ও তার লোকজানকে ধাওয়া করে তাড়িয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটে। এতে ভীত সন্ত্রস্থ জমিদাররা পাকিস্তান সরকারের শরণাপন্ন হয়ে এ অঞ্চলের নানকার কৃষকদেরকে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন করে। জমিদারদের প্ররোচনায়পাকিস্তান সরকার বিদ্রোহ দমনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৭ আগষ্ট ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শ্রাবণী সংক্রান্তি। প্রথম দিনের উৎসব আরাধনা শেষে আগামী দিন মনসা সূজার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে গভীর রাতে বিছানার গা এলিয়েছেন সানেশ্বর উলুউরির মানুষ। ভোরে উঠে পূজা আর্চনা, আনন্দ উৎসব আরও কত কি ভাবতে ভাবতে গভীর ঘুমে ঢলে পড়ে সবাই।কিন্তু ভোরের সূর্য ওঠার পেটোয়া বাহিনী আক্রমণ করে সানেশ্বরে। ঘুমন্ত মানুষ শুকুনের আচমকা ঝাপটায় ঘুম ভেঙ্গে দিগবিদিক পালাতে তাকে। সানেশ্বর গ্রামের লোকজন পালিয়ে পার্শ্ববর্তী উলুউরিতে আশ্রয় নেয়। উলুউরি গ্রামে পূর্ব থেকেই অবস্থান করছিলেন নানকার আন্দোলনের নেত্রী অপর্ণা পাল, সুষমা দে, অসিতা পাল ও সুরথ পাল। তাদের নেতৃত্বে উলুউরিও সানেশ্বর গ্রামের কৃষক নারী পুরুষ সুরকারী রাহিনীর মুখোমুখে দাঁড়াবার প্রস্তুতি নেয় এবং লাটিসোটা, হুজা, ঝাটা ইত্যাতি নিয়ে মরণ ভয় তুচ্ছ করে সানেশ্বর ও উলুউরি গ্র্রামের মধ্যবর্ত্তী সুনাই নদীর তীরে সম্মুখ যুদ্ধেলিপ্ত হয় সরকারি ও জমিদার বাহিনীর সাথে। কিন্তু ইপিআরের আগ্নেয়াস্ত্রের সামনে লাটিসোটা নিয়ে বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি কৃষকরা। ঘটনা স্থলেই ঝরেন পড়ে ৬টি তাজা প্রাণ। আহত হোন হৃদয় রঞ্জন দাস, দীননাথ দাস, অদ্বৈত চরণ দাসসহ অনেকে। বন্দি হোন এই আন্দোলনের নেত্রী অপর্ণা পাল, সুষমা দে, অসিতা পাল ও উলুউরি গ্রামের প্রকাশ চন্দ্র দাস, হিরণ বালা দাস, প্রকাশ চন্দ্র দাস, প্রিয়মণি দাস, প্রমোদ চন্দ্র দাস ও মনা চন্দ্র দাস। এ ঘটনর পরন আন্দোলন উত্তাল হয় সারাদেশ। অবশেষে ১৯৫০ সালে প্রবল আন্দোলনের মুখে সরকার জমিদারি প্রথা বাতিল ও নানকার প্রথারদ করে কৃষকদের জমির মালিকানা দিতে বাধ্য হয়।
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:০২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×