somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতঃপর ফেরা...(গল্প)

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৭:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অতঃপর ফেরা...(গল্প)
বিলাল মাহিনী
মেঘদের গুতোগুতি আর বোম্বিং-এ সারা আকাশ জুড়ে ভয়ঙ্কর যুদ্ধাভাব। অল্প সময়ের ব্যবধানে গোটা আকাশ দখলে নিল মেঘেরা। মেঘদের বিশাল দেহাবর্তে ঢাকা পড়লো সূর্যটাও। আপসা অন্ধকারে নিমজ্জিত বাংলার দক্ষিণাকাশ। শুক্রবার। জুম্মার আজান হয়ে গেছে। শাহিন ও মাহিন আটকা পড়েছে মেঘ-বৃষ্টির ফাঁদে। মির্জাপুর বাজারের এক মুদি দোকানে বসে হাজারী লাল নাগের একটি যাত্রাপালা পড়ছে দুজন। মুক্তিযুদ্ধপূর্ব মির্জাপুরের একমাত্র বিএ পাশ মাস্টার হাজারী বাবু। পরবর্তীতে ঢাবি থেকে বাংলায় এমএ। গত পঞ্চান্ন বছরে প্রায় তিন’শ যাত্রাপালা ও নাটকের সফল রচয়িতা ও অভিনেতা তিনি। অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও বেতার নাট্য ব্যক্তিত্ব হাজারী বাবুর সাক্ষাৎকারে গিয়েছিলো শাহিনরা।
বাবুর বাসা থেকে বের হতেই একরাশ মেঘ ও মুষল বৃষ্টিতে তাই তাঁর দেয়া বই পড়ছিলো তারা। হঠাৎ ক্রিং ক্রিং স্বরে ডেকে উঠলো মাহিনের মোবাইল। রিসিভ করতেই দুঃসংবাদ। পাড়ার মিলন চাচা বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে গাছ থেকে পড়ে মৃত্যু পথযাত্রী। মহা চিন্তায় পড়লো ওরা। কিন্তু কী করবে? আকাশ ফাঁটা ঢল। বের হবে কীভাবে? কিছুক্ষণ যেতেই আবার ফোন। ‘মিলন চাচা হাসপাতাল পথেই মারা গেছেন’ বলল, মাহিনের স্ত্রী মিলি। শিয়াল ভিজা ভিজে দ্রুত ফিরে এলো বাড়িতে ওরা। জানতে পারলো, দেড়’শ টাকার এক মান্দার গাছ কাটতে গিয়ে কাঠ শ্রমিক মিলন চাচা নিজের অমূল্য জীবনটাই হারালেন। তাইতো লোকে বলে, ‘অতি লোভে তাঁতি নষ্ট’।
মিলন চাচার তিন বৌ। প্রথম বৌ অনেক আগেই মারা গেছেন। তার এক মেয়ে। দ্বিতীয় বৌয়ের দুমেয়ে ও এক ছেলে। আর তৃতীয় পক্ষে রয়েছে দু’ছেলে। দিন মুজুরে সংসার। নুন আনতে পানতা ফুরায়। জীবিত দু’স্ত্রীর একজন স্থানীয় মিল শ্রমিক অন্যজন পরের বাড়িতে ও ক্ষেতে কাজ করে। দু’-তিনটি এনজিও’র প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা ঋণের বোঝা চাপিয়ে অকাল প্রায়ত হয়েছেন মিলন চাচা।
দ্বিতীয় স্ত্রী’র একমাত্র ছেলে নয়ন ৭ম শ্রেণিতে পড়াকালিন শাহিনের দোকানে থাকতো। পড়াশোনার পাশাপাশি বেশ আয়ও হতো তার। কিন্তু অল্প দিনেই ইচড়ে পাকা ছেলেটা বছর দেড়েক পর দোকান ছাড়লো। এসএসসি’র পর বাউন্ডেলে নয়ন ও তার দুই বন্ধু মিলে একটা মটর সাইকেল ভাড়া নিয়ে হাইস্পিডে চালাতে গিয়ে আকষ্মিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিপতিত হয়। দীর্ঘ প্রায় তিন মাস খুলনা মেডিকেলে চিকিৎসার পর বাড়িতে ফেরে নয়ন। ভর্তি হয় নিজের গ্রামের কলেজে। এখনো তার পায়ের মধ্যে স্টেইনলেস রড ঢুকনো। আবারো অপারেশন করে তা বের করা লাগবে। এমতাবস্থায় ‘মড়ার উপর খাড়ার ঘা’ দিলো তার বাবার মৃত্যু।
মিলন চাচার অসহায় দু’ স্ত্রী ও তার সন্তানদের এখন অনিশ্চিত জীবন। মিলন চাচা কাঠ শ্রমের পাশাপাশি একটা ব্যাটারি চালিত ইজিভ্যান চালাতো। তাই ছোট স্ত্রীর দু’ ছেলেকে ভ্যানটা দেয়া হয়। অন্যদিকে মেঝ স্ত্রীর একমাত্র ছেলে নয়ন পুনরায় ফিরে আসে মাহিনের দোকানে। মাহিন বাবাহারা এতিম ও পঙ্গুপ্রায় ছেলেকে আশ্রয় দেয় সব অভিমান ভুলে।
মাহিন স্থানীয় একটি কলেজের প্রভাষক। তিনি দেখলেন, দোকানের আয় ইনকাম না হলেও তার চলবে। কিন্তু নয়ন! তার তো একটা ইনকাম সোর্স দরকার। কিন্তু ভাঙ্গা পায়ে সে কোনো কঠিন কাজ করতে পারবে না কোনোদিন। তাই সমাদর করেই তাকে দোকানে আনে। শুধু তাই নয়, তিনি দোকানের অর্ধেক মালিকানা নয়নকে দিয়ে দেয়। মাহিনের টেলিকম ব্যবসা। নয়ন আসায় দু’জনে মিলে একটা ফটোপ্রিন্টার ও ফটোকপিয়ার কেনে ব্যাংক লোন নিয়ে। দু’জনে ভাগাভাগিতে লোন পরিশোধ করে তারা। এভাবে স্ববলম্বি হয় নয়ন।
নয়নের চোখে এখন স্বপ্ন। ব্যবসায় করবে। বাড়ি করবে। লাল টুকটুকে একটা বৌ আনবে। সোনার সংসার হবে তার। ইতোমধ্যে নবমের এক ছাত্রীর সাথে দিবানিশী চলছে তার টেক্সট বিনিময়। প্রেমোজলে হাবুডুবু খেতে দেখা যায় তাকে মাঝে মধ্যে।
তবে মাহিনের কাছে কৃতজ্ঞতাবদ্ধ নয়ন। তার অকৃত্রিম ভালোবাসা ও উদারতা তাকে তুলে এনেছে গভীর খাত থেকে। তবু কী এক অদৃশ্য ভাবনা তাড়া করে মাহিনকে সারাক্ষণ। আগেও কয়েক জনকে পথ থেকে ধরে এনে আশ্রয় দিয়েছিলো মাহিন। কিন্তু দেখা যায়, নিজের আখের গুছিয়ে কেটে পড়েছিলো সাবই। স্বার্থের ভেলায়, সাবই হারায়। এদিকে সদ্য বাবা হারা নয়ন প্রায়ই স্বপ্নের ঘোরে কেঁদে ওঠে। আঁতকে ওঠে। বাবা বাবা বলে চিৎকার করে ওঠে গভীর রাতে।
১৬-১১-১৮

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৭:৫১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×