somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চক্র (উপন্যাস)

২৫ শে মার্চ, ২০০৯ বিকাল ৫:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তিনদিনের ছুটি। এ ছুটিতে কারো হাতে যদি অঢেল সময় থাকে, উপন্যাসটা পড়ে দেখতে পারেন। মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম।

এক

ঘাসের উপর দুটো ঘুঘু পাখি বসে আছে।
দৃশ্যটা অদ্ভুত।
ঘুঘু নির্জনতাপ্রিয় পাখি, এই ভিড়ে বসে থাকার কথা না। হাসপাতালের ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড মানেতো রীতিমতো বাজার। এই হট্টগোলে নিশ্চিন্তমনে পাখিদুটো ঘোরাফেরা করছে। ঢাকা শহরে লোকের ভিড়ে থেকে এ দুটো পাখির সাহস বেড়ে গেছে, তাই মানুষের আসা-যাওয়া কেয়ার করছে না। কিংবা গ্রাম থেকে কাজের সন্ধানে এই ব্যস্ত নগরে এসে পাল্টে যাওয়া মানুষগুলোর মতো এ পাখিগুলোরও স্বভাব পাল্টে গেছে।
কথায় বলে ভিটেয় ঘুঘু চড়ানো। এ কথা বলে হুমকি দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়, এমনই দুরবস্থা করা হবে যেন ভিটেমাটি খালি পড়ে থাকে। সেখানে সকাল বিকেল ঘুঘু পাখি মচ্ছব করবে। বাংলার এ প্রবাদ থেকে বোঝা যায়, ঘুঘু পাখি নির্জনতা পছন্দ করে। তাহলে বেলা এগারোটায় এই হৈচৈয়ের মধ্যে পাখিদুটো কী করছে?
কপাল কুঁচকে ভাবতে থাকে তন্ময়।
পাখি দুটোকে দেখে প্রিয় কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুলার একটি কবিতা মনে পড়ে গেল,

থাকুক আমার এটুকু স্মৃতি থাকুক
একলা থাকার খুব দুপুরে
একটা ঘুঘু ডাকুক

এ কবিতাও কী ঘুঘুর নৈশব্দ প্রিয়তাই প্রমাণ করছে না?

টানা এক ঘন্টা ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তন্ময়। এই এক ঘন্টায় চার কাপ চা আর পাঁচটি সিগারেট শেষ করেছে। এখন বসে বসে কবিতা আউড়ানো ছাড়া আর করার কিছু নেই।
আমিনুলের দেখা নাই।
কোনো অ্যাসাইনমেন্টেই সময়মতো পৌছায়না বলে বদনাম আছে আমিনুলের। গতকাল রাতে চিফ রিপোর্টার এই অ্যাসাইনমেন্টটা আমিনুলকে দেওয়ার সময় প্রতিবাদ করেছিলো তন্ময়। জিয়ার ডে অফ থাকায় সকালে আমিনুল ছাড়া আর কোনো ফটোগ্রাফার ফ্রি ছিল না। বাধ্য হয়ে তাকেই মেনে নিতে হয়েছে। রাতে অফিস থেকে বেরুবার সময় বার বার করে বলেছিলো, ঠিক সকাল দশটার মধ্যে মেডিকেলে পৌছে যেতে। তখন দাঁত কেলিয়ে আমিনুল বলেছিলো,

ওক্কে বস, কোনো চিন্ত কইরেন না। দশটায় ঠিক পৌছায়া যামু।

এখন এগারোটা বাজতে চললো, কোনো খবর নেই। মোবাইলে ফোন করলে বলছে- সংযোগ দেওয়া সম্ভব না। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে চক্রবৃদ্ধিহারে মেজাজ খারাপ হচ্ছে।

রঞ্জুর ফ্রাস্ক থেকে আরেক কাপ লেবু চা খাবে কিনা ভাবতে ভাবতে প্যাকেট খুলে সিগারেট বের করে তন্ময়। গত এক ঘন্টার বিরক্তিকর মুহুর্তগুলোতে কিছুটা বিনোদন যুক্ত করেছে এই রঞ্জু। দেখতে ছোটখাট হলে কি হবে, একজন পাঁকা ব্যবসায়ী। সুযোগ পেলেই গ্রাহককে নয়-ছয় বুঝিয়ে বোকা বানাচ্ছে।

একটু আগেই ইমার্জেন্সিতে গুরুতর আহত মধ্যবয়স্ক এক লোককে নিয়ে ঢুকলো কয়েকজন। কিখুণ পর ওই দলের তিন যুবক বাইরে এসে সিগারেট ধরায়। পাশেই ঘুরঘুর করছিলো রঞ্জু। যুবকদের দুজন কাছ থেকে চা নিয়ে খেতে থাকে। অন্যজন সম্ভবত চা রসিক নন। চা পানের ফাঁকে ফাঁকে চলছিলো উত্তেজিত বাক্য বিনিময়। একটু দূওে থাকায় তাদেও কথাগুলো স্পষ্ট শুনতে না পেলেও তন্ময় বুঝতে পারে, যুবকেরা একইসঙ্গে কোনোকিছু নিয়ে উত্তেজিত এবং উদ্বিগ্ন। কথার ফাঁকেই একজন চায়ের দাম পরিশোধের জন্য বিশ টাকার একটি নোট বাড়িয়ে দেল রঞ্জুর দিকে। আর ওই পিচ্চিও অ¤ান বদনে দু কাপ রং চায়ের দাম আট টাকার বদলে বার টাকা রেখে আট টাকা ফেরত দেয়।

একটু দূর থেকে পুরো বিষয়টি ল্য করে তন্ময়।
প্রথমে ভেবেছিল ছোট মানুষ, ভুল কওে আট টাকা দাম রাখার বদলে আট টাকা ফেরত দিয়েছে। কিন্তু একটু পরেই আরেকটি দলের কাছে চা বিক্রি করতে গিয়ে একই কান্ড ঘটায় রঞ্জু। এবার তার কপাল খারাপ। টাকা গুনে বাকি টাকাটা ফেরত চাইলো গ্রাহক। ভুল হয়ে গেছে, এমন একটি ভঙ্গী করে সঙ্গে সঙ্গেই টাকা ফেরত দিলো রঞ্জু। অন্য যে কেউ এ ঘটনায় মনে করবে ভুল করে বুঝি চা বিক্রেতা কম টাকা ফেরত দিয়েছে, কিন্তু পর পর দুটি ঘটনা চোখের সামনে ঘটতে দেখেছে বলেই তন্ময় জানে, এটা পিচ্চি চা ওয়ালার বিজনেস ট্রিক। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসা গুরুতর আহত বা অসুস্থ্য রোগীর শঙ্কিত ও শোকাহত স্বজনদের তুচ্ছ টাকা-পয়সার হিসেব মাথায় না থাকাটাই স্বাভাবিক। এ সুযোগে দিব্যি টু পাইস কামিয়ে নিচ্ছে রঞ্জু মিয়া।

টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে যতোই ছল-চাতুরি করুক, রঞ্জুর চাটা খেতে বেশ। আরেক কাপ খাওয়া যেতে পারে। সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় তন্ময়।

সময় কাটানোর জন্য রঞ্জুর সঙ্গে আলাপ জুরে দেয়।
‘কতোদিন ধইরা চা বেচস?’
‘এই ধরেন চাইর-পাঁচ বচ্ছর’
রঞ্জর বয়স হবে বড়জোর দশ। চার-পাঁচ বছর ধরে চা বিক্রি করছে? হাসি চেপে আলাপ চালিয়ে যায় তন্ময়, সময়তো কাটাতে হবে! আর তা ছাড়া রঞ্জুর কথা বলার ভঙ্গিটাও বেশ মজার। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে গম্ভীর হয়ে কিছণ ভেবে নেয়; যেন একটি ভাবম্ভীর প্রেস কনফারেন্সে বসে ঘাঘু সাংবাদিকের জটিল প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে।
‘দিনে কয় টাকা লাভ হয়?’
‘পঞ্চাশ-একশ ট্যাকা।’
এরপর আর আলাপ এগোয় না। গ্রাহক ধরতে ফ্যাস্ত হাতে ছুটে যায় রঞ্জু। সেটাও একটা দৃশ্য বটে। প্রায় নিজের সমান দৈর্ঘের ফাস্কটি কী অনায়াসে বয়ে বেড়াচ্ছে।

‘ভাই, পাঁচশ টাকার ভাংতি হবে?’
মাধ্য বয়সী লোকটা কিছুণ ধরেই এখানে-সেখানে ভাংতি খুঁজছেন। এবং যথারীতি কোনো দোকানদারই তাকে ভাংতি দিচ্ছে না। এদিকে যে সিএনজিতে করে তিনি এসেছেন সেটা আবার যাত্রী তুলে নিয়েছে। এখন তাড়া দিচ্ছে ভাড়া পরিশোধের জন্য। ঘটনার চাপে লোকটি ক্রমেই দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। সঙ্গের কিশোরী মেয়েটিও ঘেমে-নেয়ে একাকার। যেন পাঁচশ টাকার ভাংতি না থাকাটা মস্ত অপরাধ।
কিন্তু তন্ময়ের কাছে ভাংচি চেয়ে লাভ কী? পকেটে সাকুল্যে শ তিনেক টাকা আছে। এর মধ্যে একটি পঞ্চাশ টাকার নোটে টেপ মারা। গত কদিন ধরে বহুবার চেষ্টা করেও চালানো যায়নি। ভাংতি দিতে না পারলেও অসহায় ভদ্রলোকের সাহায্যে এগিয়ে যায় তন্ময়।

‘তোমার ভাড়া কতো?’ সিএনজির ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করে তন্ময়।
‘আশি ট্যাকা।’
রঙ্গমঞ্চে তন্ময়ের মতো একজন তরুণের প্রবেশে কিছুটা হকচকিয়ে যায় সিএনজি চালক। কিশোরীসমেত একজন মধ্যবয়স্ক লোকের সঙ্গে ঝাড়ি দিয়ে কথা বলা যায়। কিন্তু জ্বলন্ত সিগারেট হাতে, লম্বা চুলের জিন্স পরা তরুনের সঙ্গে যথেষ্ট সাবধানে কথা বলতে হবে- এটুকু বুদ্ধি তার আছে।
‘তোমার কাছে চারশ টাকা নাই?’
‘না স্যার।’
এবার সিএনজিতে বসে থাকা যাত্রীর দিকে তাকায় তন্ময়।
‘আপা, আপনার কাছে পাঁচশ টাকার ভাংতি আছে? অথবা আপনি কী এই ভদ্রলোককে চারশ টাকা দিতে পারেন? পরে সিএনজি ওয়ালার ভাড়ার সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করে নিবেন।’
তন্ময়ের অনুরোধে কাজ হয়। সহজেই মিটে যায় ভাংতির ঝামেলা। সংেেপ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ব্যস্ত পায়ে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে যান প্রৌঢ়। সম্ভবত কোনো রোগী দেখতে এসেছেন।

আবার হাত ঘড়ির দিকে তাকায় তন্ময়।
সাড়ে এগারোটা বাজে।
শালার আমিনুল কোথায় মরলো?

কয়েক দিন ধরে রিপোর্টের খড়া যাচ্ছে। হাতে জামানোও কিছু নাই। এদিকে নিউজ এডিটর তারেক ভাই সমানে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন স্পেশাল স্টোরির জন্য। অনেক ভাবনা-চিন্তা করে হাসপাতাল নিয়ে একটা সিরিজ স্টোরির প্ল্যান জমা দিয়েছিলো তন্ময়। সেটা যে তারেক ভাই সম্পাদকের কাছে দেবেন এবং সম্পাদক এই আইডিয়াটা এতোটা পছন্দ করবেন, সেটা কে জানতো!
পুলিশ-হাসপাতাল এ বিষয়গুলো রিপোর্টারদের আপদকালীন মজুদের মতো। কখনো রিপোর্টের আকাল পড়লে এসব জায়গায় একটু খোঁজ-খবর করলেই স্টোরি দাঁড়িয়ে যায়। হাসপাতাল আর পুলিশ স্টেশনতো আসলে নিউজে আখড়া। সে কথা ভেবেই সরকারি হাসপাতালের দুর্নীতি নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের পরিকল্পনাটি জমা দিয়েছিল তন্ময়। সম্পাদকের অনুমোদনের পর পিছিয়ে আসার আর কোনো পথ থাকলো না। ফলাফল- সকাল দশটা থেকে দেড় ঘন্টা ধরে হাসপাতালের সামনে ঠায় দাঁড়ানো।

জিন্সের পকেটে মুঠোফোনরটা গা ঝাড়া দিয়ে উঠে। হাতে নিয়ে স্ক্রিনটা দেখে সঙ্গে সঙ্গেই কলটা রিসিভ করে তন্ময়। বহুল প্রতীতি আমিনুল বাবাজির ফোন।

ফোনটা হাতে নিয়ে একটা অ™ভুত দৃশ্য দেখে অবাক হয়ে যায় তন্ময়। হাসপাতালের গেট থেকে দৌড়ে আসছে সাদেক সরকার। চার ফুট দশ ইঞ্চি উচ্চতার সাদেক সরকারের শরীরের মধ্য প্রদেশে একটা বেমামানভাবে উঁচু, গালে চাপ দাড়ি। মাথায় সবসময় একটা সাদা গোল টুপি। এই চেহারার একটি লোকের এভাবে উধশ্বাসে দৌড়ানোর দৃশ্য সকাল-বিকেল দেখা যায় না।
নিশ্চই গুরুতর কিছু ঘটেছে।
আরে, সাদেক তো তন্ময়ের দিকেই ছুটে আসছে। ভ্র“ কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে থাকে তন্ময়।
বিষয় কী?
ওদিকে ফোনের অপর প্রান্তে আমিনুল প্রাণপণে হ্যালো হ্যালো করে যাচ্ছে। এতোণে খেয়াল হয়ে তন্ময়ের। জবাব দেয়,
‘কী ব্যপার আমিনুল?’
‘তনুভাই আপনে কই? হাসপাতালের সামনে? বিরাট গ্যাঞ্জাম লাগছে। আপনের দারুন বিপদ। বস, আপনে যেইখানে আছেন নড়বেন না। আমি পাঁচ মিনিটে আসতাছি...।’
আমিনুলের ফোন পেয়ে হতভম্ব হয়ে যায় তন্ময়। ততোণে সাদেক সরকার তন্ময়ের সামনে দাঁড়িয়ে বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে।



দুই

ডিবি অফিসে ডেস্কে বসে কুৎসিত কালো রঙ্গের ধোঁয়া উঠা তরলটি গেলার চেষ্টা করছে হাফিজুর রহিম।

এক ডাক্তার বন্ধুর উপদেশ, বেশি করে রং চা খেতে হবে। সেটা নাকি শরীরের জন্য ভালো। তার উপদেশ অরে অরে মেনে চলার চেষ্টা করে রহিম। আগেও এসব নির্দেশ মেনে উপকার পেয়েছে। কোনোবারই ডাক্তারি উপদেশ মেনে চলতে এতোটা কষ্ট হয়নি। মনে মনে পিয়ন কাম টি বয় মোতাহারের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে গাল দেয় রহিম। শালা... পুত, চিরতা পাতা দিয়ে রং চা বানায়া আনছে।

মুখ বিকৃত করে আরেক ঢোক গরম পানীয় গলায় ঢালে রহিম।

নাহ্, চা খাওয়ার অভ্যাসটাই বাদ দিতে হবে।

চাকরির বয়স খুব বেশি দিনের না। কিন্তু ডিবি অফিসের কাজকর্ম অল্প দিনেই অভিজ্ঞ করে তুলেছে রহিমকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় স্বপ্নেও ভাবেনি পুলিশে যোগ দেবে। বাস্তবে সেটাই ঘটলো। এখন দিন-রাত চোর-চোট্টা আর বদমাসদের নিয়ে সময় কাটে। অফিসের টাইম-টেবিলের কোনো ঠিক ঠিকানা নাই। এ নিয়ে মুনমুনের অভিযোগেরও অন্ত নেই। অবশ্য বেচারিকে খুব বেশি দোষ দেওয়া যায় না। গত দুমাসে একদিনও ছুটি মেলেনি। মিলবে কী করে, নতুন একটা দায়িত্ব কাঁধে এসে পড়েছে। পাশের রুমে কাঠের চেয়ারের সঙ্গে দড়ি বাঁধা নমুনাটির কথা মনে পড়তে চায়ের তিতকুটে স্বাদটা আরো বিস্বাদ লাগে।

কয়েক বছরের পুলিশের চাকরিতে অনেক কিছুতেই অভ্যস্ত হয়ে গেছে রহিম। কিন্তু এখনো জিজ্ঞাসাবাদের সনতান পদ্ধতিটার সঙ্গে মানিয়ে উঠতে পারেনি। অথচ অভিযুক্তদের ইন্টারোগেট করার ব্যপারে কারো কারো রয়েছে অপরিসীম আগ্রহ। মানুষকে মারধোর করাটাওযে কারো বিনোদন হতে পারে, পুলিশে চাকরি করতে না এলে সেটা কিছুতেই বিশ্বাস করতো না রহিম।

ধীরে-সুস্থ্যে পাশের কামড়াটায় ঢুকে রহিম।

চেয়ারে বাঁধা সাঈদের চেয়ে বেশি কাহিল হয়ে পড়েছে সাব ইন্সপেক্টর একারামুল। একটা গজারির লাঠি চেয়ারের পাশে ঠেস দিয়ে রাখা। এতোন সেই সাঈদকে জিজ্ঞাসাবাদ (!) করছিলো। কোর্ট থেকে পাঁচদিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে মাদক ব্যবসায়ী সাঈদকে। আজ চারদিন পার হয়ে গেল। পরশুই তাকে আবার আদালতে হাজির করতে হবে। অথচ, পুলিশ এর পেট থেকে কিছুই বের করতে পারেনি। শালা কঠিন চীজ। গত চারদিন দিন-রাত চব্বিশ ঘন্টা সাঈদের রুমে এক হাজার ওয়াটের বাতি জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে। সকাল-বিকাল দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে কঠিন মার। কিন্তু কিছুতেই কোনো কাজ হয়নি। একে নিয়ে বেশ চিন্তিত রহিম। আদৌ কী এর পেট থেকে কোনো কথা বের করা যাবে?

অনেক কষ্ট করে নিখুঁত ফাঁদ পেতে তবেই জালে পোরা গেছে ‘ইয়াবা সম্রাট’ আবু সাঈদকে। এর আগেও বেশ কয়েকবার সাঈদকে ধরার জন্য ফাঁদ পেতেছিলো পুলিশ। কিন্তু প্রতিবারই আগে থেকে এসব অভিযানের কথা ফাঁস হয়ে গেছে। তাই এবার রহিম কোনো ঝুঁকি নেননি। হাতে গোনা কয়েকজন বিশ্বস্ত অফিসার নিয়ে নিজেই এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন।

ঢাকার আন্ডার ওয়ার্ল্ডে মাদকের সবচেয়ে বড় চক্রটি পরিচালনা করতো সাঈদ। তার ব্যবসার ইনভেস্টর হিসেবে আমলা-রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে পুলিশের বড় কর্তাদের নাম রয়েছে বলে জনশ্রুতি। যদিও এসব অভিযোগের কোনো বাস্তব প্রমাণ এখনও পায়নি রহিম। তবে কয়েকটি সূত্র তাকে নিশ্চিত করেছে, সাঈদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক রাঘব-বোয়াল। ইতিমধ্যেই এর কিছুটা নমুনা টের পাচ্ছে রহিম। সাঈদকে গ্রেপ্তারের মতো এতো বড় সাফল্যের পরও তাকে এ কেস থেকে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু ইয়াবা ইস্যুটি ইতিমধ্যেই মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচিত হয়ে উঠেছে। ইয়াবার বিষয়টি যে হফিজুর রহিম হ্যান্ডেল করছে এটিও ফলাও করে প্রচার করেছে মিডিয়াগুলো। এ পরিস্থিতিতে তাকে যদি এ কেস থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, সেটা তার ইমেজের জন্য বড় তির কারণ হবে। নানামুখী চাপ উপো করে তাই রহিম এই কেসটিতে লেগে আছে।

চোখের ইশারায় একরামুলকে চলে যেতে বলে রহিম। সাঈদের মুখোমুখি একটা চেয়ারে বসে একটু সময় নিয়ে সিগারেট ধরায়।

কৌশল পাল্টে এবার একটু ভিন্ন পথে শুরু করে রহিম । মৃদু গলায় বলে, দেখ সাঈদ, তোমার দলের বেশিরভাগ লোকই ধরা পড়েছে, বাকিরা পালিয়ে গেছে। ইউ আর ফিনিশড। তোমার ব্যবসা, টাকা-পয়সা, কানেকশনস সবই শেষ। এখন তোমার সামনে শুধু একটা রাস্তাই খোলা আছে; পুলিশকে সাহায্য করা। আমরা জানি, তোমাদের এই চক্রের সঙ্গে রাজনীতিবিদ, আমলা থেকে শুরু করে পুলিশের কয়েকজন বড় কর্তাও জড়িত। তুমি শুধু আমাদের নামগুলো বলো, এর পর বাকিটা আমরা করবো। তোমার নিরাপত্তার বিষয়টিও আমরাই দেখবো।

রহিমের কথাগুলো শুনে থেতলানো ঠোট ছড়িয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে সাঈদ। এ পরিস্থিতিতেও হাসছে! তার মনোবল দেখে অবাক না হয়ে পারেনা রহিম।

আমার নিরাপত্তা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। নিজেরে নিয়া ভাবেন। নতুন বিয়ে করেছেন, এখনো বাচ্চা-কাচ্চা হয় নাই। বউতো সারাদিন বাসায় একলাই থাকে। তার দিকে একটু খেয়াল রাইখেন।

ডিবি অফিসে বসে একজন আসামী এভাবে একজন এএসপিকে হুমকি দিতে পারে, এটা ছিল কল্পনারও অতীত। ঘটনার আকষ্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যায় রহিম। সম্বিত ফিরে পেয়ে সজোরে একটি চড় কসায় সাঈদের গালে। পটকা ফাটার মতো শব্দ হয়। চেয়ারসহ মাটিতে উল্টে পড়ে সাঈদ। মেঝেতে মাথা ঠুকে কপালের এক পাশে মাথা চাড়া দেয় একটা গোলআলু। সে অবস্থাতেও রহিমের চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে থাকে সাঈদ।

আরো আধা ঘন্টা নিষ্ফল চেষ্টার পর কান্ত-বিধ্বস্ত রহিম নিজের ডেস্কে এসে বসে। হোটেল থেকে আনিয়ে রুটি আর মুরগির ঝোল দিয়ে লাঞ্চ শুরু করে। টেবিলে রাখা মোবাইল ফোনটি বেজে উঠে।
হ্যালো।
হাফিজুর রহিম বলছেন?
বলছি। আপনি কে বলছেন?
পরিচয় পরেও দেওয়া যাবে। আপনি এুনি পঙ্গু হাসপাতালে যান। একটি গাড়ির সঙ্গে আপনার স্ত্রীর রিক্সার অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় তিনি এখন পঙ্গু হাসপাতালে আছেন।
হ্যালো.. হ্যালো... কখন ঘটেছে এ ঘটনা? আপনি কে বলছেন? মুনমুনের অবস্থা এখন কেমন? তার কী জ্ঞান আছে?
আহ্, আপনি শুধু শুধু কথা বাড়াচ্ছেন। জলদি হাসপাতালে ছুটে যান। আপনার হাতে সময় কিন্তু খুবই কম।

অচেনা কলার লাইন কেটে দেয়।

এক মুহুর্ত দেরি না করে অফিসের জিপটা নিয়েই ছুটে যায় রহিম পঙ্গু হাসপাতালের দিকে। জীবন-মৃত্যুর মাঝে দুলতে থাকা মুনমুনের পাশ থেকে এক মুহুর্তেও জন্যও নড়েনি রহিম। তাই সে জানতেও পারেনি গত কয়েক ঘন্টায় অনেকগুলো বড় ঘটনা ঘটেছে।

প্রেসকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ডিবির কর্মকর্তারা। রিমান্ডে আনা আসামীর মৃত্যু প্রেসের জন্যতো অনেক বড় খবর। আর সেই আসামীটি যদি হয় আবু সাঈদের মতো তারকা অপরাধী, নামকরা মাদক ব্যবসায়ী, তাহলে তো কথাই নেই।

পুলিশের তরফ থেকে প্রেসকে বলা হয়, সর্বশেষ আবু সাঈদের সঙ্গে ছিলেন এএসপি হাফিজুর রশিদ। লাঞ্চের আগে তিনি সাঈদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। লাঞ্চের পর স্ত্রীর দুর্ঘটনার খবর পেয়ে চলে যান তিনি। কন্সটেবল একরামুল সাঈদের জন্য দুপুরের খাবার নিয়ে গিয়ে দেখে মেঝেতে চোখ উল্টে পড়ে আছে সাঈদ। দ্রুত তার সিনিয়র অফিসরকে ডাকে একরামুল। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তরত চিকিৎসক সাঈদকে মৃত ঘোষণা করেন। এর আগে অবশ্য কিছুণের জন্য জ্ঞান ফিরে পায় সাঈদ। আর তখনই পুলিশকে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে গেছে। তদন্তের স্বার্থে সেসব তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।

পুলিশ প্রশাসনের এ বক্তব্য শোনার পর স্বাভাবিকভাবেই সাংবাদিকদের সন্দেহের কাঁটাটা হাফিজুর রহিমের দিকে ঘুরে গেছে। কয়েকটি টিভি চ্যানেলের রাতের খবরে হাফিজুর রহিমকে পাষন্ড, খুনি ইত্যাদি বিশেষণে অভিহিত করা হয়েছে। পুলিশের একটি প্রেস নোটে বলা হয়েছে, সাঈদের মৃত্যুর তদন্তে পুলিশ তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বারো ঘন্টার মধ্যে কমিটি রিাপোর্ট পেশ করবে। এবং এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া ইয়াবা মামলা পরিচালনার ভার থেকে হাফিজুর রহিমকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। এ মামলাটি এখন থেকে ডিবি কর্মকর্তা আকবর খান পরিচালনা করবেন।

মুনমুনের মৃত্যু হলো ফজরের আজানের ঠিক আগে।

সে সময় হাসপাতালের গেট দিয়ে পুলিশের একটি গাড়ি প্রবেশ করে। হাসপাতালের টানা বারান্দায় দাঁড়িয়ে দৃশ্যটি দেখে রহিম। তার জানা ছিলো না, স্ত্রীর মৃত্যুতে সান্তনা জানাতে নয়, তার সহর্মীরা এসেছেন তাকে গ্রেপ্তার করতে। সাঈদকে হত্যার অভিযোগে গত রাতেই রহিমের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী মৃত্যু শয্যায় সাঈদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরো একজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে একই সময়। দ্বিতীয় ব্যক্তিটি হচ্ছে সাংবাদিক তন্ময় চৌধুরী।


তিন

সকালে বেরুবার মুখেই বিপত্তি। পুরো সিঁড়ি ঘরটি ধুলায় অন্ধকার করে দিয়ে ঝাঁট দিচ্ছে শামসু মিয়া। বাড়িওয়ালার এই কেয়ারটেকার কাম দারোয়ান শামসু মিয়ার সঙ্গে সব সময়ই খটমট লেগে আছে আমিনুলের। কথায় বলে না, বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড়; চায়ের চেয়ে কেটলি গরম- শামসুর অবস্থা সেরকম। দুই টাকার কেয়ারটেকার নিজেকে বাড়ির মালিক মনে করে। মাসের ভাড়া দিতে দু-একদিন দেরি হলেই কি হম্বিতম্বি!

সকালে বেরুবার মুখে ঝাড়– দেখেই মনটা কু গাইছিলো। বঙ্গবাজারের মোড়ে এসে মটর সাইকেলের চাকা পাংচার হতেই ঝাড়– দর্শনের মাজেজা পরিষ্কার হয়ে গেল। ভোগান্তির যে এখানেই শেষ নয় সেটা তখনো বোঝেনি আমিনুল। চাকা বানাচ্ছে দুই পিচ্চি। সম্ভবত ওস্তাদ দোকানে নেই। এ সুযোগে আমিনুলের মটর সাইকেলের উপর দিয়ে দুজন হাত মকশো করে নিচ্ছে। স্বাভাবিকের চেয়ে তিন গুণ সময় নিয়েও চাকার লিক সারাতে হিমশিম খাচ্ছে দুজন। এতে তাদের উৎসাহে কোনো ছেদ পড়ছে না। মহা উৎসাহে দুই পিচ্চি মটর সাইকেলের পেছনের চাকাটি নিয়ে কসরত করছে। বসে বসে তাদের কান্ড কারখানা দেখা ছাড়া আমিনুলের আর কিছুই করার নেই।

তাড়াহুড়োর জন্য সকালে নাস্তা করা হয়নি। কপালের ফেড়ে যখন সময় নষ্টই হচ্ছে, তখন কিছু খেযে নেওয়া যাক। এ ভেবে গত ত্রিশ মিনিটে আমিনুল এক হালি সিদ্ধ ডিম, দুটি সাগর কলা, চার পিস শশা এবং একটি গাজর খেয়েছে। সব শেষে এককাপ চা খেয়ে সিগারেট ধরানোর সঙ্গে সঙ্গেই নিম্নচাপ। শশা আর ডিমের কম্বিনেশনটা যে ঠিক হয়নি এতেনে বুঝতে পারে আমিনুল। বেরুবার মুখে ঝাড়– দর্শনের আরেকটি নতিজা হাতেহাতে পেয়ে যায়।

ঢাকা মেডিকেলের সামনে তনু ভাই বসে আছে, এ চিন্তাটা এক মুহুর্তের জন্যও স্বস্তি দিচ্ছে না। ভয়ের চোটে মোবাইল ফোনটা সুইচ অফ করে রেখেছে। কাজ শেষ হলেই খুলবে। এখন খোলা থাকলে খবর আছে। এর মধ্যে নিশ্চেই কয়েক হাজার বার তার ফোনে চেষ্টা করেছে তন্ময়। একদিকে তনু ভাই খেপছেন, অন্যদিকে বকুলের সঙ্গে সম্পর্কটা বোধহয় চীরতওে ‘কাট’ হয়ে গেল। তন্ময় ভাইয়ের সঙ্গে সকাল দশটায় ঢাকা মেডিকেলের অ্যাসাইনমেন্টটা ঠিক হওয়ার পর অনেক কষ্টে বকু কে রাজি করিয়েছে নয়টায় টিএসসিতে দেখা করার জন্য। সহজে কী বকুল রাজি হয়! কতো কাঠ-খড় পুড়িয়ে তবেই তাকে রাজি করিয়েছে। ডাসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে এতোণে নিশ্চই বিরক্ত হয়ে কাসে চলে গিয়েছে বকুল। আগামী ছয় মাসের মধ্যে তার সামনে যাওয়ার কোনো মুখ থাকলো না। বকুলের কাছে আবার ইমেজ পুনরুদ্ধারে যে কতো সময় এবং মোবাইল ফোনের ব্যালেন্স ব্যয় হবে তা একমাত্র আল্লাই বলতে পারেন। বুক চীরে দীর্ঘশ্বাস আসে।

একটি মাত্র শলার ঝাড়–র এতো পাওয়ার! শালা একদিনে কতো দিক থেকেই না প্যাঁচ খাওয়ালো।

সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে ফোনের সুইচ অন করে। একটু নার্ভাস। কাঁপা হাতে বকুলের নম্বরে ডায়াল করার আগেই ফোন বেজে উঠে। আননোন নম্বর থেকে কল। আমিনুলের সোর্স ডিবি অফিসের এসআই আজহার ফোন করেছে। এর আগেও আজহার ডিবির অনেক গোপন অপারেশনের তথ্য আগেই জানিয়েদিয়েছে আমিনুলকে। এর ফলে পুলিশের বিভিন্ন গোপন অপারেশনের এক্সকুসিভ ছবি তুলতে পেরেছে সে। এ কারণেই এতোদিন চাকরিটা টিকে আছে। নয়তো অ্যাসাইমেন্টে অবহেলার দায়ে কবেই তার চাকরিটা খেয়ে নিতো নিউজ এডিটর।

বোতাম টিপে ফোনটা রিসিভ করে আমিনুল।

‘হ্যালো আজহার ভাই, বলেন, তারপর খবর কী?’
‘খবরতো সাঙ্ঘাতিক। আপাদের সিনিয়র রিপোর্টার তন্ময় চৌধুরীর নামেতো ওয়ারেন্ট বাইর হইছে। খবর কিছু জানেন নাকি?’

আজহারের কথা শুনে আতকে উঠে আমিনুল।

‘ওই মিয়া, কন কী? পুরাটা খুইলা বলেন। তন্ময় ভাইয়ের নামে ওয়ারেন্ট ইস্যু হইবো কেন। সে কী করছে?’
‘ডিটেলস বলতে পারমু না। তবে খবর পাকা। উপর থেকে চাপ আছে। যে কুনু সময় তন্ময় ভাইকে অ্যারেস্ট করা হবে। খুব ভোরে ডিবির একটা দল তন্ময় চৌধুরির বাড়িতে গেছিলো তারে অ্যারেস্ট করতে। কিন্তু কাল রাতে তন্ময় চৌধুরী বাড়ি ছিলো না। তাই বাইচা গেছে। সম্ভব হইলে তন্ময় চৌধুরিরে খবর দেন। সময় কিন্তু খুব কম। যা করনের জলদি করেন।’

এর পরই তন্ময়কে ফোন করে আমিনুল।

সকাল থেকে এ পর্যন্ত এবারই প্রথম ভাগ্য সহায়তা করে আমিনুলের। আজহারের ফোন রাখা মাত্রই দুই পিচ্চি ইঞ্জিনিয়ার জানায়, ‘গাড়ি রেডি স্যার।’

চার

দুজনের মধ্যে যে লম্বা, তার পরনে জিন্স আর সাদা ফুল হাতা সার্ট। অন্যজন খাকি গ্যাবার্ডিনের প্যান্টের উপর স্ট্রাইপ হাওয়ই সার্ট পরা। দুজনের চুলই ছোট করে ছাটা। সাদা প্রোবক্স গাড়িটা হাসপাতালের সামনে থামিয়ে দ্রুত নেমে পরে দুজন। মাপা পায়ে করিডোর ধরে এগিয়ে যায়।

আপাত দৃষ্টিতে হাসপাতালে আসা আর দশজন মানুষ থেকে এ দুজনকে আলাদা ভাবার কোনো কারণ নেই। কিন্তু দুজনের হাতে দুটি এ ফোর সাইজের ছবি সাদেক সরকারের কৌতুহল বাড়িয়ে দেয়।

হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট সাদেক সরকারের হাসপাতালের কোনো কাজই করতে হয় না। বরং সে হাসপাতালের ত্রিসীমানায় না এলেই পরিচালক থেকে শুরু করে ডাক্তার ও অফিসারদের সবাই খুশি হয়। বিশেষ কোনো স্বার্থ ছাড়া সাদেক সরকার এদিক পা বাড়ায় না। বেশিরভাগ সময় পার্টি অফিসেই ব্যস্ত থাকে। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে দিনে অন্তত একবার ভিআইপি কেবিনে এসে উকি দিতে হচ্ছে। শাশুড়ির অপারেশন হয়েছে। একজন মন্ত্রীর মতো ভিআইপি মর্যাদায় হাসপাতালের সবচেয়ে বিলাসবহুল কেবিনে শুয়ে আছে বুড়ি।
এ টুকুই কী যথেষ্ট নয়?
মানুষের স্বভাবটাই এমন। যতো পাবে ততোই খেতে চাইবে। আরে, এই বুড়ির সাত কপালের ভাগ্য এমন একটা কেবিনে শুয়ে আছে। এখানে মরতে পারলেও শান্তি। সাদেক সরকারের মতো জামাই পেয়েছে বলেই না আজ বুড়ির ভাগ্যে এই শয্যা জুটেছে। নয়তো তার মতো কতো রোগী কেবিনের বাইরে বারান্দায় মাটিতে শুয়ে কাতরাচ্ছে। এসব কথা কে কাকে বোঝাবে। প্রতিদিন একবার করে বুড়িকে তার দেখতে আসতে হবে। নয়তো বিবি গোস্বা করবে। আরে তোর গোস্বার ধার ধারি নাকি আমি? মনে মনে ভাবে সাদেক; স্ত্রীকে কসে একটা গাল পাড়ে। কি দরকার সংসারে অশান্তি এনে! এ কথা ভেবেই দিনে একবার হাজিরা দিয়ে যায়। মনে মনে স্ত্রীর চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে কিছুটা আরাম পায়।

আজকেও সেই ‘রুটিন হাজিরা’ দিতেই এসেছিল। পথে দেখা হয়ে যায় এ দুই মুর্তির সঙ্গে। এদিক সেদিক উকি দিয়ে কাউকে খুঁজছে তারা।

‘ভাইজান কী কাউরে খুঁজেন?’

উপযাচক হয়ে জিজ্ঞেস করে সাদেক সরকার। অথচ আগুন্তক দুজন তার দিকে ফিরেও তাকায় না। যেন তার কথা শুনতেই পায়নি। তখনই তাদের হাতে ধরা ছবিটা লক্ষ্য করে সাদেক। আরে ছবিতো সাংবাদিক তন্ময় চৌধুরীর। তন্ময়কে ভালোভাবেই চেনে সাদেক। একটা ব্যপারে দারুন সাহায্য করেছিল তন্ময়। এর পর থেকেই তন্ময়ের সঙ্গে তার খাতির। বিভিন্ন সময় তন্ময়কে হাসপাতালের নানা বিষয়ে খবরাখবরও দেয় সাদেক। অবশ্য যেসব খবরে তার নিজের স্বার্থ নষ্ট হয় না শুধু সেসবই জানায় সে তন্ময়কে।

সন্দেহজনক দুজনের হাতে তন্ময়ের ছবি দেখার পর থেকেই সাবধান হয়ে যায় সাদেক। একটু দুরত্ব রেখে দুজনকে ফলো করতে থাকে। এবার আরো মনযোগ দিয়ে জরিপ করে তাদের। দুজনের কোমরেই হোলস্টারের স্পষ্ট আভাস অভিজ্ঞ সাদেক সরকারের চোখকে ফাঁকি দিতে পারে না। প্রশিক্ষিত সৈন্যের মতো মাপা পা ফেলে হেঁটে যায় দুজন। হাসপাতালের ভিড় তাদের কাজে কোনো ব্যঘাত সৃষ্টি করতে পারে না। সিবিএ রাজনীতি করতে গিয়ে ভালো-মন্দ, টপ টেরর, গলির মাস্তান নানা ধরণের মানুষের সঙ্গে মিশতে হয় সাদেককে। সে নিজেও সব সময় সঙ্গে একটা রিভলবার বহন করে। দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা বলে দেয়, এ দুই ব্যক্তি বড় শক্ত পাল্লা।

তন্ময়ের জন্য চিন্তিত হয়ে পড়ে সাদেক। এ সময় বিতদ্যুৎ চমকের মতো মনে পড়ে যায়। আরে, আজকেইতো তন্ময়ের হগাসপাতালে আসার কথা। গত রাতেই সে ফোন দিয়েছিলো। সাদেককে অফিসে থাকতে বলেছিলো তন্ময়। আজকে হাসপাতালে আসার কথা তন্ময়ের; আর আজই রহস্যময় দুই ব্যক্তি হাতে তন্ময়ের ছবি নিয়ে তার খোঁজে হাসপাতাল চষে বেড়াচ্ছে, বিষয়টি কাকতাল হতে পাওে না। তার মানে তন্ময় এখানে আসবে জেনেই এ দুজন তার খোঁজে এসেছে।

এক ছুটে হাসপাতালের বাইরে চলে আসে সাদেক। ওইতো তন্ময়কে দেখা যাচ্ছে।

তন্ময়ের সামনে দাঁড়িয়ে বড় বড় শ্বাস নিয়ে হাফাতে থাকে সাদেক। হরবর করে কিছু বলতে চায়। ডান কানে সেল ফোনটি চেপে ধরে বাঁ হাত তুলে তাকে থামায় তন্ময়। ফোনের অপর প্রান্তের কথা শুনে দুই ভ্রু কাছাকাছি চলে আসে। নিশ্চই কোনো দু:সংবাদ, ভাবে সাদেক। তার কাছের যে তন্ময়ের জন্য আরেকটি বড় দু:সংবাদ রয়েছে, সেটা জানানোর জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ে সাদেক। খুনে চেহারার দুজন রিভলবার কোমরে গুজে তন্ময়ের ছবি হাতে নিয়ে তার খোঁজ করছে- এটা দু:সংবাদ নয়তো কী!

ফোনটা নামিয়ে রেখে সাদেক ভুইয়ার দিকে তাকায় তন্ময়।

‘সাদেক ভাই, এুনি আমার এ জায়গা থেকে সওে পড়তে হবে। তবে কিছুক্ষণ আপনার হাসপাতালের কোথাও লুকিয়ে থাকতে হবে। আমিনুল আসছে।’

তন্ময়ের কথা শুনে আর কথা বাড়ায় না সাদেক সরকার। অফিস ঘরের পাশে ছোট্ট গোপন কুঠুরিটাতে নিয়ে যায় তন্ময়কে। যেতে যেতে ঘাসের উপর নিশ্চিন্ত মনে বসে থাকা ঘুঘু ুদটির দিকে তাকায় তন্ময়। সকালেই ঘুঘু দুটো চখে পড়েছিলো। আর এখন বোধ হয় ঘুঘুর ফাঁদটা দেখতে হবে। রং চটা বিবর্ন দেয়াল আর ভুসভুসে একটা কম্বল বেছানো চৌকি ছাড়া ছোট্ট এ রুমটিতে আর কিছুই নেই। তন্ময়কে সেখানে বসিয়ে তার ছবি হাতে সন্দেহজনক দুই ব্যক্তির কথা জানায় সাদেক। এ কথা শুনে আরো বেশি বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে তন্ময়।

আজ সকাল থেকে কী শুরু হলো? আমিনুল জানালো তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। পুলিশ হন্যে হয়ে তাকে খুঁজছে অ্যারেস্ট করার জন্য। অন্যদিকে খুনে চেহারার দুজন নাকি ছবি হাতে নিয়ে তাকেই খুঁজে বেড়াচ্ছে। নাহ্ কিচ্ছু বোঝা যাচ্ছে না। গত ছয় মাসের মধ্যে কারো পাকা ধানে মই দিয়েছে বলেতো মনেও পড়ছে না।

সাদেকের গোপন কুঠুরিতে বসে যখন প্রচন্ড গরমে দরদর করে ঘামছে তন্ময়, বাইওে তখন পুলিশের দুটি ব্যাটেলিয়ানের সদস্যরা তন্নতন্ন করে হাসপাতালের প্রতিটি প্রান্তে তন্ময়কে খুঁজছে। মোবাইল ফোনের বদৌলতে সে খবরও পৌছে যায় সাদেকের কাছে। খবর শুনে নিজের ফোনটি তুলে নেয় তন্ময়। সাদেকের বাধার কারণে ফোন করা হয় না।

‘না তন্ময় ভাই। আমার কাছে ব্যপারটা খুব সহজ মনে হইতেছে না। আপনার সেল ফোনটা এখন ব্যবহার না করাই ভালো। আপনেতো জানেন, এখন পুলিশের কাছে মোবাইল ফোনে আড়িপাতার যন্ত্র আছে। আপনে করলেও ওরা বুঝতে পারবো আপনে কই আছেন। আপনের ফোন থেইকা নম্বর বাইর কইরা আমার মোবাইল দিয়া ফোন করেন।’

সাদেকের যুক্তি মেনে নেয় তন্ময়। তার ফোন থেকেই আমিনুলকে ফোন কওে নিজের অবস্থান জানায়। পুলিশের চোখ এড়িয়ে আমিনুল ঠিক পৌছে যাবে। ত্যাদড় আমিনুলের উপর অন্তত এটুকু ভরসা রাখতে পারে তন্ময়।


পাঁচ

বিশাল ড্রইং রুমটা গম গম করছে।
বেশিরভাগ লোকই এসেছে কোনো না কোনো তদ্বিরে।

এদের মধ্যে পোশাক-পরিচ্ছদ ও চেহারায় যারা একটু সম্ভ্রান্ত তাদের জন্য আলাদা একটা ছোট কামড়ায় বসার ব্যবস্থা আছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই কামড়ার অতিথিদেও এর মধ্যেই দু দফা চা বিতরণ করা হয়েছে। সুদৃশ্য পোর্সলিনের কাপে উৎকৃষ্ট মানের দার্জিলিং চা উপভোগ করেছেন অভ্যাগতরা। বড় রুমের অপেক্ষমানদের ভাগ্য এতোটা প্রসন্ন নয়। গত দু ঘন্টায় তারা একবারও চা পায়নি। তাতে অবশ্য এদের কোনো খেদ নেই। মন্ত্রী কখন আসবেন সেই প্রতীক্ষায় উন্মুখ সবাই।

মন্ত্রী তখন দোতলায় খাস কামড়ায় বসে ঘামছেন।
ফোনের অপর প্রান্তে কারো চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করছেন। সাউন্ড প্রুফ বলে তার কথাগুলো বাইরে থেকে শোনা যাচ্ছে না। নয়তো তার চিৎকার হেয়ার রোড ছাড়িয়ে বেইলি রোডের নাটক সরণীতে ফুচকা খেতে আসা যুগলেরাও শুনতে পেতো এতে কোনো সন্দেহ নেই আবুল বাশার খান মজলিশের।

এই মুহুর্তে মন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে ভয় ও টেনশনে কাঁপছেন তিনি। নামটা জবরদস্ত হলেও খানমজলিশ লোকটি একেবারেই হ্যাংলা-পাতলা। অল্পতেই তার চেনশন হয়। আর তখন কড়া এক কাপ চায়ের সঙ্গে একটা বেনসন ধরাতে ইচ্ছে করে। কিন্তু এমনই কপাল মন্ত্রীর এপিএস হওয়ার কারণে সে সুযোগও বেশিরভাগ সময়ই পাওয়া যায় না। কারণ মন্ত্রী মহোদয়ের আশপাশেই সব সময় তাকে থাকতে হয়। মন্ত্রী মহোদয়ের স্যান্ডেলটা আলমারি থেকে বের করে আনা, পরিষ্কার রুমালটি ঠিকঠাকভাবে পকেটে পুরেছেন কিনা, মোবাইল ফোনে চার্জ আছে কিনা, নাকি চার্জার সঙ্গে নিতে হবে- এমনি সব জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত তাকতে হয় আবুল বাশার খান মজলিশকে। ফলে ঘন ঘন চা-সিগারেট খাওয়ার সুযোগ মেলেনা তার।

এই যেমন এখন। মন্ত্রী মহোদয়ের মেজাজ যতোই চড়ছে, খান মজলিশের টেনশন ততোই বাড়ছে। কড়া এক কাপ চা আর বেনসনের জন্য বুকটা আকুপাকু করছে। এ মুহুর্তেতো মন্ত্রী মহোদয়কে ছেড়ে বাইওে যাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব না। দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকায় খান মজলিশ। পৌনে একটা বাজে।

প্রতিদিন এগারোটার মধ্যেই নীচে নেমে যান মন্ত্রী। সেখানে দরবার শেষে জোহরের নামাজ পড়ে সচিবালয়ে যান। নীচতলার ড্রইং রুমে যারা সে সময় থাকেন তাদের সবাইকে নিয়েই জামাতে জোহরের নামাজ আদায় করেন তিনি। এক একদিন মন্ত্রী নিজেই ইমামতি করেন। খান মজলিশ নামাজ পড়েন না। জোহরের নামাজের সুযোগে বাইওে গিয়ে দ্রুত সিগারেট টেনে আসেন। মন্ত্রী মহোদয়ওযে খুব নামাজি মানুষ তা কিন্তু না। একা একা থাকলে কখনোই তিনি নামাজের ধাওে কাছেও যান না। যখন সংদ অধিবেশন চলে তখন সংসদে এবং নামাজের ওয়াক্তে কোনো মিটিং থাকলে মিটিং বন্ধ করে তিনি নামাজে দাঁড়িয়ে যান। সেটা যতো গুরুত্বপূর্ণ মিটিংই হোক না কেন। আর দশটা কাজের মতো নামাজ পড়াটাও তার রাজনীতিরই অংশ।

ফোনটা প্রায় আছড়ে ক্রাডেলে রেখে বিড়বিড় করেন মন্ত্রী। শালারা একটা কাজও যদি ঠিকমতো করতে পারতো! একটা চ্যাংড়াকে ধরতে এতো নাকানিচোবানি। পুলিশদের দিয়ে কিছু হবে না, এটাতো তিনি আগেই জানতেন। সে জন্যই ব্যাকআপ হিসেবে শমসের আর বাচ্চুকে পাঠালেন। এই দুই বেকুবও এখন নাকি খালি হাতে ফিরছে। মাথায় যদি এত
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০০৯ বিকাল ৫:৫৯
১৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×