somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইসক্রিম

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৮:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তখনকার দিনে আইস্ক্রিম পাওয়া যেতো ১ টাকায় ৪ টা করে।ঘন্টা বাজাতে বাজাতে রফিক চাচা আসতেন।রফিক চাচার দাবী ছিলো তার আইসক্রিম এর উপর কোনো মায়ের পুতের আইসক্রিম নাই।তিনি ১৭ বছর যাবত এই ব্যবসায় আছেন।কত লোক গেলো আসলো রফিক রয়ে গেলো।বলেই আবার ঘন্টা বাজাতেন।আমরা ছোটরা চারপাশে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম।দাঁড়িয়ে থাকতাম কারণ আমাদের পয়সা ছিলো না।তবুও তিনি বিরক্ত হতেন না।রফিক চাচা এক ধরণের ম্যাজিক জানতেন।দঁড়ি কাটা ম্যাজিক।দঁড়ি আমরা নিজের হাতে কেটে দিলেও তিনি আবার তা ঠিক করে দিতেন।আমরা মুগ্ধ হয়ে যেতাম।হাতে তালি দিতাম।আবার দেখাতে বলতাম, তিনি বিরক্ত হতেন না,আবার দেখাতেন।আমরা আবার ও হাত তালি দিতাম।কয়েকবার দেখিয়ে তিনি ৪ টা ১ টাকা ৪ টা ১ টাকা বলতে বলতে সাইকেল নিয়ে এগিয়ে যেতেন।আমরা পিছন পিছন ছুটতাম।কে আগে সাইকেল ছুঁতে পারে।যে আগে ছোঁবে সে ফার্স্ট।কিন্তু আমি বরাবর ই সেকেন্ড হোতাম।আর যে ফার্স্ট হতো সে ছিলো মেয়ে।একটা মেয়ের কাছে দৌড়ে হেরে যাওয়া প্রেস্টিজ এর ব্যাপার।কিন্তু আমি যতই দৌড়াই না কেনো এই মেয়ের সাথে পেরে উঠি না।শেষমেশ তারে এক পাশে ডেকে বললাম, "তুই মেয়ে মানুষ দৌড়াদৌড়ি বাদ দে।তোর দ্বারা এসব সম্ভব না।তোর ভেতর প্রতিভা একটু কম আছে।বুঝলি?" এ কথা শুনে এমন এক উত্তর সে দিয়েছিলো যা মুখে আনা ও পাপ।আমি দমে গেলাম।এভাবে হবে না বুঝে শেষমেশ ডিসিশন নিলাম তারে বিয়ে করবো।বিয়ে করলে আমার কথা শোনা ই লাগবে।পরদিন টিফিনে তারে এক সাইডে ডেকে বললাম আমি তোরে বিয়ে করতে চাই।এক সাইডে থু ফেলে সে কোন দিকে গেলো তা বুঝলাম পরের পিরিয়ডে।স্যার আমার নাম ধরে ডাক দিলেন।
আমি বললাম উপস্থিত স্যার।
এদিকে আয়।
স্যার বড্ড ভালোবাসতেন আমায়।তাই নির্ভয়ে সামনে যেয়ে দাঁড়ালাম।
স্যার বললেন হাত পাত।
আমি শুকনো মুখে পেতে দিলাম।
স্যার নির্দয়ের মতো কয়েক ঘা দিয়ে বললেন গিয়ে বয়।
এর থেকে বেশি কষ্ট আমি কোনোদিন পাই নি। মারের জন্য না।মার আমি প্রতিদিন খাই। তার বিয়েতে অমত থাকতেই পারে,তাই বলে স্যাররে বলার কি দরকার ছিলো।ভাবতে ভাবতে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।আমি বৃষ্টিতে হাত পেতে দিলাম।বাড়ি ফিরে ঝাটার উলটা পিঠের বাড়ি খেলাম আরেক দফায়। অপরাধ গুরুতর।মেয়ের বাবা বাসায় এসে নালিশ করে গেছে এবং আমি বই ভিজিয়ে ফেলেছি।যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে। এ মেয়ে ভয়ঙ্কর মেয়ে।আমি এর ধারে পাশে ঘ্যাষা বন্ধ করে দিলাম।দিন মাস বছর করতে করতে প্রাইমারী স্কুল হাই স্কুল ছেড়ে কলেজ ওঠার পর তার উপর থেকে আমার রাগ কমে গেলো।কারন তার শারীরিক সৌন্দর্য।সে যখন কলেজে যায় আসে পথে শত প্রেমিক এর হৃদযন্ত্র বন্ধ হবার যোগাড় হয়ে যায়।আমি তার প্রেমে পড়ে গেলাম।খাই দাই ঘুরি আর তার কথা ভাবি।ঘুমাইতে গেলেও সে উঠতে গেলেও সে বসতে গেলেও সে।একদিন সাহস জোগাড় করে বলেই দিলাম।সুন্দরী মানেই যে হৃদয়হীন তা সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম বাসায় আসার পর।বাসায় ঢোকার সময় দেখলাম তার বাবা আমাদের বাসা থেকে বের হচ্ছেন।আমি ভয়ে কাঠ হয়ে গেলাম।ভয়ে বাসায় না ঢুকে বের হয়ে আসলাম। বাইরে উথালপাতাল জোঁছনা উঠেছে। এর মাঝে নিজেকে মিশিয়ে ফেলার চেষ্টা করছি। এবার আর নালিশে না,ব্যার্থ প্রেমিকের কষ্টে কেঁদে আবার শপথ নিলাম : এই মেয়ের ধারে পাশেও আমি আর ঘেষবো না। আর ঘেষতে পারিও নি।পরের দিন সকালে বাসায় যেয়ে দেখি সব রেডি আমরা এ শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছি। কারণ বাবার পোস্টিং হয়েছে।২ দিনের মধ্যে জয়েন করতে হবে। অফিসে প্রচুর চাপ।আগে সেখানে যিনি দায়িত্বে ছিলেন তিনি রেলে কাটা পড়েছেন।তাই এতো জরুরি তলব।বাকি সময়টা ঘোরের মধ্যে কেটে গেছে।সময়ের ফেরে তার কথাও ভুলে চলছি ।কিন্তু কোথায় যেনো একটা সুরের অভাব আর কোনক দিন পূরণ হয় নি ।বহু বছর পর ঐ মেয়ের সাথে আবার একদিন দেখা হয়েছিলো
দার্জিলিং এ।আমি অফিসের কাজে এসেছি।সে তার স্বামীর সাথে ।দেখা হয়েছিলো,কথা হয় নি।
বহু বছর এর পুরোনো কোনো অনুভূতি আমার বিশেষ মনে পড়লো না। অফিসের কাজ সেরে ট্রেনে উঠেছি।এ ট্রেন কলকাতা যাবে,রাতের ট্রেন।আমার সিট জানালার পাশে পড়েছে।বাইরে আজকেও উথাল পাতাল জোঁছনা উঠেছে।এ সেই জোঁছনা, আমার ঘর ছাড়ার দিন যে জোঁছনা উঠেছিলো।ট্রেনে গা এলিয়ে শুয়ে আছি।হঠাত বহু কথা মনে পড়ছে।না কলেজে সেই কষ্ট পাওয়ার কথা না,সে কষ্ট কবেই তো ফিকে হয়ে গেছে।আমার মনে পড়ছে রফিক চাচার কথা।ট্রেনটা চলতে শুরু করেছে।আমি বিভ্রমে পড়ে গেলাম।হঠাত ট্রেন টা আমার কাছে রফিক চাচার সাইকেল মনে হচ্ছে।সাইকেল চলা শুরু হয়েছে।রফিক চাচা দঁড়ির ম্যাজিক দেখিয়ে চলে যাচ্ছেন। আমি ছুটছি তার পেছনে,কিন্তু আমার সামনে আরো একজন আছে।ট্রেন টা ঘটঘট শব্দে চলতে শুরু করেছে।আমি ছুটছি।গায়ের সবটুকু জোর দিয়ে ছুটছি কিন্তু প্রথম জনের আগে আমি উঠতে পারছি না,কোনো ভাবেই উঠতে পারছি না,কিছুতেই না।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৮:৪৩
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

কওমী মাদ্রাসায় আলেম তৈরী হয় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৬২ জুমুআ, ২ নং আয়াতের অনুবাদ।
২। তিনিই উম্মীদের মধ্যে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য হতে, যে তাদের নিকট আবৃত করে তাঁর আয়াত সমূহ; তাদেরকে পবিত্র করে এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×