হঠাত করে বড় হওয়ার পরপরই ছেলেরা একটা খেলা খেলে। এই খেলার নাম হিমু হওয়া। হিমুর হাতে কয়েকটি নীল পদ্ম পড়ে সবার মাঝে এক ধরণের বিভ্রম তৈরী হয়, এই বিভ্রমে পড়ে হঠাত একদিন সিম চেঞ্জ করে ফেলে,সবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। যে মানুষটাকে ছাড়া এক মুহূর্ত ও থাকতে পারত না,তাকে অবহেলা করা শুরু করে,মানুষটা কেঁদে কেঁদে ভালোবাসা ভিক্ষা চায়। তারপর একদিন একটা হলুদ পাজ্ঞাবী কিনে ফেলে। এটা এই খেলার ড্রেজ। সেই পাজ্ঞাবী পরে এবার সে রাত বিরাত ঘোরা ফেরা শুরু করে। এসব করে বড়ই আনন্দ পায়। এ আনন্দ যাইতাই আনন্দ না। হিমু হওয়ার আনন্দ। এই আনন্দে রাত বিরাত ঘোরা ফেরা করা যায় এটা কোন সমস্যা না। এই আনন্দ পাওয়ার পরপরই সে এবার অন্য ধরণের ঘোরের মধ্যে চলে যায়। সে ভাবা শুরু করে 'সে যা বলবে তাই ঘটবে'। এরপর খেলার মাঝে সে পুরোপুরি ঢুকে যায়। স্যান্ডেল পরা বাদ দিয়ে দেয়। পাজ্ঞাবীর পকেট কেটে ফেলে । প্রিয় মানুষদের সাথে লুকোচুরি খেলতে থাকে। হঠাত হঠাত তাদের সামনে উপস্থিত হয়। মুখে দাঁড়ি গোঁফে ভরিয়ে ফেলে নিজেকে হিমু হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করে। বই খাতা ছেড়ে দেয়। যুক্তি দাঁড় করায় হিমুদের কোন পড়াশোনার দরকার হয় না। কারণ পড়াশোনা করে মানুষ টাকা ইনকাম করার জন্য। হিমুদের যেহেতু টাকার দরকার হয় না। তাই পড়াশোনার ও দরকার নেই। খুবই জটিল যুক্তি। এই যুক্তি অত সহজে ভাঙ্গা যায় না। তারপর হঠাত করে একদিন সে তার রেজাল্ট পায়। ফেইল। এটা কোন বিষয় না হিমুদের পাশ ফেইলে কিছু যায় আসে না। এরপর সে পুরোপুরি ভবঘুরে হয়ে যায়। সময়ের সাথে সাথে তার এই ঘোর কাটতে থাকে। আর যখন পুরোপুরি কেটে যায় তখন আর কিছুই করার থাকে না। এসএসসি তে গোল্ডেন পাওয়া ছেলে ইন্টারে ফেইল করে। বা কোথাও চান্স পায় না । এবার হয়ে যায় আসল হিমু। প্রতি চাঁদনি রাতে বাসা থেকে বের হয়। মাইলের পর মইল খালি পায়ে হাঁটতে থাকে। হঠাত করে একদিন সে অন্যরকম একটা শূন্যতা অনুভব করে। কেঁদে কেঁদে ভালোবাসা ভিক্ষা চাওয়া মেয়েটার কথা মনে পড়ে যায়। কাঁপা কাঁপা হাতে নাম্বারটাতে ডাইল করে বলে তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তোমার বাসার বারান্দায় আসো। আমি দশ মিনিটের মাঝে আসছি। আর হ্যাঁ একটা নীল শাড়ি পরে আসবে। চুল খোলা থাকবে। মেয়েটা খুব যত্ন নিয়ে সাজুগুজু করে বারন্দায় বসে থাকে। ছেলেটার মধ্যে আবার পুরোনো বিভ্রম জেগে ওঠে। সে মেয়েটাকে আর দেখতে যায় না। রাস্তায় নেমে পড়ে। বাইরের উথাল পাতাল জোঁছনার সাথে নিজেকে মিশিয়ে ফেলে। পেছন থেকে একটা কুকুর করুণ সুরে ডেকে ওঠে। সে পিছনে ফেরে, আবার তার মনে হতে থাকে সে যা বলবে তাই ঘটবে। এখন যদি সে কুকুর কে ডাক দেয় কুকুরটা ছুঁটতে ছুঁটতে তার কাছে চলে আসবে। কুকুরটাকে সে আস্তে করে ডাক দেয়। কুকুরটা কুঁই কুঁই করে তার পাশে হাঁটতে থাকে। বহুদিন পরে পুরোনো আনন্দটা আবার মাথা চাঁড়া দিয়ে ওঠে। এই আনন্দ যাই তাই আনন্দ না। হিমু হওয়ার আনন্দ।।
হিমু হওয়ার দিন গুলো
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১৭ ভোর ৫:১০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...
হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন
কওমী মাদ্রাসায় আলেম তৈরী হয় না

সূরাঃ ৬২ জুমুআ, ২ নং আয়াতের অনুবাদ।
২। তিনিই উম্মীদের মধ্যে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য হতে, যে তাদের নিকট আবৃত করে তাঁর আয়াত সমূহ; তাদেরকে পবিত্র করে এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন
'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?
হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?
হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!
হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।