somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনানন্দ

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ৩ এ মার্চ এ আমি প্রথমবারের মত এক্সিডেন্ট করলাম ।সৌভাগ্যবশত কিছু হল না।কেউ একজন এসে বললো কপাল ভালো আরেকটু হলে কাজ হতো আজ।আমি গাল টেনে একটা হাসি দিলাম।যার অর্থ "ঠিকই বলছেন ভাই" ও হতে পারে আবার "তোর ইয়েতে আমি লাথি মারি" এটাও হতে পারে।৪ এ মার্চ এ এক্সিডেন্ট করলাম দ্বিতীয় বারের মত।।এবার ও কিছু হল না।আবারও একজন এসে বললো কপাল ভালো।৭ এ মার্চ ৩য় বারের মত এক্সিডেন্ট করলাম।।হাত পা কেটে চৌচির। কেউ একজন এসে আবারও বললো কপাল ভালো।১১ ই মার্চ এক্সিডেন্ট করলাম আরেকবার।এবার আমি জ্ঞান হারালাম।তার একটু আগে শুনলাম কেউ একজন বলছে কপালটা অনেক ভালো ট্রাকটা ব্রেক না করলে যেতো আজ চ্যাপ্টা হয়ে।চোখ খুলে দেখি আমি শুয়ে আছি হসপিটাল এর বেডে।পাশে চ্যাংড়া টাইপ একজন লোক বসে আছে।

কে আপনি?

অবাক হয়ে বললেন, "আমাকে চিনতে পারছো না?"

চিনলে কি শুনতাম?

দাস ।

কোথাকার দাস ?

চোখ মুখ গুটিয়ে বললেন,"জীবননান্দ দাস"

এখানে বসে কি করছেন? আর জীবনানন্দ দাস বললেই তো একবারে চিনতাম দাস বলার কি দরকার ছিলো?

আমার কথায় তিনি আহত হলেন।শুনলাম তুমি এক্সিডেন্ট করেছো তাই দেখা করতে এসেছিলাম।

আমি এক্সিডেন্ট করেছি তাতে আপনার কি?

আমি তোমাকে অনেক পচ্ছন্দ করি।আমি জানি তুমি আমার অনেক বড় ফ্যান।তাছাড়াও এক্সিডেন্টের রুগী দের প্রতি আমার অন্য রকম টান আছে।তুমি বুঝবে না।

বাংলা সাহিত্যের কবি আপনি ইংরেজি শব্দ ব্যাবহার করছেন কেনো? ভক্ত না বলে ফ্যান বলছেন ? ফ্যান মানেতো পাখা ও হতে পারে।আপনি কোনটা বললেন বুঝবো কি করে? ভক্ত বলতে কি কষ্ট হচ্ছে?

ভদ্রভাবে কথা বলো আমি তোমার থেকে বয়সে অনেক বড়।চলো আমরা অন্য বিষয়ে কথা বলি।অসুস্থ অবস্থায় জটিল বিষয়ে কথাবার্তা বলতে ভালো লাগে।তুমি আত্মাতে বিশ্বাস করো?

স্প্রিট?

হ্যাঁ

না করি না।

হাহাহা তুমি আত্মাতে বিশ্বাস করোনা অথচ একজন মৃত মানুষের সাথে কথা বলছো?? ইজন্ট ইট ফানি?

আপনি কোন আত্মা নন। পুরোটাই আমার ব্রেনের সৃষ্টি। আমি এখন শারীরিক ভাবে খুবই অসুস্থ, মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত, অক্সিজেনের নলটাতে কোন একটা সমস্যা হয়েছে,ঠিক মত সাপ্লাই হচ্ছে না।অক্সিজেনের অভাবঘটিত কারণে হ্যালুসুনিয়েশন হচ্ছে এবং বিপর্যস্ততার চাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য আমার পচ্ছন্দের ভিত্তিতে আমার ব্রেইন আপনাকে এনে হাজির করেছে।এছাড়াও আপনি সিগারেট খাচ্ছেন তার কোন গন্ধ ই আমি পাচ্ছি না।সত্তি যদি আপনার অস্তিত্ব থাকতো অবশ্যই আমি সিগারেটের গন্ধ পেতাম।

দাস বাবু আবার সিগারেট মুখে নিলেন।আমি তার কোন গন্ধ পাচ্ছি না।চিন্তিত মুখে কয়েকবার একটানা ধোঁয়া নিলেন ভেতরে।আস্তে আস্তে মুখ গোল করে উপরের দিকে তাকিয়ে ছেড়ে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,"তোমার পচ্ছন্দের ভিত্তিতে যদি তোমার ব্রেইন আমাকে তৈরি করে থাকে তাহলে অবশ্যই তুমি আমার ছবি দেখেছো।আমাকে ভালো ভাবে চেনো।যদি চিনেই থাকবে তবে প্রথমে কেনো জিজ্ঞেস করেছিলে আমি কে?
আমি খাচ্ছি ইলেকট্রনিক সিগারেট এটার কোন গন্ধ নেই।যেহেতু গন্ধ নেই সেহেতু তোমার গন্ধ পাওয়ার কোন প্রশ্ন ই আসে না।এছাড়াও তোমার নাকে অক্সিজেনের ক্যাপ লাগানো এর ভেতরে গন্ধ যাওয়া সম্ভব নয়। তুমি অক্সিজেনের নলটা ঠিক করে নিয়ে দেখো আমাকে দেখতে পাও কিনা"

আমি হাত নাড়াতে পারছি না।

আমি ঠিক করে দেই?

আপনি বলতে চাচ্ছেন আত্মাদের অস্তিত্ব আছে?

আমি কিছুই বলতে চাচ্ছি না।তুমি কি দেখেছো মারা যাওয়ার আগে মানুষ আশে পাশে তাকিয়ে বাবা মা দাদা দাদিদের কথা বলে "ওই দেখো দাদা বসে আছে,এ ওটা বলছে ও ওটা বলছে"।এগুলোর পেছনকার কারণ কি বলে তোমার মনে হয়?

আপনি কি লক্ষ করেছেন তারা যাদের কথা বলে তারা সবাই তার প্রিয় মানুষ কেউ দাদার কথা বলে কেউ দাদি কেউ বা নানি কেউ বা মা? সাপোজ একজন মারা যাওয়ার আগে বললো ওই যে মা বসে আছেন।। তার মানে মা এর আত্মা তাকে নিতে আসছে।আমার প্রশ্ন বাবা কেন নিতে আসে নি? যদি এসেও থাকে তবে কেন সে তার কথা বলছে না?আর আত্মাদের কি বয়স বাড়ে না নাকি বয়সের কারণে চেহারার কোন পরিবর্তন হয় না? মারা যাওয়ার সময় অনেক লোক কেন বলে মা একদম আগের মত আছে? একদম বদলায় নি? আগেই বলে নেই এটা আমি নিজেই দেখেছি।আমার ধারণা মানুষ তার প্রিয় মানুষরে শেষবার যে চেহারায় দেখে থাকে সেই চেহারাটা ই মারা যাওয়ার আগে তার সামনে হাজির হয়।

তুমি কি বলতে চাচ্ছ?

হ্যালুসুনিয়েশন।

মানে আত্মা বলে কিছু নেই?

হ্যাঁ।

তোমার ধারণা ভুল।

প্রমাণ করুন।

তিনি আবারো আগের কায়দায় সিগারেটে টান দিলেন।বোধ হয় এটা সিগারেট টানার তার নিজস্ব কায়দা।মাথা নিঁচু করে আমার মুখের সামনে এনে বললেন চলো প্রমাণ করে দেই, যদি এটা তোমার হ্যালুসুনিয়েশন হয়ে থাকে তবে তোমার জানার বাইরের কোন কিছুই এখানে ঘটার কথা না। আমার সম্পর্কে তোমাকে এমন একটা কথা এখন বলবো যা তুমি কখনো জানতে না।

বলুন

সবাই জানে কলকাতায় এক ট্রাম এক্সিডেন্টে আমি মারা গেছিলাম।কিন্তু ট্রামটা কলকাতার কোথা থেকে কোথায় যাচ্ছিলো এটা অনেকে জানে না।শুনতে চাও?

না।

কেন?

আমার বিশ্বাস আমার কাছে থাকুক।

আচ্ছা আমরা অন্য বিষয়ে কথা বলি।।
"শোনাগেল লাশকাটা ঘরে
নিয়ে গেছে তারে;
কাল রাতে-ফাল্গুনের রাতের আঁধারে
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হল তার সাধ"
এখানে পঞ্চমীর চঁদের সাথে তার মরে যাওয়ার ইচ্ছার কথা বলা হয়েছে কেনো বলতে পারো?

আপনার কবিতা নিয়ে আপনি নিজেই বড়াই করছেন?

দাস সাহেব শুকনা মুখে বললেন,"কবিতাটা পড়েছো তুমি?"

না পড়লে বললাম কিভাবে?

পরের লাইন গুলো মনে আছে?

আছে।

বলোতো।

পারবো না।

কেন?

এতবড় কবিতা বলতে ইচ্ছা করছে না।

কয়েক লাইন বলো।

" বধু শুয়ে ছিল পাশে—শিশুটিও ছিল;
প্রেম ছিল, আশা ছিল—জ্যোৎস্নায়—তবু সে দেখিল
কোন্‌ ভূত? ঘুম কেন ভেঙে গেল তার?
অথবা হয়নি ঘুম বহুকাল—লাশকাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার।
এই ঘুম চেয়েছিল বুঝি!
রক্তফেনা মাখা মুখে মড়কের ইঁদুরের মতো ঘাড় গুঁজি
আঁধার ঘুঁজির বুকে ঘুমায় এবার;
কোনোদিন জাগিবে না আর।" আর বলতে ইচ্ছে করছে না।।

হাহাহা

হাসছেন কেন?

তুমি জানো এই কবিতাটা তোমাকে আমি কেন বলতে বললাম?

না।কেন?

হাহাহা বাচ্চাদের মত সহজ হাসি।জানো এখন তুমি কোথায় আছো?

হাসপাতালে।

হাসপাতালের কোথায়?

অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম কোথায়?

হাসিটা শামলিয়ে মুখ শুকনা করে বললেন
লাশকাটা ঘরে।

আচ্ছা ।

হ্যাঁ।একটু আগে তুমি মারা গেছো।আর আমিই ছিলাম তোমার ব্রেনের তৈরি প্রিয় ব্যক্তি অথবা হ্যালুসুনিয়েশন অথবা তোমাকে নিতে আসা আত্মা।

আবারো বললাম ও আচ্ছা।

ডোম যখন তোমাকে কাটবে চিল্লাচিল্লি করবে না।তাতে কোন লাভ হবে না।কারণ এখন আর তোমাকে কেউ শুনতে পাবে না।আমার চিল্লানিও কেউ শুনতে পায় নি।

তারমানে আপনি বলতে চাচ্ছেন আত্মা আছে?

দাস বাবু অন্যমনস্ক হয়ে বসে আছেন উত্তর দিলেন না।।

দাস বাবু লাস্ট একটা প্রশ্ন করতে পারি?

অবশ্যই।

বনলতা সেন নামের এক রমণীর প্রেমে কি আপনি সত্যি পড়েছিলেন?

দাস বাবু এবার ও উত্তর দিলেন না তবে একটা রহস্যময় হাসি দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করলেন তারপর উল্টা হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ কোথায় যেন মিলিয়ে গেলেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:০৫
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

কওমী মাদ্রাসায় আলেম তৈরী হয় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৬২ জুমুআ, ২ নং আয়াতের অনুবাদ।
২। তিনিই উম্মীদের মধ্যে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য হতে, যে তাদের নিকট আবৃত করে তাঁর আয়াত সমূহ; তাদেরকে পবিত্র করে এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×