somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খোলা চিঠি

১৯ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আপনাকে ১ তারিখে কার্জন হলের সামনে দেখলাম।পরন্ত বিকেল হঠাৎ দেখে এলোমেলো হয়ে গেলাম।জানিনা কেন,এমন হল।এমন হবার কথা ছিল ।আপনি অপেক্ষা করছিলেন কারও জন্য,তা আপনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল।রোদের মাঝে বিরক্ত একখানা মুখ,মাঝে মাঝে সবুজ ওড়নার কোনা দিয়ে কপালের ঘামটা মুছে নিচ্ছিলেন।আর আমি বোকার মত আপনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।আপনিও আমার দিকে তাকিয়েছেন খুবই বিরক্ত ভরা চোখে।আমি জানি এটাই স্বাভাবিক।অপরিচিত একটা মানুষ আরকম ভম্বলের মত তাকিয়ে থাকলে অস্বস্তি লাগাই খুব স্বাভাবিক।ওভাবে তাকিয়ে থাকার জন্য ক্ষমা চাইছি।আমি জানিনা এতদূর পর্যন্ত আমার লিখাটা পরেছেন কিনা।পড়া এবং না পড়ার সম্ভাবনা ৫০%-৫০%।আমরা আসলে আর এত বড় লিখা পড়তে চাইনা।আমাদের মাঝ থেকে বই পড়ার অভ্যাসটা উঠে গেছে।আমি নিজেও মা বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে,পড়ার বইয়ের মাঝে লুকিয়ে বই পড়েছি।এখনও বই মেলা থেকে অনেক বই কেনা হয় কিন্তু আগের মত এত আগ্রহ নিয়ে পড়া হয় না।আনেক বেশি বকর বকর করে ফেলছি।এখনও বলা হয়নি আমি কে।আসলে আমি আপনার কাছে কেউ না।আপনি আমাকে চেনেনও না।আসলে চেনার কথাও না।আমি আর আপনি কোন সময় গ্রীনরোডে শাহাদাৎ স্যারের বাসায় পড়তাম।এক গাদা ছেলে মেয়ে এক সাথে পড়তাম।যদিও আমি স্যারের পড়া কিছুই বুঝতাম না।তবু কোন দিন স্যারের বাসায় যাওয়া মিস দিতাম না।এর পেছনে দুটো কারন ছিল।১)আমাকে মা সাথে করে পড়তে নিয়ে যেত।২)আপনাকে দেখব বলে।

উপরের লাইনটি পড়ে আপনি খুবই বিরক্ত হয়েছেন জানি। আমি জানি আপনার বয়ফ্রেন্ড আছে।আর আপনি এটিকে কোন প্রেমপত্র অথবা অন্যভাবে নিবেন না আশা করি।আমি যে কোন প্রেমপত্র লিখছিনা তা আশা করি এতক্ষণে বুঝে গেছেন।এই লিখাটা নিছক আবেগের বশবর্তী হয়ে লিখা।আশা করি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।বাকিটা একান্ত আপনার ইচ্ছা।



আপনাকে ভাল লাগার গল্পটা এবার বলি।একদিন আমারা স্যারের বাসা থেকে পড়ে বের হয়েছি।ভজন-বিলাস রেস্তরার সামনে দাঁড়ানো।আপনি এবং আপনার মা।আকাশটা মেঘলাই ছিল আগে থেকে।কিন্তু তখন হঠাৎ চারিদিক অন্ধকার করে এলো এবং বেশ ঝড় বাতাস বইতে শুরু করল।আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।আপনারা রিক্সা খুঁজছেন।আমি যদি ভুল করে না থাকি আপনারা জিগাতলা যাবেন।আমিও ঠিক আপনাদের পাশে দাঁড়ানো ছিলাম।চারিদিক প্রায় রাতের মত অন্ধকার,এঁর মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।সেই আলোর ঝলক আপনার মুখের উপর এসে পরছে আর আমি মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছি।মনে মনে ভেবেছি আল্লাহ্‌র শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি।কিশোর মন একটু বেশিই আবেগি হয় তাই হয়ত ভেবেছি।সবাই বলে না প্রেমে পরলে সবাই কবি হয়ে যায়।আমিও হয়েছিলাম। যাই হোক।পর দিন থেকে আমি স্যারের বাসায় ঠিক আপনার সামনা সামনি বসা শুরু করলাম।স্যার কি পড়াত আমি জানিনা,আমি শুধু আপনার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। এর কিছুদিন পর আমি জ্বরে পরি।তার পর স্যারের বাসায় যখন যাই আপনাকে পর পর দুই দিন দেখলাম না।এর পর আমার টেস্ট পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল।আপনাকেও হারিয়ে ফেললাম।জানেন অনেক দিন বাসা থেকে ঠিক করে গেছি আপনার সাথে কথা বলব।কিন্তু সাহস করে উঠতে পারিনি।সেই সাহস যে আজও হয়েছে তা বলবনা।আপনাকে কার্জন হলের সামনে দেখেও কত বার চিন্তা করলাম আপনার সাথে কথা বলব।কিন্তু পারিনি।অনেক বার আপনার আশেপাশে ঘুরাঘুরি করলাম কিন্তু সাহস করে উঠতে পারলাম।কিছুক্ষণ গেটের বাইরে এসে আপনার থেকে দূরে দাড়িয়ে রইলাম।পারলাম না আপনার সাথে কথা বলার সাহস সঞ্চয় করতে।এক সময় আপনার অপেক্ষার পালা শেষ হল।আমি ভেবেছিলাম আপনি বয়ফ্রেন্ডের জন্য অপেক্ষা করছেন।আপনি আমার ধারণাকে ভুল করে মায়ের সাথে গাড়িতে করে চলে গেলেন।

আসলে আপার সাথে আমার কথা বলার ও কিছু ছিল না।কি বলব? আসলে এখনও কিছু বলার নেই।ইচ্ছে হল তাই লিখলাম।

যদি এতক্ষণ কষ্ট করে পড়ে থাকেন তাহলে আপনাকে ধন্যবাদ।না পড়লে তো কথাই নেই।

ভাল থাকবেন।





এই চিঠিটা হ্রিদিতার ইনবক্সে এসেছে ।কে বা কেন চিঠিটা লিখেছে সে বুঝতে পারছে না।কিছুক্ষণ ল্যাপটপ এর তাকিয়ে থেকে সে ঘুমিয়ে পরল।সকালে ঘুম থেকে উঠে সে চিঠিটা আবার পরল। সে বুঝতে পারছেনা তার কি উত্তর দেয়া উচিৎ ।তারপর আবার ভাবল শুধু শুধু লাই দিয়ে মাথায় তলার কিছু নেই। তার মনে আরেকটি বিষয় নিয়ে খুত খুত লাগল।তার কোন বয়ফ্রেন্ড নেই, ছেলেটি কেন তাহলে ভুল করল। ভুলে তাকে অন্য জনের সাথে গুলিয়ে ফেলেছে।সে শুধু এতটুকু বুঝতে পারছে ছেলেটির প্রতি একটা মায়া অনুভব করছে। তার চিঠির মাঝে লিখার আবেগ তাকে ছুয়ে গেছে। মনে মনে চিন্তা করল,ছেলেটির সাথে একবার দ্যাখা করলে কেমন হয়।ছেলেটির নাম শুভ্র।

সে ফেসবুকে শুভ্রকে ইনবক্স করল, আমি চিঠিটি প্রেমপত্র হিসেবে নেই নি।আর আমি দুঃখিত আপনাকে দুঃখ দিয়ে থাকলে।আসলে এখানে আমার করার কিছু নেই। কিছুটা বিরক্ত অনুভব করেছি। আপনি অবশই বুঝবেন কেন? ভাল থাকবেন।



ঠিক তার ২মিনিট পরই ইনবক্স, ধন্যবাদ। আমি আপনার কাছে থেকে কোন উত্তরই আশা করিনি। আমার লিখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।



হ্রিদিতা লিখল,আপনি আমার সামনে এসে কথা বলতে পারেননি।আমি আপনাকে সেই সুযোগ দিলে নেবেন?



শুভ্র, জানিনা আমি আপনার সামনে গিয়ে কথা বলতে পারব কিনা।তবুও আপনার সামনা সামনি হতে চাই। আর আফসোস করতে চাইনা যে,সুযোগ এসেছিল কিন্তু আমি আপনার সামনে যাইনি।



হ্রিদিতা, ঠিক আছে। কাল কোথায়, কখন দেখা করবেন।



শুভ্র, বিকেলে ৪টা,কার্জন হলের সামনে।একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি, আপনি আপনার ফেসবুকে কোন ছবি দেননা কেন?



হ্রিদিতা, এমনি আমার ভাল লাগেনা।



বিকাল ৪টা, শুভ্র কার্জন হলের সামনে দাড়িয়ে আছে।মনে মনে ভাবছে মেয়েরা আসতে দেরি হবে এটাই স্বাভাবিক। মনের মাঝে একটা সংশয় আদও আসবে কিনা। প্রায় ৩০মিনিট পার হয়ে গেছে কিন্তু হ্রিদিতা আসেনি। কিছুক্ষণ ধরে শুভ্র খেয়াল করছে একটি মেয়ে রাস্তার ঐ পারে কারও জন্য অপেক্ষা করছে। ভাল করে খেয়াল করে দেখল সে হ্রিদিতা নয়। কিন্তু মেয়েটি এত সুন্দর যে না তাকিয়ে থাকা যায় না।কিন্তু মনে মনে ভাবল হ্রিদিতা যদি এসে দেখে সে অন্য মেয়ের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে, সেটা ঠিক হবে না।সে আর ঐ দিকে মনোযোগ দিল না। এর বেশ কিছুক্ষণ পর শুভ্র তার বা পাশ থেকে একটি মেয়ের গলা শুনতে পেল। আপনিই তো শুভ্র তাই না? শুভ্র সাথে সাথে ঘুরে দাঁড়ালো।তাকিয়ে দ্যাখে ঐ অপরুপা মহনিও সুন্দর মেয়েটি দাড়িয়ে আছে। মেয়েটি খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল, কি ভুত দ্যাখার মত করে তাকিয়ে আছেন কেন? আজও কি কোন কথা বলবেন না ? শুভ্র কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। এই মেয়ে তো হ্রিদিতা না । এই মেয়ে কে?

তবু শুভ্র স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে করে বলল, আপনি ভাল আছেন ? আসলে কি বলব বুঝে উঠতে পারছিনা।

এর পর বহু বছর কেটে গেছে, আজ ১০ বছর হ্রিদিতা আর শুভ্র সংসার করছে।সুখের সংসার। ৫বছরের একটা মেয়ে আছে। কিন্তু সে দিনের কথা শুভ্র হ্রিদিতাকে কখনও বলেনি। সে আসলে হ্রিদিতাকে কষ্ট দিতে চায়নি।



ভুলটা ছিল শুভ্রর। ফেসবুকে সে ভুল মেয়েকে চিঠিটা পাঠিয়েছিল। কাকতালীয় ভাবে অনেক কিছুই মিলে যায়। মাঝে মাঝে শুভ্র এখনও ভাবে সে কি হ্রিদিতার সাথে প্রতারনা করছে? কিন্তু সে তো সত্যি সত্যি হ্রিদিতাকে ভালবাসে। কিন্তু আবার ভাবে হ্রিদিতাতো ভাবছে শুভ্র সেই ছেলে যে তাকে এই কিশোর বয়স থেকে ভালবাসে । এত কিছুর পরও শুভ্র হ্রিদিতাকে কিছু বলে না। থাকনা কিছু না জানা। তাদের ভালবাসায় তো কোন কমতি নেই। দুজন দুজনকে মন উজার করে ভালবাসে /

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:২৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×