somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টেবিল যখন গণকযন্ত্র !

২২ শে নভেম্বর, ২০০৭ রাত ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কী-বোর্ড, মাউসের যুগ ফুরিয়ে আসছে! বদলে যাবে কম্পিউটারের প্রচলিত চেহারা। কারণ, খুব শীঘ্রই বাজারে আসছে সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফটের সারফেস কম্পিউটার। সম্প্রতি মাইক্রোসফটের সারফেস কম্পিউটার বাজারে আসার এ খবরে সারা বিশ্বের প্রযুক্তি মনস্ক মানুষের মনে ব্যাপক কৌতুহল এবং আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। সবার মনে একই প্রশ্ন কেমন হবে এই সারফেস কম্পিউটার ? আসুন, আজ এই প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি…

সারফেস কম্পিউটার হলো মূলত টাচ স্ক্রিন সুবিধাসম্পন্ন একটি কম্পিউটার। ৩০ ইঞ্চি ডিসপ্লে সমৃদ্ধ এই কম্পিউটারের চেহারা অনেকটা টেবিলের মতো। প্রচলিত ডেক্সটপ কম্পিউটারের মতো এই কম্পিউটার ব্যবহারে মাউস, কী-বোর্ডের সাহায্য লাগবে না একেবারেই। এর স্পর্শসংবেদী পর্দায় আঙ্গুল স্পর্শের মাধ্যমেই ব্যবহারকারী প্রয়োজনীয় কাজ সারতে পারবেন। এই পর্দাটি বারকোডও পড়তে পারবে। এছাড়া প্রচলিত টাচস্ক্রিনের সাথে এই টাচস্ক্রিনের বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন : প্রচলিত টাচস্ক্রিন একসঙ্গে একটির বেশি স্পর্শ না বুঝতে পারলেও সারফেস কম্পিউটারের টাচস্ক্রিনের এই অনন্য ক্ষমতাটি রয়েছে। এই স্ক্রিনে আপনি দশটি আঙ্গুল স্পর্শ করালে এই মাল্টিটাচ ডিসপ্লে প্রত্যেকটি আঙ্গুলের নির্দেশই আলাদাভাবে বুঝতে পারবে। আর আকৃতিটা টেবিলের মতো হওয়ায় অনেকজন একসাথে ব্যবহারের সুবিধাতো থাকছেই। অক্সোলিকের তৈরি দৃষ্টিনন্দন এই ‘সারফেস’-এর উচ্চতা ২২ ইঞ্চি, গভীরতা ২১ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ৪২ ইঞ্চি। এর অভ্যন্তরীন অংশটি পাউডারের প্রলেপ দেয়া স্টিলের তৈরি। এতে বিদ্যুত খরচ হবে ১১০-১২০ ভোল্ট (যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী)।

সারফেসের অপারেটিং সিস্টেম হবে ভিসতা। এর সাথে ম্যাপিংসহ আরও কিছু ডিফল্ট এ্যাপ্লিকেশনও দিয়ে দেবে মাইক্রোসফট যা সারফেস ব্যবহারকারীকে এক ভিন্ন স্বাদ এনে দেবে। চকচকে কালো রঙের সারফেসের বাজারে আসার কথা রয়েছে এ বছরের নভেম্বরে। এর দাম কত হবে তা নিশ্চিতভাবে না বলতে পারলেও মাইক্রোসফট জানিয়েছে মডেল অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের সারফেসের দাম পড়বে পাঁচ হাজার থেকে দশ হাজার ইউএস ডলারের মধ্যে। দামটা একটু বেশি হওয়ায় আগ্রহী অনেক ক্রেতাই হতাশ হতে পারেন। তাদের অবশ্য এতটা হতাশ হবার কোনো কারণ নেই। মাইক্রোসফট আশা প্রকাশ করেছে, অদূর ভবিষ্যতে সারফেস সাধারণ মানুষের নাগালে চলে আসবে। তবে এর জন্য আরও কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে। প্রাথমিকভাবে যেখানে সারফেসের দেখা পাবেন সেসব স্থানগুলো হলো হ্যারাস এন্টারটেইনমেন্ট, স্টারউড হোটেল এন্ড রিসর্ট, টি-মোবাইল (ইউএসএ)-এর দোকানসমূহে। এসব স্থানে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কাজই সহজ করে দেবে সারফেস। যেমন : সারফেসের টাচস্ক্রিনে স্পর্শ করেই ক্রেতারা জানতে পারবেন বিভিন্ন মডেলের মোবাইল ফোন সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য। এবার একটু পেছনে চোখ ফেরানো যাক। সফটওয়্যার জায়ান্ট হিসেবে খ্যাত মাইক্রোসফট সারফেসের মতো একটি বড়সড় হার্ডওয়্যার তৈরির কাজ শুরু করেছে ২০০১ সালে। এই প্রজেক্টে কাজ করে মাইক্রোসফটের রিসার্স এবং হার্ডওয়্যার বিষয়ক গ্রুপ। প্রায় দীর্ঘ ছয় বছর নিরলস পরিশ্রমের পর এ বছর মে মাসের শেষ সপ্তাহে সারফেস বাজারে আসার ঘোষণা দেয়া হয়। এর আগে এক্সবক্স এবং জুন মিডিয়া প্লেয়ার ছাড়া মাইক্রোসফট বড় ধরনের কোনো হার্ডওয়্যার বাজারে ছাড়েনি। তাই বরাবরের চেয়ে এবার মানুষের আগ্রহ একটু বেশিই। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সারফেসের জন্য। হয়তো অচিরেই প্রচলিত ডেক্সটপ পিসিকে হটিয়ে জায়গা দখল করবে সারফেস। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা একে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও হার্ডওয়্যার নির্মাতা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো কিন্তু নড়েচড়ে বসেছে। মনোপলির অভিযোগ মাইক্রোসফটের জন্য নতুন কিছু নয়। অপারেটিং সিস্টেমের ক্ষেত্রে যেভাবে এখন বাজার দখল করে আছে মাইক্রোসফট, সে রকম হার্ডওয়্যারের বাজারটিও কি সবশেষে মাইক্রোসফটের দখলেই যাবে ? সময়ই বলে দেবে এর উত্তর।

সারফেস মূলত হোটেল, রেস্তোরা, দোকানসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কথা মাথায় রেখেই বানানো। এটিএম বুথগুলো যেমন ব্যাংকিং-এর চেহারা পাল্টে দিয়েছে, তেমনি সারফেসও যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্তমান ছবিটা একদম পাল্টে দেবে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। আর কী-বোর্ড, মাউস ঝেঁড়ে একদম মেদমুক্ত এই কম্পিউটারটি অদূর ভবিষ্যতে হোম ইউজারদের মাঝেও জনপ্রিয় হয়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে।

টাচস্ক্রিন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ হচ্ছে অনেকদিন ধরেই। ‘সারফেস’ এক্ষেত্রে একটি বড় মাইলফলক। হয়তো একদিন এই কালো চকচকে টেবিলটাই আমাদের নিয়ে যাবে কম্পিউটিং-এর এক নতুন জগতে। এখন শুধু অপেক্ষার পালা…

[লেখাটি আমাদের প্রযুক্তি, টেকনোলজি টুডে এবং আমার ব্লগে] প্রকাশিত
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০০৭ রাত ১১:৫১
১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×