আমার দুই জন সাংবাদিক বন্ধু আহম্মেদ ফয়েজ ও আনিস রায়হান গত ৪ এপ্রিল রাতে শাসক দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের মতো গত ১৫ মাসে দেড় হাজারেরও বেশি সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন।
তবে আমার এই দুই সাংবাদিক বন্ধু প্রগতিশীল। তাই তাদের নির্যাতনের ঘটনা আমাদের খুব বেশি ভাবতে বাধ্য করে ছাত্রলীগের ব্যাপারে।
বাংলাদেশে শাসক দলের হাতে সাংবাদিকরা নির্যাতিত হবেন, এটি স্বাভাবকি ঘটনা। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে নির্যাতনের হারটা সব সময় একটু বেশি হয়। যেমন শেখ মুজিবর রহমান ক্ষমতা দখলের পর সদ্য স্বাধীন দেশটাতে সাড়ে তিন বছর জুড়ে চলছিল সাংবাদিক নির্যাতন। এই নির্যাতনের ব্যাপারে সমূহ আপত্তি থাকলেও কিছু কথা বলা জরুরি।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রলীগ সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও জনপদে ছাত্রলীগ প্রতিপক্ষ (ছাত্রদল ও ছাত্র শিবির) কর্মীদের ধরে ধরে নির্যাতন করছিলো। এই নির্যাতনকে স্বাভাবিকতা বলে প্রগতিশীল সাংবাদিকরা এড়িয়ে গেছেন!
এছাড়াও দেখা গেছে ছাত্রলীগের এমনতর নিপীড়নকে ঢেকে রেখে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে বৈধতা দিয়ে প্রগতিশীল সাংবাদিকরা সাংবাদিকতা করেছেন!
এহেন কর্মের ফলে কচু কচু কাটতে কাটতে যেমন মানুষ খুন করতে পারদর্শী হয়, তেমনি ছাত্রলীগও পারদর্শী হয়ে ওঠেছে। এখন ছাত্রলীগ প্রতিপক্ষ দমন করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না, স্বপক্ষ তথা প্রগতিশীলদের উপরও চড়াও হচ্ছে।
যেহেতু ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের নিপীড়নকে প্রগতিশীল সাংবাদিকরা অনুমোদন করেছেন, সেহেতু তাদের উপর চালানো হামলাকেও অনুমোদন করাটাই আজ জন দাবি!
বিশেষ করে কোথাও ছাত্রলীগের সুবিধা হয় এমন কোন ঘটনা আবিষ্কার করা গেলে আমরা দেখি প্রগতিশীল সাংবাদিক বন্ধুরা তেল মাথায় তেল মারতে কখনোই কসুর করেন না। এর স্বাক্ষ্য হিসেবে আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার কথা বিবেচনা করতে পারি।
রাজশাহীতে ছাত্রলীগের এক কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় বিনা তদন্তে, বিনা বিচারে ছাত্র শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে পুলিশ অসাংবিধানিক, বেআইনী ও ফ্যাসিবাদী আক্রমণ চালিয়েছে। এই আক্রমণকে উৎসাহিত করতে প্রগতিশীল সাংবাদিকরা সাপোর্টিং সংবাদ প্রকাশ করেছে দিনের পর দিন। যার জোরে রাজশাহী কলেজের এক ছাত্রকে চাপাইনবাবগঞ্জের দুই দারোগা গলায় বন্দুক ঠেকায়া গুলি করে হত্যা করেছে। এই হত্যাকান্ডকে বৈধতা দিয়েও প্রগতিশীলরা প্রতিবেদন রচনা করেছেন!
আমরা গত ১৫ মাস জুড়েই দেখছি ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে প্রগতিশীল সাংবাদিকরাই ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা জুগিয়েছে।এই ক্ষেত্রে একটি মতাদর্শিক অবস্থান প্রায়ই কাজ করে, ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে সংঘটিত সন্ত্রাস দেশে প্রগতিশীলতা বিস্তারে সহায়ক।
এমনকি ছাত্রলীগের সন্ত্রাসকে বৈধতা দিতে কমিউনিটি ব্লগে সচল সাংবাদিকদের প্রায়ই দেখা যায় ছাত্রলীগের ব্যাপারে কোথাও কোন কথা ওঠলে তারা ওই কথাকে যুদ্ধাপরাধীদের কথা হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন।
এমনকি আমরা দেখি ছাত্রলীগের পদ-পদবী নিয়া সন্ত্রাস করলেও প্রগতিশীল সাংবাদিকরা প্রমাণ করার চেষ্টা করেন ওই ঘটনার সঙ্গে ছাত্রদল বা ছাত্র শিবির জড়িত
এ ক্ষেত্রে তারা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতিকে শিবির ও সাধারণ সম্পাদককে ছাত্রদল সংশ্লিষ্টতায় অভিযুক্ত করে সন্ত্রাসের জন্য দায়ী ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীকে তাদের সঙ্গে ট্যাগ করে দেয়। ।
কিন্তু তারা একবারও ভেবে দেখে না ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সা. সম্পাদক শেখ হাসিনার অনুমোদনেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।তাই তাদের যাবতীয় সন্ত্রাস ও হারামীপনার দায়ভারের মদদদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীই হাসিনাই অভিযুক্ত।
কিন্তু এই অভিযোগ না তুলে উল্টো হাসিনার কাছেই প্রগতিশীল সাংবাদিকরা মিনতি জানান এবং বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের এই ছিঁচকে মাস্তান রিপন-সৈকতরা এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠছে কীভাবে? আপনার কি কিছুই করার নেই?
কিন্তু আমরা জানি সাংবিধানিতভাবে স্বীকৃত স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রীর বর পেয়ে যারা সন্ত্রাসের লাইসেন্স লাভ করেছে তাদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশ জানিয়ে কোন লাভ নেই।
উপরের লিংকে মহা প্রগতিশীল সাংবাদিক গোলাম মর্তুজার যে নালিশের কথা তুলে দিয়েছি, তার বস্তুগত বিচার করলে দেখা যায়, তিনি হাসিনাকে দেবীর আসনে বসিয়ে ষাষ্ঠাঙ্গে প্রণাম জানিয়ে তার ওজর-আপত্তি ও দুঃখের কথা বলছেন।
কিন্তু ছাত্রলীগ নামক আদরের ফ্রাংকেনস্টাইনটা তো হাসিনার হাতেই গড়া! এই ছাত্রলীগের কর্মকান্ডের মাধ্যমেই তো হাসিনা প্রকাশিত হচ্ছেন।ফলে হাসিনার কাছে বিচার চাওয়ার মানে কী?
বরং প্রগতিশীল সাংবাদিকরা যদি রাষ্ট্র, রাজনীতি ও আইনের মামলায় যাইতেন তাহলে হাসিনার কাছে নালিশ জানাতেন না, বরং এক দল ছিঁচকে মাস্তানকে প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ আদালতের কাছে শেখ হাসিনারই বিচার চাইতেন। কিন্তু তা কি সম্ভব গোলাম মর্তুজাদের পক্ষে?
বরং যা সম্ভব, তা করলেই ছাত্রলীগকে সামলানো যাবে। সেইটা কী?
সেইটা হচ্ছে প্রগতিশীল সাংবাদিকরা ছাত্রলীগকে পিঠ চাপড়ানো বন্ধ করেন। ছাত্রদল ও ছাত্র শিবির সন্ত্রাস করলে যেই জোশে লেখেন, ছাত্রলীগ সন্ত্রাস করলেও সেই জোশে লেখেন।
তাহলে কী হবে?
তাহলে ছাত্রলীগ আর ফ্রাংকেনস্টাইনও হবে না। বরং ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের মতো একট ছাত্র সংগঠনই থাকবে।এইটা শুধু ছাত্র সংগঠন থাকলে সৈকতরা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করার সাহস পাবে না, ওদের কেউ চাঁদাবাজিও করতে যাবে না।
আমি যতদূর ছাত্র সংগঠনের মাস্তানদের চিনি ক্ষমতার উপর থেকে ছায়া না দিলে তারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে উৎসাহিত হয় না।
কারণ জৈবিকভাবে তারা বুকে এতোটুকু সাহস ধারণ করে না