somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৭১ এর এক টুকরো গল্প

২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। জাহিদ অনেক দিন থেকেই কথাটা শুনে আসছিল। যুদ্ধের বাতাস তার নাকে এসে এখনো লাগেনি। তাই পচা লাশের গন্ধটা সে জানে না। যুদ্ধ যেহেতু শুরু হয়ে গেছে- তাই যুদ্ধের কিছু কিছু রেশ এই গ্রাম থেকে টের পাওয়া যায়। কিন্তু যুদ্ধ জিনিসটাকে এখনো পর্যন্ত অনুভব করা যায় নি।
যুদ্ধ নিয়ে জাহিদের তেমন একটা মাথা ব্যথা নেই। মানুষের মুখ থেকে শুনতে শুনতে কথাটা মনের ভিতরে গেথে গেছে। এখন সব সময় কানের কাছে বাজতে থাকে- যুদ্ধ...যুদ্ধ..।
সেদিন রেহানা বলেছিল একটা রেডিও কিনে আনতে। জাহিদ বিরক্ত হয়ে জানতে চেয়েছিল- রেডিও দিয়ে কি হবে?
রেহান তখন অনেক কিছু বলেছিল। রেডিওতে যুদ্ধের গান হয়...... । বাকিটা জাহেদ শুনতে পায়নি ঘুমিয়ে পড়েছিল। যুদ্ধের ব্যপারে তার কোনো আগ্রহ নেই। রেহানাকে জড়িয়ে ঘুমানোর মাঝেই তার সব আনন্দ। যুদ্ধ-ফুদ্ধ তার ভাল লাগে না।
রেহানার সাথে তার বিয়ে হয়েছে ছয়মাস ধরে। দিনগুলো তার বেশ অনন্দেই কাটছিল। মাঝখান থেকে কি একটা শুরু হয়ে গেল!
চায়ের দোকানদার আবুল মিয়া সেদিন বলল- কি মিয়া খবর কিছু আছে?
জাহিদ বুঝতে না পেরে হা করে তাকিয়ে রইলো। আবুল মিয়া কিসের খবর জানতে চাচ্ছে?
জাহিদ বলল- খবর আবার কি! খবরতো ভলই।
- আমিতো তোমার খবর জিগাই নাই। দেশের খবর জিগাইছি।
জাহিদ মনে মনে একটু লজ্জা পেয়েছিল সেদিন। খবর কিছু রাখা উচিত। একটা রেডিও আসলেই খুব দরকার।
জাহিদ আজ মনে মনে একটা রেডিও কেনার সিদ্ধান্ত নিল। রেহানে না জানিয়ে কিনতে হবে। হঠাত্‍ করেই রেডিও পেলে সে খুব খুশি হবে। বউকে খুশি করতে পারলে বউয়ের কাছ থেকে অনেক কিছু আদায় করা সম্ভব।
জাহিদ মনে মনে একটু হেসে ওঠলো।
- কি জাহেদ ভাই, একলা একলা হাসো কেন?
চুন্নুকে দেখে চমকে ওঠলো জাহিদ। অনেক দিনের পুরাতন বন্ধু। জড়িয়ে ধরল চুন্নুকে। বুকের ভিতরে টেনে নিল বন্ধু। একসাথে বসা হলো দুজনের। অনেক কথা হলো। নতুন কথা এবং পুরাতন কথা। যুদ্ধের কথা। যুদ্ধের ভয়াবহতা।

একদিন জাহেদ গোপনে একটা রেডিও কিনে আনল। রেহানাকে না দেখিয়ে সেটা বালিশের নিচে রেখে দিল। রাতের বেলা সেটা দেখিয়ে রেহানাকে চমকে দিল। রেহানা খুব খুশি। বিছানায় রেহানাকে শুইয়ে দিল। নিজেও শুয়ে পড়ল রেহান শরুরের উপর। আজ আর কোনো দুষ্টামী কিংবা ছলনা নয়। রেহানাও আজ সারা দিল। দুজনের দুটি ঠোট এক হলো। দুটি শরীর যেন মিশে যেতে চাচ্ছে।
জাহিদ জানে।
এটাই শান্তি। এটাই জীবন।

কয়েকদিনের ভিতরেই গ্রামের ভিতরের চেহারাটা পাল্টাতে থাকল। মেঘে ঢাকা আকাশের মত থমথমে চারিদিক। চারদিকে একটাই রব। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।

কথাটা পুরাতন। এরসাথে নতুন আরো কিছু কথা যুক্ত হয়েছে। যুদ্ধ করতে হবে। দেশ স্বাধীন করতে হবে।
আমাদের আসবে স্বাধীনতা। আমরা পাব নতুন পরিচয়। আমাদের হবে নতুন দেশ। সেদিন চিত্‍কার করে বলতে পারব আমরা বাঙালী।

কাথাগুলো ভাবলেই জাহিদের ভিতরে অন্যরকম একটা অনুভূতি হয়। নতুন শিহরন। নতুন ভাললাগা।

মাঝে মাঝে মনে হয় রেহানার স্তনে মুখ ঘষাটা সুখের কিন্তু মনের ভিতরে পরাধীধতার গ্লানি। দেশটাকে যদি স্বাধীন করা যায় তবে সেটা হবে আরো বেশি আনন্দের। তখন রেহানার রুপ হবে আরো সুন্দর। জাহিদের চোখ হবে আরো উজ্জল। মনে থাকবেনা কোনো গ্লানি। তখন রেহানার স্তনে মুখ ঘষার অনন্দ হবে আরো অধিক।
দেশে থাকবে না জুলুম, নির্জাতন, শোষন। আকাশে ওড়বে মুক্তির নিষান। বাতাশে থাকবে ফুলের সুবাশ। মেঘেঢাকা আকাশের ফাকে উকি দিবে সূর্য।

তাই যুদ্ধ করতে হবে। নিন্মাঙ্গে লাথি মের দেশ থেকে কুত্তা তারাতে হবে। পাকিস্তানি কুলাঙ্গারদের এবং রাজাকারদের গোপন অঙ্গ কেটে নিয়ে যেদিন বাঙালীভোজের আয়োজন করা যাবে সেদিন আসবে শান্তি।
তাই যুদ্ধের দরকার আছে। এটা অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। আমাদের বেঁচে থাকার যুদ্ধ।
হে বাঙালীর বাচ্চারা, বউয়ের শরীরের উপর থেক নেমে এসে যুদ্ধ করো। দেশ স্বাধীন করো।

জাহিদ অবশেষে সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেলল। সে যুদ্ধে যাবে। সে যুদ্ধ করবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। বেঁচে থাকার যুদ্ধ।
চুন্নুর সাথে পরামর্শ করল। আজ শেষ রাতে চুন্নু তাকে নিতে আসবে।

বাড়ি ফিরে এসে সিদ্ধান্তের কথাটা সে রেহানাকে জানাল। রেহানা অন্য মেয়েদের চেয়ে আলাদা। অন্য মেয়েরা স্বামীকে যেতে নিষেধ করে। কিন্তু রেহানা স্বামীকে উত্‍সাহ দিল।

রাত বাড়তে থাকে।

আজ রাতে জাহিদ রেহানাকে আদর করবে। যুদ্ধ থেকে ফিরে না আসতে পারলে হয়তো আর কখনো আদর করার সুযোগ হবে। হয়তো এটা জীবনের শেষ আদর।
রেহানার স্তন দুইটিকে জাহিদ পিষে ফেলতে চাইছে।
এমন সময় দরজায় শব্দ হলো ঠুক ঠুক।
মুহুর্তেই সব আনন্দ মাটি হয়ে গেল। দরজা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করলে পাকিস্তানি হায়নার দল। সাথে আছে ঝন্টু মিয়া। ঝন্টু মিয়া রাজাকারের খাতায় অনেক আগেই নাম লিখিয়েছে।
বিছানা থেকে জাহিদকে টেনে নামাল ঝন্টু রাজাকার। রেহানার খোলা বুকের দিকে তাকাল সে। মুহুর্তেই পাকিস্তানি এক কুলাঙ্গার সেনা বিছানায় ঝাপিয়ে পড়ল। জাহিদের চোখের সামনে একে একে ৩জন দ্বারা ধর্ষিত হলো রেহানা। সব শেষে রেহানার মৃতপ্রায় শরীরটাকে নিয়ে খেলায় মেতে ওঠলো রাজাকার ঝন্টু। বাধা দেওয়ার শক্তি জাহিদের নেই। তার বুকে অনেক আগেই বিদ্ধ হয়েছে ৪টি তাজা বুলেট। শেষ বারের মত সে রেহানার রেহানার চেহারার দিকে তাকাল। ঝন্টু মিয়ার এখনো শেষ হয়নি। জাহিদ ঢুলে পড়ল। কিছুক্ষন পরে তার কানে এলো দুটি ফায়ারের শব্দে। রেহানার বুকটা ঝাঝরা হয়ে গেল।
শেষ হলো ৭১ এর একটি টুকরো গল্পের।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×