মশা একটি মহা বিরক্তিকর প্রাণী। তার গান কেউ শুনতে চায়না, তবুও সে শুনাতে চায়। কি বেহায়া! মশা যখনই কানের কাছে এসে সুর তোলে, তখনই মূহুর্তের মধ্যে কানের কাছে হাত চলে যায়। দু:খিত! মশার গল্প শুনাতে আসিনি। মশার গান শুনলেই হাত চলে যায় কানের কাছে। এখানে রয়েছে বিশাল এক মেকানিজম। সেকেন্ডের মধ্যেই যে কতো ঘটনা ঘটে গিয়ে তারপর আমাদের হাত উঠে সে খবর কি আর আমরা রাখি? সেই বিশাল মেকানিজমের ক্ষুদ্র একটি অংশ নিয়ে আজ আলোচনা করবো।
যেকোনো ধরনের সেনসেশন যেমন, (গরম, ঠান্ডা, স্পর্শ ইত্যাদী) পেলে আমরা রিয়েক্ট করি। হঠাৎ ঠান্ডা বাতাস লাগলে শরীর কেঁপে উঠে কিংবা আগুনের সংস্পর্শে গেলে দ্রুত নিজেকে সরিয়ে নেই। এই কাজ গুলো করে থাকে আমাদের সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম বা কেন্দ্রীয় স্নায়ূতন্ত্র। যখনই আমরা সেনসেশন পাই, সেটা সেনসরি নিউরন দিয়ে চলে যায় আমাদের ব্রেইনে আবার ব্রেইনের নির্দেশ নিয়ে মোটর নিউরন আমাদের জানিয়ে দেয় কি করতে হবে। সেনসরি নিউরন দিয়ে সেনসেশন যায় আর মোটর নিউরন দিয়ে কমান্ড আসে ঠিক এই জায়গাতেই আজকের আলোচনা।
আমাদের কেন্দ্রীয় স্নায়ূতন্ত্রে প্রায় ১০০ বিলিয়নেরও বেশি নিউরন রয়েছে। এক নিউরন থেকে ইম্পালস অন্য নিউরনে প্রবেশ করে সিন্যাপসের মাধ্যমে। তার মানে সিন্যাপস হচ্ছে এক নিউরন থেকে আরেক নিউরনের জাংশন পয়েন্ট। সিন্যাপস এর রয়েছে বহুমুখী ক্ষমতা। সে চাইলে ইম্পালস ট্রান্সমিশন ব্লক করে দিতে পারে, সিঙ্গেল ইম্পালসকে রিপিটিটিভ ইম্পালসে পরিবর্তন করে দিতে পারে আরো অনেক। এগুলোকে বলা হয় সিন্যাপটিক ফাংশন অফ নিউরন।
সিন্যাপস দুই রকম হতে পারে। কেমিক্যাল এবং ইলেক্ট্রিক্যাল। আমাদের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বেশিরভাগ সিন্যাপস হচ্ছে কেমিক্যাল। কেমিক্যাল সিন্যাপসের একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি সবসময় একটি ডিরেকশনে ইম্পালস ট্রান্সমিট করে। কেমিক্যাল সিন্যাপস কিভাবে কাজ করে সেটাই আজকে জানবো।
ধরুন, আপনার এবং আপনার বন্ধুর বাসা কাছাকাছি দূরত্বে। দুই বাসার মাঝখানে একটা মাঠ। আপনার বন্ধুর আম্মু খুব ভালো রান্না করেন। প্রতিদিন দুপুরে আন্টি যখন রান্না করেন, রান্নার ঘ্রাণ মাঠ পার হয়ে আপনার রুমের জানালা দিয়ে প্রবেশ করে। এতে আপনার পাকস্থলী থেকে প্রচুর পরিমাণে গ্যাস্ট্রিক সিক্রেশন হয়। এবং আপনিও খাবার দেওয়ার জন্য আপনার আম্মুকে তাড়া দেন।
আপনার বন্ধুর বাসার (প্রথম নিউরন)নাম হচ্ছে প্রি সিন্যাপটিক টার্মিনাল বা এক্সন ।(প্রি সিন্যাপটিক টার্মিনাল আকারে ছোট, গোলাকার হতে পারে আবার অভাল নবও হতে পারে।) মাঝখানের ফাঁকা মাঠটি হচ্ছে সিন্যাপটিক ক্লেফট (এটি প্রস্থে ২০০-৩০০ এংস্ট্রন) এবং আপনার বাসার (দ্বিতীয় নিউরন) নাম পোস্ট-সিন্যাপটিক টার্মিনাল বা ডেনড্রাইট।
প্রি সিন্যাপটিক টার্মিনালে (বন্ধুর বাসা) দুটো জিনিস রয়েছে।
*মাইটোকন্ড্রিয়া (আন্টি)
*ট্রান্সমিটার ভেসিকল (হাড়ি-পাতিল)
ট্রান্সমিটার ভেসিকল অর্থাৎ রান্নার হাড়ি থেকে যে ঘ্রাণ বের হয় সেটাকে আমরা বলবো নিউরোট্রান্সমিটার বা ট্রান্সমিটার সাবস্টেন্স।
রান্না হলে যেমন ঘ্রাণ বের হয় তেমনি, প্রি সিন্যাপটিক টার্মিনালের মেমব্রেনে থাকে অসংখ্য ভোল্ট্রজ গেটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল। যখন কোনো একশান পটেনশিয়াল মেমব্রেনকে ডিপোলারাইজ করে তখন এই ক্যালসিয়াম চ্যানেল ওপেন হয় এবং ক্যালসিয়ান আয়ন টার্মিনালে আসে। এসে এরা মেমব্রেনে থাকা স্পেশাল প্রোটিন মলিকিউল "রিলিজ সাইট"-র সাথে যুক্ত হয়ে নিউরোট্রান্সমিটারকে বের করে দেয়। অর্থাৎ হাড়ি থেকে ঘ্রাণ বের হয়। যতো ভালো রান্না হবে ততো ভালো ঘ্রাণ আসবে, তেমনি নিউরোট্রান্সমিটারের বের হওয়ার সংখ্যা নির্ভর করে ক্যালসিয়াম আয়নের সংখ্যার উপর।
রান্নার ঘ্রাণ মাঠ পার হয়ে আপনার বাসার জানালা দিয়ে প্রবেশ করে। জানালার নাম দেই আয়ন চ্যানেল। পোস্ট সিন্যাপটিক মেমব্রেনে রয়েছে রিসেপ্টর প্রোটিন যারা নিউরোট্রান্সমিটার রিসিভ করে। এদের দুইটা অংশ:
*বাইন্ডিং কম্পোনেন্ট (এরা সিনাপটিক ক্ল্যাফটে প্রিসিন্যাপটিক টার্মিনাল থেকে আসা নিউরোট্রান্সমিটারের সাথে বাইন্ড করে।)
* ইন্ট্রাসেলুলার কম্পোনেন্ট (এরা মেমব্রেন থেকে পোস্ট সিন্যাপটিক নিউরনের ভিতরে নিয়ে আসে)
এই নিয়ে আসাটা দুই রকমের হতে পারে। ঘ্রাণ তো জানালা দিয়ে সরাসরি ঢুকে যায়। যদি নিউরোট্রান্সমিটার এরকম সরাসরি আয়ন চ্যানেল দিয়ে ঢুকে যায় তাহলে তাকে বলবো আয়োনোট্রপিক রিসেপ্টর। আর যদি সেকেন্ড মেসেঞ্জার সিস্টেমের মাধ্যমে ঢুকে তাহলে বলবো মেটাবোট্রপিক রিসেপ্টর।
জানালা বা আয়ন চ্যানেল নিয়ে একটু কথা বলেই শেষ করবো। আয়ন চ্যানেল দুরকমের আছে।
১. ক্যাটায়ন চ্যানেল।
২. এনায়ন চ্যানেল।
ক্যাটায়ন চ্যানেল গুলো নেগেটিভ চার্জ দ্বারা লাইন্ড থাকে যা সোডিয়াম আয়নকে আকর্ষণ করে এবং এই নেগেটিভ চার্জ ক্লোরাইড আয়ন এবং অন্যান্য এনায়নকে তাড়িয়ে দেয়।
এনায়ন চ্যানেলগুলা ক্লোরাইড আয়নকে ঢুকতে দেয় আর সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম আয়নগুলো সাইজে বড় হওয়ার কারণে আর ঢুকতে পারেনা।
যে নিউরোট্রান্সমিটার গুলো ক্যাটায়ন চ্যানেল ওপেন করে তারা হচ্ছে এক্সাইটেটরি নিউরোট্রান্সমিটার অর্থাৎ এরা পোস্টসিন্যাপটিক নিউরনকে এক্সাইট করে।
যে নিউরোট্রান্সমিটার গুলা এনায়ন চ্যানেল ওপেন করে তারা হচ্ছে ইনহিবিটরি নিউরোট্রান্সমিটার অর্থাৎ এরা পোস্টসিন্যাপটিক নিউরনকে ইনহিবিট করে।
এভাবেই ঘ্রাণ এক বাসা থেকে আরেক বাসায় অর্থাৎ নার্ভ ইম্পালস এক নিউরন থেকে আরেক নিউরনে প্রবাহিত হয়ে আমাদের যাবতীয় একটিভিটিজ সম্পর্ন করায়। এই ছিলো ফিজিওলজিক্যাল এনাটমি অফ সিন্যাপস।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:১০