শুনতে পারাটা অনেক বড় একটা অ্নুগ্রহ সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে। ভোরবেলা পাখির গান শুনে ঘুম ভাঙ্গা আর বৃষ্টির দিনে টিনের চালে বৃষ্টি পড়ার শব্দ নিয়ে লেখালেখির সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। চিন্তা করুন, যদি এই কান দুটি থাকতো না? যদি আমরা শুনতে পেতাম না? নিরব, নিস্তব্ধ এই পৃথিবীটা তখন মেতে উঠতো না কোলাহলে, গুঞ্জনে আর আর্তনাদে। কান আছে বলেই আমরা শুনতে পাই। কিন্তু, এই শোনার পিছনে যে কি জটিল মেকানিজম আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করে দিয়েছেন তার খবর আমরা কয়জনই রাখি? আজ তাহলে জেনে নিবো, শব্দ শুনতে গেলে আমাদের কান থেকে ব্রেইন পর্যন্ত কি কি ঘটনা ঘটে যায়।
প্রথমে কান থেকেই শুরু করি। কান বলতে আমরা বাইরের একটা বর্ধিত অংশকেই বুঝি। কিন্তু মাথার ভিতরে কানের আরো বিশাল একটা অংশ আমাদের চোখের অগোচরে রয়ে গেছে। কানকে আমরা আলোচনার সুবিধার্থে তিনভাগে ভাগ করে নিবো। বহি:কর্ণ, মধ্যকর্ণ এবং অন্ত:কর্ণ। শব্দ শুনতে গেলে এই তিনটি অংশই নির্দিষ্ট কিছু কাজ করে।
বাতাসে শব্দের উৎপত্তি হলে সেটা আমাদের কানের ফুটো দিয়ে এক্সটার্নাল মিটাসে প্রবেশ করে। এক্সটার্নাল মিটাস হচ্ছে কানের ফুটো থেকে শুরু করে ২৪ মি.মি. লম্বা একটা ক্যানেল। এই ক্যানেলের শেষ মাথায় থাকে একটা পাতলা, স্বচ্চ পর্দা। যার নাম টিমপেনিক পর্দা। শব্দ তরঙ্গ এক্সটার্নাল মিটাস দিয়ে গিয়ে সেই পর্দাতে আঘাত করে। ফলস্বরুপ, পর্দাটি কেপে উঠে। জেনে রাখা ভালো, টিমপেনিক পর্দাকে ইয়ার ড্রামও বলা হয়।
আমাদের কানে ছোট ছোট তিনটা অস্থি বা হাড় আছে। এদের নাম যথাক্রমে ম্যালিয়াস, ইনকাস, স্টেপিস। এরা পরপর একটার সাথে আরেকটা যুক্ত থাকে। টিমপেনিক পর্দাটা ম্যালিয়াসের সাথে যুক্ত থাকে। শব্দতরঙ্গের আঘাতে যখন টিমপেনিক পর্দা কেঁপে উঠে, সাথে সাথে এই তিনটি হাড়ও কেঁপে উঠে। সবশেষে কম্পিত হয় স্টেপিস। মজার ব্যাপার হচ্ছে আমাদের দেহের সবচেয়ে ছোট হাড় হচ্ছে এই স্টেপিস। স্টেপিসের কম্পনের ফলে একটি তরঙ্গমালা সৃষ্টি হয়ে স্ক্যালা ভেস্টিবুলির পেরিলিম্ফ এবং স্ক্যালা মিডিয়ার এন্ডোলিম্ফ হয়ে অর্গান অফ কর্টিতে আসে। অর্গান অফ কর্টি হচ্ছে আমাদের দেহের অডিটরি রিসেপ্টর। অর্থাৎ এটি শব্দতরঙ্গকে রিসিভ করে। এতোক্ষণ যা বলছিলাম সবাই শব্দ বয়ে অর্গান অফ কর্টির কাছে নিয়ে আসে।
অর্গান অফ কর্টি তখন শব্দ অনুভূতি ককলিয়ার নার্ভের মাধ্যমে ব্রেইনে পাঠায়। ব্রেইন এই শব্দকে বিশ্লেষণ করে তার অর্থ উদঘাটন করে। তারপর প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করে। আর এই ঘটনাগুলি ঘটে যায় মুহুর্তের মধ্যেই।
উপরোক্ত বাধা বিপত্তি গুলো পেরিয়েই কেবল আমরা শব্দ শুনতে পাই। এসব জটিল মেকানিজম যতোই জানছি ততোই অবাক হচ্ছি। কি নিখুত সৃষ্টি! দেহের প্রত্যেকটি অঙ্গেরই নির্ধারিত কাজ আছে। কোনোকিছুই অযথা নয়। অবাক হচ্ছি আর কৃতজ্ঞতায় মাথা নুয়ে যাচ্ছে সেই মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি। তিনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:১৭