somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উচ্চ শিক্ষা কি মানুষের মৌলিক অধিকার?

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা সবাই জানি, শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু উচ্চশিক্ষাটাও কি মৌলিক অধিকার? সরকার কি সবাইকে ফ্রিতে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করে দিতে বাধ্য?



উন্নত দেশগুলোতেও কিন্তু উচ্চশিক্ষা পুরোপুরি ফ্রি না। বিভিন্ন স্কলারশিপ আছে, টিচিং এসিস্ট্যান্ট হিসেবে বা অন্য কোন পার্টটাইম কাজ করার সুযোগ আছে, এ ছাড়া আছে লোন করে পড়ালেখা করার ব্যবস্থা। পড়ালেখা শেষ হলে সেই লোন শোধ করতে হয়। আমাদের দেশে প্রাথমিক শিক্ষা ফ্রিতে দেয়া হয়। কিন্তু উচ্চ-শিক্ষার বেলায় এসে বিভিন্ন পাবলিক ভার্সিটি/ সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে নামমাত্রমূল্যে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়ালেখা করে। যেহেতু আসন সংখ্যা সীমিত তাই তুমুল প্রতিযোগীতার মাধ্যমে এখানে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হয়। বাকিদের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে সরকারি কলেজগুলোতে ভর্তির সুযোগ আছে। কিন্তু মানুষের আকাঙ্ক্ষা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ আর পড়তে চায় না, টাকা থাকুক বা না থাকুক প্রাইভেটে নিজের পছন্দের বিষয়ে পড়ার জন্য অনেকে ভর্তি হচ্ছে। অবশ্য এটা না করে উপায়ও নেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পরে চাকরির বাজারে পিছিয়ে পড়তে হয়।



ভুরি ভুরি এ প্লাস পাইয়ে দিয়ে সরকার নিজের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করছে, সেই সাথে অনেকের মনে অযথা উচ্চাকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করছে। আমাদের এটা মাথায় রাখতে হবে, সরকার আপনাকে শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ দিতে বাধ্য কিন্তু আপনার পছন্দের বিষয়ে শিক্ষার সুযোগ করে দিতে সরকার বাধ্য নয়। সে সুযোগ আপনার নিজের করে নিতে হবে। আপনি যদি সেটা না পারেন সেটা আপনার ব্যর্থতা, সরকারের নয়! এত উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকার একটাই সমস্যা, সবাই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়! আর উচ্চশিক্ষার নাম করে এই সুযোগটাই নিচ্ছে কিছু ব্যবসায়ী। দেখা যায়, ছেলে এ প্লাস পেয়েছে, সরকারি কোথাও চান্স পায়নি, বাবা-মা জমি বিক্রি করে হলেও লাখ লাখ টাকা খরচ করে তাকে প্রাইভেটে ভর্তি করে। এখানে লাভবান হচ্ছে কারা? আমাদের দেশে কি বেসরকারি মেডিকেল বা ভার্সিটিগুলো সর্বোচ্চ কতটাকা টিউশন ফি নিতে পারবে এমন কোন আইন আছে? টিউশন ফি বাদ দিলাম, এরা এই ফি, ঐ ফি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় নিরীহ মানুষের কাছ থেকে। সরকার এদের বিরুদ্ধে তো কিছুই করছে না, উলটা ছাত্র-ছাত্রীদের উপর ভ্যাট নামক বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে! সরকার কেন এদের বিরুদ্ধে কিছু করছে না? কিভাবে সরকার এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে? যে কোন প্রাইভেট ভার্সিটি/ মেডিকেল অনুমোদন নেয়ার সময় সরকারের উচ্চপদস্থ লোকদের অনেক টাকা ঘুষ (স্পিড মানি :P ) দেয়া হয়। যাদের থেকে এত টাকা নিল তাদের বিরুদ্ধে তো চাইলেই আর ব্যবস্থা নেয়া যায় না! এ জন্য তারা তাদের ইচ্ছামত টিউশন ফি নেয়। আমার মতে এটার বিরুদ্ধেও আন্দোলন হওয়া দরকার, এত বেশি টিউশন ফি নিবে কেন? সরকারকে ভ্যাট দিতে আপনাদের কষ্ট হয়, সেটা বাতিল করার জন্য যদি আপনারা সরকারে বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে পারেন, তাহলে আপনারা কেন প্রাইভেট ভার্সিটির অতিরিক্ত টিউশন ফির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন না? আমার যা ধারণা অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মৌনসম্মতি দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঠে নামিয়েছে। (এটা শুধুই আমার ধারণা, এটা ভুলও হতে পারে!) গুলি কিন্তু তারা খাচ্ছে না, গুলি খাচ্ছে নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীরা।


একটু আগে একটা মেসেজ পেলাম মোবাইলে, "Biddoman Tuition Fee er modhdhe VAT Ontorvukto Thakay VAT Porishodh Korar Dayitto Sompurnorupe Besorkari BIsshobiddaloy Kotripokhkher, Chatroder Noy- NBR."
এই মেসেজ পড়ে আমার খুব হাসি পেল। ট্যাক্স আর ভ্যাটের মাঝে তফাত আছে। ট্যাক্স হচ্ছে সরাসরি কর, আর ভ্যাট হল পরোক্ষ কর। আপনি যদি বাজার থেকে কোন পণ্য কিনেন তাহলে ১০০ টাকার পণ্য কিনলে আপনাকে ১১৫ টাকা দিতে হবে, এই ১৫ টাকা সরকারের কোষাগারে যাবে। এটাই হচ্ছে ভ্যাট। এই ভ্যাট কিন্তু বিক্রেতা বা দোকানদার দিচ্ছে না, এই ভ্যাট দিচ্ছে ক্রেতা। দোকানদার তো তার ব্যবসায়ের লাইসেন্স, দোকানের লাইসেন্স, ইনকাম ট্যাক্স এসব দিচ্ছে। আমাদের দেশে মানুষকে বোকা বানানো খুবই সোজা। সরকার চাপে পড়ে এখন এসব কথা বলছে। রাজস্ব কর্মকর্তারা ট্যাক্স আর ভ্যাটের পার্থক্য বুঝে না, সেটা আমি বিশ্বাস করি না। আর এখন টিউশন ফি না বাড়ালেও পরে ঠিকই কর্তৃপক্ষ নানান অযুহাতে টিউশন ফি বাড়িয়ে এই বাড়তি টাকা আদায় করবে আপনাদের কাছ থেকে। তখন কিন্তু একা একা আর আন্দোলন করতে পারবেন না আপনার প্রিয় (!) প্রাইভেট মেডিকেল/ ভার্সিটির বিরুদ্ধে!


বিঃদ্রঃ এই লেখায় অনেক কঠিন কঠিন কথা বলেছি। প্রাইভেটে পড়েন এমন কেউ আমার কথায় কষ্ট পেলে, আমি দুঃখিত। আমি শুধু বাস্তবতাটাই আপনাদের বুঝাতে চেয়েছি। হয়ত এসএসসি বা এইচএসসিতে ঠিকমত পড়ালেখা করেননি বা অন্যকোন কারণে সরকারি কোথাও চান্স পাননি, এ জন্য আপনার নিজেকে ছোট ভাবার কোন কারণ নেই। আপনি যেখানেই পড়েন না কেন, যদি আপনার মধ্যে পরিশ্রম করার ক্ষমতা, আর একাগ্রতা থাকে তাহলে আপনাকে কেউ থামাতে পারবে না। প্রাইভেটে পড়েও আপনি জীবনে এমন কিছু করতে পারবেন যা সরকারিতে পড়া আলসেরা কল্পনাও করতে পারবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০২
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×