somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরীক্ষার খাতায় সুন্দর হাতের লেখা নিয়ে অতিরিক্ত আদিখ্যেতা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন!

৩১ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের দেশের পড়াশোনার সিস্টেম এতই বিরক্তিকর যে খুব বেশি মানসিক শক্তি না থাকলে, মনের আনন্দে কেউ পড়াশোনা করতে চাইবে না। দেশের পরীক্ষার সিস্টেমে একজন ছাত্রের বুদ্ধিমত্তা যাচাই করার নামে আসলে সে কতটা মুখস্থ করতে পারে এবং তার হাতের লেখা কতটা সুন্দর সেটা যাচাই করা হয়। এজন্যই আমরা মাঝে মাঝে শিক্ষকদের গর্ব করে বলতে শুনি তার তো বইয়ের এ মাথা থেকে ওই মাথা পর্যন্ত মুখস্থ! তার হাতের লেখা মুক্তার মত সুন্দর! এগুলো কি আসলে বুদ্ধিমত্তা যাচাইয়ের কোন মাধ্যম? তার আগে আমাদের বুঝতে হবে বুদ্ধিমত্তা বলতে কী বুঝায়। বুদ্ধিমত্তা মূলত সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা। সেই সমস্যা নানান ধরণের হতে পারে। গণিত বা বিজ্ঞানের সমস্যা যেমন হতে পারে তেমনি খুব জটিল সামাজিক কোন সমস্যা, পারিবারিক সমস্যা, একেবারে গ্রস লেভেলে কাজের ক্ষেত্রে লাভ-লোকসান জড়িত এমন কোন বিষয়ের সমস্যার সমাধানও হতে পারে। আমাদের দেশে সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে খুবই কম গুরুত্ব দেয়া হয়। এজন্যই দেখা যায় অনেক ভাল রেজাল্ট করে আসা ছেলেটিও চাকরি জীবনে এসে একেবারে গরু-ছাগলের লেভেলের কাজ করছে!



কিছু উদাহরণের মাধ্যমে আমরা বিষয়টা সহজে বুঝতে পারি। কিছুদিন আগে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যে সংস্কৃত, পালি ভাষা, উর্দু ভাষা শিক্ষার অধিকাংশ ছাত্ররা আসলে ঠিকমত সে ভাষা পড়তে বা বলতে পারে না! তাহলে আসলে সেখানে কী ধরণের ডিগ্রি দেয়া হচ্ছে! অত দূরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, আমাদের দেশেই তো আমরা না বুঝে কুরআন মুখস্থ করাকে অনেক বড় মেধার কাজ বলে মনে করি! কিন্তু আপনি যদি এভাবে না বুঝে মুখস্থ করতে থাকেন তাহলে আপনাকে ওই ধরণের কোন সমস্যার সমাধান করতে দেয়া হলে তো সেটার কোন কূল-কিনারা করতে পারবেন না। এদিকে পরীক্ষার খাতা দেখতে গেলে মাঝে মাঝে দেখা যায় কিছু ছাত্র আছে, যারা পড়াশোনা কম করেছে কিন্তু হাতের লেখা খুব সুন্দর। তারা খুব সুন্দর করে বানিয়ে বানিয়ে যা ইচ্ছে লিখছে বা চাপা মারছে, আমরা এসব নিয়ে মিম বানাচ্ছি কিন্তু আসল সমস্যার ধারে কাছেও কেউ যাচ্ছি না। এই যে ছাত্রটি পড়াশোনা না করে সুন্দর হাতের লেখার মাধ্যমে পার পেয়ে যেতে চাইছে, এই অবস্থার জন্য তো আসলে আমরা শিক্ষকরাই দায়ী। যে ছাত্রটি অনেক পড়াশোনা করেছে, অনেক কিছু জানে, স্বভাবতই সে চাইবে তার জ্ঞান তার পরীক্ষার খাতায় প্রতিফলিত হোক। সেটা করার জন্য তাড়াতাড়ি লিখতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে হাতের লেখা খারাপ হচ্ছে। আমরা তো তার সেই জ্ঞানের মূল্যায়ন করছি না। তাহলে এত কষ্ট করে পড়াশোনা করে কী লাভ? স্কুল-কলেজে কিছু শিক্ষক আছেন যারা পৃষ্ঠা গুনে নম্বর দেন, ভেতরে কী লেখা আছে, যা জানতে চাওয়া হয়েছে তা লেখা হয়েছে কিনা সেটা ঘুণাক্ষরেও যাচাই করে দেখেন না। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। এ কারণেই সারা বছর পড়াশোনা না করেও খুব সহজে হাতের লেখা সুন্দর করে, পৃষ্ঠা ভরিয়ে পাতার পর পাতা লিখে আসলেই পরীক্ষায় ভাল নম্বর পাওয়া সম্ভব!



হাতের লেখাটা আসলে কী? হাতের লেখা ভাল হওয়া এক ধরণের যোগ্যতা, এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই। যেমন কেউ ভাল গান গাইতে পারে, কেউ ভাল ছবি আঁকতে পারে তেমনি কারো হাতের লেখা সুন্দর হতে পারে। যাতের হাতের মাসলগুলোর ফাইন মুভমেন্ট ভাল, তাদের হাতের লেখা ভাল হবে। সমস্যা হল আমরা এটাকে বুদ্ধিমত্তা যাচাইয়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছি, এখানেই আমার আপত্তি। কারো যদি গানের গলা ভাল হয়, ছবি আঁকার হাত ভাল হয়, আপনি নিশ্চয়ই তাকে পরীক্ষার খাতায় ভাল নম্বর দিবেন না। এসবের জন্য আলাদা প্রতিযোগীতা থাকতে পারে, সে প্রতিযোগীতায় সে ভাল করতে পারে। তেমনি হাতের লেখা নিয়েও প্রতিযোগীতা হতে পারে, যার হাতের লেখা ভাল সে সেটার জন্য পুরস্কৃত হবে। ধরুন আজ থেকে ৫০ বছর পর যদি পরীক্ষার সময় টাইপ করে লিখতে হয় বা বর্তমানে এমসিকিউ পরীক্ষায় কিন্তু যার পড়াশোনার ধার বেশি, সেই ভাল করবে। আজকের যুগেও চাকরি-বাকরি করতে গেলে বিভিন্ন অফিস-আদালতে আপনাকে টাইপ করে লিখতে হবে, কম্পিউটারের উপর ভাল দখল থাকতে হবে। রিসার্চ পেপার লিখা বা এসে রাইটিং সব কিছুই এখন টাইপ করে লিখতে হয়। হাতের লেখার গুরুত্ব এখানে নেই। কারণ টাইপ করে লিখতে গেলে সবাই সমান, একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয় যেখানে আপনার ভেতরের জ্ঞানই আপনাকে ভরসা দিবে, অন্যকিছু নয়। বিভিন্ন চাকরীতে এখন আর আপনার হাতের লেখা দেখা হয় না, আপনি কত সহজে একটা সমস্যা সমাধান করতে পারেন তাই কিন্তু দেখা হয়। আপনি স্বীকার করুন আর না করুন এই যে ছোটবেলা থেকে হাতের লেখার উপর অযাচিত গুরুত্ব দেয়া হয় বাস্তব জীবনে সেটা অপ্রয়োজনীয়।



শিরোনাম পড়ে অনেকের মনে হতে পারে আমি সুন্দর হাতের লেখাকে ঘৃণা করি বা যাদের হাতের লেখা সুন্দর তাদের সাথে আমার কোন শত্রুতা আছে! আসলে ব্যাপারটা তা নয়। যাদের হাতের লেখা সুন্দর তারা অবশ্যই 'সুন্দর হাতের লেখা'র জন্য কৃতিত্ব পেতে পারেন, এর বেশি কিছু নয়। একই জিনিস লিখে কেউ হাতের লেখার জন্য ভাল মার্কস পাবে, কেউ খারাপ মার্কস পাবে সেটা হওয়া সম্পূর্ন অনুচিত। আর অপ্রাসঙ্গিক কথা-বার্তা লিখে শুধুমাত্র হাতের লেখা ভাল হবার কারণে বেশি মার্কস পাবে সেটা ভাবা তো একধরণের অপরাধ! এই অপরাধটি আমাদের দেশের কিছু শিক্ষক অত্যন্ত গর্বের সাথে দিনের পর দিন করে আসছেন। শিক্ষকদের উচিত পরীক্ষার খাতায় কে কী লিখেছে সেটার উপর বেশি গুরুত্ব দেয়া। আপনার শিক্ষার্থী 'হাতের লেখা' বিষয়ের উপর পরীক্ষা দিচ্ছে না, সে যে বিষয়ের উপর পরীক্ষা দিচ্ছে, সে বিষয়ে তার পর্যাপ্ত জ্ঞান আছে কিনা আপনি সেটা যাচাই করুন। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থারও কিছুটা পরিমার্জন প্রয়োজন। ফাইনাল পরীক্ষার উপর গুরুত্ব কমিয়ে রিসার্চ বেইজড পড়াশোনা, বিভিন্ন এসাইনমেন্টের উপর বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত। এতে করে সারা বছর পড়াশোনা না করে ফাইনালে ভাল করার জন্য অর্থহীন প্রতিযোগীতা বন্ধ হবে।


সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:১৪
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×