somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জায়েদ খান - ভাল অভিনেতা নন, কিন্তু ভাল নেতাও কি নন?

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার এক ছোট ভাই প্রতিদিন খেলা নিয়ে বিভিন্ন স্ট্যাটাস দেয়। এটা দেখে আরেক ছোট ভাই বিরক্ত হয়ে কমেন্ট করল, 'তোর কি আর অন্য কোন টপিকে কথা বলার নেই? সব সময় খেলা নিয়ে মেতে থাকিস কেন?' ছোট ভাইয়ের উত্তর ছিল খুব চমকপ্রদ! 'খেলা ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়া এখন সেইফ না!'



আমি ফেসবুক ব্যবহার করি সম্পূর্ণ বিনোদনের জন্য। ফেসবুকে দেশ ও জাতিকে উদ্ধার করার মত কোন গঠনমূলক স্ট্যাটাস দেই না। আমার পরিবারের সদস্যদের ফেসবুকে এড করি না, আত্মীয় স্বজনরা তো অতি অবশ্যই আমার সাথে ফেসবুকে কানেক্টেড নেই। ফেসবুকে সিরিয়াস ইস্যু নিয়ে স্ট্যাটাস দিতে গেলে হাজারটা কথা চিন্তা করতে হয় যে কখন কার রোশানলে পড়ি! তো গত কিছুদিন ধরে ফেসবুকে শিল্পী সমিতির নির্বাচন উপলক্ষ্যে অনেক ভিডিও দেখেছি, বেশিরভাগ দেখলাম জায়েদ খানকে ঘিরে। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তো কথা বলার জো নেই, তাই মানুষের বিপুল আগ্রহ ছিল শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে! বিশেষ করে জায়েদ খানকে ঘিরে। লোকটাকে আগে তেমন চিনতাম না, শুধু নাম জানতাম যে জায়েদ খান বলে একজন আছেন আমাদের দেশে যিনি সিনেমায় অভিনয় করেন, তিনি শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে কয়েক বছর ধরে আছেন। লোকটার বিভিন্ন ভিডিও দেখে আর কিছু না হোক একটা ব্যাপার বুঝা যায় যে সে অত্যন্ত বাকপটু। তাকে আপনি কোন প্রশ্ন করে আটকাতে পারবেন না। প্রতিটি প্রশ্নের জবাব অত্যন্ত সুন্দর করে তিনি দিয়েছেন এবং তথ্য উপাত্তের মাধ্যমে দিয়েছেন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল তাকে নিয়ে যে ট্রল হয় সেটার জবাবও তিনি খুব গুছিয়ে দিচ্ছেন।



আমরা জায়েদ খানকে পছন্দ করি না। কেন করি না তার অনেক কারণ থাকতে পারে, তবে আমার মতে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে জায়েদ খান তেমন বিখ্যাত নায়ক নন। বিখ্যাত নায়ক না হয়েও তিনি শিল্পী সমিতির মত একটা সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন হয়ে আছেন সেটা আমাদের পছন্দ হচ্ছে না। আমাদের আসলে বুঝতে হবে শিল্পী সমিতিতে আছেন কয়জন? ৪৬০ জনের মত। আমি আপনি কী চিন্তা করি, আমাদের কাকে পছন্দ, কাকে অপছন্দ সেটা দিয়ে আসলে কোন কিছুই যায় আসে না। ওই ৪৬০ জন ভোটারের মধ্যে বেশিরভাগ জায়েদ খানকে ভোট দিয়েছে কিনা সেটাই আসলে মূল বিষয়। তো জায়েদ খানের কিছু উত্তর আমার নজর কেড়েছে সেগুলো নিচে উল্লেখ্য করলাম-


# ১৮৪ জন ভোটারের ভোটাধিকার বাতিল করা হয়েছে সেটা আসলে গুজব। ১৩০ জনের মত আছেন যাদের ভোটাধিকার বাতিল করা হয়েছে। তাদের পূর্ণ সদস্য থেকে ডাউনগ্রেড করে সহযোগী সদস্য করা হয়েছে। কারণ শিল্পী সমিতির সংবিধানে লেখা আছে পূর্বে ভুলক্রমে সদস্য করা হয়ে থাকলেও বর্তমান কমিটি তা বাতিল করতে পারে। এছাড়া উল্লেখ্য আছে যে, সমিতির পূর্ণ সদস্য হতে গেলে নূন্যতম ৫টি সিনেমাতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করতে হবে, স্ক্রিন টাইম ৩০ মিনিট বা তার বেশি থাকতে হবে। জায়েদ খান যুক্তি দেখান যে তার ড্রাইভারও অনেক সিনেমাতে তাকে দরজা খুলে দিয়েছে, তাতে কি সে শিল্পী সমিতির পূর্ণ সদস্য হবার যোগ্যতা রাখে না। এ ছাড়াও তিনি যুক্তি দেখান যে জানা-অজানা সবাইকে পূর্ণ সদস্য করে দিতে থাকলে পূর্ণ সদস্যদের আসল মর্যাদা আর থাকে না। ভোটের সময় একবার নায়ক রাজ রাজ্জাককে একজন লাইন থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। রাজ্জাক তাকে জিজ্ঞেস করেন যে তুমি আমাকে চেন কিনা? সেই লোকের উত্তর ছিল, আপনি যেই হন না কেন আপনার ভোটও একটা, আমার ভোটও একটা!

- যাইহোক আমি এসব যুক্তির বিপরীতে অন্য কাউকে ভাল কোন যুক্তি উপস্থাপন করতে দেখিনি। নায়ক রিয়াজকে হাস্যকরভাবে কান্না-কাটি করতে দেখেছি কিন্তু কোন যুক্তি উপস্থাপন সেখানে ছিল না। সেটা নিয়ে অবশ্য রিয়াজকে অনেক ট্রলের শিকার হতে হয়েছে। জায়েদের ভাষ্যমতে রিয়াজ নিজেই ঐ কমিটিতে ছিল যে কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক কিছু সদস্যদের ডাউনগ্রেড করা হয়েছে। রিয়াজ সহ অন্য সকল নির্বাহী সদস্যদের সাক্ষর সেখানে আছে।


# কোভিডের সময় যেখানে আত্মীয়-স্বজন ও অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যরা অসুস্থ রোগীদের ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছিল সেখানে জায়েদ খান নিজে দাঁড়িয়ে থেকে মৃত ব্যক্তির (কবরী) গোসল ও দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করেন। অন্য কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে নি। এছাড়া বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শিল্পীদের সহায়তা করেছেন। সমিতির যারা সদস্য আছেন তাদের যে কাউকে দেখালে জায়েদ খান তার পরিচয় এবং বাড়ি-ঘর কোথায় সব বলে দিতে পারবে। সে সবার খোঁজ-খবর রাখে।

- আসলে আমার মনে হয়েছে তিনি কিছু সত্যের সাথে কিছু মাল-মশলা মিশিয়ে কথাগুলো বলেছেন। কোভিডের সময় আসলেই মৃত ব্যাক্তির গোসল করানো নিয়ে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। আমার নিজের এক বন্ধুর বাবা মারা গিয়েছেন অন্য কারণে কিন্তু কোভিডের সময় বলে তার গোসল করাতেও অনেক টাকা দাবী করে বসেছিল। তবে আমার মনে হয়না বিখ্যাত কাউকে নিয়ে এ সমস্যা হবার কথা।


# 'তুই বিয়ে করিস না বাবা, শিল্পী সমিতি নিয়েই থাক।' এই কথা নিয়ে আমরা অনেক ট্রল করেছি কিন্তু জায়েদ খান এটার ব্যাখ্যায় বলেছেন যে তার মা রাগ করে কথাটা বলেছেন।


# নিপূণের দেখানো স্ক্রিনশটের ব্যাপারে জায়েদ খান বলেছেন যে আইনের আশ্রয় নিবেন, এগুলো সব সুপার এডিট করা।

- নিপূণের কাছে থাকা স্ক্রিনশটগুলো যদি সত্যি হয়ে থাকে তো নিপূণ নিজেও আইনের আশ্রয় নেয়া উচিত। তবে আমি ভেবে অবাক হই যে জায়েদ খানের কনফিডেন্স কিন্তু কমেনি। এই ঘটনার পর তার কিছুটা হলেও ভয় পাবার কথা। এছাড়া নিপূণ যে বলছে ভোটারের সংখ্যা মিলছে না, সেটা আসলে হাস্যকর যুক্তি। আমরা যারা বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত তারা জানার কথা যে প্যানেল নির্বাচন হলে, কোন পোস্টের দুইজন প্রার্থীর একজনকেও পছন্দ না হলে, আপনি চাইলে কাউকেই ভোটা না দিয়ে বের হয়ে আসতে পারেন। ধরুণ আপনাকে ২০টি পদের বিপরীতে ভোট দিতে হবে। আপনি ২টি পদে কাউকে ভোট দিলেন না, মোট ১৮টি ভোট দিয়ে বের হয়ে আসলেন। এমন হতেই পারে। যদি কারচুপি হয় তো আইনের আশ্রয় নেয়া উচিত আগেই বলেছি। সেক্ষেত্রে জায়েদ খানের ভূমিকা কী হয় সেটা দেখার লোভ হচ্ছে। সে জাত পলিটিশিয়ান।


# নির্বাচনের পর জায়েদ খান বলেছেন যে তিনি আর মিশা সওদাগর স্বামী-স্ত্রীর মত ছিলেন! এটার ব্যাখ্যায় জায়েদ খান বলেছেন যে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে যেমন বিশ্বাস থাকে, তারা একে অপরের অনেক কাছের মানুষ সেটা বোঝাতে তিনি এই উক্তিটি করেছেন।

- আমার মনে হয় তার ব্যাখ্যাটি এত সহজ নয়। তিনি ধুরন্ধর প্রকৃতির মানুষ। যে লোক এত সুন্দর করে যুক্তি দিয়ে তথ্য উপাত্ত নিয়ে কথা বলে সে এত কাঁচা কাজ করার কথা না। আমার মনে হয় নির্বাচনে দুর্নীতি হয়েছে এটাকে আড়াল করার জন্য তিনি ইচ্ছে করে এই হাস্যরসাত্মক উক্তিটি করেছেন যাতে করে সবাই এই কথা নিয়ে ট্রল করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।




জায়েদ খান যে জাত পলিটিশিয়ান তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে, নির্বাচনের পর তিনি শাহরিয়ার নাজিম জয়ের একটি টক শোতে অংশ নিয়েছেন ইলিয়াস কাঞ্চনের সাথে। ভোটে জয়ের পর থেকে তিনি ইলিয়াস কাঞ্চনের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। টক শো তে তিনি বলেছেন যে ইলিয়াস কাঞ্চন আছেন বলেই তিনি এই টক শোতে এসেছেন, নাহলে তিনি আসতেন না! এছাড়া ওমর সানী ফেসবুক লাইভে এসে প্রতিনিয়ত জায়েদ খানের বিরুদ্ধে নানান কথা-বার্তা বলে চলেছেন কিন্তু তার স্ত্রী মৌসুমী কিন্তু জায়েদ খানের প্যানেল থেকেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন! আমার মনে হয় না তার সাংগঠনিক দক্ষতা না থাকলে এসব সম্ভব হত। পোস্টের শুরুতে যে কথা বলেছিলাম, জায়েদ খানকে আমরা পছন্দ করি কি করি না, তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। যে ৪৬০ জন ভোটার আছেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগ তাকে ভোট দিলেই হল! আর ভোটের মাধ্যমে কিন্তু সেরা অভিনেতা বাছাই হচ্ছিল না, শিল্পী সমিতির পরবর্তী কমিটির নির্বাহী সদস্যদের বাছাই করা হচ্ছিল। এক কথায় তারা তাদের নেতা বাছাই করছিল যাকে দিয়ে কাজ হবে, যে বিভিন্ন জায়গা থেকে তাদের জন্য কিছু সুবিধা এনে দিতে পারবে। জায়েদ খান ভাল অভিনেতা নন কিন্তু নেতা হিসেবে তিনি নিঃসন্দেহে যোগ্য ব্যাক্তি! ভবিষ্যতে তিনি জাতীয় রাজনীতি এলেও খুব একটা অবাক হব না।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:৫৪
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×