somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: ডায়েরি (পর্ব ছয়)

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এগার।
মফস্বল শহরে এই একটা সমস্যা শীতের দিনে সন্ধ্যায় হাটবাজারে মানুষের আনাগোনা বেশ কম থাকে। দুই পাশে সারিসারি একচালা দোকান, বেশির ভাগই বন্ধ, কিছু চায়ের দোকানে এখনও লোকজন গলায় মাফলার পেঁচিয়ে ভিড় করে চা খাচ্ছে আর রাজনৈতিক আলাপ পারছে। দিপুকে যখন এক রকম চ্যাংদোলা করে বদরুল বাহিনী নিয়ে যাচ্ছিল হইহুল্লোড় করে তখন লোকজন কৌতূহল বশত উকি দিলেও নজর আন্দাজ করেছিল ব্যাপারটা, এই বয়সের ছেলেরা বন্ধুবান্ধব মিলে হইহুল্লোর করে বেরাবে এতে কেউ সন্দেহ করার কারণও নেই অবশ্য।

হাটের ঠিক শেষ মাথার বদরুলদের চালের গুদাম ঘরে দিপুকে ধরে আনা হল, যেহেতু পাশের দোকানগুলো বন্ধ তাই এখানে চিল্লাপাল্লা হলে কেউ আশার কথা নয়। বদরুল এবং তার নিত্যদিনের সঙ্গী রিপন এবং শিপন হাতে হকিস্টিক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দিপুর সামনে।

“আমাকে কোথায় আনলি তোরা?” চারদিকে একবার পলক ফেলে দেখে জিজ্ঞেস করে দিপু। তাকে বেশ কিছুটা ভীত দেখাচ্ছে।

বদরুল ডান হাতের হকিস্টিকটা নাচাতে নাচাতে বলল “তোকে আজ সাইজ করা হবে, একেবারে কাবাব বানাব বুঝলি হারামজাগা?” রিপন এবং শিপন হো হো করে হাসছিল।

“কাজটা ঠিক হচ্ছেনা কিন্তু” তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল দিপু।

গাড্ডাগোড্ডা ধরনের শীপন বলল “তোর ঠ্যাংটা আজ গুড়িয়ে দিব, সেদিন স্কুলে আমাদের মাফ চাইতে হয়েছিল তোর জন্য, মনে আছে?”

“আমি তোদের সাবধান করছি, কাজটা ঠিক”

আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল দিপু, বদরুল তাকে থামিয়ে দিয়ে রিপন এবং শিপনের দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে বলল “ও আমাদের সাবধান করছে দেখছিস? পুনরায় দিপুর দিকে তাকিয়ে বলে তোর মাথাটা ভেঙ্গে ফেলব হারামজাদা।“

“বদরুল স্যাররা জানলে কিন্তু তোর খবর আছে!” শাহাদাত আঙ্গুল বদরুলের দিকে তাক করে বলল দিপু।

“আমি কি ভয় পাই স্যারদের?” বলেই দিপুর দিকে দু-কদম এগিয়ে আসে বদরুল। বদরুল হাতের হকিস্টিক উঁচিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে দিপুকে মারার জন্য।

“তুই কিন্তু ভুল করছিস বদরুল আবারো বললাম” ফের দৃষ্টি বদরুলের দিকে নিক্ষেপ করে বলে দিপু।

বদরুল হাতের হকিস্টিক দিয়ে দিপুর হাঁটুতে বাড়ি মারে, টন করে শব্দ হয়। দিপু ওহ শব্দ করে ধরে নিজের হাঁটু ধরে বসে।

“মারলাম তুই আমার কি করবি হারামজাদা?”

“ব্যথা লাগছে বদরুল। খবরদার আর কাছে আসবি না, এবার মারলে কিন্তু”

পুনরায় পায়ে বাড়িমারে বদরুল, মার খেয়ে কুঁজো হয়ে পরে দিপু, মারামারিতে অতর্কিতভাবে যোগ দেয় রিপন এবং শিপন। সবাই এলোপাথারি ভাবে দিপুর পিঠে, পায়ে এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারতে থাকে। দিপু হঠাত নিজের মাঝে এক ধরনের পরিবর্তন লক্ষ করে, মাথাটা কেমন জানি ভনভন করছে, বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে কপালে, তার মস্তিষ্কের ভিতর কিছু একটা ঘটছে বুঝতে পারছে। মস্তিষ্কের এক ধরনের ডিফেন্স সিস্টেম থাকে, সে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে। দিপু বুঝতে পারছে তার মস্তিষ্কের ভিতর থেকে এক ধরনের তীক্ষ্ণ তরঙ্গ বের হয়ে এই গুদাম ঘরের চারদিকে ছড়িয়ে পরছে, সে অবচেতন মনে আত্নচিতকার দিয়ে উঠে। দিপুর আত্নচিতকারে যেন কারেন্টের ঝাটকা লাগে বদরুল, রিপন এবং শিপনের শরীরে, মুরি মুরকির মতন তিনজনই ছিটকে পরে মেঝেতে।

দিপুর চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করেছে, মাথার চুলগুলো কেমন জানি দাঁড়িয়ে গেছে, সে যেন এই চেনা পৃথিবীতে নেই, তার চেতন মনের সমস্ত নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে তার অবচেতন মন যেখানে তার সরাসরি নিয়ন্ত্রণ নেই। দিপু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় বদরুলের দিকে। বদরুল প্রচণ্ড যন্ত্রণায় নিজের মাথা দু হাত দিয়ে ধরে থাকে, সে ঠিক বুঝতে পারছে না কি ঘটছে।

বেঁটেখেঁটে শিপন এবং রিপন কোনমতে উঠে আতংক নিয়ে তাকিয়ে থাকে দিপুর দিকে, তারা যেন অনেকটা ঘোরের মধ্যে আছে, দুজনেই ভয়ে ভয়ে দিপুর দিকে এগিয়ে যায় হকিস্টিক নিয়ে, দিপুর ঘুরে দুজনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই প্রচণ্ড যন্ত্রণায় মাথায় হাত দেয় শিপন এবং রিপনও। তিনজনই মাথায় হাত দিকে প্রচণ্ড যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, নাক দিয়ে গাড় রংএর রক্ত গড়িয়ে পরেছে।

এভাবেই কেটে যায় বেশ কিছুটা সময়, তখনই এই গুদাম ঘরে ঢুকে পরে সুমি এবং টিটুন। তাদের মাথায়ও এক ধরনের ভোঁতা যন্ত্রণা অনুভব করে। তারা দুজনের মাথা ধরে তাকিয়ে থাকে দিপুর দিকে, দিপুকে বেশ অদ্ভুত লাগছে, সে যেন নিজের মাঝে নেই, ওকে না থামালে বড় ধরনের একটা দুর্ঘটনা ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

“দিপু থাম”নিজের কান চেপে ধরে বলে টিটুন।

দিপুর সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই, সুমিও ডাকলেও কোন সাড়া পেল না।

“এখন কি করব?” সুমির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে টিটুন।

“আমরা ওর মস্তিষ্কে ঢুকে শান্ত করার চেষ্টা করতে পারি।” বলে সুমি।

“ওতো মনে হয় ওর মস্তিষ্কের ঢুকতে দিচ্ছে না, আমি চেষ্টা করেছিলাম।” জিব দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বলে টিটুন।

“আমাদের যেভাবেই হোক ওকে থামাতে হবে” হাফাতে হাফাতে বলে সুমি।

“কিন্তু কিভাবে?” পালটা প্রশ্ন টিটুনের।

“ওর সাবকনসাস মাইন্ড আমাদের দুজনকেই এই বিপদের কথা জানিয়েছে, এবং এখানকার ঠিকানাও আমরা ওর মাধ্যমে পেয়েছি। আমার মনে হয় আমরা হয়ত দুজনে এক সাথে চেষ্টা করলে ওর মস্তিষ্কে ঢুকতে পারব” বলে সুমি।

তারপর দুজনই স্থির হয়ে দিপুর দিকে তাকায়। তবে বুঝতে পারে দিপুর মস্তিষ্ক কানেকশন বার বার রিফিউজড করছে, দুজনেই একসাথে চেষ্টা করতে থাকে এবং সময় ঢুকে যায় দিপুর মস্তিষ্কে।

“এবার থাম দিপু” বলে সুমি।

কোন সাড়া নেই।

“তোকে থামতেই হবে, এটা তুই না অন্য কেউ” কেউ পুনরায় বলে উঠে টিটুন।

এক সময় স্তম্ভিত ফিরে পায় দিপু, ধাতস্থ হতে সময় নেয় কিছুটা এবং আসতে আসতে স্বাভাবিক হতে থাকে। সবাইকেই বেশ ক্লান্ত দেখায়, হাঁটু ঘেরে বসে ক্লান্ত হয়ে কুজো হয়ে ফিসফিস করে দিপু বলে “আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না কি হচ্ছিল।“

হাফাতে থাকে দিপু, স্টকের অক্সিজেন ফুরিয়ে গেলে লম্বা দিম নিয়ে বলে “তোদের আজ আমি এই কথাটা বলতে চেয়েছিলাম, কিছুদিন ধরে নিজের মধ্যে এক ধরনের পরিবর্তন লক্ষ করছি আমি, আমার মস্তিষ্কর তরঙ্গগুলোকে যেন আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, আমরা হাত পা নাড়িয়ে যেমন কাজ করতে পারি, মনে হচ্ছে আমার মস্তিষ্কের তরঙ্গগুলোকেও যেন আমি সেভাবেই নিয়ন্ত্রন করতে পারি।”

“তুই শান্ত হ। পরে শুনব সব” দিপুর দিকে তাকিয়ে বলে সুমি।

বদরুলের চেহারায় ভয়ের চিহ্ন ফুটে উঠে এবং তাকে বেশ ক্লান্ত দেখায়। কিছুক্ষণ আগে কি ঘটল সে যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। “কি হল এগুলো, তোরা কি? টিটুন, সুমি এবং দিপুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে বদরুল।

“বদরুল সব বুঝিয়ে বলছি।“ বলে সুমি।

বদরুল, রিপন এবং শিপন ভয়ে কাপতে কাপতে দাঁড়ায় কোনমতে তারপর স্থান ত্যাগ করতে উদ্যত হয়। এই ব্যাপারগুলো জানাজানি হলে কি ঘটবে বুঝতে পারছে না টিটুন, তবে ভাল কিছু যে হবে না এটা নিশ্চিন্ত। তারা যখন পালাতে নেয় আর তখনই এই রুমের মাঝখানে ওয়ার্ম-হোলের মত একটি ফোঁস ফিল্ড তৈরি হয় এবং সেখান থেকে একটি ছায়ামূর্তি হঠাত সামনে প্রকট হয়। চমকে উঠে সবাই, এই ছায়ামূর্তি কে, কোথা থেকেই বা এলো ভাবতে থাকে সবাই। তখনই টিটুনের মনে হয় এটা সেই ছায়ামূর্তি যেটা সেদিন তাদের ল্যাবরেটরিতে প্রকট হয়েছিল, এই ছায়ামূর্তিটিই সেদিন তাদের তিনজনকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল ওয়ার্ম-হোলের ভিতরে।

ছায়ামূর্তিটি এবার টিটুন, সুমি এবং দিপুর দিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে তাকায়, এবার চেহারাটা স্পষ্ট হয়ে উঠে, অতি পরিচিত একটি চেহারা দেখেই এই রুমের সবাই চমকে উঠে, এটা আর কেউ নয়, তাদের আজগর স্যার। তারা সবাই বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে স্যারের দিকে। টিটুনের মাথায় অসংখ্য প্রশ্ন ছিল, তার কাছে মনে হচ্ছে ব্যাপারটি আরো জটিল থেকে জটিলতর হয়ে যাচ্ছে। আজগর স্যার আসলে কে? তিনি কি মানুষ না অন্য কোন প্রাণী? তাদের এই পরিবর্তনে স্যারের কি কোন হাত আছে, তার বাবার সাথে যা ঘটেছিল তার সাথে কি আজগর স্যারের কোন সংযোগ আছে?

বারো
“আমি জানি তোমাদের মনে অনেক প্রশ্ন। সব প্রশ্নের উওর দিচ্ছে তার আগে বদরুলদের একটা ব্যবস্থা করতে হবে” বলেই বদরুল, রিপন এবং শিপনের দিকে তাকায় আজগর স্যার।

স্যার নিজের পকেট থেকে একটি ডিভাইস বের করে তিনজনের মস্তিষ্কেই শুট করে, তারা তিনজনই পরে যায় মাটিতে অচেতন হয়ে পরে।

“এটা কি হল?” সমস্বরে আতঙ্কিত গলায় জিজ্ঞেস করে সুমি, টিটুন এবং দিপু।

“ভয়ের কিছু নেই, তোমাদের এই বিশেষ ক্ষমতার কথা যাতে ভুলে যায় তাই মেমরি ইরেজার দিয়ে মুছে দিলাম ওদের তিনজনের স্মৃতি। বাকি সব কিছুই মনে থাকবে একমাত্র তোমাদের বিশেষ ক্ষমতাটার কথা ছাড়া, এটা জানলে সব কিছু বেশ জটিল হবে। ভয়ের কিছু নেই ওদের কিছুক্ষণ পরই জ্ঞান ফিরবে।“ আত্মস্থ করে বলে আজগর স্যার।

হঠাত কিছু একটা শব্দ হয় বাইরে থেকে, চারজনই শব্দের উৎস খুঁজে দেখতে পায় কালো কোর্ট পরিহিত ফিউচার ইনকর্পোরেশন সেই দুজন লোক ভয়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছে। টিটুন, সুমি এবং দিপু সেই কালো কোর্ট পরিহিত লোকদের না চিনলেও আজগর স্যার এদের ভাল করেই জানে এবং চিনে।

“আপনি কে?” তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে টিটুন।

“আমি তোমাদের আজগর স্যার।“ বলেই থামে আজগর স্যার।

“আপনার সত্যিকারে পরিচয় কি? আপনি কি মানুষ নাকি অন্য কিছু? সেদিন কি হয়েছিল ল্যাবরেটরিতে? আমরা সময় পরিভ্রমণ কিভাবে করলাম?” এক নাগারে প্রশ্ন করে টিটুন। হাফাতে থাকে টিটুন।

“সব বলব আসতে আসতে, ভয়ের কিছু নেই আমি মানুষ” বলেই থামে আজগর স্যার।

ফের বলে “তোমাদের মতন মানুষ, একদম রংক্ত মাংসে গড়া মানুষ” বলেই তিনজনের দিকে একবার তাকায় আজগর স্যার।

টিটুন লক্ষ্য করল স্যার তাদের তুই করে সম্বোধন করত আগে কিন্তু এখন তাদের তুমি করে বলছে। তাদের তিনজনই বেশ দ্বিধান্বিত দেখায়, তাদের কি আজগর স্যার কে ভয় পাওয়া উচিৎ নাকি না সেটাও বুঝতে পারে না তিনজনই

থেমে আবার বলে“তবে আমি তোমাদের সময়ের মানুষ নই, আমি এসেছি ভবিষ্যৎ থেকে।” প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য তিনজনের দিকে তাকায় স্যার।

পুনরায় বলে চলে “আমাদের সময়ে মানব সভ্যতা ভয়াবহ এক বিপর্যয়ের মধ্যে যাচ্ছে, হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ জ্ঞান বিজ্ঞান দিয়ে যে সভ্যতা গড়ে তুলেছে সেটা ভেঙ্গে পরেছে, কোটি কোটি মানুষ মারা গেছে, ভয়াবহ যুদ্ধে মানব সভ্যতা ধ্বংসের মুখে, খাদ্য সংকট চরমে, যারা বেচে আছে সবাই বিভিন্ন জায়গার লুকিয়ে থাকছে” বলেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আজগর স্যার।

দম নিয়ে বলে “ওরা চতুর্থ মাত্রিক প্রাণী, ওরা আমাদের গ্রহে বসতি স্থাপন করতে চায়। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু ওদের সাথে পেরে উঠছি না” আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল আজগর স্যার

টিটুন থামিয়ে দিয়ে বলে “এই প্রাণীগুলো কি এতই শক্তিশালী, যে মানুষ বিজ্ঞানে উন্নতি করেছে অথচ তাদের সাথে পারছে না?”

“আমি তোমাদের বলেছি ওরা চতুর্থ মাত্রিক প্রানী, ওদের আমাদের মত জৈবিক দেহ নাই, ওরা অনেকটা এনার্জির মত, তোমরা নিশ্চয়ই জানো এনার্জির কোন বিনাশ নেই, রূপ পরিবর্তন হয়ে মাত্র। প্রাণীগুলো সবাই স্বতন্ত্র আবার একই সাথে সবাই একটি সত্তা হিসেবে কাজ করতে পারে।“ বলেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আজগর স্যার।

টিটুন, সুমি এবং দিপু বেশ বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। তাদের ব্যাপারগুলো বিশ্বাস করা উচিৎ নাকি অবিশ্বাস ঠিক বুঝতে পারছে না, তবে যা ঘটছে এই কয়দিনে তাতে অবিশ্বাসও করতে পারে না।

আজগর স্যার কিছু বলতে যাবে, টিটুন থামিয়ে দিয়ে বলে “স্যার, আপনি আমাদের তুই করে বলতেন। আপনি আমাদের আগেরই মতই তুই করে বলতে পারেন।“

স্যার পুনরায় বলে চলে “প্রানীগুলোর যেহেতু আমাদের মত জৈবিক দেহ নাই তাই তারা আমাদের মত আলোর গতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, ওরা আলোর গতির থেকে বেশী গতিতে ভ্রমণ করতে পারে, আর মহামান্য বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের সূত্র অনুসারে আলোর গতিতে বা তার বেশী গতিতে ভ্রমণ করতে পারলে সময় পরিভ্রমণ করা যায় তাই তারাও সময় পরিভ্রমণ করতে পারে, তারা একই সাথে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতে থাকতে পারে।“

“এটা কিভাবে?” সম্ভব স্যার প্রশ্ন করে সুমি।

“হুম তোদের আগেই বলেছি ওরা চতুর্মাত্রিক প্রাণীর এবং আমাদের মত জৈবিক শরীর নেই তাই তাদের কাছে কাছে সবই সম্বব।“

আবার বলে চলে “ভবিষ্যতে আমরা যারা বেচে আছি তারা পাহাড় পর্বতের গুহায় বেচে আছি কোনমতে, আমাদের সময়ের বিজ্ঞানীরা তখন চিন্তা করে বের করে কিভাবে মানব সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখা যায়। তাই তারা সময়ে ভ্রমণ করে তোদের এই সময়ে পাঠিয়েছে আমাকে।“ বলেই থামে সবার প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য স্যার।

“বুঝলাম না, আমাদের এই সময়েই কেন?” জিজ্ঞেস করে টিটুন।

“তোদের এই সময়ে কেন পাঠিয়েছে আমাকে সেটা একটু পরে বলছি। আমাদের বিজ্ঞানীরা দেখলেন চতুর্থ মাত্রিক প্রাণীরা সবাই স্বতন্ত, আবার একই সাথে সবাই মিলে একটি সত্তা হিসেবে বিচরণ করতে পারে, তাই তারা বুদ্ধিতে এগিয়ে থাকে আমাদের থেকে। তারা যেকোনো সিদ্ধান্ত পৌছতে হলে সবাই একই সাথে চিন্তা করে, এতে দ্রুত এবং নির্ভুল একটি সমাধানে পৌছায়, অনেকটা প্যারালাল কম্পিউটার এর মতো যেখানে অনেকগুলো কম্পিউটার এক সাথে কোন একটি জটিল সমস্যার সমাধান করে। এই ব্যাপারটা আমাদের বিজ্ঞানীদের ভাবিয়ে তোলে, তারাও গবেষণা করে হিউম্যান ব্রেন টু ব্রেন কমিনিকেশন মানে ট্যালিপ্যাথি টেকনোলজি আবিষ্কার করল। উদ্দেশ্য সকল মানুষের মস্তিস্ক টেলিপ্যাথির মাধম্যে একত্রিত করা যাতে আমরা মানুষেরাও একই সাথে চিন্তা করে কোন সমস্যার সমাধান করতে পারি। ” বলেই একবার চোখ তিনজনের দিকে তাকায় স্যার।

থেমে আবার বলে চলে “মানুষের মস্তিষ্ক অনেক শক্তিশালী একটি যন্ত্র এবং সম্ভবত এই ইউনিভার্সের জটিল রহস্যময় জিনিষের মধ্যে আমাদের মস্তিস্ক একটা জিনিষ। আমাদের সময়ের বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখল মানুষের মস্তিষ্ক সবসময় এক ধরনের তরঙ্গ রেডিয়েট করে বা ছাড়ে, যেটা একই সাথে অন্য ধরনের তরঙ্গ ধরতে পারে মানে কানেক্ট হতে পারে।“

স্যার যখন কথা বলছি তারা তিনজনই মনোযোগী স্রোতার মত মাঝখানে হুম, হা বলে শুনছিল।

আবার বলে “দেখবি সন্তান যখন কোন বিপদে পরে তখন মা যত দুরেই থাকুক না কেন তার মন সেটা বুঝে ফেলে। এখানে মায়ের মস্তিষ্ক সন্তানের মস্তিষ্কের সাথে কানেক্ট হয়ে যায় মনের অজান্তেই। সন্তান ছোট বেলায় যখন পরে ব্যথা পায় তখন মা বলে চিৎকার দেয়, ঠিক একইভাবে সন্তান যত বড়ই হোক যখন বিপদে পরে তখন হয়তবা তার অবচেতন মন মায়ের কথা একাগ্রচিত্তে চিন্তা করে, ভাবে মা তাকে কোন না কোন ভাবে হয়ত সাহায্য করতে পারবে, সন্তানের মস্তিষ্কের অবচেতন অংশ থেকে একটি তীব্র তরঙ্গ রেডিয়েট হতে থাকে, যার সিগনাল মা ধরে ফেলতে পারে। এই কনসেপ্টকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সময়ের বিজ্ঞানীরা এক ধরনের বায়োলজিক্যাল চিপ আবিষ্কার করে, যেটা মাইক্রোচিপ আকারে মস্তিষ্কে স্থাপন করলে মানুষ নিজেদের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদান করতে পারে।“ বলে প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য তাকায় স্যার।

টিটুন নিজের মাথায় আলতো করে ছুঁয়ে বলে “তার মানে আমাদের মাথায়ও”

কথাটা শেষ করার আগেই বলে স্যার “তোদের মাথায়ও এরকম একটি বায়োলজিক্যাল চিপ ইনজেকশনের মাধম্যে প্রতিস্থাপন করেছিলাম আমি।“

“আমাদের মাথায়ই এগুলো কেন?” জিজ্ঞেস করে টিটুন।

“বলছি, আমাদের বিজ্ঞানীরা ভেবে দেখল চতুর্থ মাত্রিক প্রাণীদের সাথে আমরা সম্মুখ যুদ্ধে পারবে না। মানুষের মাঝে ইভালুয়েশন ঘটে মাইক্রো লেভেল, খুব ধীরে ধীরে যেটা সীমিত সময়ের ব্যবধানে ধরা যায় না। হয়ত কয়েক হাজার বা মিলিয়ন বছর পরে সেই পরিবর্তনটা ধরা যায়। আমাদের বিজ্ঞানীরা চিন্তা করল মানুষের মাঝে কৃত্রিম ইভালুয়েশন ঘটাবে, অর্থাৎ নিয়ন্ত্রিত উপায়ে এমন পরিবর্তন করবে যাতে আমরা চতুর্থ মাত্রিক প্রাণীর সাথে পেরে উঠি। আমরা অতীতে গিয়ে যদি কৃত্রিম উপায়ে ইভালুয়েশন ঘটাতে পারি মানুষের মাঝে তাহলে সময়ের সাথে মানুষের কগনেটিভ এমন আরো কিছু ডেভেলপ করবে যেটা হয়ত কল্পনাও করতে পারছি না আমরা।”

“সেটা কিভাবে সম্ভব? কি ধরনের ইভালুয়েশন ঘটবে?” পাল্টা প্রশ্ন দিপুর।

“আমি আগেই বলেছি মানুষের মস্তিষ্ক একটি রহস্যময় যন্ত্র, আমরা শুধু তোদের মস্তিষ্কে একটি ছোট কৃত্রিম ইভালুয়েশন ঘটিয়েছি, তোদের মস্তিষ্ক টেলিপ্যাথির ক্ষমতা প্রতিস্থাপন করেছি, এতে তোদের মাঝে এমন কিছু ঘটবে বা ঘটছে যা হয়ত কল্পনাও করতে পারছিস না, যেমন দিপু নিজের মস্তিস্কের তরঙকে নিয়ন্ত্রন করে অন্যকে কষ্ট দিতে পারে। মনে রাখিস ভবিষ্যতে তোরা এই পৃথিবী নামের গ্রহকে রক্ষা করবি।“ বলে আজগর স্যার।

প্রসঙ্গের বাইরে গিয়ে টিটুন জিজ্ঞেস করে “সেদিন নিশ্চয়ই আপনিই আমাদের অতিতে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমাদের যখন অতীতে নিয়ে যান সেখানে পূর্বেই আমাদের প্রতিলিপিও ছিল অর্থাৎ আমাদের প্রত্যেকের আরেকটি ভার্সন থাকার কথা, আমাদের আরেকটি ভার্সন কোথায়? তাছাড়া আমরা আসলে কোন ভার্সন? আবার থার্মোডাইনামিক্সের সূত্র অনুসারে দুজন একই মানুষ একই সময়ে থাকতে পারবে না, তাহলে ব্যাপারটা কিভাবে সম্বব হল?“ এক নাগারে প্রশ্নগুলো করে টিটুন।

“ভাল প্রশ্ন করেছিস, হ্যা এটা সত্য পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্র অনুসারে টাইম ট্রাভেল সম্ভব, তবে টাইম ট্রাভেল করে নিজের অতীতের অনুলিপির কাছে যাওয়া সম্ভব না কারণ থার্মোডাইনামিক্সের প্রথম সূত্রের লঘ্নন হয় তাতে। থার্মোডাইনামিক্সের প্রথম সূত্র অনুসারে, এই ইউনিভার্সের মোট এনার্জির পরিমাণ সমান, এটা কেউ বাড়াতে বা কমাতে পারবে না। আইনস্টাইনের এনার্জি-মাস সূত্র অনুসারে আবার বস্তু হল এনার্জিরই আরেকটি রূপ, মানুষের শরীরও এনার্জিই বলা যায়। তাই অতীতে গিয়ে আমরা যদি আমাদের প্রতিলিপির সাথে একই সময়ে অবস্থান করি, তাতে একই সময় মহাবিশ্বের মোট এনার্জির পরিমাণ বেড়ে যায় যেটা থার্মোডাইনামিক্সের প্রথম সূত্রের সম্পূর্ণ লঘ্নন। তাহলে প্রশ্ন হলে তোদের ক্ষেত্রে সেদিন কি ঘটেছিল?” বলেই স্যার তিনজনের দিকে তাকিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখার চেষ্টা করলেন।

টিটুন, সুমি এবং দিপুও নড়েচড়ে উঠে প্রশ্নটি শুনে, তারা তিনজনই প্রচণ্ড আগ্রহে নিয়ে তাকিয়ে আছে আজগর স্যারের দিকে।

স্যার একটু থামলেন তারপর জিব দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বললেন “আমাদের এই মহাবিশ্বের নিজস্ব কিছু ম্যাকানিজম বা রুলস আছে, সে যখন আমাদের দুজন একই মানুষকে একই সময়ে পায় তখন সে আমাদের যেই ভার্সনটি ট্রাভেল করে আসে তাকে ভাইরাস হিসেবে চিহ্নিত করে কারণ এই ভার্সনটিই থার্মোডাইনামিক্সের প্রথম সূত্রটি লঘ্নন করেছে। তারপর তাকে ভ্যানিশ করে দেয় বা শূন্যে মিলিয়ে দেয় থার্মোডাইনামিক্সের প্রথম সূত্রটি বজায় রাখতে। তবে আরো কিছু বলতে নেয় স্যার“

সুমি স্যারের কথা শেষ হবার আগেই জিজ্ঞেস করে “তাহলে স্যার যেই মানুষটি সময় পরিভ্রমণ করে অতীতে আসে তাকে যদি শূন্যে মিলিয়ে দেয় তাহলে তার স্মৃতিগুলো কিভাবে থেকে যায় তার অন্য ভার্সনটির কাছে?”

বলে চলে স্যার “হুম, মহাবিশ্ব শুধু মাত্র থার্মোডাইনামিক্সের প্রথম সূত্র মেনে শূন্যে মিলিয়ে দেয় মানুষটিকে তবে তার স্মৃতিগুলো বায়োসিগন্যাল আকারে অন্য ভার্সনটির কাছে স্থানান্তর হয়। তোদের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে, আমি তোদের নিয়ে গিয়ে প্রত্যেকের অনুলিপির সামনে দাড় করিয়ে দিয়েছিলাম মাত্র।”

“স্যার এটা কিভাবে সম্ভব? তাছাড়া আমাদের এই মহাবিশ্বের কি জীবন আছে, সে এই কাজ গুলো কিভাবে করে?” পাল্টা প্রশ্ন সুমির।

“আমাদের এই মহাবিশ্ব একটি রহস্যময় জিনিষ, এটা কিভাবে কাজ করে বিজ্ঞান এখনো বের করে পারেনি, যেমন গ্রাভিটি কিভাবে তৈরি হল, ডার্ক এনার্জি কি এবং কোথা থেকে আসে এই জিনিষগুলো এখনো বিজ্ঞানের কাছে রহস্য।“ বলে স্যার।

প্রসঙ্গের বাইরে গিয়ে টিটুন ফের জিজ্ঞেস করে “স্যার সময় পরিভ্রমণ মানুষজন কবে আবিষ্কার করেছে?

“সময় ভ্রমণ আবিষ্কার করেছে মহামান্য বিজ্ঞানী সাফায়াত মানে তোর বাবা” বলেই টিটুনের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য তাকায় স্যার।

“বাবা?” টিটুনের চোখে বিস্ময়।

“হ্যাঁ, তোর কাছে যেই ডায়েরিটা আছে সেটাতেই আছে সময় পরিভ্রমণের নকশা, আর তোরাই প্রথম কোয়ান্টাম ট্রান্সপোর্টেশন করে সময় ভ্রমণ করেছিস টিটুন।” বলেই পকেট থেকে একটি পুরনো ডায়রি বের করে স্যার।

“এটা কোন ডায়েরি?” তিনজনই সমস্বরে জিজ্ঞেস করে।

“এটা তোর বাবার ডায়েরি টিটুন।”

“কিন্তু আমিতো সেটা বাসায় রেখে এসেছি। আর আমাদের বানানো প্রটোটাইপটা সেদিনের পর থেকে খুজে পাচ্ছি না, সেটাকি আপনার কাছে?” বেশ দ্বিধান্বিত দেখায় টিটুনকে।

“হুম, এটা তোর বাবার ডায়েরিই, এটা এখন তোর কাছে আছে, তবে ভবিষ্যতের পৃথিবীতে এই কপিটা সংরক্ষিত আছে টিটুন। তোর কপিটাই এক সময়ে আমাদের হাতে পৌঁছাবে। আর প্রটোটাইপটা আমার কাছে আছে, সেটা তোদের কাছে থাকা নিরাপদ না।” বলে স্যার।

দিপু, সুমি এবং টিটুন তিনজনই স্যারের দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়। “আমরা অনেক কষ্টে এটা বানিয়েছি, আপনি এটা নিতে পারেন না?”

”আমি দুংখিত টিটুন এটা আপাতত তোদের ফিরত দেয়া যাবে না। আমি জানি এটা দিয়ে তুই কি করতে চাইছিস। এটা নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না” দৃঢ প্রত্য্যে বলে স্যার।

“আমার বাবার সাথে কি হয়েছে? তাকে কে মেরেছে?“ প্রসঙ্গের বাইরে গিয়ে জিজ্ঞেস করে টিটুন।

একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আজগর স্যার বলে “মহামান্য বিজ্ঞানী সাফায়াত মেরেছে সেই চতুর্থ মাত্রিক প্রাণী।“

“চতুর্থ মাত্রিক প্রাণী?” টিটুন মুখ শক্ত জিজ্ঞেস করে। তার হাতের মুঠি শক্ত হয়ে আসে।

“হুম, চতুর্থ মাত্রিক প্রাণী। আমি পুরো ঘটনাটা খুলে বলছি, তার আগে ভুমিকা দিয়ে শুরু করি। এই মহাবিশ্বের নিদিষ্ট কিছু নিয়ম আছে, কিছু সূত্র মেনে চিলে, যেমন গ্রাভিটির মান, স্পেস টাইমের ইকুয়েশন, ইত্যাদি পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্রের-মত সময় পরিভ্রমণের ও কিছু নিয়ম আছে” বলেই থামে স্যার।

থেমে পুনরায় বলে “চতুর্থ মাত্রিক প্রাণী যে কোন সময় পরিভ্রমণ করতে পারলেও, তারা ইচ্ছে করলেই সময় পরিভ্রমণ করে আমাদের পৃথিবীর মানব ইতিহাসের কোন নিদিষ্ট সময়ে পৌছতে পারে না।“ বলেই তিনজনের প্রতিক্রিয়া দেখায় জন্য তাকায় স্যার।

“কেন পারে না স্যার? প্রশ্ন করে সুমি।

স্যার একটু থামলেন তারপর চুপ থেকে বললেন“গ্রান্ডফাদার প্যারাডক্স সম্পর্কে নিশ্চয়ই জানিস? উত্তরের অপেক্ষা না করেই বলে চলে স্যার, গ্রান্ডফাদার প্যারাডক্স এমন একটি কনসেপ্ট ধর তুই সময় পরিভ্রমণ করে তোর দাদার বালক বয়সের কাছে চলে গেলি এবং তোর দাদাকে হত্যা করলি। তোর দাদাকে হত্যা করা মানে তোর বাবার জন্ম হবে না তার মানে তুইও হবি না, এই পরিস্থিতিকে বলে গ্র্যান্ড ফাদার প্যারাডক্স।“

পুনরায় বলে স্যার “তাই গ্রান্ডফাদার প্যারাডস্ক যাতে না ঘটে তাই আমরা সময় পরিভ্রমণ করে আমাদের বাবা, দাদা এবং এমন কারো কাছে যেতে পারলেও তাদের কোন রকম ক্ষতি করতে পারি না, মানে চাইলেই অতীতে গিয়ে নিজেদের বাবা, দাদা বা তোমার এমন কোন ক্ষতি করতে পারব না, এই মহাবিশ্ব আমাদের এমন কিছু করতে দিবে না যাতে আমাদেরর নিজেদের অস্তিত্ব হুমকির মাঝে পরে।“

আবার বলে স্যার “ইউনিভার্সের বা মহাবিশ্বের একটি নিজস্ব ডিফেন্স মেকানিজম আছে, গ্রাভিটির মান, আলোর সূত্রের মত সে নিজে এরকম একটি সূত্র মেনে চলে। ঠিক একই ভাবে চতুর্থ মাত্রিক প্রাণীরা আমাদের যে কোন সময় যেতে পারে না, আমাদের মহাবিশ্ব তার নিজস্ব ডিফেন্স মেকানিজম বা রেডিয়েশন দিয়ে রক্ষা করে করে সেটা সমসময়ই” বলেই তাকায় তিনজনের দিকে।

সুমি, টিটুন এবং দিপু তিনজনই স্যারের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকে। দিপু জিব দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বলে “বুঝলাম না স্যার ?

“বলছি, চথুর্ত মাত্রিক প্রাণীরা আমাদের মানব ইতিহাসের যে কোন সময় যেতে পারে না, ধর তারা যদি একেবারে হোমো-স্যাপিয়েন্সের প্রথমে গিয়ে তাদের মেরে ফেলে তাহলে মানব জাতী অংকুরেই ধ্বংস হয়ে যেত, হয়ত আমাদের এই মহাবিশ্ব চাচ্ছে মানব সভ্যতা টিকে থাক তাই সে সরাসরি এক্সেস দিচ্ছে না চথুর্ত মাত্রিক প্রাণীদের আমাদের মানব ইতিহাসের কোন নিদিষ্ট সময়ে আসতে” বলে প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য তাকায় স্যার।

পুনরায় টিটুনের দিকে তাকিয়ে বলে “তিন বছর আগে তোর বাবা সর্ব প্রথম টাইম মেশিন আবিষ্কার করে, প্রথম প্রোটোটাইপ বানায় এবং পরীক্ষা করে, তখন স্পেস টাইমে বড় ধরনের এক ধরনের কম্পন হয় এবং স্পেস টাই ছিদ্র হয়ে যায়, এতে ইউনিভার্সের ডিফেন্স মেকানিজম অকেজো হয়ে যায় । “

স্যার পুনরায় বলে “যেহেতু স্পেইস টাইমের ক্ষতি হয় সেই দিন যেই দিনে তোর বাবা টাইম মেশিনটি পরিক্ষা চালায়, তাই চতুর্থ মাত্রিক প্রাণীটি সেই সময়টাতেই সহজেই প্রবেশ করে তোর বাবা কাছে পৌঁছে যায় এবং তাকে গ্রাস করে।“

টিটুন দাতে দাঁত চেপে বলে “আমার বাবাকেই কেন গ্রাস করল?“ গলাটা ধরাটা ধরে আসে তার।

“চতুর্থ মাত্রিক প্রাণীটি বুঝতে পারে মানব জাতীর কাছে সময় পরিভ্রমণ প্রযুক্তি আছে এবং তাই তাদের একেবারে নির্মূল করতে বেগ পেতে হবে। এটি আবিষ্কার করেছে তোর বাবা, তাই সব রাগ তার উপরে” বলেই একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে স্যার।

ফের বলে “যেহেতু সময় পরিভ্রমণ শুরু প্রযুক্তি আবিষ্কার হয়েছে ওই সময়ে, তাই আমরা ইচ্ছে করলে সময় পরিভ্রমণ করে এই সময়ের পুর্বে যেতে পারি না। এই কারণেই আমি তোদের সময়ে এসেছি, বিগত তিন বছর আমি তোর উপর নজর রেখেছি টিটুন। আমি জানি তোর বাবার ডায়েরিটা তোর কাছেই আছে, এবং এটি যাতে নিরাপদে থাকে তাই তোরা বাংলাদেশে চলে আসলে আমিও এখানে আসি।“

কথার মাঝখানে সুমি জিজ্ঞেস করে “স্যার যেদিন প্রথম আমাদের স্কুল ল্যাবরেটরিরা একবার ধ্বংস হল কিন্তু পরের দিন এসে দেখি ল্যাবরেটরির যেমনটা ছিল ঠিক তেমনই আছে, সেটা কি আপনার কাজ ছিল?”

“হুম, কারণ আমার দায়িত্ব তোদের সুরক্ষতি করা, মানব জাতির ভবিষ্যৎ আজ তোদের তিনজনের হাতে কারন এই মুহুত্যে তোরা তিনজনই টেলিপ্যাথি ক্ষমতা সম্পূর্ণ মানুষ।“

স্যার থেমে মুখে কিছুটা গাম্ভীর্য এনে বললেন, “চতুর্থ মাত্রিক প্রাণীটা এখন এই সময়ে সহজেই ঢুকতে পারে,ও সুযোগের অপেক্ষায় আছে। “


বিঃ দ্রঃ প্রতিদিন একটি করে পর্ব দিয়ে বারটি পর্বে শেষ করে ফেলব।

আগের পর্বঃ ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: ডায়েরি (পর্ব পাচ)

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ১:১০
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×