somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আশিক সরকার শুভ (আবীর)
আমি আশিক। প্রচন্ড স্বপ্নবাজ একজন মানুষ। একাধারে অনেক কিছু হবার ইচ্ছে।খুব আত্মকেন্দ্রিক একজন । অনেক কথা কারো সাথে তাই বলা হয়ে ওঠেনা। তাই এখানে আসা। যা কিছু মনে আসে, তার মধ্য থেকেই সবার সাথে শেয়ার করা.. এইতো.. আর কিছু বলার নেই...

ভাবনা-২

১৭ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় T ,

কেমন আছো তুমি? ভাল থাকার কথা নয়। আবার হয়তো খারাপ থাকারও কথা নয়। যে মানুষটির সাথে আজ তোমার প্রতিটা রাত কাটে, সে নিশ্চই বেশ ভাল মানুষ। হ্যাঁ, অবশ্যই ভাল মানুষ। খোঁজ নিয়েই বলছি। ভাল কিছুর সঙ্গে থেকে থেকে মানুষ একসময়কার খারাপ সময়ে আসা ধুমকেতুর আলোটুকুর স্মৃতি ভুলে যায়। তাই মানুষ মহাদেশ পরিমান কষ্টের পাহাড় ভুলেও একটি সময়ে সুখী হতে পারে। সৃষ্টিকর্তা মানুষকে ভুলে যাবার এক অদ্ভূত ক্ষমতা দিয়েছেন। এই ক্ষমতাটি না দিলে অনেক সমস্যা হয়ে যেতো। পুরো পৃথিবীটি একটি কান্নার পৃথিবী হতো।

আমি ভাল আছি। তবে পুরোপুরি ভালও নয় হয়তো। ভুলে থাকার ক্ষমতাটি হয়তো সৃষ্টিকর্তা আমাকে দেননি। তাই হয়তো এই মাঝরাতে তোমার কাছে কখনো পৌছুবেনা জেনেও আমার এই হাত প্রায় সাড়ে ৭ বছর পরেও তোমার জন্যে চিঠি লিখছে।

তোমাকে নিয়ে লিখতে গেলে কেন যেন আমার হাত দিয়ে ঘুরেফিরে তোমার বিয়ের সময়কার দিনগুলোর কথা চলে আসে। যার কিছুদিন আগে কোন এক এলাকার নির্জন গলির নষ্ট হয়ে যাওয়া একটি ল্যাম্পপোস্টের নিচে আমরা দেখা করেছিলাম। দু মেরুতে বাস করা দুটো মানুষ একসাথে মুখোমুখি দাঁড়ালে যেভাবে কথা বলে, আমাদের সেই কথপোকথনটুকু সেরকম ছিল। ভেবেছিলাম আমার মত প্রচন্ড আনস্মার্ট বীভৎস চেহারার এক ছেলের চেহারাটা দেখা পর কখনোই হয়তো আর রাত জেগে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আমার জন্যে উষ্ণতা মিশিয়ে কোন ম্যাসেজ লিখবেনা। আমি ভুল প্রমাণিত হবো ভাবিনি। প্রতিরাতে ফোনে কথা বলার সময় রাত পৌনে তিনটা পর্যন্ত যখন আমাকে দিয়ে ইচ্ছে করে কথা বলাতে, তখন থেকে আমি জেনেছিলাম,আমি হয়তো কোনভাবে তোমার পৃথিবীতে তোমার দৃষ্টির সীমানা যতদূর যায়, তাঁর সম্পূর্ণটায় আমি নিজের অস্তিত্বকে ছড়িয়ে দিয়েছি। এটা আমি কিভাবে পেরেছি ঠিক জানিনা। তবে পেরেছি...

তোমার বিয়ের দিন আমি তোমার বিয়েবাড়িতে গিয়েছিলাম। সাথে আমার বেশ কজন বন্ধুবান্ধব ছিলো। তোমার সাথে আমার সম্পর্কের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবই ওদের সামনেই বলতে গেলে।স্বাভাবিকভাবেই তারা আমাকে সঙ্গ দিলো। হাটতে হাটতে গল্প করছিলাম আড্ডা দিচ্ছিলাম ঠিকই, কিন্তু আমার ভেতরটা বারবার ঘেমে যাচ্ছিলো। বারবার মনে হচ্ছিলো, সামথিং ইজ ভেরী রং। রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে যত তোমার বাসার কাছাকাছি আসছি, ততই মনে হচ্ছে আমার চোখ গরম হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। একটু পরেই গলে বেরিয়ে যাবে। আর কখনোই তোমাকে দেখা হবেনা.. নষ্ট ল্যাম্পপোস্টটির কথা খুব মনে হচ্ছিলো তখন।

সেদিন যখন বাসায় ফিরেছি ওইদিন প্রায় চার ঘন্টার মত ঘরের দরজা বন্ধ করে লাইট অফ করে দিয়ে ঝড়ের মত কেঁদেছি। আমার ফোনের পাসওয়ার্ড ছিল তোমার নামে। কি যে কষ্ট হয়েছিলো সেটা চেঞ্জ করতে! ফোনের ম্যাসেজগুলো ডিলিট করতে গিয়ে মনে হয়েছে শরীর থেকে একটি একটি করে রগ কেটে ফেলছি।

যে প্রতিরাতে আমার নিশ্বাসের শব্দ শুনে ঘুমুতে যেতো,সে আরেকজনের বিছানায় আছে এখন, এটি ভাবলেই মনে হচ্ছিলো কেউ আমার হৃদপিন্ডটা ধরে চিবিয়ে খাচ্ছে। কি যে কষ্ট হয়েছিলো সেদিন! কতটা যে কষ্ট হচ্ছিলো!! সেটা বোঝানোর মত কোন ভাষা পৃথিবীতে আসেনি কখনো।

প্রথম প্রেম ছিলো। সেজন্যেই হয়তো অমন হয়েছে। এই প্রেমটার পর থেকে আমি কোন মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়াতে পারিনি। সম্পর্কে জড়াতে পারিনি বললে ভুল হবে, কোন মেয়েকেই আমি সেভাবে ফিল করতে পারিনি। ফলস্বরুপ সম্পর্কগুলো টেকেনি।

কারো উপড় আসলে খুব বেশীমাত্রায় নির্ভরশীল হওয়া ঠিক না। তুমি যখন অন্য কারো চোখ দিয়ে পৃথিবী দেখবে, তার হাত দিয়ে ভেজা কবুতর ছুয়ে দেখতে চাইবে, তুমি পারবে। এই সময়টুকু তোমার অসম্ভব ভালো কাটবে। মনে হবে সৃষ্টিকর্তা বুঝি জান্নাতের একটি ভাঙ্গা টুকরো তোমার হাতে তুলে দিয়েছে। এতটা ভাল কাটবে যে , রাতের বেলায় সে তোমার সাথে কথা বলতে বলতে যখন ফোন না কেটে দিয়েই ঘুমিয়ে যাবে, সেটি টের পেয়েও সে ফোন কেটে দেবে না। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে নিশ্বাস যে নিচ্ছো সেটি শুনেও সে আরো ঘন্টাখানেক পার করে ফেলবে।

আমার এমন অজস্র রাত কেটেছে তোমার ঘুমুনোর নিশ্বাসের শব্দ শুনে। কারন আমি তোমাকে নির্ভরশীল হয়ে ভালবাসতাম।

নিজের ইচ্ছেতেই হোক,কিংবা প্রকৃতির খামখেয়ালীপনার কারনেই হোক, কোন কারনে যখন মানুষটা হারিয়ে যাবে ,তখন সে নিজে হারানোর পাশাপাশি তোমার ভেতর থেকে তোমাকে নিয়ে যাবে। সেদিন তুমি ঝড়ের মত করে কাঁদবে। পুরো দুনিয়াশুদ্ধ তখন ভেঙ্গে ফেলতে ইচ্ছে হবে।তার ফোন নম্বরটা আর ছবিগুলো ডিলিট করতে গিয়ে মনে হবে কাটাচামচ দিয়ে নিজের হাত খুচিয়ে রক্তাক্ত করছো।

পৃথিবীতে যারা পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে ভালবেসেছে, এদের বেশীরভাগই বিজয়ী হতে পারেনি। তারা হেরে গিয়েছে। ঝড়ের মত করে কাঁদতে কাঁদতেই তাদের জীবন থেকে অনেকগুলো শীত বসন্ত বিয়োগ হয়ে গিয়েছে। সেই সাথে পরিবার বন্ধুবান্ধবদের মধ্য থেকেও তাদের জীবন থেকে বিয়োগ হয়েছে । এক পর্যায়ে কোথাও আর থাকেনা কেউ...

চার্লি চ্যাপলিন ঠিকই বলেছিলেন, তুমি যখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদবে, সে কখনো তা দেখে হাসবে না। তোমার সাথে সাথে সেও কাঁদবে।

আমরা আসলে একাই আসি পৃথিবীতে। একাই থাকি।মাঝখানে যাদের সাথে আমাদের দেখা হয়, তারাও একা। কেউ বোঝে আর কেউ বুঝতে পারেনা।

যারা বুঝতে পারেনা, এরা মাথার চুল ঠিকঠাক আছে কিনা দেখার জন্যেই প্রতিবার আয়নার সামনে দাড়িয়েছে। কান্না করার সময় কখনো দাঁড়ায়নি...

তোমাকে নিয়ে চিঠিটি এত বড় করার পেছনে একটি কারন রয়েছে। কলেজে থাকতে অনেক বন্ধুদের আমি চিঠি লিখে দিতাম। সেসব দিনে এসব চিঠি নিয়ে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। যাদের যাদের চিঠি লিখার সুযোগ আমার হয়েছিল, তাদের প্রত্যেকের অবস্থা কি আমি ঠিক জানিনা। কেউ হয়তো অন্য কাউকে তাঁর বাকী জীবনের সঙ্গী বানিয়েছে। অথবা কেউ হয়তো সেই চিঠির প্রাপককে সাথে নিয়েই এখনো একই ছাদের নিচে ঢাকা শহরের কোন এক দু রুমের বাসাতে ভাত রেধে ভাগাভাগি করে খাচ্ছে।

সারা জীবন মানুষকে চিঠি লিখে দিয়েছি। কিন্তু তোমার জন্য নিজেরই কোন চিঠি লিখা হয়নি। এই চিঠিটা হয়তো আমার সেই অপরাধবোধ কিছুটা হলেও কমাবে ।আজ রাতের এই চিঠিটা তোমার জন্য লিখা । এটাই প্রথম.. এটাই শেষ...

অনেক ভাল থেকো । কোন একদিন হয়তো আবারো দেখা হবে। তবে সেদিন হয়তো কোন নির্জন গলি থাকবে না। মাথার উপড়ে নষ্ট কোন ল্যাম্পপোস্ট থাকবেনা। কোন এক বড় শপিং মলের বাহিরে চোখ ধাধিয়ে যাওয়া আলো দেয়া কোন ল্যাম্পপোস্ট হয়তো থাকবে। কিন্তু সেদিন তোমার আর আমার মাঝে দুরত্বটা সেই নষ্ট ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা দিনের মত খুব কাছাকাছি হবেনা। সেদিন তুমি থাকবে এক মহাবিশ্বে, আর আমি থাকবো অন্য মহাবিশ্বে... আর মাঝের দুরত্বটা হবে অজস্র আলোকবর্ষের..

ইতি
যাকে তুমি আবীর ডাকতে ভালবাসতে
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১১:৩২
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×