এক লোক একটা বাঁশের সাকো দিয়ে নদী পাড় হচ্ছেন। লোকটি এর আগে বাঁশের সকোয় কখনো চড়েন নি। আজই প্রথম। সাঁকোর মাঝামাঝি আসার পর লক্ষ্য করলেন সাকোর অপর পাশ থেকে একটি পাগল সাকোয় উঠেছে। সাকোর উপড় দিয়ে তার হাটার ভঙ্গি দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে সাকো পাড়ি দিতে সে ভাল এক্সপার্ট...
পাগলটি লোকটির কাছাকাছি এসে কি মনে করে দাঁড়িয়ে গেল। লোকটির মনে ভয়। মাঝনদীতে সাকোর মাঝখানে একটি পাগলের সাথে দাঁড়িয়ে আছে ভাবলেই গা শিউরে উঠছে। লোকটি একটু সাহস নিয়ে পাগলে উদ্দেশ্যে বলল "ভাই, আর যাই করিস না কেন, সাকোটা বেশী নাড়াচাড়া করিস না" ।
এ কথা শুনে পাগলটি সবগুলো হলুদ দাত বের করে হাসি দিয়ে বলল, "ভাল কথা মনে করেছিস তো ! !" ।
যখন আপনি সূর্যাস্তের আলোয় দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির ছবি মন থেকে মুছে ফেলতে চান, তখন আপনার মন আরো বেশী করে মনে করিয়ে দেয় যে সে কিভাবে বারান্দার গ্রিল ধরে বিকেলে দাঁড়িয়ে থাকতো। একের পর এক বিভিন্ন ব্রান্ডের সিগারেটের ফিল্টারে দিনের পর ঠোট বসালেও আপনার ঠোট সে চিরচেনা ঠোটের স্পর্শ পাবার জন্যে আরো বেশী তৃষ্ণার্ত হয়ে ওঠে।
কেন হয় এমন? কারন আপনার মন বাঁশের সাকোর উপড় দাঁড়িয়ে থাকা ওই পাগলটির মতই। সে মানুষটিকে আপনি যতই ভুলতে চাইবেন,সে ততই আপনার চোখের সামনে সূর্যাস্তের ওই আলোটা এনে ফেলবে। দুঃখের স্মৃতির চাইতে আপনাকে সুখের স্মৃতিগুলোর কথা সে বেশী করে দেখাবে সে আলোয়। জীবনানন্দের কোন কবিতা পড়তে গেলেও একেক লাইনে তাকে একেক জামায় এনে হাজির করবে।
কারন মানুষ এই সময়টিতে কষ্টের স্মৃতি মনে করে যতটা না কষ্ট পায়, তার চাইতে বেশী পায় সুখের স্মৃতি মনে করে। সিনেপ্লেক্সে একসাথে সিনেমা দেখার সময় কিভাবে সে হাত জড়িয়ে ধরে থাকতো, আপনি যখন জ্বরে ভুগতেন তখন কিভাবে আপনার গলায় জড়িয়ে ধরে থাকতো, আপনি যখন বৃষ্টিতে ভিজে যেতেন তখন কিভাবে মাথা মুছে দিত, এসবকিছু আপনার চোখের সামনে আরো বেশী করে নিয়ে দাড় করাবে।
আর এজন্যই এখন আপনার মুঠোফোন থেকে তার কোন নম্বর এখনো ডিলিট হয়নি। মেমরী কার্ড থেকে আপনাদের দুজনের সবগুলো ছবি ডিলিট করে ফেললেও কোন এক ফোল্ডারে তার কোন না কোন ছবি ঠিকই রয়ে যায়। বহু আগে তার পাঠানো কোন ম্যাসেজও আপনি অন্য একটি সিম কার্ডের মেমরীতে রেখে দেন হারিয়ে যাবার ভয়ে। এখনো তার কথা মনে হলে আপনার হৃদপিন্ডের কম্পন কিছুটা হলেও বেড়ে যায়।
এই হৃদপিন্ডের কম্পন বেড়ে যাবার ব্যাপারটি দুটো সময়ে ঘটে। যখন প্রথম কেউ আপনার জীবনে আসে। আর যখন সে মানুষটি চলে যায় ।
যাবার সময় ওই স্মৃতিগুলো সে আপনার জন্যে রেখে যায়। আপনার ব্রেন সেগুলো ধারন করে রাখে।
সৃষ্টিকর্তা স্মৃতি ধরে রাখার জন্যে প্রায় দেড় কেজি ওজনের একটি ব্রেন দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু কোন স্মৃতি মুছে ফেলার কোন অপশন দেননি। তাই মুছে ফেলার চেষ্টাটিও আপনার মস্তিষ্ককেই আরো বেশী মাতাল করে তুলবে।হিতে বীপরিত হয়ে আপনার ব্রেনের প্রতিটি নিউরোনে তার নামটি খোদাই করে দেবে। সে মুছবে না কখনোই।
যতই সিগারেটের ফিল্টার বদলান, কিংবা গীটারের তারে হাত পেচিয়ে হাত রক্তাক্ত করুন না কেন, লাভ নেই...
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:৪৪