somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

......অতএব সাধু সাবধান। আমেরিকা কেনো বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা চাচ্ছে আফগানিস্তানে শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে???

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১০ ভোর ৫:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুনলাম, পেপার পত্রিকায় পড়লাম আর ব্লগেতো হামেশাই জানতে পারছি। খবরটা হলো আফগানিস্তানের শৃংখলা ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ সরকার কে সহযোগীতা করতে মার্কিন সরকারের অনুরুধ। নিঃসন্দেহে ভালো খবর আমেরিকার মতো দেশ বাংলাদেশকে অনুরুধ করতেছে তারা যা করতে পারেনি তা করার জন্য। আমেরিকার মতো দেশ অনুভব করছে যে বাংলাদেশ এটা করতে পারবে। এ অনুরুধ আসলে আমেরিকার সেনাবাহীনীর দৈন্যতাই প্রকাশ করলো। তবে আবারো ভিয়েতনামের ফলাফল পাবার আগে আমেরিকা একটা শেষ প্রচেস্টা চালাচ্ছে। তবে এখানেও সেই পুরোনো চালাকি আছে। যা তারা সব সময় করেছে, এক ঢিলে দুই পাখি শিকারের চেস্টা।

মুসলিমদের মধ্যে নতুন করে বিভেদ তৈরির চেস্টা

আমেরিকা খুব ভালো করেই জানে বাংলাদেশের সমস্ত মুসলিম সমাজ এমনকি সরকারও আফগানিস্তান ইনভেশানের বিরোদ্ধে ছিলো। বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ আমেরিকার এ আগ্রাসনের বিরোদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলো। আমার খুব ভালো করে মনে আছে তখন ফজরের নামাজে শেষ সিজদা দেয়ার পূর্বে আমাদের ইমামসাহেব একটা দোআ পড়াতেন যার নাম কুনুতে নাজেলা (সম্ভবত)। বাংলাদেশের মানুষ এটাকে মুসলমানদের জন্য একটা বিরাট বিপদ মনে করেছিলো। মানুষ তখন নিজেকে নিয়ে যতটা না চিন্তা করতো তারচে বেশি চিন্তা করতো আফগানিস্তানের মানুষকে নিয়ে। বি৫২ বোমারু বিমানের আঘাতে কয়টা নিষ্পাপ শিশু প্রান হারালো তার হিসাব করতো, নিরবে কাঁদতো, আর ঘৃনা করতো আমেরিকা-ইসরেল সম্পর্ককে। আমেরিকান প্রশাসন আফগান জনসাধারনের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের এ সহমর্মীতা, এ ভালোবাসা সম্পর্কে পরিপূর্ন অবগত। তবু তারা কেন বাংলাদেশকে এমন অনুরোধ করলো? এটা একটা বিরাট প্রশ আমার কাছে।

মুসলিম স্বার্থ ও বর্তমান বাংলাদেশ সরকার

বাংলাদেশ সরকারের ধ্যান ধারনা আর সাধারন মানুষের ধ্যান ধারনার মধ্যে রয়েছে বিরাট ব্যাবধান। এখনো বাংলদেশের মানুষ অত্যন্ত ধার্মিক। কিন্তু দুঃখজনক ভাবে আমাদের সরকার সেক্যুলার। আর আমেরিকা এ সুযোগটাই নিতে চাচ্ছে। বর্তমান বাংলাদেশ সরকার, সরকার প্রধানের উদ্দেশ্য আর আফগান সরকার ও আফগান সরকার প্রধানের উদ্দেশ্যের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য আমার কাছে পরিলক্ষিত হয়না। দুটি দেশেরই বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগনকে টেররিজম এর ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত রাখা। ভিন্ন মতাবলম্ম্বীদের জংগী হিসেবে চিহ্নিত করে তাদেরকে কঠোরভাবে দমন করা। আমাদের সরকারের চিন্তা চেতনা আরো একধাপ বেশী কঠোর কারজাই সরকারের চেয়ে, তাদের চিন্তা হচ্ছে বাংলাদেশের সকল ইসলামিক দল গুলোকে টেরোরিজমের আওতায় এনে তাদের রাজনীতিকে চিরতরে ধংস্স করে দিয়ে সরকারের একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে অতীতের মতো দূর্নীতির মাধ্যমে নিজেদের পেটপূজা করা। আমাদের এ অসৎ রাজনীতির পিছনে একমাত্র উদ্দেশ্যই হচ্ছে ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করা, নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন করা। দেশের মানুষের উন্নতির কোন চিন্তা না থাকায় আজ আমেরিকা এমন অনুরোধ করতে পারে। আজ সরকারে যদি জনমানুষের চিন্তা চেতনার প্রতিফলন ঘটাতো তাহলে আমেরিকা এমনটা বলতে পারতো না।


ভারতের ইচ্ছা একটা বড় প্রভাবক


বর্তমান সরকারী দলের সাথে ভারতের সম্পর্ক প্রায় ৫০ বছরের। এ দলটির জন্মলগ্ন থেকেই ভারতের সাথে একটা সুসম্পর্ক বজায় ছিলো। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের রয়েছে একটা বিরাট অবদান। সে হিসেবে ভারত আমাদের কাছ থেকে তেমন কিছুই পায়নি। পায়নি কারন বিশ্ব মোড়ল আমেরিকা তখনো পাকিস্তানের সংগেই ছিলো। আর পাকিস্তান সে সুযোগের সদ্বব্যবহার না করে দাম্ভিকতার স্বপ্নে বিভোর ছিলো। ইতোমধ্যে ভারত নিজেকে প্রতিষ্টা করেছে এ অন্ঞলের প্রধান অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে। বিশ্বজুড়ে স্বল্প পরিসরে হলেও তাদের নিজস্ব লবি রয়েছে। অর্জন করেছে পারমানবিক শক্তি। তাই তাদের সময় এসেছে সাউথ এশিয়ান আঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করা ও নিয়ন্ত্রন করার। আজ আমেরিকার এ অনুরোধের পেছনে ভারতের অবশ্যই বিশেষ সায় রয়েছে। ভারতের বিশেষ কনসার্ন অবশ্যই থাকবে এ ব্যাপারে। এছাড়া বিগত কয়েক বছরে ভারত-আমেরিকা একটা গুরুত্বপূর্ন সম্পর্কে রূপ নিয়েছে। ভারত চায় বাংলাদেশের মানুষ বিভক্ত হোক। বাংলাদেশের মানুষ যতো বেশি বিভক্ত হবে তার জন্য এ অঞ্চল নিয়ন্ত্রন করা আরো সহজ হবে। যেহেতু বর্তমান সরকারী দল ভারত এর অত্যন্ত আস্থাভাজন সে হিসেবে আমার ধারনা ভারত সরকারও কিছু দিনের মধ্যে হাসিনা সরকারকে ভিতরে ভিতরে প্ররোচনা দেবেই। ভারত তার নিজেদের স্বার্থেই বাংলাদেশে একটা কারজাই সরকার বসাতে চাচ্ছে। এজন্য হাসিনার চেয়ে উত্তম কোন অল্টারনেটিভ তাদের হাতে নেই।

বাংলাদেশ সেনাবাহীনি

বাংলাদেশ সেনাবাহীনী পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সেনাবাহীনি। এটা পরিক্ষিত। বাংলাদেশ সেনাবাহীনি ইতোমধ্যে জাতিসংঘের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিয়ে বিশেষ দক্ষতা ও সফলতার পরিচয় দিয়েছে। এটাই একটি কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের সেনাবাহীনির জন্য। আর তাইতো ২৫ ফেব্রুয়ারীর মতো ম্যাসাকার ঘটে বাংলাদেশ সেনাবাহীনির উপর। যার কোন সঠিক সুদুত্তর আজো পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি এও বলা যায় যে বাংলাদেশ সেনাবাহীনির প্রধান শত্রু হচ্ছে ভারত। বাংলাদেশ সেনাবাহীনি যতো বেশী শক্তিশালী হবে ভারতের জন্য ততোই দুঃখের বিষয়। কারন একটা দেশের সেনাবাহীনি যদি শক্তিশালী হয় তাহলে ঐ দেশের উপর নিয়ন্ত্রন সহজ হয়না। তাই বাংলাদেশ সেনাবাহীনিকে সময়ের সবচে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করার ষড়যন্ত্র চলছে ঘরে বাহিরে। এ জন্য হাসিনাকে বেছে নেয়া হয়েছে যোগ্য সহযোগী হিসেবে। আর শেখ হাসিনা বর্তমানে এমন এক গ্যাঁড়াকলে আছেন যে এ টোপটিও তিনি গিলে ফেলতে পারেন। কারন আপাতদৃস্টিতে মনে হচ্ছে তিনি বিশেষ একটি দেশের কথা ছাড়া আর কারো কথা বিশ্বাস করতে পারছেন না। এটাই শেষ পর্যন্ত কাল হতে পারে বাংলাদেশের মানুষের জন্য।

পরিনতি কি হতে পারে

যদি বাংলাদেশ সেনাবাহীনি আফগানিস্তানে পাঠানো হয় তাহলে এর পরিনতিতে আমরা কি পেতে পারি।
ক. প্রথমেই আমরা পাবো একদল মানুষের লাশ। যে মানুষগুলোকে তৈরি করা হয়েছে আমাদের দেশের বিপদ আপদে জানবাজি রেখে লড়াই করার জন্য। সাথে থাকবে স্বজনহারা মানুষের কান্না।
খ. বিশ্ব মুসলমানের সহানুভভুতি আমাদের দেশের উপর থেকে চলে যাবে। আমরা মুসলিম বিশ্বে বন্ধুহারা হয়ে যাবো। কারন মুসলিম বিশ্বে আরো বড় বড় সেনাবাহীনিওয়ালা দেশ রয়েছে, যাদের কাছে আছে অত্যাধুনিক সাজ সরন্জাম। তবুও তাদেরকে আমেরিকা অনুরোধ করবেনা। কারন তারা বাংলাদেশের মতো ঠ্যাং ভাংগা দেশ নয়।
গ. আমাদের একমাত্র বন্ধু থাকবে ভারত। কারন আমরা নতুন বন্ধুদেশ তৈরি করতে মোটেও প্রফেশনাল নই। এছারা ভারতীয় একটা বিধি নিষেধতো থাকবেই। উদাহরন স্বরূপ আমরা রাজতান্ত্রিক নেপাল ও বর্তমান ভূটানের কথা বলতে পারি।
ঘ. দেশের ভিতরে রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে। এমনকি গৃহযুদ্ধেরও সৃষ্টি হতে পারে।
ঙ.যে জংগীবাদের কথা বলে সাধারন মানুষের মনে ভয়ের সঞ্চারন করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার চেস্টা চলছে। সেই জংগীবাদ সত্যি মাথাচারা দিয়ে উঠবে।

সর্বোপরি বাংলাদেশ সেনাবাহীনীর যে ডিগ্রেডেশন হবে সেটা পরিবর্তিত বিশ্বে ফিরিয়ে আনা অসম্ভব হয়ে পরবে। আর সবচে বড়কথা হচ্ছে দেশের ভিতর সেনাবাহীনীর চৌকষ অফিসার হত্যার ব্যাপারে সরকারের যে অবস্থান আমরা দেখতে পাচ্ছি তাতে মনে হচ্ছে বিদেশের মাটিতে এরকম কিছু ঘটলে সরকারের কোন বিকারই পরিলক্ষিত হবেনা।

সরকারের ইচ্ছা কি?

সরকার যদি জনগনের প্রতি নূন্যতম কোন শ্রদ্ধাবোধ থেকে থাকে তাহলে আশাকরি সেনাবাহীনী পাঠানোর মতো শিশুসুলভ কাজটি করবে না। আর যদি সরকার তার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে চায় জনসাধারনের চেতনাকে লাথি মেরে, তাহলে আফগানিস্তানে সেনাবাহীনি পাঠানোর চেয়ে আর দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ কোন কিছু হতে পারেনা। সবকিছুই এখন সরকারের বিবেচনাধীন থাকলো।

দেখি কি হয়?? কি ঘটে সময়ই সবকিছুই বলে দেবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ২:৪৩
১৭টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×