গতকাল বৃহস্পতিবার অপরাহ্ন ৩.৩০ এ কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই নারী কন্ঠে সাদর সম্ভাষণ, টেম্পারেচার মেপে নিয়ে সুস্থতা বিষয়ে টুকিটাকি কয়েকটি প্রশ্ন করে ওয়েটিংরুমে নিয়ে গেল। অপেক্ষার মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই জেফ এসে হাজির, নিয়ে বসাল ওর ডেস্কে। জেফ ডাক্তার, টিম লিডার। দিন কেমন যাচ্ছে, ক্লাস কেমন চলছে জানতে চাইল। খুব দুঃখ প্রকাশ করল এই বলে যে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপের সাথে আমাদের খাপ খাওয়াতে নিশ্চয়ই খুব কষ্ট হচ্ছে।
এরপর ৭-৮ মিনিট আমাকে ভ্যাকসিন সম্পর্কে সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা দিল। এর ইতিহাস, গবেষণা, ভালো-মন্দ, ট্রায়াল, ইত্যাদি নিয়ে ছোটখাটো একটি আলোচনাই হয়ে গেল ওর সাথে। কোভিডের দুটো নতুন জাত, বৃটিশ ও সাউথ আফ্রিকার ভাইরাস দুটো নিয়েও কথা হলো। সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট(variant)টার উপর এই ভ্যাকসিনের প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম বলে জানলাম। আমার কয়েকটি প্রশ্নের কৌশলী উত্তর দিল। মিনিট ১৫ কেটে গেল এসবেই। কথা বলতে বলতে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে একটি ফর্মও পূরণ করে ফেলল।
ভ্যাকসিন দিতে লাগল প্রায় তিন সেকেন্ড। বেইসিকলি ইন অ্যান্ড আউট। ডান(done).
ইনজেকশনের স্থানে অ্যান্টিসেপ্টিক স্ট্রিপ লাগাতে লাগাতে পরবর্তীতে কী করণীয় জেফ তা বুঝিয়ে বলল। বুঝলাম যে স্বাভাবিক খাওয়া দাওয়া ও জীবন যেভাবে চলছিল সেভাবেই চলবে। একসময় আমাকে জিজ্ঞেস করল আমি ভ্যাকসিনের শিশিটার কোনো ছবি তুলতে চাই কি-না স্যুভেনির হিসেবে রাখার জন্য। গত একটি বছর ধরে যাকে নিয়ে সারা পৃথিবীতে এতো কথা হচ্ছে তাকে কাছ থেকে দেখার সুযোগটি ছাড়তে চাইলাম না। সম্মতি দিতেই জেফ ভেতরে গিয়ে ভ্যাকসিনের একটা খালি শিশি এনে দিলো। আমিও চট করে ছবি তুলে নিলাম। (কানে কানে বলি, আমি আস্তে আস্তে ছবি পাগল লোক হয়ে যাচ্ছি।)।
জেফকে বিদায় জানিয়ে আরেকটি ওয়েটিংরুমে নিয়মানুযায়ী ২০ মিনিট বসে থাকার পর একজন নার্স/ডাক্তার এসে কুশল জানতে চাইল। সবকিছু ঠিক আছে বলতেই জানিয়ে দিল আমার দ্বিতীয় ডোজ কবে নিতে আসতে হবে। একটি রিমাইন্ডার স্লিপও হাতে ধরিয়ে দিলো। ওয়েটিংরুমে অপেক্ষারতদের আপ্যায়নের জন্য পানি, কলা, আপেল, কমলা ইত্যাদি যথেষ্ট পরিমানেই ছিল।
এখন সকাল ৭.০৮। ভ্যাকসিন নেয়ার পর ১৫ ঘন্টা ২৮ মিনিট পার হয়েছে। ভ্যাকসিনের স্থানের হালকা ব্যাথাটা বেশ ঘন হয়েছে। হাত দিয়ে চেপে ধরলে ব্যাথা বেশি লাগছে। কিল দিলে ককিয়ে উঠছি। শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক আছে। চোখে ঠিকঠাক দেখতে পাচ্ছি, হেঁটে বাসায় ফিরেছি। খিদে আগের মতোই আছে। চিন্তাভাবনার খেই হারাচ্ছে না। আলহামদুলিল্লাহ। ট্রল পৌস্ট গুলোকে এখনো অপছন্দ করছি। আবার বাবা হতে পারব কি-না এখনই বলা যাচ্ছে না। শুধু ইন্টারনেট হঠাৎ করে সমস্যা করছে। স্তন ও শিশ্নে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করছি না।
তাহলে আর ভয় কী? নিয়ে নিন।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৬