somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাস রিকশা এবং ভিকারুন্নিসা নুন ইস্কুল!

২৬ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষের বিপদ বলে কয়ে আসে না। দিব্বি ঝিমাচ্ছিলাম ঘরে বসে।বাইরে বৃষ্টি হচ্ছিল,দেখেও শান্তি!স্কুল জীবনে বৃষ্টি ভেজার ইতিহাস ভাবছিলাম। বেশ কেটে যাচ্ছিল সময়।মনে কেমন জানি উদাস উদাস ভাব!ভাবটাকে আরো বাড়িয়ে দিতেই ভাবছিলাম পিসি তে ঠান্ডা একটা রবীন্দ্র সঙ্গীত ছাড়ব কিনা । নাকি ধুম ধারাক্কা ইংলিশ গান ছাইড়া কিছুক্ষণ পাগলের মত হাত পা ছোঁড়াছুড়ি করব?এই নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে ছিলাম । আহ! প্রকৃতি(!) আমাকে এই দ্বিধা দ্বন্দ্ব থেকে মুক্তি দিল । লোডশেডিং শুরু হল ।এতক্ষণ বেশ ভালই কারেন্ট ছিল!যেই ভাবলাম গান শুনব অমনি গেল গা!উইথ গ্রেট পাওয়ার(ইলেক্ট্রিসিটী) কামস গ্রেট লোডশেডিং।এই দেশে ফ্রি তে বাঁশ দেয়া হয় ।বাঁশের পর বাঁশ খেয়েও আমরা হাসিমুখে নতুন নতুন বাঁশ খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হই।যদি কোনদিন বাঁশ না খাই,নিজেরাই বাঁশের ব্যবস্থা করি(যদিও এমন কোন দিন আসে নাই আর আসবে বলে মনে হয় না ।)যাই হোক এইসব উচ্চমার্গের কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই আপন মনে বলে উঠলাম দুসশালা । এই কথাটা বলার সাথে সাথেই আমার মাথায় বিদ্যুতের মত একটা ভাবনার উদয় হল । আচ্ছা অপরের বোনের প্রতি আমাদের এত লোভ কেন?যাকে তাকে যখন তখন শালা বলে ফেলি!নাহ নিজেকে শুধরাতেই হবে।আজ থেকে নো শালা! শালাকে না বলুন! কেন বলবেন না?শালা জাতি আমাদের কে কি দিতে পেরেছে দুলাভাই ছাড়া?এইসবই ভাবছিলাম । তখনই গোঁদের উপর বিষফোঁড়ার মত,আম্মা আমার মোবাইলে ফোন দিল । ধরলাম । একটু আমার রুমে আয় তো!আম্মা এতক্ষণ বাসায় ছিল তাই আমি জানতাম না।পাশের রুম থেকে চিল্লাই চিল্লাই আমাকে ডাকতে আম্মার কি ক্ষতি হইত?কেন শুধু শুধু ফোন দিয়ে পয়সা নষ্ট করল?টাকা কি গাছে ধরে? এইসব ভাবতে ভাবতেই আম্মা আবার কল দিল ।ফোন কেটে দিলাম। নাহ এবার একটু শুনেই আসি। হেঁটে হেঁটে গেলাম।হাঁটতে হাঁটতেই ভাবছি। দূরত্ব বেশি হইলে পঞ্চাশ ফুট।তাও এত কষ্ট হচ্ছে কেন? (বাসায় রিক্সার ব্যবস্থা চালু থাকলে ভাল হইত।বলতে পারতাম -এই মামা যাবেন?
-কই?
-এই তো সামনে,আম্মার রুম ।
-যামু
-ভাড়া কত?
-২০ টাকা।
-টাকা কি গাছে ধরে?১০ টাকায় গেলে চলেন না গেলে অন্য রিকশা ডাকি।পুরা বাসা রিকশা দিয়ে ভর্তি করে ফেলতে হবে। )আম্মার রুমে গেলাম।
-কি হইসে?
-যা তো বাবা ****কে একটু নিয়ে আয়। (আমার ছোট বোন।)
-মানে কি?পারব না।
-আরে যাস না। তোরে ২০ টাকা দিমু।
চিন্তা করে দেখলাম ।আম্মা আমাকে আসা যাওয়ার খরচ দিবে ৭০ টাকা।রিকশা ভাড়া ৫০।বাড়তি ২০ টাকা। আমি যাব বাসে,বোনকে নিয়ে আসব রিকশায়, টোটাল তিরিশ টাকার ভিতরে কাম সাবার।আলহামদুলিল্লাহ!বানিজ্য ভাল!রাজি হইয়া গেলাম।

বাসা থেকে ৭ তালা নিচে নামতেই দেখি ছোট খাট বন্যার মত হয়ে গেছে,আবার আমার কবি মনের উদয় হইল । চার লাইনের কোবতে লিখে ফেললাম মনে মনে,
‘’ঢাকার রাস্তা,
পানির বস্তা,
এত পানি কোথা পাই?
আসমানে পানি নাই।‘’
একদম শিশুতোষ হইসে।নাহ এখন শিশুতোষ কবিতা লিখলে চলবে না।ঢাকা কলেজে পড়ি।একটা মান ইজ্জত আছে না?নতুন করে লিখলাম,
‘আহ!কত পানি,
তাই সিগারেট টানি,
আহ!কত পানি,
ভদকার দাম জানি।’
ওই দাম জানা পর্যন্তই সার,খাওয়া আর হয়ে উঠে না।এগুলা হারাম বস্তু।সিগারেট যদিও হারাম না।তবুও খাওয়া হয় না। গন্ধ টা কেমন বিচ্ছিরি ।আই হেইট স্মোকার্স।কবিতায় বড় বড় ভাব আনার জন্য এগুলা লিখলাম।

এপেক্সের ৯০০ টাকা দামের ঈদের সেন্ডেল হাতে নিয়ে মোটামুটি সাঁতার কেটে রাস্তার ওই পারে গিয়ে বাসে উঠে গেলাম । বাসে উঠে দেখি কি প্রচন্ড ভিড় । বাপরে! তারপর দেখি একটা সিটের পাশে এক শালার বেটা একা একা বসে আছে।শালার বেটার চেহারায় বাচ্চা বাচ্চা ভাব দেখে গেল মেজাজ টা খিচড়ে। শালার পাশে গিয়ে বসলাম । বসার একটু আগেই সে আমাকে থামাইতে চাইল! আমি পাত্তাও দিলাম না ।বসতেই বুঝলাম কি ভুল করসি। ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে কান্দে ।
বগা ফান্দে পড়ে গেছে,
সিট বৃষ্টি তে ভেসে গেছে।
দিলাম পাশের শালাকে ঝাড়ি,
আরে ভাই আগে কইতে পারেন নাই!যত্তসব!কইত্তে যে এডি আহে!এডিরে ঢাকার টিকেট দিসে কেডা?
-আরে ভাই আমি তো আপনাকে নিষেধ করলামই ।
বাস থামল মৌচাক ।দুই টাকা দিলাম ভাড়া।একে স্টুডেন্ট তার উপর ঢাকা কলেজের! নামতে গিয়া দেখি আরেক কাহিনি । বাস ওয়ালা এক মোটর সাইকেল আলার গায়ে পানি ছিটাইসে ।
-ওই খা**** ** বাস কি এখানে রাখার জায়গা?
-মুখ ঠিক করেন ।
-****** কিয়ের মুখ ঠিক করুম?
আমি ঢাকা কলেজের স্টুডেন্ট । আমার সামনে বেয়াদবি হইতে পারেনা। আগায় গেলাম ।
-আরে ভাই বৃস্টি কি বাস ড্রাইভার পয়দা করসে?এডি আসমানি ব্যাপার সেপার। আর বৃষ্টির দিনে আপনার গায়ে পানি লাগব না তো কি মধু লাগব?
বেটা চুপ । আমি চলে আসলাম । বন্যা পার হইয়া বোনের স্কুল ভি এন এসে যেতে হবে । দুই হাতে স্যান্ডেল,খালি পা। রাজপথের নিষ্ঠুর পাথরের টুকরা গুলা আমার কোমল পা দুইটাকে ছার খার কইরা দিতেসিল । তবু হিমু হিমু একটা ভাবের জন্য সেন্ডেল পায়ে গলালাম না । যেদিকে তাকাই সেদিকেই দেখি সুন্দরী । রাস্তার ওইপারে যাব । তাই গাড়ি কমার জন্য অপেক্ষা করছি। দেখি পিছন দিয়ে কে জানি আমাকে বলছে কি হল জান। ওরে মোর আল্লাহ,আসলেই আমাকে বলছে নাকি দেখতে পিছে তাকালাম।আমাকেই বলছে। দেখতে গিয়া মুগ্ধ হইয়া গেলাম। একজন মানুষ এত সুন্দর কিভাবে হয়?তাও আবার আমাকে জান বলসে! ও মাই গড! ভাবলাম বলি কিছু হয় নি গো জান। তুমি থাকতে আমার কি কিছু হতে পারে?এই সব ইমোশনাল কথা ভাবতে ভাবতেই দেখি মেয়েটা বিরক্তিতে ভ্রু কুচকে আমাকে বলছে,আরে ভাই যান না কেন?ওহ !হতাশ হয়ে গেলাম ওইপারে। যেয়ে দেখি আরেক তামাশা চলতেসে । এক লোক এক রিকশা ওয়ালা কে বলতেসে রাস্তাটা পার কইরা দে।দশ টাকা দিমু। বড় জোর ২০ ফিট দূরত্ব । হাসতে হাসতে পেট ফাইট্টা যাইতেসে।পিছনে তাকায় তাকায় তামশা দেখতেসি । এমন সময় আরেক সুন্দরী ছাতার বাড়ি দিয়া আমাকে এক্স কিউজ মিঃ বলে চলে গেল। আমি ভাবছিলাম বলি আরে কিসের এক্সকিউজ করব ? ভাগ্যিস আপনি ছাতাটা নিয়ে বেড়িয়েছিলেন । নাহলে কি আপনার চাঁদের মত মুখের দর্শন আমি পেতুম? আহ! কি সুন্দর,লক্ষী প্রতিমা! মনের ভিতর ফেরদোউসি রহমান গান গাওয়া শুরু করলেন,
যার ছায়া পড়েছে,
মনেরই আয়নাতে,
সে কি তুমি নও?
ওগো তুমি নও?
এরপর সামনে হাঁটতে হাঁটতে দেখি আরেক বিপদ।আমার চেনা পরিচিত এক মেয়ে এখানে হাজির!এক পোলার সাথে!একদম আমার সামনে!হাঁটতে হাঁটতে এদিকেই আসছে। একসাথে কোচিং করতাম ।অভ্যাসবশত ডাক দিয়াই ফেলসিলাম,এমন সময় দেখি মাইয়ার ভয়েস একটু অন্যরকম লাগতেসে। পরে তাকাই দেখি মাইয়া আসলে ওইটা না । একটু ডিফারেন্স আছে। ভাগ্যিস ডাক দেই নাই ।দিলে কি অবস্থা হইত চিন্তা কইরা আমার হাত পা ঠান্ডা হইয়া গেল । আল্লাহ কে ধন্যবাদ দিলাম ।
যাই হোক এভাবেই তামশা করতে করতে আর সুন্দরী দেখতে দেখতে ভি এন এসের মেইন গেট দিয়ে ঢুকে গেলাম। আহা! এখানে আসলেও মনটা ভাল হয়ে যায় । :D যাই হোক কিছু ভি এন এসের ডাইনীর সাথে পুর্বাভিজ্ঞতা ভাল নাই বলে কিছুটা ভয়েও আছি। যদি দেখা হইয়া যায় আমি তো শেষ । আল্লার অশেষ রহমতে দেখা হয় নাই । ছোট বোনরে পাইলাম ।ভাবলাম একটু মুরুব্বীগিরি দেখাই,তোরে ভ্যানে দিয়া দিলেই ঠিক হইত। যত্তসব অবাঞ্ছিত বোঝা, কত্ত কষ্ট হইসে আমার আসতে জানিস?হ্যান ত্যান বহুত কিছু বললাম ।তারপর দেখি একটা রিকশাও যাইতে চায় না ।শেষে বাংলা সিনেমার চৌধুরী সাহেবের ভূমিকা নিলাম ।

- এই খালি বাংলামটোর যাবে?
-নাহ!
-কত টাকা দিলে যাইবা বল ।
একটু টাকার গরম দেখাইলাম
-৪০ টাকা।
-মাত্র!আশি টাকা চাইতা।
মুখে বললাম বটে,কিন্তু আমার কলিজা ফাইট্টা গেল । ১৫ টাকা লস ।
রাস্তায় দেখি আরেক কাহিনি । রিকশা ওয়ালা গাড়ি দেখে ডাইনে কাটে,
আমার পিচ্চি বোন বারবার বলে আরে ভাই সোজা তো। এভাবে বলতে থাকায় রিকশা ওয়ালা বিরক্ত হইয়া দিসে এক ঝাড়ি। আমি ঢাকা কলেজে পড়ি! আমার সামনে ঝাড়ি ঝুড়ি হবে আর আমি চুপ করে বসে থাকব তা হয় না।বোনকে আমিও দিলাম ঝাড়ি। চুপ কর!দিয়াই বুঝলাম মহা ভূল্ হয়ে গেসে। ঝাড়ি তো দিবার কথা রিকশা ওয়ালা কে ।শালা আমার লাভের ১৫ টাকা ঘাপায় দিতেসে! ধুসশালা।লস হইয়া গেল ।টু ডে ইজ মাই লস ডে!এরপর আর কি! মনের দুঃখে বাসায় আইসা গেলাম।

৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×