আমি এখানে দেশ বিরোধী বলতে বুঝিয়েছি রাজাকার, আলবদর, আলশামস, শান্তি বাহিনী বা এই ধরনের অন্য বাহিনী যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিলো এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময় থেকে আজ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আমার মনে হয় জাতি হিসেবে আমরা যত না কথা বলি, গালি গালাজ করি, মারামারি করি, উপদেশ দেই বা পরিকল্পনা করি কাজ করি তার চেয়ে অনেক কম। তা না হলে স্বাধীন এই দেশে আজ দেশ বিরোধীদের ক্ষমতার ব্যাপক বাহাদুরি দেখতে হতোনা এবং এ নিয়ে somewhereinblog এর পাতাও উত্তপ্ত হতোনা। আমিও একজন নাগরিক হিসেবে এই অপরাধে সমান অপরাধী। মাঝে মাঝে তাই নিজেকে মেরুদন্ডহীন মনে হয়।
আমি এখানে আমার বিক্ষিপ্ত চিন্তার কিছু সূত্রকে প্রস্তাবনার আকারে তুলে ধরছি। আমার এই প্রস্তাবনা দেশের সচেতন নাগরিক, সরকার, সাংবিধানিক ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তি সমূহ এবং অবশ্যই দেশ বিরোধীদের প্রতি। এই প্রস্তাবনা আমার একান্তই নিজস্ব চিন্তা চেতনা প্রসূত এবং ভবিষ্যত আলোচনার সূত্রপাত মাত্র। আশা করি বিজ্ঞ সচেতন লেখক ও পাঠকগন তাদের সুচিন্তিত মতামতের এর মাধ্যমে সর্বজনগ্রাহ্য (সংখ্যাগরিষ্ঠ জন গ্রাহ্য) বাস্তবভিত্তিক প্রস্তাবনা তুলে ধরবেন। somewhereinblog এ অনেক ব্লগার আছেন যারা পেশাসূত্রে লেখক, সাংবাদিক কিংবা মিডিয়া কর্মী। অনুরোধ রইল তারা যেন সর্বজনগ্রাহ্য প্রস্তাবনা সমূহকে জনগনের সামনে তুলে ধরেন।
আমার প্রস্তাবনা সমূহ:
১. প্রগতিশীল সকল দল অন্তত একটি বিষয়ে একমত হবে যে রাজাকার, আলবদর, আলশামস সহ সকল যুদ্ধাপরাধী এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত -এই অভিযোগে অভিযুক্ত বা শাস্তিপ্রাপ্তদের তাদের দলে অন্তর্ভুক্ত/সদস্য করা হবেনা।
২. নির্বাচন কমিশনের আইনে এই ধারা যুক্ত করা যেতে পারে যে রাজাকার, আলবদর, আলশামস সহ সকল যুদ্ধাপরাধী এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে দেশ বিরোধী অভিযোগে অভিযুক্ত বা শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তি রাজনীতিতে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
৩. যদি কোন দলের সদস্য উপরোক্ত অভিযোগে অভিযুক্ত হয় এবং দল যদি ব্যবস্থা না নেয় সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন ঐ দলের নিবন্ধন কেন বাতিল হবেনা এই মর্মে কারন দর্শাবে এবং পরবর্তী ব্যবস্থা নিবে।
৪. রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আদালতে অভিযোগ করা গেলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্ভবত সেখানে কার্যকরী নয়। তাই যুদ্ধাপরাধীদেরকে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের আলোকে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল করে প্রচলিত ও আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আইনে অভিযুক্ত করা যেতে পারে। বঙ্গবন্ধু কর্তৃক সাধারন ক্ষমা এক্ষেত্রে বাঁধা হতে পারেনা। আমি মনে করি বঙ্গবন্ধু কর্তৃক সাধারন ক্ষমা স্বাধীনতা বিরোধীতার জন্য প্রযোজ্য,যুদ্ধাপরাধের জন্য প্রযোজ্য নয়। স্বাধীনতা বিরোধীতা ও যুদ্ধাপরাধ এক জিনিস নয়।
৫. সাধারন ক্ষমা কি মৌখিক না লিখিত ছিল এ সম্পর্কে আমার কোন ধারনা নেই। যদি মৌখিক সাধারন ক্ষমা হয়ে থাকে আদালতে তা গ্রহনযোগ্য নাও হতে পারে। এ সম্পর্কে আইন বিশেষজ্ঞগন ব্যখ্যা দিতে পারে। উল্লেখ্য, ইনডেমনিটি আইনও বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের রক্ষা করতে পারেনি।
৬. মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়, সরকারী ও সামরিক ইনটেলিজেন্স এবং অন্যান্য সরকারী ও বেসরকারী সংস্থা সমূহের মাধ্যমে জেলা/বিভাগ কিংবা মুক্তিযুদ্ধকালীন সেক্টর ভিত্তিক রাজাকার, আলবদর, আলশামস সহ সকল যুদ্ধাপরাধী এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বা এই অভিযোগে অভিযুক্তদের তালিকা তৈরী করতে হবে। এক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধকালীন সেক্টর কমান্ডার, তদনিন্ম কমান্ডার, স্বীকৃত ও সুপরিচিত মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাপরাধীদের নির্মমতার শিকার ব্যক্তি কিংবা তাদের পরিবারবর্গ, মুক্তিযুদ্ধকালীন স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতামত এবং আদালত কিংবা ট্রাইবুনালের রায় বিবেচনা করতে হবে।
৭. নির্বাচনে মনোনয়ন প্রার্থী অথবা দলের সদস্য প্রার্থীকে এই মর্মে সনদ উপস্থাপন করতে হবে যে সে রাজাকার, আলবদর, আলশামস, শান্তি বাহিনী বা এই ধরনের অন্য বাহিনী যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিলো তাদের সাথে যুক্ত ছিলনা এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময় থেকে আজ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়নি এবং তার বিরুদ্ধে এ জাতীয় কোন অভিযোগ নেই। এই সনদ প্রদান করা হবে উপরোল্লিখিত (৬ নং এ উল্লেখিত)তালিকার ভিত্তিতে। সরকার জেলা/মেট্টোপলিটন/বিভাগের পুলিশ কমিশনার অথবা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় প্রতিনিধি অথবা সরকারী দায়িত্বশীল পদাধিকারী কোন ব্যক্তিকে এই সনদ প্রদানের দায়িত্ব দিতে পারে।
৮. আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক সংস্থা, বিচার ব্যবস্থা, সেমিনার, সভা সমাবেশ, পত্রিকা ইত্যাদিতে বাংলাদেশে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ যেন প্রাধান্য পায় সে বিষয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।
৯. সরকার যদি দেশ বিরোধীদের বিরুদ্ধে কোন যুক্তিসংগত রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিতে শংকিত বোধ করে সেক্ষেত্রে গনভোটের মাধ্যমে জনমত যাচাই করে নিতে পারে। বাংলাদেশের জনগন সবসময়ই দেশ বিরোধীদের ব্যপারে সজাগ।
১০. সবাই অবগত আছেন যে দেশী বিদেশী বিভিন্ন সংস্থা, NGO, ব্যক্তি বর্গ, বিশেষ করে প্রতিবেশী পরাক্রমশালী দেশ প্রকাশ্যে গোপনে আন্তর্জাতিক অংগনে বাংলাদেশ বিরোধী প্রপাগান্ডায় লিপ্ত। লক্ষ্য বাংলাদেশকে মৌলবাদী, সন্ত্রাসবাদী ও ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করা এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্র সমূহকে ধ্বংস করা। কিনতু লক্ষ্যনীয় বিষয় যে, এর মোকাবিলায় আমাদের প্রতিক্রিয়া ও প্রস্তুতি খুবই সামান্য। করণীয়: বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতির ভাগ্য নিয়ন্ত্রক আন্তর্জাতিক সংস্থা সমূহে ও উন্নত দেশগুলোতে বাংলাদেশ সরকার ও দেশীয় প্রভাবশালী সংস্থা সমূহ লবিস্ট নিয়োগ করতে পারে, ঢিলটি খেলে যেমন পাটকেলটি খেতে হয় তেমনি আমরাও বাংলাদেশ বিরোধী সংস্থা, NGO, ব্যক্তি বর্গ, দেশ সমূহের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা চালাতে পারি; এক্ষেত্রে বাংলাদেশী স্বনামধন্য লেখক, সাংবাদিক, মিডিয়া কর্মীদের সক্রিয়তা সর্বাগ্রে প্রয়োজন। প্রবাসী বাংলাদেশীগনও এসব প্রপাগান্ডার বিরুদ্ধে অগ্রগনী ভূমিকা রাখতে পারেন।
১১. আমরা সবাই নিজেদের স্বার্থের ব্যপারে স্বার্থপর, দেশের স্বার্থের ব্যপারেও এখন একটু স্বার্থপর হওয়া প্রয়োজন।
আপনি কি ভাবছেন...?