সরকার ঘোষিত ছুটির দিনের কথা সবাই জানে। এছাড়াও থাকে হঠাৎ ছুটি। সামনে আসছে ছুটির মহা সুযোগ। লম্বা ছুটি, ঈদের ছুটি। ঈদুল ফিতরের এই ছুটির সময়ে কে কি করবে তা আগে থেকেই চিন্তা-ভাবনা করে ঠিক করতে পারে কেউ, কেউ বুঝে সারতে পারে না। দ্বন্দ্বে থাকে। বাড়ী যাবে না কোথাও ছুটি কাটাতে যাবে। নাকি বিদেশে একটু বেড়িয়ে আসবে। প্যাকেজ ট্যুরের মাধ্যমে নাহয় নিজে নিজেই, সপরিবারে না সমমনা দল নিয়ে।
আজকাল ট্যুর-প্যাকেজ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় অনেক বিজ্ঞপ্তি ছাপা হয়, তেমনি ই-মেইলেও বার্তা আসে। কোথাও বিলবোর্ড, বা সাইনবোর্ডে তালিকা লিখে রাখে। বিশেষ করে ট্যুর অপারেটররা। কোথায় যাওয়া, কত দিন, কত রাতের জন্য। কোন কোন জায়গা ঘুরে দেখানো হবে। থাকা-খাওয়া, ভিসা, টিকেট কি কি সুবিধা পাওয়া যাবে অনেক কিছুই লেখা থাকতে দেখা যায়। তার সংগে থাকে আরো বাড়তি আকর্ষন, শুভেচ্ছা স্বরূপ বিনি পয়সায় কি কি পেতে পারেন। নিখরচার বাড়তি সুবিধা আর নির্ঝন্ঝাটে যাওয়াও অনেকের কাছে লোভনীয়। সামনে ছুটি থাকলে এসব প্রচারণা বেশী চলে। তারই কোন একটা বেছে কোথাও যাওয়া যায়।
কক্সবাজারে এত বেশী ভিড় হয় যে চিন্তার বাহিরে। হোটেল, রিসোর্টে ঘর ভাড়া পাওয়াও দুস্কর। যদি বা পাওয়া যায় তার জন্য ভাড়া গুনতে হয় দিগুণ বা তারও বেশী। দেশের ভেতর চলাচলে যাতায়াতের দুর্ভোগে অনেকের কোথাও যাবার ইচ্ছে সূচনাতেই শেষ হয়ে যায়। কোন পথে যেয়ে কোন মহাজ্যামে আটকে পড়ে থাকতে হবে তা' কে জানে! বেড়ানোর পরিকল্পনা ভেস্তে তো যাবেই। দেখা দিতে পারে মহা বিড়ম্বনা।
দেশের অন্যান্য এলাকাতেও অনেকে বেড়াতে যান। ঐতিহাসিক এলাকা, পাহাড়ী সৌন্দর্য, প্রাকৃতিক লীলাভুমি কোন কিছুই বাদ যায় না। সাগরের অথৈ নীল পানির ঢেউ খেলানো হাতছানিতে মুগ্ধ হয়ে সেন্ট মার্টিনেও যান অনেকে। যান কুয়াকাটায়ও।
বছরের সারাটা সময় একভাবে কেটে যায়। ব্যস্ততায়, যান্ত্রিকতায়, ত্রস্ততায়, জ্যামে আটকে থাকা স্তব্ধতায়। এর বলয় থেকে বের হয়ে আসতে হলে যেতে হয় প্রকৃতির কাছে। নিসর্গের নীলিমায়।
তাই ছুটির দিনে চাই বৈচিত্র্য। কিন্তু যাদের নিজ বাহনে চলাচলের সুযোগ নেই তাদের চলতে হয় বাস, ট্রেনে। প্লেনের কথা বাদ ও রাখা যায় না। বাস, ট্রেনের টিকেটের মতন তার টিকেট পাওয়াও ভাগ্যের কথা। ইচ্ছে হলেই ছুটে বেড়াতে ঘর ছাড়তে পারে না।টিকেট মনে হয় দুর্লভ কোন রত্ন। দ্বিগুন, তিনগুণ দামে, ব্ল্যাকে টিকেট কেটে, দালালের খপ্পরে পড়ে, মহিলাদের লাইনে দিয়ে, লোক লাগিয়ে বা নিজেরাই রাত থাকতে টিকিটের সারিতে দাঁড়িয়ে থেকে টিকেট জোগাড় করা কত কিছুই না করে থাকে। তারপর হেল্পার, কন্ডাক্টর দিয়ে বাস চালানো, লন্চ চালানো সেতো অতি সাধারন ব্যাপার। অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া। এসবই স্বাভাবিক। তাই থাকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। দুশ্চিন্তা, অস্বস্তি!
তবু বৎসরের একটা বিশেষ সময়। ঈদের ছুটি। এটি কাটাতে হবে স্মরণীয় ভাবে। আত্মীয়বাড়ী বা পড়শী-বন্ধুদের বাড়ী যেয়ে হোক। কোথাও বেড়াতে যেয়ে বা নিজের কাছাকাছি কোথাও ঘুরতে যেয়ে হোক। আর হ্যাঁ, বের হবার সময় অগ্রিম টিকিট কাটা থাকলে সাথে নিয়ে নিন। ঘরের তালা ভাল করে লাগিয়ে চাবি রাখুন সযত্নে। আপনজনদের নিয়ে ছুটির এই সময়টা কাটুক নির্বিঘ্নে, উপভোগ্যভাবে। আন্তরিকতায় পরিপূর্ণরূপে।