somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসুন জেনে নিই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পদ্ধতি

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর মানুষদের একজন বলেই গণ্য করেন অনেকে। কিন্তু কীভাবে নির্বাচিত হন এই ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট? এই পদ্ধতিটি নিশ্চয়ই সুচারু হওয়াটা জরুরি। কারণ আমেরিকার সরকার ব্যবস্থায় প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা অনেক। তিনি একইসঙ্গে দেশটির সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্বাহী বিভাগের প্রধান ও সামরিক বাহিনীর কমান্ডার ইন-চিফ। কংগ্রেসের যে কোনো আইনকে অনুমোদন ও বাতিল করার ক্ষমতা রয়েছে তার। মন্ত্রিসভা গঠন এবং উপদেষ্টা নিয়োগেও রয়েছে একচ্ছত্র ক্ষমতা। সুপ্রিমকোর্টের বিচারক ও রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেন তিনিই। এমন ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পদ্ধতিটি খুবই জটিল। অনেকেই মনে করেন প্রেসিডেন্ট বুঝি সরাসরি ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত হন। ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রয়েছে বেশ কয়েকটি ধাপ।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে প্রথমে দলীয় মনোনয়ন জিতে নিতে হয় প্রার্থীকে। আর এই মনোনয়ন পেতেও প্রচারণা চালাতে হয় তাদের। দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করার পদ্ধতিতে তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সাধারণত কনভেনশনের মাধ্যমেই দলগুলো তাদের প্রার্থী নির্ধারণ করে থাকে। প্রথমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে ইচ্ছুক প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়নের জন্য নিজেদের প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। আর এজন্য তাকে জন্মসূত্রে আমেরিকার নাগরিক হতে হয়। বয়স হতে হয় কমপক্ষে ৩৫ বছর এবং অন্তত ১৪ বছর আমেরিকায় বসবাস করতে হয়। আর কেউই দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন না। দলীয় মনোনয়ন লাভের পরই ওই প্রার্থী চূড়ান্ত নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন। প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরাই সাধারণত নিজেদের রানিংমেট বা ভাইস-প্রেসিডেন্ট বাছাই করে থাকেন।
প্রেসিডেন্ট ও ভাইস-প্রেসিডেন্ট ভোট একসঙ্গে
সাধারণ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ও তার রানিংমেট বা ভাইস-প্রেসিডেন্ট একসঙ্গে এক টিকিটে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোটারদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য একটি টিকিট দেয়া হয়। তারা একজন প্রেসিডেন্টের পক্ষে ভোট দিয়ে তার রানিংমেট ছাড়া অন্য প্রার্থীর রানিংমেটকে ভোট দিতে পারেন না।
আমেরিকার সংবিধানের ২ নাম্বার ধারা অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় ইলেক্টোরাল কলেজের মাধ্যমে। দেশটিতে ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটের সংখ্যা সর্বমোট ৫৩৮টি। কোনো প্রার্থীকে নির্বাচনে জয়ী হতে হলে ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল ভোটের মধ্যে কমপক্ষে ২৭০টি পেতে হবে। নির্বাচনের দিন ভোটাররা ভোট দেন, কিন্তু প্রার্থীরা সরাসরি সে ভোট পান না। ভোট পড়ে তাদেরই মনোনীত ইলেক্টোরাল কলেজের সপক্ষে। পরবর্তী পর্যায়ে এই ইলেক্টোরাল কলেজের দ্বারা আলাদাভাবে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস-প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
প্রত্যেক অঙ্গরাজ্যের সিনেটর ও রিপ্রেজেন্টেটিভদের সমপরিমান ইলেক্টর বা নির্বাচকের ভোটে নির্বাচিত হবেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। ইউ,এস, কংগ্রেস হল দ্বিকাক্ষিক আইন সভাঃ (ক) সিনেট ও (খ) হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ। প্রত্যেক রাজ্য থেকে সিনেটর হলেন দুইজন করে। আর রিপ্রেজেন্টেটিভদের সংখ্যা নির্ভর করে রাজ্যের মোট জনসংখ্যার উপর। যেই রাজ্যের জনসংখ্যা বেশি সেই রাজ্যের রিপ্রেজেন্টেটিভের সংখ্যাও বেশি। প্রতি দশ বছর অন্তর আদমশুমারী হয় জনসংখ্যা নির্ধারণের জন্য।
জনসংখ্যার অনুপাতে পঞ্চাশটি অঙ্গরাজ্য থেকে মোট ৪৩৫ জন সদস্য দুই বছর পরপর প্রতিনিধি পরিষদে নির্বাচিত হন। এ ছাড়া প্রতি ছয় বছর পর পর পর্যায়ক্রমে রোটেশনের মাধ্যমে ছোট-বড় প্রতিটি অঙ্গরাজ্য থেকে সমানসংখ্যক অর্থাৎ দু’জন করে মোট ১০০ জন সদস্য সিনেটে নির্বাচিত হয়ে আসেন। এ দুইয়ের সমষ্টি ৫৩৫, তার সাথে যোগ হয় ওয়াশিংটন ডিসির জন্য আরো তিনজন নিয়ে সর্বমোট ৫৩৮ জন।

# ইলেক্টোরাল কলেজ কীঃ
ইলেক্টোরাল কলেজ নামে এই শব্দের সহজ বাংলা হচ্ছে নির্বাচক মন্ডলী। বিভিন্ন রাজ্যে দলগুলোর রাজ্য শাখার মনোনীত প্রতিনিধিরাই ওই রাজ্যের 'নির্বাচক' হিসেবে ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্য হন। সাধারণত নির্বাচনের আগের মাসগুলোতেই এই মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়ে থাকে। সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেক রাজ্য সেখানকার নির্বাচকদের মনোনয়ন দিতে কিংবা বেছে নিতে পারে। কোথাও কোথাও অন্যান্য প্রার্থীর মতোই এ নির্বাচকরাও প্রাইমারি বা দলীয় ককাসে নির্বাচিত হন।
বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচকদের সংখ্যা নির্ধারিত হয় কংগ্রেসে সেখানকার সিনেটর এবং 'হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস' বা 'প্রতিনিধি পরিষদ' সদস্য সংখ্যার অনুপাতে। রাজ্যে নির্বাচকের মোট সংখ্যা হবে 'সিনেটর' এবং 'প্রতিনিধি পরিষদ সদস্য'র সমসংখ্যক। এ হিসেবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে 'নির্বাচক'র সংখ্যা (৪৩৫ জন 'প্রতিনিধি পরিষদ সদস্য', ১০০ সিনেটর, ওয়াশিংটন ডিসির জন্য সংরক্ষিত তিনজন নির্বাচক) মোট ৫৩৮ জন।
অন্যান্য রাজ্যের মতো সিনেটর এবং প্রতিনিধি পরিষদ সদস্য না থাকলেও ওয়াশিংটন ডিসির জন্য তিনজন নির্বাচক রাখার বিধান করা হয়েছে। সংবিধানের ২৩তম সংশোধনী অনুসারে দেশের সবচেয়ে ছোট রাজ্যের 'নির্বাচক' সংখ্যার সমসংখ্যক 'নির্বাচক' রাখার বিধান করা হয়েছে এই রাজধানী জেলার জন্য।

# প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা ইলেক্টোরাল ভোট কিভাবে পান?
ইলেক্টররা সরাসরি প্রেসিডেন্টকে ভোট দেন না। কোন একজন প্রার্থী যখন একটা রাজ্যের সাধারণ ভোটে জয়লাভ করেন তখন তিনি ঐ রাজ্যের সব ইলেক্টোরাল ভোট লাভ করেন। ইলেকটোরাল ভোটকে ভাগাভাগি করা হয় না। যেমন ধরুন এবারের নির্বাচনে নিউ ইয়র্কের ২,০০০,০০০ [দুই মিলিয়ন] মানুষ ভোট দিয়েছেন। এখানে মিঃ ট্রাম্প পেলেন ১,০০০,০০১ [এক মিলিয়ন ও এক] ভোট; আর মিসেস হিলারী পেলেন ৯৯৯,৯৯৯ [নয় লাখ নিরানব্বই হাজার নয় শত নিরানব্বই] ভোট।
মানে মিসেস হিলারী ২ ভোটে মিঃ ট্রাম্পের কাছে হেরে গেলেন। ফলাফল হবে ট্রাম্প এই রাজ্যের ২৯ টা ইলেকটোরাল ভোটের সব কটা পেলেন। এখানে ইলেক্টোরাল ভোটকে সাধারণ জনগণের দেয়া ভোটের অনুপাতে ভাগ করা হবে না। এইভাবে দেখা যায় নির্বাচনে প্রার্থীরা সাধারণত বেশি ইলেক্টোরাল ভোট ওয়ালা রাজ্যগুলোকে গুরুত্ব দেন। দেখা যাবে যে হয়তো কোন একজন মোট সাধারণ ভোটে বিরাট ব্যাবধানে এগিয়ে থেকেও ইলেকটোরাল ভোটে হেরে গেলেন।
নীচে একটা চার্ট দিয়ে বিষয়টা বুঝানোর চেষ্টা করি।
আমরা উদাহরণ হিসেবে ধরে নেই যে আমেরিকাতে মাত্র ৪টা অঙ্গ রাজ্য আছে। সেগুলো হল নিউ ইয়র্ক [ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ২৯], ভার্জিনিয়া [ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা 13], ক্যালিফোর্নিয়া [ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা ৫৫] এবং টেক্সাস [ইলেক্টোরাল ভোট সংখ্যা 38]। ধরে নিন রাজ্যগুলোতে সাধারণ নির্বাচনে মোট ভোট দিয়েছেন যথাক্রমে ২ মিলিয়ন, ৫ লাখ, ৫ মিলিয়ন ও ৪ মিলিয়ন ভোটার। কোন প্রার্থী কত সাধারণ ভোট পেলেন এবং সেই হিসাবে ইলেক্টোরাল ভোট কে জিতবে তা আমরা নিচের চার্টে দেখি সাথে সহায়ক আরো কিছু ছবি।




সুত্রঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৮
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×