বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রায় শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি। নস্টালজিক হয়ে কাটাই সারাদিন।হলের প্রতিটা ইট যেন কথা বলে-লনের ঘাস,ফুল, জানালার পাশে পুকুর -সবই আমার কাছে এই শেষবেলায় কেমন জানি খুব গুরুত্বপুর্ণ হয়ে উঠেছে আমার কাছে।সবকিছুই যেন আমার দিকে তাঁকিয়ে হাসে আর জিজ্ঞেস করে--'কী কি নিয়ে যাচ্ছো তুমি এখান থেকে?'আমি নিরুত্তর থাকি।
নিজেও সারাদিন নিজেকে প্রশ্ন করি--চাওয়া পাওয়ার সমীকরণ মেলাই।মেলেনা।অথচ বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে কত জটিল সমীকরণ আর বিক্রিয়ার হিসেব মিলিয়ে ফেলেছি অনায়াসে।
কাল রাতটা ছিল সেই হিসেবের খাতায় যুক্ত হওয়া আরেক হিসেব না মেলা সমীকরণের রাত।
গতকাল রাত ১১টা।
সারাদিনের ক্লান্তি শেষে রুম এ ফিরে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি।রুম মেট তখনো ফিরেনি।হটাৎ দরজায় সশব্দ ধাক্কা-- রুমে কে আছেন,দরজা খুলুন।
বুকের ভেতর আচমকা পাওয়া ভয় নিয়ে খুললাম।দেখলাম ৬-৭ জন পুলিশ আমার দরজায় দাঁড়িয়ে।একজন বললো আমরা তল্লাসি চালাবো।বলা মাত্রই বাকিরা আমাকে পেছনে ঠেলে রুমে ঢুকে শুরু করলো সব চেক করা।লকার-খাটের নীচ, টেবিলের ড্রয়ার--সব তছনছ করে কিছু না পেয়ে অবশেষে জিজ্ঞেস করলো--দেশের বাড়ি কোথায়?ঘৃণায় আর ক্ষোভে উত্তর দিতে ইচ্ছে হয়নি।ভাবলাম তোদের হতাশ করার জন্য আমার করুণা হচ্ছে।
এটা ছিলো দ্বিতীয় বারের মতো হল রেইড এর অভিজ্ঞতা।
ফোন দিলাম অন্য রুমের এক বন্ধু কে।সে বললো "কেন তুই জানিস না আজ যে হলে রেইড হবে?আমরা তো সেই ৯টায় জেনে গেছি?"
নিজের অজ্ঞতায় এভাবে ভয় পেয়ে গেছি।আর ভাবছি-ছুটে গিয়ে আমার পরিচিত এই সব ইট ঘাস ফুল আর রুমের চারদিকে তল্লাসির শিকার হওয়া আমার এলোমেলো গল্প-কবিতার বই গুলো কে বলি-- আমায় ক্ষমা করো, আমি তোমাদের রক্ষা করতে পারিনি বলে।কীভাবে পারি বলো-যখন বিশ্ববিদ্যালয় নামক সবোর্চ্চ বিদ্যাপিঠে এসেও আমাকে মুখোমুখি হতে হয় এইসব রক্তচক্ষুর,এই সব লোক দেখানো তল্লাসির।যখন আমার ক্যম্পাসের সবুজ ঘাস মাড়িয়ে হেঁটে বেড়ায় এইসব রক্তচক্ষু যারা নাকি আমাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত?আমরা চোর্যবৃত্তির জন্য এখানে এসেছি না পড়াশুনার জন্য?আমরাই দায়ী এসবের জন্য।আমরাই...
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যখন পড়াশুনা ছেড়ে লেজুরবৃত্তি-চাঁদাবাজি-হলের সিট নিয়ে মারামারি করে তখন তাদের পাহারা দেয়াটা সরকারের দায়িত্ব বটে।তাও আবার লোক দেখানো পাহারা।সর্ষের ভেতরে ভূত তাড়াবে কে?
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১:০৪