ইউএসএ তে আসার পর কেউ বিশেষ করে বায়োলজির গবেষনায় আছেন এমন কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে তোমাদের দেশে বিজ্ঞানের গবেষনার কী অবস্থা, কেমন গবেষনা হয় ওখানে ইত্যাদি ইত্যাদি… আমি শুরু করি সাধারণত কিছুটা এক্সকিউজ দিয়ে আর শেষ করি কুমিরের সেই খাজ কাটা খাজ কাটা গল্পের মত করে। বলি- দ্যাখো আমরা এখনও ডেভেলপিং ফেজে আছি এবং একটা সোস্যাল রিফর্মের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি তাই বলার মত সেরকম কোন এচিভম্যান্ট নেই। এটুকু বলেই ঝটপট রেফারেন্স টানতাম সাম্প্রতিক কিছু অর্জনের দিকে এবং শুরু করতাম ড. মাকসুদুল আলম স্যার কে দিয়েই। বলতাম তুমি কি জানো আমরা পাটের জেনোম সিকোয়েন্স করে ফেলেছি এবং সেটার প্যাটেন্ট অর্জনের পথে! বলতাম জানো আমরা ম্যাক্রোফেমিনার (পাটের একধরনের ছত্রাক) জেনোমও সিকোয়েন্স করে ফেলেছি। সেই সাথে বলতাম আমাদের দেশের খাবারের চাহিদা মেটাতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংবা গবেষনা প্রতিষ্ঠান গুলোর উদ্ভাবিত বিভিন্ন জাতের ধান কিংবা শষ্য-ফলাদির কথা। ওরা অনেকেই শুনে অবাক হয়—বলে আমি শুধু তোমাদের পলিটিক্যাল আনরেষ্টের খবর পড়ি মিডিয়াতে। তখন ক্ষনিকের জন্য মুখ লুকিয়ে আবার শুরু করি—তুমি জেনে খুশি হবে আমার দেশ গবেষনায় খুব বেশি অর্থ দেয়ার সামর্থ নেই বলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান পড়ায় বিনে পয়সায় আর সেই সব স্কুল থেকে পড়াশুনা করে এসে ছেলেমেয়েরা তোমাদের দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় যেমন হার্ভাড, এমআইটি, জন্স হপকিন্স কিংবা গবেষনা প্রতিষ্ঠান যেমন এনআইএইচ, ওকরিজ, স্ক্রিপ্স রিসার্চ ইনষ্টিটিউটে গবেষনা করছে—ইতিমধ্যে কেউ কেউ তাঁদের আবিস্কার প্যাটেন্ট ও করে ফেলেছে। নিজের দেশের ঢোল বাজাতে গিয়ে কোর্স ওয়ার্কে যদি কোন পেপার প্রেজেন্টেশন থাকে তাহলে আমি আমাদের দেশের কারো পেপার প্রেজেন্ট করতাম এবং অনেকেই জেনে অবাক হবেন আমাদের দেশের মানুষজনও এখন প্রায়শই ন্যাচার কিংবা সায়েন্সে পাব্লিশ করছে নিজেদের গবেষনা। বিশ্বাস না হলে আপনার জ্ঞাতার্থে--- গত অগাষ্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসান ভাইয়ের ( Nur A. Hasan ) গবেষনা প্রকাশিত হয়েছে সায়েন্সে আর মাত্র গত সপ্তাহে আমার কলেজের বন্ধু আসিফের (Asif Islam Khan ) কাজ পাব্লিশ হয়েছে ন্যাচার জার্নালে। কী ভাবছেন? সব কাজতো এই দেশের মাটিতে করা। তাহলেও আপনার জ্ঞাতার্থে- আমার ক্লাশমেট লিঙ্কন ( Faizule Hasan ) এর গবেষনা যা বছর দুয়েক আগে প্রকাশিত হয়েছিল ন্যাচার এ এবং তার গবেষনার কাজ হয়েছে দেশে বসেই আর পাট কিংবা ম্যাক্রোফেমিনার কাজটাও দেশের মাটি থেকেই। এমন বেশ কিছু উদাহরন আজকাল দিতে পারি। কিন্তু আজ থেকে একটা উদাহরন দিতে বেশ কষ্ট লাগবে--- ড মাকসুদুল আলম স্যার আমাকে দেশ কে নিয়ে অন্যদের সামনে গর্ব করার মত আরো অনেক কিছু দিতে পারতেন--- জীবনের ঘড়ি থমকে দিলেন সেই অগ্রযাত্রা...
ভালো থাকুন স্যার আপনি।। শান্তিতে ঘুমোন... আমাদের ঋণি করে চলে গেলেন ওপারে... ভাগ্যিস দেশে আপনাকে বিশ্বাস করা হয়েছিলো...
"নিজের জীবন, প্রাণের জীবন"
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:০১