somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুখী ( গল্প )

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৩:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত তিনটা। এখন চারদিক শান্ত। যদিও একটু আগে এক হুলুস্থুল ভাব ছিল ঘরে। অনেক অতিথি আসছিলেন। রেডিসন থেকে বিশাল কেক আনা হয়েছে। অতিথিরা আসার সময় গিফট এনেছেন অনেক। সুন্দর র‌্যাপিং পেপারে মোড়ানো গিফটগুলো বড় টেবিলটার উপর রাখা। জন্মদিনে হাসিখুশী থাকা নিয়ম। অরিনও হাসিখুশী থেকেছে। তবে একটু পর পর মোবাইল চেক করছে। নতুন একটা মেসেজ আসার সাথে সাথে দেখছে। কিন্তু না যার এস এম এস এর জন্য এত অপেক্ষা তার নম্বর থেকে কোন এস এম এস নাই। ইচ্ছে হয় কাঁদতে। কিন্তু এতজন এসেছে উইশ করতে তাদের সামনে কাঁদা যাবে না। হাসিমুখে থাকতে হবে। যদিও মনে মনে বিশ্বাস অবশ্যই আসবে।

বড় ভাবী সবার উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের অরিন এখন বড় হয়ে গেছে। অবিবাহিত অবস্থায় আমাদের সাথে তার সর্বশেষ জন্মদিন আজ। এটা আমাদের জন্য অনেক স্মরণীয়। তাই আপনারা অনেক দোয়া করবেন ওর জন্য। ও যেন ভালবাসায় থাকে সব সময়।

মেহমানদের অনেকে জানে আগামী তিন মাস পর অরিনের বিয়ে। আবার কেউ কেউ জানে না। যারা জানে না তারা পাশের জনের কাছ থেকে জানতে চায়। কিছু তরুণও আছে। তাদের কেউ কেউ আশাহত। এত সুন্দর একটা মেয়েকে আর ফলো করতে পারবে না বলে। কারো কারো মনে প্রশ্ন উঁকি দিয়ে যায় এই সুন্দর মেয়েগুলোর যে কেন এত আগে বিয়ে হয়। উইশ জানায় নতুন জীবন যেন অনেক সুন্দর হয়।

সবাই চলে গেছে। ছোট ভাই পল্লব গিফট প্যাকেটগুলো খুলছে। ক্যান্ডি বক্স পেলে সেগুলো আলাদা করে রাখছে। ক্যান্ডি ওর অনেক প্রিয়।

-আপু এই চকলেটটা হেভি মজার। জিহ্বা থেকে যেন সরেই না। কেমন নরম। প্রথমে ঝাল মনে হয় আবার কিছুক্ষণ পর মনে হয় মিস্টি। অন্যরকম স্বাদ। নেয় একটা খেয়ে দেখ।
-তুই খা। আমার খেতে ইচ্ছা করছে না।
-কেন? খাবি না কেন? মজার তো। খেয়ে দেখ। দেখবি আরো খুঁজবি। তবে লাভ নেই। আমি এই বক্সের চকলেট গুলো আমার ড্রয়ারে ঢুকিয়ে রাখছি। একটার বেশি কাউকে দেবো না।
-ঠিক আছে দিতে হবে না একটাও। তুই এখান থেকে যা।

পল্লব অবাক হয়। আপু এভাবে বলছে কেন? আপুর মন খারাপ? তাও তো হওয়ার কথা না একটু আগে সবার সাথে হাসি খুশী কথা বলল। এখন আবার কি হলো। জন্মদিনে কেউ এভাবে কথা বলে?

পল্লব জিজ্ঞেস করে, আপু তোর মন খারাপ?
-নাহ। মন খারাপ না। রাত অনেক হয়েছে তুই ঘুমাতে যা।
-নাহ, কোন একটা সমস্যা হয়েছে নিশ্চয়। আমার মনে হয় তোর মন খারাপ। সৈকত ভাইয়ার সাথে ঝগড়া করেছিস আবার তাই না? তোকে একটা জোক্স বলি। আজ আমাদের বাংলা ম্যম বলছে। শুনলে হাসতে হাসতে মরবি।
-দরকার নাই এত পাকামো করার তুই যা তো। আমার মাথা ধরেছে। কোন জোক্স শুনবো না। তুই যা।

এরপর্ও যাচ্ছে না দেখে অরিন তাড়া দেয়। তুই এখনো গেলি না? নাহলে কিন্তু আম্মুকে ডাকবো।

এত রাতেও জেগে আছে জানলে মা অনেক বকা দিবে।

পল্লব চলে যায়। যেতে যেতে বলে, ঠিক আছে আমি যাচ্ছি। তবে যাওয়ার আগে বলে যাই তুই দুইটা জিনিষ মিস করলি। একটা হচ্ছে মজার চকলেট। আরেকটা হচ্ছে হাসির জোক্স। পরে আফসোস করবি কিন্তু এই বলে গেলাম।

অরিন দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়। বেশ বড় বারান্দাটা। গ্রিল দেওয়া। বারান্দায় পাখির খাঁচা আছে একটা। পাখিগুলো দিকে তাকায় অরিন। এখনো ঘুমায় নি পাখি দুটো। ওর দিকে যেন স্থির চোখে তাকিয়ে আছে। দেখার মধ্যে কেমন একটা দুঃখী দুঃখী ভাব। আচ্ছা পাখিরা কি বুঝতে পারে মানুষের মন খারাপের কথা। পাখিগুলো হয়ত টের পেয়েছে। নাহলে এভাবে দুঃখী দুঃখী ভাবে তাকাচ্ছে কেন?

এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার মোবাইল অফ করে দিয়েছে। যাতে কল করলেও না পায়। তবে অফ করে এক নাগাড়ে রাখতে পারে না। প্রতিবার মনে হয় এবার নিশ্চয় আসছে। মাঝে মাঝে খুলে দেখেছে মেসেজ এসেছে কিনা। মোবাইল খুললে মেসেজ আসে। অনেক সুন্দর সুন্দর উইশ। কিন্তু যার কাছ থেকে আসার জন্য এত আকুতি তার মেসেজ আসার কোন নাম নেই। রাগ করে আবার বন্ধ করে দেয়।

অনেক খারাপ লাগছে। প্রযুক্তি মানুষকে উইশ করার ব্যাপার গুলো অনেক সহজ করে দিয়েছে। ফেসবুকে ঢুকলেই ইভেন্টে দেখা যায় এডে থাকা কার জন্মদিন। তা দেখে সহজে উইশ করা যায়। মনে পর্যন্ত রাখতে হয় না। আগে গ্রাফিক্স করে সুন্দর কার্ড বানাতে হতো। এখন নেটে কি সুন্দর সুন্দর উইশ কার্ড রেডিমেড পাওয়া যায়। সেগুলো দিয়ে দিলেই হলো। ফেসবুকে দেখেছে নাহ সে কোন উইশ করে নি।

আচ্ছা সৈকত কি ভুলে গেছে। জন্মদিনের কথা ভুলে গেল? নাহলে উইশ করছে না কেন? আর কতক্ষণ অপেক্ষা করলে উইশ আসবে? আগে প্রতি জন্মদিনে কত্ত আয়োজন করত। এক একটা সারপ্রাইজ দিত। এবার একটা মেসেজ দিয়ে উইশ করতে পারল না? বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে এজন্যই?মানুষ এত বদলে যায়?
এইধরণের অনেক প্রশ্ন মনের মাঝে ভর করে।

আরো কত বদল অপেক্ষা করছে কে জানে। নিজেকে অনেক অসহায় মনে হয় অরিনের।

আকাশের দিকে তাকায় অরিন। তারাগুলো জ্বলছে। চাঁদটা স্থির দাঁড়িয়ে আছে। আর ভাল লাগে না। প্রচন্ড কষ্ট হয় অরিনের। আবার রেড বাটন টিপে ধরে মোবাইলটা অন করে। নাহ মেসেজ আসে নাই। মোবাইল থেকে ফেসবুকে ঢুকে। নাহ সেখানেও কিছু বলে নাই। মোবাইলটা অফ করে দেয়। অনেক ভারী মনে হয় স্লিম মোবাইলটা। রাস্তার ঐপারে একটা মজা পুকুর আছে। দিনের বেলায় বস্তির ছেলেরা সেখানে সাঁতার কাটে। পানিগুলো নোংরা। কিন্তু ছেলেগুলোর দুরন্তপনা দেখতে ভালই লাগে। মোবাইলটা ছুড়ে মারে সে মজা পুকুরে। ঝপ করে শব্দ হয়। রাতের নিস্তব্ধতায় শব্দ ভেসে আসে। এতদূর থেকে বুঝা যায় না মোবাইলটা ভাসছে না পুকুরে ডুবে গেছে।

সবাই ঘুমে। মাঝে মাঝে হুইসেল শোনা যায় নাইট গার্ডের। দুই একটা বেওয়ারিশ কুকুরের গর্জন। হঠাৎ করে গাড়ি ছুটে যায় রাস্তাটায়। রাতের নিস্তব্ধতায় গাড়ির ইঞ্জিনের আওয়াজ অনেক বেশি মনে হয়। ঘুম হয় না। নতুন আরেকটি দিন আসছে। কিছুক্ষণ পর সকাল হবে। আকাশ থেকে তারা, চাঁদ বিদায় নেবে। ঠিক বিদায় নেবে না ওরা থাকবে। তবে সূর্য ওদের কে অদৃশ্য করে দিবে।

নতুন দিনটি জীবনের নতুন বছরের প্রথম দিন। কিন্তু এক রাশ হতাশা নিয়ে এই দিনটি শুরু হতে যাচ্ছে। এভাবে পারল জন্মদিনের কথা ভুলে যেতে? একটা মানুষের জন্মদিনের কথা মনে রাখা এত কঠিন?

বারান্দায় চেয়ারে বসে থাকে অরিন। পাখিগুলো ঘুমিয়ে গেছে। পাখিগুলো দেখে অনেক মায়া হয়। তবে মনে হয় একটা দিক দিয়ে পাখিগুলো অনেক সুখে আছে। প্রিয় কারো উইশের জন্য ওদের এভাবে তীব্র অপেক্ষা নিয়ে বসে থাকতে হয় না।

..................................০২..............................
সকাল বেলায় কলিংবেল বেজে উঠে। কাজের মেয়ে চিৎকার করে উঠে। আপা দেখে যান কে আইছে।

দরজায় দাঁড়িয়ে সৈকত। ক্লান্ত তা বুঝায় যাচ্ছে। তবে মুখে হাসি। কাজের লোক লাগেজ গুলো ঢুকিয়ে রাখে। সৈকতের একটু লজ্জা লজ্জা লাগে। বাসায় না গিয়ে বিমান বন্দর থেকে সরাসরি এখানে চলে আসায়। রাত বারোটার দিকে দেশে নামার কথা ছিল। কিন্তু আবহাওয়ার সমস্যার কারণে লেট করেছে বিমান। তবে এবার আসার ব্যাপারটা কাউকে বলে আসে নি। প্রিয়জনের জন্মদিনে তার সঙ্গে থাকবে না তা কি হয়?

সৈকত সোফার উপর বসে। তোমার আপু কি ঘুমাচ্ছে?
-নাহ আপু তো বারান্দায় বইস্যা আছে।
-বলো কি? ওতো ঘুমের কুমির। এত সকালে ঘুম থেকে উঠল কেমনে?
আচ্ছা আমি যাচ্ছি।

অরিনের বিশ্বাস হতে চায় না। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয় মুখ। যার উইশের জন্য এতক্ষণ অপেক্ষা সে সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু আসল কিভাবে। দেশের অন্য জায়গা হলে কথা ছিল। অস্টেলিয়া থেকে কিভাবে আসল। কই বলে নাইতো আসবে বলে। স্বপ্ন দেখছে না তো।

স্বপ্ন নাকি বাস্তব তাতে যখন দ্বিধায় অরিন।
তখন ওর কানে কানে এসে সৈকত বলে, হ্যাপি বার্থডে অরি।

অরিনের মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী সে। এরকম সুখ সব সময় থাকবে তো?
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৩:৫২
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×