তালিকায় প্রতিমন্ত্রী, সচিব, পিএসসহ ২২ কর্মকর্তা
দীন ইসলাম: প্রকল্পের সময় ছয় মাস বাড়িয়ে শিক্ষা সফরের নামে বিদেশ যাচ্ছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট আবদুল মান্নান খান, সচিব মুহাম্মদ মহবুব-উর রহমান, প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস) নূরুল ইসলামসহ মন্ত্রণালয় ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)-এর ২২ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। অহেতুক এ সফরের জন্য রাজউকের প্রিপারেশন অব ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান ফর ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান (ড্যাপ) প্রকল্পের প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা সফর খাতের ৬৮ লাখ টাকা থেকে ৬০ লাখ টাকা নেয়া হচ্ছে। গতকাল এ সফরের জন্য রাজউকের হিসাব বিভাগ থেকে ১৫ লাখ ৪১ হাজার ৬৮৭ টাকা অগ্রিম নিয়েছেন ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানের প্রকল্প পরিচালক। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রী ও সচিবসহ ২২ জন কর্মকর্তা চারটি টিমে ভাগ হয়ে আমেরিকা, ফ্রান্স, স্পেন, ইংল্যান্ড, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াতে যাচ্ছেন। আগামীকাল প্রথম দলটি থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ছে। এ জন্য গত ১লা জুলাই সরকারি আদেশ (জিও) জারি করা হয়েছিল। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সহকারী প্রধান গোলাম মোসাদ্দেক স্বাক্ষরিত জিওতে বলা হয়েছে, ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান প্রকল্পের আওতায় একটি দল ১০ দিনের জন্য থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর যাচ্ছে। প্রথম দলে বিদেশ যাওয়ার প্রতীক্ষায় থাকা আট জন কর্মকর্তা হলেনÑ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব শিরিন আখতার, উপ-সচিব মোহসিনা ইয়াছমিন, সহকারী প্রধান গোলাম মোসাদ্দেক, রাজউকের পরিচালক (পরিকল্পনা) ড. মো. জহুরুল হক, পরিচালক (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ) শেখ আবদুল মান্নান, উপ-পরিচালক (নগর পরিকল্পনা) এ কে এম শফিকুর রহমান ও আশরাফ আলী আখন্দ এবং সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদ শাহনেওয়াজ হক। রাজউক সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দলে যারা বিদেশ যাচ্ছেন তাদের মধ্যে তিন জন কর্মকর্তা কোনভাবেই নগর পরিকল্পনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন। শুধু সরকারি টাকা খরচ করে সফর করতেই তারা বিদেশ যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এর আগে তিন স্তরের ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান (ডিএমডি’র) প্রথম দু’ স্তর স্ট্রাকচার প্ল্যান ও আরবান এরিয়া প্ল্যানের কাজ ১৯৯৫ সালেই শেষ হয়। ১৯৯৭ সালে তা গেজেট আকারে প্রকাশিতও হয়। এরপর তৃতীয় স্তরের কাজ গত ১২ বছরেও শেষ হয়নি। বিদেশ যেতে এ প্রকল্পের মেয়াদ দফায় দফায় বাড়ানো হয়। ওদিকে আগামী সপ্তাহেই গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট আবদুল মান্নান খানের নেতৃত্বে দ্বিতীয় দলটি আমেরিকা যাচ্ছে। এ দলে রয়েছেন রাজউকের সদস্য (অর্থ) আবু বক্কার সিকদার ও প্রতিমন্ত্রীর পিএস মো. নূরুল ইসলাম। অভিযোগ রয়েছে, আর্থিক বিষয় ম্যানেজ করতেই রাজউকের সদস্যকে (অর্থ) এ দলে ঢোকানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ দুই টিমের পর ফ্রান্স, স্পেন ও ইংল্যান্ড যাবেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মহবুব-উর রহমান, রাজউকের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নূরুল হুদা ও মন্ত্রণালয়ের উপ-প্রধান। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গণপূর্ত সচিব তার স্ত্রীকে এ তিন দেশে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অবশ্য তার সফরের ব্যয় তিনি বহন করবেন। এরপরই সর্বশেষ দল হিসেবে ১০ দিনের জন্য মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর যাওয়ার কথা রয়েছে আট সদস্যের দলের। এ দলে রয়েছেন রাজউকের সদস্য (পরিকল্পনা) এওয়াইএম গোলাম কিবরিয়া, সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, উপ-পরিচালক (নগর পরিকল্পনা) এমএ কবির মিয়া, উপ-পরিচালক (নগর পরিকল্পনা) মো. সিরাজুল ইসলাম, সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদ মো. মাহমুদুল হক ও হাসীবুল কবীর ও মন্ত্রণালয়ের দুই জন প্রতিনিধির। অভিযোগ রয়েছে, রাজউক ও মন্ত্রণালয়ের একটি সিন্ডিকেট তাদের নিজেদের সুবিধার জন্য ড্যাপ প্রকল্পের সময় বারবার বাড়িয়ে যাচ্ছে। এনিয়ে চতুর্থ দফা সময় বাড়ানো হয়েছে। অনেক পরে তৃতীয় স্তর (৫৯০ বর্গমাইল এলাকায়) ড্যাপের কাজ শুরু হয় ২০০৪ সালের আগস্টে। এরপর দুই বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের কাজ ২০০৬ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা। সর্বশেষ এ বছরের জানুয়ারি মাসে জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। এরপর আবারও বিদেশ যাওয়ার জন্য এ প্রকল্পের মেয়াদ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এর আগে সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব এএসএম রশিদুল হাই, যুগ্ম-সচিব আখতার আহমেদ, রাজউকের চেয়ারম্যান কে এম হারুন ও বর্তমান সদস্য (পরিকল্পনা) এওয়াইএম গোলাম কিবরিয়া কয়েক দফায় আমেরিকা, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন। তাই এবারের সফর নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
বিদেশ যাত্রার টাকা নিয়ে রাজউকে নানা নাটক
বিদেশ যাত্রার টাকা তোলা নিয়ে রাজউকে গত দুই দিনে নানা নাটক হয়েছে। কে দায়িত্ব নিয়ে টাকা ওঠাবেনÑ এ নিয়ে সারা দিনই পার হয়ে যায়। এজন্য চেয়ারম্যানকে দুই দফা অনুমোদন দিতে হয়েছে। গত ১৩ই জুলাই রাজউকের চেয়ারম্যান বিদেশ যাত্রার অনুমোদনের ফাইলে টাকা তোলার জন্য উপ-পরিচালক (নগর পরিকল্পনা) একেএম শফিকুর রহমানকে ক্ষমতা দেন। এজন্য ওই দিনই একটি চিঠি হিসাব বিভাগের উপ-পরিচালকের কাছে দেন উপ-পরিচালক (নগর পরিকল্পনা)। ওই চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ড্যাপ প্রকল্পের আওতায় ইউরোপের তিনটি দেশ এবং এশিয়ার তিনটি দেশ সফরের জন্য ভ্রমণ ব্যয়, দৈনিক ভাতা, ইত্যাদি ভাতা বাবদ ২৬ লাখ ৫০ হাজার ৮৯৩ টাকা প্রয়োজন। এতে বলা হয়, ড্যাপ প্রকল্পের আওতায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম ফ্রান্স, স্পেন ও ইংল্যান্ড সফর করবে। এছাড়া, মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিবের (উন্নয়ন) নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি টিম থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর সফর করবে। এ ভ্রমণের জন্য বিমান ভাড়া, দৈনিক ভাতা, ট্রানজিট ভাতা, টার্মিনাল ভাতা, ট্রেন ভাড়া ইত্যাদি বাবদ ২৬ লাখ ৫০ হাজার ৮৯৩ টাকা উপ-পরিচালককে (নগর পরিকল্পনা) অগ্রিম দেয়ার জন্য চেয়ারম্যান সদয় অনুমোদন দিয়েছেন। এজন্য একটি কন্ট্রিজেন্সি বিল তৈরি করে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পাঠানো হলো। নিয়মমতো বিল তৈরি করে না পাঠানোর কারণে ফেরত পাঠায় হিসাব বিভাগ। এছাড়া, সংবাদ শুনে ড্যাপ প্রকল্পের পরিচালক তপন কুমার নাথ ক্ষেপে যান। তিনি এ সম্পর্কে উপ- পরিচালকের (নগর পরিকল্পনা) কাছে ব্যাখ্যা দাবি করেন। এরপর বিকালে নিজে স্বাক্ষর করে একটি চিঠি রাজউকের হিসাব বিভাগে পাঠান প্রকল্প পরিচালক। ওই চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ড্যাপ প্রকল্পের আওতায় আট সদস্যের এশিয়ান টিমের জন্য ১৫ লাখ ৪১ হাজার ৬৮৭ টাকা অগ্রিম হিসেবে প্রকল্প পরিচালকের বরাবরে পাঠানোর জন্য একটি কন্টিনজেন্সি বিল তৈরি করে পাঠানো হলো। এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের অনুমোদন রয়েছে। গতকাল এ বিলটি তোলা হয়েছে। এ অবস্থায় আজ প্রথম টিমের বিদেশ যাত্রায় কোন বাধা নেই।
মানব জমিন। বৃহস্পতিবার,১৬ জুলাই,২০০৯
>> খবরটা পড়ে দিন বদলের মর্ম বাণী বুঝার চেষ্টা করেছি পারি নি তাই শেয়ার করলাম।