somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপুর সংসার ও আমার উপন্যাস

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বই মেলার জন্য লেখা উপন্যাসে ডজন খানেক বানান ভুল বের করার পর প্রকাশককে জানালাম। প্রকাশক বললেন ভুল বানানের সঠিক কি হবে তা লিখে দিতে । জানালাম আমার এখানে কাগজ কলম না থাকায় তা সম্ভব না। প্রকাশক কি ভাবলেন জানি না। তবে ফেসবুক মেসেন্জারে মেসেজটা লেখার পর নিজেরই মনে হলো ব্যাপারটা অদ্ভুত। কাগজ কলম ছাড়া লেখা যায় নাকি ? কাগজ কলম থাকলেও যে খুব একটা সুবিধা হতো তা না। ভুল বানান গুলুর সঠিক কি হবে তা আমারও জানা নেই। শুধু মনে হয়েছে ভুল। যাই হোক। এযুগের লেখকদের অবস্থা কিছুটা এরকম হতেই পারে। গুগল এ ফ্রি অনলাইন বাংলা টাইপ করলেই অনেক কিছু পাওয়া যায়। কাগজ কলম ছাড়াই লিখে ফেলা যায় গোটা একটা উপন্যাস।

উপন্যাস লিখতে গিয়েও অনেক বিপত্তি। মনের মাঝে সত্যজিৎ এর অপুর সংসার। আর চোখের সামনে নেটফ্লিক্স। দুইয়ে মিলিয়ে কিছু একটা লিখবো চিন্তা ছিল। কিন্তু কোনো ভাবেই অপুর সংসারে নেটফ্লিক্সকে আঁটাতে পারলাম না। অনেক কষ্ট করে কিছু একটা লিখে পড়তে দিলাম সহধর্মিণীকে। সহধর্মিনী সহজে আমার প্রশংসা করে না। তাই জানতে চাইলাম কেমন হয়েছে। অনেকক্ষন পর বললো কেমন যেন হুমায়ন আহমেদ এর হিমুর মতো মনে হচ্ছে। মাথায় অপুর সংসার আর চোখের সামনে নেটফ্লিক্স খুলে লেখা গল্প শেষমেশ হুমায়ন আহমেদ এর কপি হয়ে গেলো। এই রকম বিপত্তির জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। কি আর করা। এতো কষ্ট করে লেখা গল্পটা প্রকাশ না করে অপুর মতো পাহাড় থেকে ছিটিয়ে ফেলার ইচ্ছে হলো না। আর উপায়ও ছিল না। পুরোটাই ডিজিটাল ফরমেট এ লেখা। কাগজ কলম ছাড়া।

পাঠানো হলো অনেক রকম প্রকাশককে। কেউই তেমন পাত্তা দিলো না। না দেবারই কথা। কারো এতো সময় নেই ঘন্টা খানেক সময় বের করে আমার মতো কারো লেখা পড়ার। তবে বই মেলার সুবিধা হলো এই সময় অনেক প্রকাশক থাকেন যারা আমার মতো নতুনদের কিছুটা সুযোগ দিয়ে থাকেন। শীতকালীন অথিতি পাখির মতো এই সময়টাতে কিছু অতিথি লেখক আসেন যারা বছরে একটি বা দুইটি বই বের করেন নিজের টাকায়। তাও শুধু বই মেলার গন্ডির মাঝে। আমিও তাদের একজন।

অনেক কষ্টে একজন প্রকাশক রাজি হলেন গল্পটা ছাপাতে । তবে বিনিময় হার বেশ চড়া। আমার স্ত্রীকে জানালাম। বললো কষ্ট করে হলেও বের করে ফেলো। বই মেলা বলে কথা। অপুর সংসারের কথা মনে পড়লো। বছরের প্রথম দিকটায় আমার দুই মেয়ের স্কুলের খরচ। ব্যাংক এর লোনের টাকা সব মিলিয়ে প্রকাশকের বিনিময় হার মেটানো বেশ দায় হবে। ভাবতে ভাবতে নিজেকে অপু মনে হলো। যাক অন্তত অভাবের সময়টাতে সত্যজিৎ বাবুকে বুজতে পারলাম। তবে আমার আপেক্ষিক অভাব আর অপুর অভাবের বেশ ফারাক। আমার অভাবের সময় নেটফ্লিক্স আছে। অন্তত অপুর সংসারে এই জাতীয় সমস্যা ছিল না। অপুর কোন ব্যাংক লোনের সমস্যাও ছিল বলে মনে পড়ে না।

উপন্যাস জাতীয় লেখার সমস্যা হলো চরিত্রায়ন। একজন নায়ক থাকবে সাথে থাকবে একজন নায়িকা আর আসে পাশে কিছু মানুষ। হয়ে গেলো ফর্মুলা উপন্যাস। আমিও তাই করেছি। ফলাফল প্রিয় লেখক হুমায়ন আহমেদ এর মতো কিছু একটা। কোনো ভাবেই বের হতে পারছিলাম না প্রিয় লেখকের লেখনী থেকে। শেষমেশ লেখাটি উৎসর্গ করা হলো মিসির আলী , হিমু আর রুপাকে। আমার পক্ষে এই তিন চরিত্রের বাইরে বের হওয়া অসম্ভব একটা ব্যাপার ছিল। নেটফ্লিক্স বা সত্যজিতের অপু কেউই খুব একটা সুবিধা করতে পারলো না উৎসর্গের সময়টাতে। না পারারই কথা।

শেষমেশ গেল মাসে কিছু বিনিময় অবলোকন করার পর গল্পটা একটা পাণ্ডুলিপিতে রূপ নিলো। এবার সমস্যা বইয়ের প্রচ্ছদ নিয়ে। প্রকাশক একটা প্রচ্ছদ শিল্পীকে দিয়ে প্রচ্ছদ করিয়ে নিলেন। আমাকে পাঠালেন। সব কিছুই ঠিক ছিল। তবে আবার কেমন যেন হিমুর মতো মনে হতে লাগলো। পার্থক্য শুধু হলুদ পাঞ্জাবির পরিবর্তে নীল রঙের শার্ট। প্রকাশককে বললাম প্রচ্ছদে একটা রেঞ্জ রোভার গাড়ি এঁকে দেয়া যায় কিনা। ভদ্রলোক কি ভাবলেন জানি না। কিছু বললেন না। তবে নীল রঙের শার্ট পড়া চরিত্রের সঙ্গে একটা রেঞ্জ রোভার গাড়ি যেতেই পারে। অত খারাপ লাগতো না। যাই হোক সব কিছু লেখকের ইচ্ছেতে হয় না।

আমি এখন প্রায় নিশ্চিত আজকে যদি অপুর সংসার থাকতো তবে তার ঘরে নেটফ্লিক্স থাকতো। থাকাটাই স্বাভাবিক। আর অপুর লেখা উপন্যাস থাকতো ল্যাপটপে। আর যদি হুমায়ন আহমেদ স্যার বেঁচে থাকতেন তবে হিমুর গায়ে একবার হলেও নীল রঙের কর্পোরেট শার্ট ঝুলাতেন। আজকে যে রকম আমি নিজেকে অপুর সংসারের সাথে মিলাতে পারছি না। যদিও সংসারের তারল্য সংকট প্রায় একই। ঠিক এই রকম অনেক চরিত্র এক সময় হারিয়ে যাবে সময়ের সাথে। হাজার চেষ্টা করলেও টিকিয়ে রাখা যাবে না। কারণ পাঠকরা কোনো ভাবেই বুজতে পারবে না কেন অপুর বাসায় নেটফ্লিক্স ছিল না। অথবা ভাবতে পারে হিমুর হয়তো একটাই হলুদ রঙের পাঞ্জাবি ছিল।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ২:৪০
৯টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×