somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় মৃত ও ওই সময়ের শিশুরা

২৮ শে মার্চ, ২০১০ দুপুর ১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী সম্ভাব্য অপরাধীদের মধ্যে রয়েছেন মৃতব্যক্তি ও ’৭১-এর শিশুরা। সম্প্রতি প্রকাশিত ৩৬ জনের তালিকায় ৪ থেকে ৮ বছর বয়সের তিনজন রয়েছেন। তালিকায় এএনএম ইউসুফসহ কয়েকজন মৃতব্যক্তির নাম থাকলেও বাদ দেয়া হয়েছে সাবেক মন্ত্রী ও দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা এমএ মান্নানের নাম।
তালিকায় অন্তর্ভুক্ত জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর আমির মোঃ রফিকুল ইসলাম খান ১৯৬৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার নওকৈড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মোঃ খোরশেদ আলম খান। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর দিন তার বয়স ছিল ৪ বছর ৬ মাস। ১৯৯২ সালে তিনি এমএ পাস করেন। ওই সময়েই ছাত্রশিবিরের সভাপতির পদ থেকে অবসর নেয়ার পর তিনি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। সরকারের কাছে সংরক্ষিত যুদ্ধাপরাধের তালিকায় তার নাম রয়েছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে সিরাজগঞ্জে তিনি হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও জোর করে মুক্তিযোদ্ধাসহ নিরীহ মানুষকে দেশ থেকে বের করে দিয়ে অবৈধভাবে তাদের ঘরবাড়ি দখলসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তার বিচার হবে। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি (ঘাদানিক), সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য তথ্য সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান ফেক্টস ফাইন্ডিংসহ বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার দেয়া তালিকার আলোকে এরই মধ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ৩৬ জনের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলোও তাদের নাম প্রকাশ করেছে। এ তালিকায় খুলনার জামায়াত নেতা মিয়া গোলাম পরোয়ার ও চট্টগ্রামের মাওলানা সামসুল ইসলামসহ আরও কয়েকজনের নাম রয়েছে। ১৯৭১ সালে যাদের বয়স ছিল সর্বোচ্চ ৮-১০ বছর। আন্তর্জাতিক অপরাধের আওতায় ওই অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে।
যুদ্ধাপরাধীদের এ তালিকা প্রসঙ্গে খোদ আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েই প্রশ্ন উঠেছে। বিচারে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় থাকবে কি-না—এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন তারা। আইন ও বিচার বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকার ইচ্ছা করলে যে কোনো লোককে যে কোনো অপরাধের আওতায় ফেলে বিচার করতে পারে। কিন্তু সেটা নিয়ে দুদিন পরে হলেও প্রশ্ন উঠবে। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে যাদের বয়স ৩ থেকে ৫ বছর ছিল এমন শিশুদের মুক্তিযুদ্ধকালে মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী দেখিয়ে সম্প্রতি প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড অফিসারের চাকরি দেয়া হয়েছে। কাজেই ৩ বছরের শিশু যদি মুক্তিযোদ্ধা হতে পারে ৫ বছরের শিশু কেন রাজাকার হতে পারবে না? এখন প্রশ্ন হলো এগুলোর আইনগত ভিত্তি কতটুকু রয়েছে। সবকিছু তো আর রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে হবে না। তিনি বলেন, আমরা তো আর বিচার করব না। বিচার হবে ট্রাইব্যুনালে। আমাদের যেভাবে করতে বলা হচ্ছে আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। সত্য-মিথ্যা ট্রাইব্যুনালেই প্রমাণিত হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের জন্য গত ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ৭ সদস্যের তদন্ত সংস্থাও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তির কাছে অপরাধীদের নাম ও তালিকা চাওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত সংগঠনগুলো সরকারের কাছে তালিকা পেশ শুরু করেছে। এ তালিকা থেকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও পত্রিকায় সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধীদের নামও প্রকাশ করা হচ্ছে। তাদের তালিকায়ই ১৯৭১ সালের শিশু রফিকুল ইসলাম খানকে অন্যতম যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের নামের তালিকায় রফিকুল ইসলামের নাম দেখে তার জন্মস্থান সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়াসহ সর্বস্তরের মানুষ গভীর বিস্ময় প্রকাশ করেন। বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনেও বেশ হাস্যরসের সৃষ্টি করে। সরকার কি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে নাকি বিষয়টি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের নির্মূল করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবে, তা নিয়ে তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
যুদ্ধাপরাধীদের নামের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে রফিকুল ইসলাম খান আমার দেশকে বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার সরকারের মূল লক্ষ্য নয়। তাদের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্তদের নির্মূল করা। সরকার মূলত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চাইছে। এটি এখন অতি বাস্তব কথা হয়ে দাঁড়িয়েছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকলে কিংবা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করলে রাজাকার বা যুদ্ধাপরাধী হয় না। আর কোনো মুক্তিযোদ্ধাও যদি আওয়ামী লীগের অগণতান্ত্রিক রাজনীতির বিরোধিতা করেন, তাহলে তিনিও আওয়ামী লীগের দৃষ্টিতে মুহূর্তের মধ্যে শুধু রাজাকারই নন, যুদ্ধাপরাধী হয়ে যান। তিনি বলেন, আমার বাবা ও চাচাসহ আমাদের পরিবারের সবাই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আমার চাচার ঘরটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের সাব-ক্যাম্প। ওই সময় আমার বয়স ছিল মাত্র সাড়ে ৪ বছর। একটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারে জন্ম নিয়েও এখন জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে আমাকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দেখানো হচ্ছে। কাজেই এটি আর বুঝতে অসুবিধা নেই, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়েই আওয়ামী লীগ জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দেখাচ্ছে। তবে সরকার যত অপচেষ্টাই করুক, অতীতের মতো সত্য প্রতিষ্ঠিত হবেই।
উল্লাপাড়া উপজেলার সলপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, রফিকুল ইসলাম খানকে আমি এ কারণেই চিনি যে, তার বাবা ও চাচাসহ আমরা একত্রে যুদ্ধ করেছি। যুদ্ধের মাত্র কয়েক বছর আগে তার জন্ম হয়েছে। যুদ্ধের সময় যে শিশুটি ভালোভাবে হাঁটতেই শেখেনি তাকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর কারণটা আমার বুঝে আসছে না। উল্লাপাড়ার বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ইসা খান বলেন, হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া এবং জোরপূর্ব মানুষকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়ে তাদের ঘরবাড়ি দখলের অপরাধে যদি ৪ বছরের শিশুকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে বিচার করা হয়, তাহলে বুঝতে হবে দেশে আইনের শাসন নেই।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×