আমার এক বন্ধু ফোন দিয়ে বললো, দোস্ত পাথরঘাটা কই পড়ছে ? জানোস নাকি ?
আমি বললাম, বরিশাল কিংবা চট্টগ্রামে হতে পারে ?
আমার বন্ধুটা হেসে হেসে বললো,আমার নামে পাথরঘাটা থানায় চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে । ৫৭ লক্ষ টাকার চাঁদাবাজি করেছি । জীবনে গেলাম না ওখানে । যাইহোক তুই কি ঈদ পরে ফ্রি থাকবি ?
আমি বললাম, তোর যদি খুব প্রয়োজন হয় তাহলে ফ্রি না থাকলেও ফ্রি থাকবো ।
সে বললো, ধন্যবাদ দোস্ত । আমি ঠিক করেছি পাথরঘাটায় যাবো । তুই যাবি আমার সাথে ?
আমি বললাম, যাবো । কিন্তু কেন যাবি ?
ও হেসে হেসে বললো, জীবনে প্রথম একটা মামলা খাইলাম । আর ঐ মামলার জায়গাটা চিনতে হবে না ?
আমি আর কিছুক্ষণ কথা বলার পর ফোন রেখে দিলাম । আর অবাক হলাম ওর মতো ছেলেকে কেন মিথ্যা মামলায় জড়ানো হবে ? ওর একটাই দোষ ওর বাবা এক সাবেক এমপির পিএস ছিলেন । কিন্তু ওর বাবার নামে বাংলাদেশের একটা থানায় তো মামলা দূরের কথা একটা জিডি পর্যন্ত নেই । সেই নিরীহ মানুষকে যথারীতি সাজানো মিথ্যা অস্ত্র মামলার আসামি করা হলো । তাও নাটকীয় কায়দায় । ওর বাবাকে গ্রেফতারের একদিন পর উনার বাসায় আনা হয় । তারপর যৌথবাহিনীর দুইজন লোক তল্লাশির নামে বাসায় ঢুকে । বাসায় কেউ ছিল না । তালা ভেঙে ঢুকে । আর উনাকে বাসায় ঢুকতে দেয়নি । তারপর কিছুক্ষণ পর বলা হলো উনার বাসায় অস্ত্র পাওয়া গেছে । মাটির মত মানুষটা কিছু বলতে পারেননি । শুধু হাসলেন । এখন কাশিমপুরে পড়ে আছেন । ভাল আইনজীবীদের উপর নির্দেশ আছে দূর্নীতিবাজদের আইনি সহযোগীতা না করার । আহারে আমার আইনের শাসন । আর আমার যে বন্ধুর নামে চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে তার কাছ থেকে যৌথবাহিনীর সদস্যরা টাকা চায় । যদি টাকা ৫লক্ষ টাকা দেয় তাহলে মামলা তুলে নেয়া হবে । সে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য যায় । কিন্তু তার কাছ থেকে তার এন-৯০ মোবাইল সেট এবং নগদ ৩০হাজার টাকা রেখে দেয় ওরা । পরে যোগাযোগ করবে বলে । যোগাযোগ আর করেনি ওরা । আমার বন্ধুটাও রেডি হয়ে আছে জেলে যাওয়ার জন্য । ২২ বছরের একটা পিচ্চি ছেলে । খুবই মেধাবী ছাত্র । ফ্রেব্রুয়ারীতে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সব কিছু চূড়ান্ত ছিল । কিন্তু ও যাবে না । ও দেখতে চায় । জীবন ওর সাথে কতটুকু খেলতে পারে । আমি অবাক হয়ে বসে আছি ওর সাহস দেখে । ও শুধু একটাই কথা বলে, সর্বশেষ পরিণতি কি মৃত্যু । আমি সেজন্য প্রস্তুত ।
আমার কিছু বলার নেই । রাজনীতিবিদরা দূর্নীতির জন্য যতটুক দায়ী তারচেয়ে বেশি দায়ী আমাদের প্রশাসন । প্রশাসনকে ছাড়া দূর্নীতি সম্ভব ছিল না । আর নিরীহ মানুষকে কেন অযথা হয়রানি করা হচ্ছে ? এটা কেমন আইনের শাসন ?
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১২:২৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




