somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জলস্বপ্ন অথবা চীলেকোঠার গল্প

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অপু অনেক খোজাখুজি করে চীলেকোঠার একটা বাসা ভাড়া পায়। অনেক দিন হলের জীবন,মেসের জীবন কাটিয়ে অবশেষে একটা একান্তই নিজের ভুবন,ভাবতেই খুব ভালো লাগছে। অপু নিজের মত করে ঘর গুছিয়ে নিজেই পুলকিত। খানিকটা ঝক্কি ঝামেলা শেষে নিজের ঘরে নিজের বেডে একটা আরামের ঘুম দেয়।

ঘূম থেকে উঠেই খোলা ছাদটায় চোখ পরতেই মনটা ভালো হয়ে যায়। অপু একটা সিগারেট জালিয়ে ছাদে বের হয়। খোলা আকাশ, সবুজ গাছপালা, এইতো জীবন। পাশের ছাদে একটা বাচ্চা ছেলে খেলা করছে। সাথেই কটা মেয়ে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কাজের মেয়ে। পিচ্চিটা মারাত্মক কিউট, ব্যাট বল নিয়ে সারা ছাদ দৌড়ে বেরাচ্ছে। হঠাৎই বলটা অপুর ছাদে ওর পায়ের কাছে এসে পরে। পিচ্চটা দৌড়েগিয়ে ছাদের পানির টাংকির ওপাশ থেকে একটা মেয়েকে ধরে আনে। শ্যামলা গায়ের রং,সাদা জামা গায়, লম্বাচুল গুলো খোলা পিঠময়,ফ্যাকাশে চোখ। পিচ্চটা মেয়েটাকে টানতে টানতে নিয়ে আসে আর বলে ফুপ্পি ওই লোকটা আমার বল নিয়ে গেছে। অপু তো এই কথা শুনে পুরাই টাশকী খেল,বলে কী এই ছেলে !! অপু কিছুটা লজ্জা পায়। বলটা তুলে পিচ্চিটাকে ইশারা করে বলটা নিতে। তখনই মেয়েটা বলে ওঠে জিহান বাবা যাও বল নিয়ে আস। জিহান না সুচক মাথা নেড়ে বলে তুমি আন ফুপি। মেয়েটা কাজের মেয়েটাকে ইশারা দেয় বলটা নিয়ে আসতে। অপু বলটা মেয়েটার হাতে দেয়। জিহানের ফুু বলে চল বাবা এখন নিচে যাই সন্ধা হয়ে গেছে,না গেলে মা বকবে। ওরা চলে যায়। অপু ছাদে একা একা হাটাহাটি করে ।

সন্ধায় অপু লেপটপ নিয়ে বসে, টুকটাক কাজ,ফেসবুকিং,মসেন্জারে চ্যাট। হঠাৎ ই কারেন্ট চলে যায়। অপু পরে মহা বিপদে। নতুন বাসা ,চারজার লাইটও নেই আবার একটা মোম বাতি ও নেই। গরমে দম আটক আসছে । অপু জানালা টা খুলে পরদা তলে দেয়। কিনতু বাতাস আসবে সেই আশায় গড়েবালি। ঢাকা শহরের মানুষ এমন কান্ডজ্ঞান শূন্য বাড়ি করার সময় একহাত জায়গাও ছাড়ে না। পাশেই আরেকটা বাড়ি। অপুর জানলা বরাবর ঠিক আরেটা জানলা। ঐই ঘরটাতে একটা মোমবাতি জলছে টেবিলের উপর। একটা মেয়ে বে আছে চেয়ারে উবু হয়ে। চেহারা দেখা যাচ্ছে না। একজন মহিলা ঢুকলো রুমে। এই দীপা কি করছিস? কিছু না ভাবি। এই বলে মেয়েটা ঘুরে বসলো। আরে এটাতো বিকেলে ছাদে দেখা হল সেই ময়েটা।


দিপা শোন কাল তোর ভাই ভোরে গাজিপুর সাইটে যাবে। গাড়িটা নিয়ে যাবে। আমারও আআবার একটা মিটিং আছে। আচ্ছা কাল তুই জিহানকে স্কুলে দিয়ে আবার নিয়ে আসতে পারবি? কাল তোর ক্লাস আছে ? দিপা মাথা নেড়ে বললো হুম ক্লাস আছে। কিন্তু তুমি চিন্তা করনা ভাবি,আমি জিহান কে দিয়ে আসবো। আচ্ছা বাচালিরে ভাই। এরপর একজন লোক ঢুকে দীপার ঘরে। এই দীপা , হুমম ভাইয়া বলো। তোর ভাবি কিছু বলেছেরে? হুমম বলেছে। কাল একটু কষ্ট করতে পারবি নারে? হুমম পারবো। তোর জরুরী ক্লাস নেই তো? দীপা মুখ ফুটে বলতে পারলো না ওর খুব জরুরী ক্লাস আছে। কখনোই পারে না। আচ্ছা শোন এই নে কালকের টাকা । ক্যাব বা সিএনজি নিয়ে চলে যাস কেমন? দীপা মাথা নেড়ে বলে আচ্ছা।

এরপরই দুম করে কারেন্ট চলে আসে। অপুর খেয়াল থাকেনা। ও দীপার দিকে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎই কাজের মেয়েটা ঘরে ঢুকে। জানালার সামনে এসে কেমন কটমট করে অপুর দিকে তাকায়। বিড়বিড় করতে করতে জানালার পরদা ফেলে দেয়।


রাতে একটা সিগারেট জালিয়ে অপু আবার ছাদে হাটাহাটি করে। হঠাং খেয়াল করে পাশের ছাদে দীপা দাড়িয়ে আসে। অপু আসতে করে গাছের আড়ালে যেয়ে দীপাকে দেখে। দীপা এক দৃষ্টতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষন থেকে নীচে নেমে গেল।

সারাদিনের ক্লান্তিতে অপু বিছানায় সুতই ঘুমিয়ে পড়ে। রাতে হঠাৎ কান্নার শব্দে ঘুম ভাঙ্গে। কে যেন চাপা সুরে কাদছে। অপু বিছানা থেকে ওঠে বসতেই দেখে দীপার ঘরে বাতি জলছে। মেয়েটা কিছু একটা জড়িয়ে ধরে কাদছে । অপু কিছুটা বিরকতি নিয়ে আবার শুয়ে পরে।
সকালে অপু অফিসের জন্য নীচে নেমে দেখে দীপা জিহানকে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। অপুর ইচ্ছে হয় ক্ষানিকক্ষন দীপাকে দেখে কিন্তু অফিসের দেরী হয়ে যাচ্ছে তাই রিকশা নিয়ে দ্রুত রওনা হয়। দীপা জিহানকে স্কুলে দিয়ে ভা্রসটিতে পৌছায়। এর মধ্যেই কবির স্যারের ক্লাসটা মাস হয়ে যায়। তাড়াহুড়ো করে ক্লাসে যাওয়ার আগেই লিপীর সাথে দেখা। কী রে ক্লাস মিস হল বুঝি? হ্যা রে জিহানকে স্কুলে দিয়ে আসতে আসতে কবির স্যারের ক্লাসটা মাস হল। চিন্তা করিস না। ক্লাস নোটটা কারো কাছ থেকে নিয়ে নে, আমি নোট সব গুছিয়ে রেখেছি তোর জন্য। লিপী দীপারই ক্লাসমেট ছিল। কিন্তু এখন ও দীপার এক ব্যাচ সিনিয়র। দীপা একটা সমস্যার জন্য এক বছর ড্রপ দিয়েছিল।দীপা বললো যাইরে নাজিম স্যারের ক্লাসটা করি। আবার জিহানকে স্কুল থেকে আনতে হবে।
দীপা জিহান কে নিয়ে বাসায় ফেরে। কলবেল চাপতেই কমলা দরজ খুলে দেয়। দীপা বিরক্তি নিয়ে বলে কীরে কমলা কতবার বলেছি জীজ্ঞেস না করে দরজা খুলবি না। খুলি নাতো আফা। এহন আপনেরাই আইবেন জানি তাই দরজা খুলছি। ঘরে ঢুকতেই ভাবির কল। দীপা জিহান কে এনেিস? হ্যা ভাবি। ওকে একটু খাইয়ে দিসতো। খাওয়া নিয়ে কমলাকে বড্ড জালায় ছেলেটা। আচ্ছা ভাবি। দীপা ফোন রেখে জিহানকে ফ্রেস করে খাওয়াে বসে।
অফিস থেকে ফিরে অপু ছাদে বের হয়। জিহান খেলছে কমলার সাথে। কাগজের প্লেন বানাচ্ছে কিন্ত পারছে না। দৌড়ে গেল দীপার কাছে। ফুপি প্লেন বানিয়ে দাও। দীপা প্লেন বানিয়ে দিল। জিহান প্েন নিয়ে ছুটাছুটি করছে। অপুর দেখতে ভালো লাগছে। সেদিনের মত প্লেন আবার অপুর ছাদে পরলো । অপু প্লেনটা তুলে লেজ বানিয়ে দিল। পলেনটা আগের চয়েও দ্রুতউড়তে লাগলো। এটা দেখে জিহান মহা খুশি। দুজন মিলে খেলতে লাগলো। কমলা রীতিমত অগ্নি োখে তাকিয়ে আছে অপুর দিকে। আার দীপা চুপচাপ বসে দেখছে। কমলা বললো জিহান চল মেলা খেলছো এহন চলো। খালাম্মা বকা দিব। জিহান বললো আমি যাব না এখন। দীপা উঠে এসে জিহানকে বললো চলো বাবা। ওরা নীচে চলে গেল। অপু দীপাকে নিয়ে ভাবতে লাগলো। কী মায়াবী মুখ দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়।
কদিন ধরে অপুর শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। ডাক্তার ব্লাড টেষ্ট দিল। আজ রিপোর্ট দিল। জন্ডিস ধরা পরেছে। অপুর মেজাজ খারাপ হলো। কিছুদিন আগেও একবার জন্ডিস হয়েছিল। অপু রিপোর্ট নিয়ে ওর বন্ধু হাসানের চেম্বারে গেল। হাসান অপুকে দেখেই বললো কীরে শালা আবার জন্ডিস বাধিয়েছিস তাই না? অপু বললো কী করে বুঝলি? আরে মামা তোমরা বিপদে না পড়লে তো আমার খোজও নেও না। আরে না রে মামা টাইম হয়নারে। হুমম দে রিপোর্টটা। যা শালা ভালো জন্ডিস বাধিয়েছো মামা। অপু তুই বিয়ে কররে মামা। বউয়ের হাতের খাবার খেলে জন্ডিস ফন্ডিস দৌড়ে পালাবে। আমাকে দেখ খেয়ে খেয়ে কেমন ভুড়ি বানিয়েছি হা হা হা। হুমম মামা লেজকাটা শেয়ালতো সবার লেজ কাটতেই চাইবে,অপু বললো। এখন কি করবো তাই বল। কি করবি তো জানিস ই। ছুটিনে। বেডরেষ্ট এ থাক। আর কী কী খাবি তা তুই জানিস । হুমম আজ তাহলে উঠিরে। যাহ বাবা কাজ শেষ তাই যাই যাই। ঘরে কী বউ রেখে এসেছিস? না রে দেরি হলে গেট বন্ধ করে দেয়। আজ ওঠিরে।
অপু অফিস থেকে কদিনের ছুটি নিল। এখন ঝামেলা হলো কদিন রান্না করে খেতে হবে। হোটেলের খাবার খেলে অবস্থা আরো খারাপ হবে ।অপু ঘুমিয়েছিল হঠাত জানালায় বিকট শব্দ। ধরমড় করে উঠে দেখে জিহান লাঠি দিয়ে জানালা পিটাচ্ছে। এই জিহান কেমন আছ? স্কুল নেই তোমার? না স্কুল বন্ধ, সামার ভেকেশন। ওহ আচ্ছা। তোমার ফুপি কই? ফুপি ফুপির স্কুলে । এই তুমি আমাকে প্লেন বানিয়ে দেবে? হুমম দিব। জিহান একটা ডায়রী থেকে পাতা ছিড়ে অপুকে দেয়। অপু কাগজ টা হাতে নিয়ে দেখে একটা কবিতা লিখা। মনে হয় দীপার ডায়রী। অপু কাগজটা রেখে দেয়। টেবিলের ওপর প্যাড থেকে একটা পেজ নিয়ে জিহানকে প্লেন বানিয়ে দেয়। এভাবে একে একে তিনটা পেজ নেয় জিহানের থেকে, সবগুলোতেই কবিতা লিখা । এমন সময় কমলা ঘরে আসে। জিহান তুমি কী করতাছো? আফামনির খাতা ছিড়তাছো? দাড়াও আজেকই খালাম্মাকে বলমু । জিহান দৌড়ে রুম থেকে বের হয়েগেল। কমলা অগ্নি দৃষ্টিতে অপুর দিকে তাকিয়ে আছে। অপু কবিতার পেজগুলো পড়তে থাকে।


মন খারাপের সময়গুলো হয়না কেন যে শেষ???
কখন কবে ছিলাম ভালো ভুলে আছি বেশ...
এখন আর ভালো থাকার হয়না যে ইচ্ছে...
জীবনের কঠোরতাগুলো স্বপ্ন কেরে নিচ্ছে..
.সামনের সব পথগুলো অন্ধকারে ঢাকা..
.একা আমি চলতে চলতে ক্লান্ত খুব একা
তিমীর রাত্রী শেষে সূর্য যেমন হাসে..
আমার পাশে সূর্য হয়ে কখন কেউ আসবে???
এলোমেলো ভাবনাগুলো আমায় কেবল অশান্ত করে তুলে।
কিছু কাল্পনিক ভালোলাগা সুখ খুজে ফিরে ।
তবুওতো হয়না শেষ প্রতিক্ষার পালা....
শূন্য এই হৃদয়ে তাই অগনিত জ্বালা ।
………………………………………………………………………………………………………………….
আমারও পরান যাহা চায়।
কাহার পানে আমার হৃদয় দূর অজানায় যায় ছুটে যায়।
কোন গগণের কোন নীলিমায় আমার হৃদয় রংধনু সাজায়।
কোন তারার পানে চেয়ে আমার কেবলই চোখ ভিজে যায়।
কোন পাহারের সবুজ আমায় তার পানে ডেকে চলে যায় ।
কোন সাগরে ভিজব বলে আমার বুকে ঢেউ খেলে যায় ।
কার স্বপ্নে বিভোর হয়ে বিনীদ্র এই রাত কেটে যায় ।
কার দুচোখে রাখব দুচোখ সেই ভাবনায় আমার আখিঁ নীল আলোর দ্যুতি ছরায়।
কার হাসির শব্দে আমার হূদয় এলোমেলো স্বপ্ন সাজায়।
কার হাতের চেনা পরশে আমার হৃদয় সুবাস ছড়ায় ।
কার দেয়া কষ্টগুলো আমার চোখে বৃষ্টি ঝরায় ।
জানি না কোন দূর অজানায় আছে যে সেই সুজন যার কারনে শূন্য হৃদয় …
…………………………………………………………………………………………………………
আরে মেয়েটাতো খুব ভালো লিখে। অপু দীপা কে নিয়ে কল্পনাতে হারিয়ে যায়। পরেরদিন সকালে অপু একটু সকাল সকাল উঠে। অপু জহানের অপেক্ষা করতে থাকে। একটু পর জিহান আসে। অপু বলে চলো জিহান আমরা প্লেন বানাই। যাও কাগজ নিয়ে আসো। জিহান ওর স্কুলের খাতা নিয়ে আসে। অপু বলে এটা না কাল যে খাতাটা ছিল ওটা আনো। জিহন ঋবার দীপার টেবিল থেকে আরেটা ডায়রী নিয়ে আসে। অপুর মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি খেলে যায়। অপু বলে জিহান তুমি পেজ ছিড়ো না। আাকে দাও, আমি তোমাকে অনেক খেলনা বানিয়ে দেব। জিহান যখনই ডায়রীটা অপুকে দিতে যায় তখনইঘরে জিহানের মা আর কমলা ঢুকে। কমলা বলে দেখেন খালাম্মা জিহান কী করতাছে। কালেও আফামনির খাতা ছিড়া ওই বেডরে দিছে। আজকে আস্তা খাতা দিতাসে। খালাম্মা এই বেডারে আমার ভালো ঠেহে না। যেইতে আইছে জিহানেরলগে মেলা খাতিরকরে। ছাদে গেলে আফামনির দিকে ড্যাব ড্যাব কইরা তাহায় থাহে। জিহানের মা থাপা দিয়ে ডায়রীটা নিয়ে নেয়। আপনি কেমন মানুষ বলুনতো? বাচ্চা একটা ছেলের কাছ থেকে ডায়রী নিচ্ছেন? ও তো ছোট কিন্তু আপনি তো নন। কমলা বলে খালাম্মা বেডার কোন কুমতলব আছে। জিহানের মা বলে কমলা জানালাটা বন্ধ করেদে। খবরদার আর খুলবি না । তোর খালুকে বলতে হবে, এবাসায় আর থাকা যাবে না। অপু ভিষন লজ্জা পায়। নিজের ওপর খুব রাগ হয়। কদিন এভাবেই কেটে যায় জিহান ছাদে আসে না। গভীর রাতে দীপাও ছাদে আসে না। অপুর খুব অসস্তি হয়। খুব অসহায় লাগে। সারাক্ষন দীপার মুখ ভাসে চোখে। অপু নিজেকে প্রশ্ন করে আমি কী দীপার প্রেমে পরে গেলাম?
অপু লেপটপে কাজ করছিল এমন সময় জাহিদের কল আসে,ওর ভারসিটির বন্ধু। অপু কল ধরতেই জাহিদ বলে কিরে মামা আবার জন্ডিস বাধাইসস হাসান কইলো। হ রে মামা জন্ডিসের সাথে আমার জটিল প্রেম চলতাছে। মামা ক্যাম্পাসে আয়।। আইতে পারবি না আম্বুলেন্স পাঠামু? অপু বলে আসতেছি তুই থাক। জাহিদ বহেমিয়ান টাইপের। পাশ করেছে অনেক বছর হলো কি্নতু চাকরি করে না। সারাদিন ক্যামপাসে থাকে। পোলাপান নিয়ে গান বাজনা করে।
অপু ওর ডিপ্পর্টমেন্টের সামনে যেয়ে দেখে জাহিদ সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে গান বাজনা করছে। অপুকে দেখতেই ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে। জাহিদ এভাবে আর কতদিনরে? চাকরি বাকরি কিছু করবি না?মামা চাকরি আমাকে দিয়া হবে না। তোমাগো মত টাই পইরা ভোর বেলা যেয়ে রাতে ফিরা এমন কেলাস লাইফ আমি চাই না। টাই পরার চেয়ে এইযে গলায় গামছা দেখতাছো এইটা যে কত সুখের বুঝবানা মাম্মা। অপু লক্ষ করে দীপা হেটে যাচ্ছে একটা মেয়ের সাথে। অপু জাহিদকে বলে মামা ওই মেয়েটাকে চিনিস? কোনটা মামা? ওই যে সাদা জামা। নাহ য় পাশের মাইটারে চিনি আমগো লিটনের োট বইন। কেন মামা ?কাহিনি কী? আরে কোন কাহিনিনা। মেয়েটা পাশের বাসায় থাকে। ওকে বুইঝা গেসি মামা দাড়াও। জাহিদ চিতকার করে ওই লিপী ? এদিকে আসো তো বইন। লিপি বলে আসছি জাহিদ ভাই। লিপি দীপাকে কি যেন বলে দীপা মাথা নেড়ে চলে যায়। বলেন জাহিদ ভাই। কেমন াছো বইন? ভাই বেরাদরের খবর নাও না কেমন বইন হইলা? জাহিদ ভাই আপনার কি খবর নিব আপনিতো এমনিতেই ফেমাস। তা আপনার চাকরির খবর? তুমি দোয়া করছো যে চাকরী হইবো? যেমন দোয়া তেমন কাম। দোয়াও নাই কামও নাই। যাওগা ওরে চিন? না। ও অপু আমগো ক্লাসমেট। ওহ। স্লামালাইকুম ভাইয়া। অপু বললো তুমি লিটনের বোন? জী। লিটন ভালো আছে? হ্যা ভালো। সিলেটে জব করছে। হুমম। জাহিদ বললো হুনো লিপি তোমার সাথে যেমাইয়াটা আছিলো ওইটা কে? কে দীপা? আমার বান্ধবী। কেন কিহয়েছে? কিছু হয় নাই তয় হইতে পারে হা হা হা। অপু লজ্জা পায়। লিপি বলে ঠিক বুঝলাম না। বুঝার দরকার নাই তুমি ওর ডিটেলস অপুরে দাও। অপু তুই লিপীর সাথে কথা বল আমিআইতাছি। লিপী বললো বলেন কি জানতে চান। অপু বলে চলো কোথাও বসি। আচ্ছা।
অপু বলে আসলে দীপা আমার পাশে বাসায় থাকে। ওকে কেন জানি আমার স্বাভাবিক মনে হয় না। আপনি কেন দীপার সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? অপু কিছুটা অসস্তি বোধ করে বলে না মানে এমনই। হুমম। দীপার লাইফটা আসলে স্বাভাবিক না। কেন? ওর লাইফে অনেক বড় একটা দুরঘটনা আছে। অপু বলে ঠিক বুঝলাম না। দীপা আসলে বিধবা। বিধবা মানে ?হুমম ওর বিয়ে হয়েছিল। অপুর মাথা যেন আকাশ ভেঙ্গে পরে। অপু বলে ওর বরের কি হয়েছিল জানতে পারি? লিপি অনেক বড় কাহীনি আপনার সময় আছে? হা আছে তুমি বলো।
আমরা যখন ফাষ্ট ইয়ারে তখন আদনান ভাই আমাদের ক্যাম্পাসে আড্ডা দিত। উনি বুয়েট থেকে পাশ করে মাত্র চাকরিতে ঢুকেছেন। দীপাকে খুব পছন্দ করতেন। কিন্তু দীপা পাত্তাদিত না। এড়িয়ে চলতো । দীপার কথা ছিল কখনও প্রেম করবো না । আদনান ভাই ওকে দেখার আশায় ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতো। এমনও হয়েছে দীপা বোরখা পরে আদনান ভাইর চোখ ফাকি দিয়ে চলে যেত। কোনো উপায় না দেখে আদনান ভাই দীপার বাসায় প্রস্তাব পাঠালেন। দীপার ভাই খোজ নিয়ে দেখলো ছেলে ভালো। বাবা মা নেই ফুফুর কাছে মানুষ হয়েছে। ভাই ভাবীর কথাতে দীপা রাজি হয়ে গেল। ওদের এনগেজমেন্ট হলো। আদনান ভাই বিয়ের জন্য তিন মাস সময় নিলেন। এনগেজমেন্টর পরদিন আদনান ভাই গাড়ি নিয়ে হাজির । দীপা তো খুব লজ্জা পাচ্ছিলো আমরা ওকে নিয়ে গেলাম। আদনান ভাই বললো আরে ভাই এখনতো আমাদের বিয়ে ঠিক হইছে এখন তো একটু পাত্তা দিবা নাকি? গাড়িতে ওঠ। দীপ গাড়িতে ওঠলো। আদনান ভাই একগুচ্ছ দোলনচাপা দিল দীপাকে। দীপার মুখে লাজুক হাস। আদনান বললো জানো বিয়ের আগে তিনমাস টাইম কেন নিয়েছি? কেন? তোমার সাথে প্রেম করবো তাই। দীপা খিলখিল করে হেসে ওঠে। আদনান বলে তুমি হাসতেও পারো? জানতাম না। আদনান মুগ্ধ নয়নে দীপার দিকে তাকিয়ে থাকে। দীপা আদনান রোজ ঘুরতো। দীপা আদনাকে কবিতা পরে শুনাতো। আদনান মুগ্ধ হয়ে কবিতা শুনতো। দীপা একদিন আদননকে বললো জানো আমি একটা স্বপ্ন রোজ দেখি। কী স্বপ্ন? আমি লাল একটা শাড়ি পরে পূনিমা রাতে নৌকাতে বসে আছি। তুমি আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছো।দীপার চোখ চকচক করে ওঠে। আদনান কল্পনা করে স্বপ্নটা। আদনান ীপার মাথায় হাত রেখে বলেমি তোমার সব স্বপ্ন সত্যি করবো দীপা। একদিন দীপা কে নিয়ে আদনান রেস্তরা তে খেতে যায়। আদনান একটা হীরার আংটি লুকিয়ে দীপার জুসের গ্লাসে রেখে দেয়। দীপা চুমুক দিয়ে জুস খেয়ে ফেলে আর কাশতে থকে। আদনান বলে হয়হায় দীপা গ্লাসে তো একটা রিং ছিলো তুমি ওা গিল ফেলছো কী সর্বনাস! এখন কি হবে? দীপা হেসে কোনাটা এই রিংটা ? দীপা বলে তুমি ভেবেছো তুমি একাই সারপ্রাইজ দেবে? আমি দিতে পারি না?
দেখতে দেখতে দীপার বিয়ের দিন চলে আসে। দীপা বউ সেজে ঘরে বসে আছে কিন্ত আদনানের খবর নেই। কল ও ধরছে না। দীপা খুব ভয় পেয়ে যায়। আচমকা আদনন ঘরে ঢোকে। হেচকা টানে দীপাকে বিছানা থেকে টেনে নামায়। বলে চলো। দীপা বলেচলো মানে কোথায়? এত রাতে কোথায় যাব? তোমার মাথা ঠিক আছে? আজ আমাদের বাসর রাত। আদনান বলে বাসর পরে হবে এখন চলো। আদনান দীপার চোখ বেধে দেয়। টেনে গাড়িতে তোলে। খুব স্পীডে গাড়ি চলে। আদনান দীপা কে গাড়ি থেকে টেনে নামায়। ওকে টানতে টানতে অনেকদুর নিয়ে যায়। দীপা ভয়ে কাদতে থাকে। আদনান কি করছো? আদনান এবার দীপার চোখ খ লে দেয়। দীপা দেখে একটা লেকের মাঝে ফুল দয়ে সাজানো একটা নৌকা। অনেক নে বাতি। মনে হয়যেন সর্গে এসে গেছে। দীপা আনন্দে কাদতে থাকে। আদনান দীপা ক জরিয়ে ধরে। দুজনেই আবেগে কাদতে থাকে। আদনান বলে তোমার স্বপ্ন বাস্তবের জন্য আজকের দিনের চেয়ে ভলো দিন কী আর হতে পারে? চলো তোমার স্বপ্নে আজ আমর নতুন জীবন শুরু করবো। ওরা এগুতে থাকে। এমন সময় একদল নেশাখোর মাতাল ওদের ঘীরে ধরে। ওরা বলে দেখ দেখ মাইয়া নিয়া মজা করতে আইছে। ওই যা আছেসব দে। ওরা দীপার গায়ের গহনার দিকে হাত বাড়ায়। আদনান আর নিজেকে সামলাতে পারে না। ওদের সাথে হাতাহাতি হয়। একজন আদনানের বুকে গুলি চালিয়ে দেয়। আরেকজন পেছন থেকে মাথায় আঘাত করে। আদনান মাটিতে লুটিয়ে পরে। দীপা চিতকার করে জ্ঞান হারায়। ছেলেগুলো দীপার সব গহনা ছিনিয়ে নেয়। আদনানের মানিব্যাগ ঘড়ি আংটি সব নিয়ে পালিয়ে যয়। ভোরে এলাকার লোকজন ওদের হাসপাতালে নিয়ে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরনের জন্য আদনান স্পট ডেথ। দীপা সজ্ঞাহীন। ওর জ্ঞান ফিরার আগেই আদনানের দাথন হয়ে যায়। দীপা মানসিক ভারসম্য হারায়। আদনানের স্মৃতি হিসেবে থাকে শুধু ওর বিের েরওয়ানীা।।
অপুর সামনে থেকে যেন একটা একটা পর্দা সরতে থাকে। ও দেখতে পায় দীপা প্রতি রাতে আকাশে আদনানকে খুজে। প্রতি রাতে আদনানর শেরওয়ানীটা ধরে কান্না করে। অপুর নিজেকে উন্মাদের মত লাগে। রাস্ায় পাগলের মত বসে থাকে। রাতে জাহিদ ওকে বাড়ি নিয়ে যায়। অপুর যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন দুুর। অপু পাগলর মত বাসায় ফেরে। দেে দীপাদের বাসার নীচে ট্রাকে মাল তোল হচ্ছে। দীপার ভাই সব তদারকি করছে। অপু দৌড়ে ওর ঘরে ঢুকে। দেখে দীপার ঘরা ফাকা জিহান কাগজের প্লেন নিয়ে খেলছে। দীপা এক কোনায় দাড়িয়ে আছে। দীপাকে দেখতেই অপুর চোখ ভিজে আসে। জিহান অপুকে ডেকে বলে জানো আমরা নতুন বাসায় যাচ্ছি। তোমার সাথে আর দেখা হবে না। তুমি প্লেনটা নেবে? অপু মাথা নাড়ে। জিহান প্লেনটা অপুকে ছুরে মারে । দীপা চোখ তুলে অপুর দিকে তাকায়। একফোটা জল গরিয়ে রে চোখ থেকে। দীপার ভাবি ডক দেয় দীপা জিহানকে নিয়ে নীচে আয় সব মাল তোলা শেষ। দীপা জিহান কে নিয়ে চলে যায়। অপু প্লেনটাখুলে দেখে একটা কবিতা লিখা
কতটা আগুনে পুড়লে
তাকে কষ্ট বলা যায়???
কতটা ফাগুন পার করলে
সুখী হওয়া যায় ????
কতটা পথ সাথে চললে
সঙ্গী হওয়া যায় ???
কতটা কাছে আসলে বলো
ভালোবাসা যায় ???
কতটা ভালোবাসলে বলো
মনের মানুষ হওয়া যায় ??
কতটা হাসির বৃষ্টিতে
সুখের বন্যা হয় ???
কত কষ্ট জমে জমে দুঃখ হিমালয় ???
দেবার বাকি কিছুই যে নাই
শুন্য হৃদয় আমার ।
যতনে রেখ তোমার স্মৃতির মনিকোঠায়
এক টুকরো প্রেম আমার তোমার চিলেকোঠায়
অপু অশ্রুশিক্ত নয়নে তাকিয়ে থাকে কবিতার দিকে………………………………

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৫ রাত ১২:০৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×