মধুচন্দ্রিমা শেষে আজই বাড়ী ফিরলাম। আজ থেকে আমাদের প্রকৃত সংসার শুরু হচ্ছে। বিয়ের পর দাওয়াত,শ্বশুরবাড়ি,এ বাড়ি ও বাড়ি ,শেষে মধুচন্দ্রিমা বেশ ধকল গেল। ভোরে বাসায় এসেছি, পেটে কিছু দিয়ে দিলাম একটা ঘুম। এক ঘুমে দুপুর গড়িয়ে বিকেল । আশেপাশে বউ এর নাম গন্ধ নাই। আমি মুখে পানি দিয়ে আমার ঘরটা দেখতে লাগলাম। কত অচেনা লাগছে। আগে অগোছালো থাকতো ঘরটা। মা কত চিৎকার করতেন। কে শোনে কার কথা। ঘরে ভালো করে চোখ বুলালাম। নতুন খাট, আলমিরা, ড্রেসিং টেবিল আরো মেয়েলী জিনিসে ভরপুর।
লীনার সাথে যখন সংসার নিয়ে কথা হতো, ও তখন বলল আমার কিন্তু কিছু জিনিস অবশ্যই লাগবে। আমি সুবোদ ছেলের মত গদগদ হয়ে বললাম কি লাগবে বল শুনি। লীনা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল শোন আমার জন্য একটা এ্যাস কালারের ইয়ায়ায়া বড় টেডি বিয়ার কিনবে। ও যেমন করে ইয়ায়া বড় বলল তাতেই আমার ক্যাইত হওয়ার অবস্থা। এবার দ্বিতীয়টা...শোন আমার বেডরুমে একটা দোলনা লাগবে। আমি একটু টাশকির মত খেলাম দোলনা বেড রুমে কি দরকার জিজ্ঞেষ করবো তার আগেই লানা বলল শোন না...দোলনার সাইজ এমন হবে যেন আমি পা গুটিয়ে শুঁতে পারি। আর ও হ্যা শোন তুমি দোলনায় বসবে আমি তোমার কোলে মাথা দিয়ে দোল খাবো,বুঝলে তো দোলনার সাইজ কেমন হবে? নাও ঠেলা তিনি দোলনায় দুলবে তাও আবার আমার কোলে মাথা রেখে....এইরকম সাইজের দোলনা। দোলনার সাইজের যেমন করে বর্ননা দিল তাতো দেখছি কবিরাও ফেল মারবে। এবার তৃতীয়টা...শোন একটা রকিং চেয়ার লাগবে..বুঝলে? দুপুরে রকিং চেয়ারে বসে আমি বই পড়ব। আমি অপেক্ষা করছি রকিং চেয়ারের বর্ননা শোনার জন্য। আমার আশায় গূড়েবালি। লীনা আবার দোলনাতে ফিরে গেল....এই শোন খবরদার রট আয়রনের দোলনা কিনবে না। একদম আরামদায়ক না বুঝলে? আমি হ্যা সূচক মাথা নাড়ালাম। তুমি সুন্দর দেখে কাঠের দোলনা কিনবে কেমন? এবার চথূর্তটার পালা...শোন আমি না কোলবালিশ ছাড়া ঘুমাতে পারি না। আমার সাইজের একটা নরম কোলবালিশ বানাবে। ফর্দকিন্তু আরো বড় সব বলতে গেলে আমার দশা ইয়ে মানে পাগল হয়ে যাবেন।
আমি হবু বউ এর ফর্দ নিয়ে মাঠে নেমে পড়লাম। প্রথমেই এ্যাস কালারের টেডি বিয়ার। এতো রং থাকতে এ্যাস কালার কেন চাইলো আমি ধরতে পারলাম না। নো বলের মত ওভার দ্যা সোল্ডার নাকি মাথা দিয়ে গেল কেজানে? আমার জান ভাজা করে মনের মত একটা পেলাম। টেডি নিয়ে বাড়ি ফিরেছি। দরজা খুললো মা। এই তোর হাতে কি ওটা? না মা ইয়ে মানে এটা একটা টডি িয়ার। তাতো দেখতেই পাচ্ছি কিন্তু এটা আনছিস কেন?? বিয়ে হলো না আর উনি ছেলেপুলের জন্য ভাল্লুক কিনে বেড়াচ্ছে...কি যুগ এলো বাপু আর কত কিযে দেখবো!
এবার গেলাম দোলনা কিনতে...সে এক লম্বা ফিরিস্তি। কি আর বলবো সাইজ মাপতে দোলনায় বসতেই দোকানদার তার ৩২ দাত বের যে হাসি দিল তা দেখে নিজেকে গাঁধা থেকে অধম মনে হল। যাইহোক দোলনা নিয়ে বাসায় ফিরতেই আবার মার সামনেপড়লাম। এটা কি সুমন। মা এটা একটা দোলনা..কেনার সময় তেমনটাই ছিল..মা তুমি কি অন্য কিছু দেখতে পাচ্ছ? মা অগ্নি দৃষ্টি বিনিময় করে বলল তা এটা কারজন্য?? মা আসলে হয়েছে কি লীনা বলছিল ওর শিশুপার্ের দোলনায় চড়তে ভালো লাগে । বলতো এএত বড় মেয়েকে নিয়ে কি আমি শিশু পারকে যাব?তাই এই ব্যবস্থা আরকি। মা বিড়বিড় করে কি বলে চলে গেলেন। বাকি দুইটা জিনিস কিনতে তেমন ঝামেলা হয় নাই আলহামদুলিল্লাহ ।
আজ আমাদের বাড়িতে লীনার প্রথম রাত। বাড়িতেএখনও মেহমান গিজ গিজ করছে। লীনাকে নিয়ে রীতিমত মেলা জমে গেছে। আমি কাছে ভিড়তেও পারতেছিনা। রাতের খাবার শেষে লীনার জন্য অপেক্ষা করছি। হুরমুড় করে আমার বাচ্চা থেকে বুড়া কাজিনরা লীনাকে নিয়ে ধুকলো। আমি যা বুঝার বুঝেনিলাম ৯ নম্বর বিপদ যোগ আপদ সংকেত। লীনা বলল এই শোন ওরা বায়না ধরেছে আজ রাতে মুভি দেখবে আম্মা রাতের জন্য চীকেন ফ্রাই করছে। খুব মজা হবে। দিপ্তি আমার কাজিন আগুনে ঘি ঢেলে বলল এই ভাইয়া তুইকিন্তু এ্যালাউ না বুঝলি?এই কাজিন গুলা কেন এতো বদের হাড্ডি হয় বুঝি না। নাকি আমার কাজিনরাই এমন কে যানে?
লীনা যাওয়ার আগে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল এই তুমি রাগ কর নাই তো? শোন আমার কোলবালিশটা জরিয়ে আরাম করে ঘুম দাও। এই বলে নুপুর বাজাতে বাজাতে দিব্যি চলে গেল। আমি কোলবালিশ টাকে ভালো করে দেখলাম। যদি এই কোলবালিশ নিয়েই ঘুমাতে হয় তো এত হাঙ্গামা করে বিয়ে করার কি মানে। কি মনেহল লাথি মেরে দিলাম কোলবালিশ টাকে ফেলে। পরে কেমন মায়া হল বউ এরপ্রিয় জিনিস। তুলে এনে বললাম ওহে কোলবালিশ আজ শুধু তুমি আর আমি.....আমি বঞ্ছিত স্বামি............