somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প - যে জীবন সবুজের , যে জীবন ফড়িং এর

২৩ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি কি তোমার হাতটা ধরতে পারি ?
অবশেষে বলেই ফেললাম মুখফুটে ।
হাতে মেহেদীর আলপনা , চুড়ি , বিশেষত এই এনগেজমেন্ট রিং কেমন যেন অচেনা লাগছে পাখিকে । ঠোঁটে এমন লিপস্টিক । আচ্ছা এই লিপস্টিক না দিলে হয়না । কেমন রাজকন্যার মত দেখাচ্ছে । আমার চেনা টি লাগছেনা । সেই চেনা জনকে খুঁজে পেতে কি যে লাগছে আমি আসলে বুঝাতে পারবোনা ।
হাত ধরে সেই পুরাতন স্পর্শ পাওয়ার জন্য ব্যাকুল আমি । আমি একটু চাপা স্বভাবের । এত কথা বলার মত অত শব্দ ভান্ডার ও আমার নেই ।
পাখি আমার দিকে তাকাল । কাজল টানা ঘন নেত্রপল্লবের ভিতরদিয়ে ও আমাকে পুরোটা পড়েই ফেলল । সে পরম মমতায় আমার হাত তার হাতে রাখলো । সুবাসিত এক অনুভব । আমি যেন প্রাণ পেলাম । পুরাতন ওকে ফিরে পেলাম ।
তারপর ই সে নানা প্রকারের গল্প শুরু করলো । আমি মুগ্ধ ভাবে শুনে যাচ্ছি । ওর চোখের ই আলাদা ভাষা আছে । চোখগুলো যেন হাসে । এত সুন্দর চোখ কি কোন মেয়ের হয় ?
আমাদের ম্যারেজ মিডিয়া আমাদের হাতে কতগুলো বই ধরিয়ে দিয়েছে । তাদের ধারনা আমরা প্রিপারেশন ছাড়াই বিয়ে করে ফেলি। অথচ যেই বিষয়টা সারা জীবনের ব্যাপার সেখানে ভাল একটা প্রিপারেশনের দরকার । এই প্রিপারেশন নাই বলেই বিবাহ বিচ্ছেদের হার বেশি ।
আমার বাসার সবাই ,পড়ালেখা করছে । আম্মা পড়ছে “ ভাল শাশুড়ির গুনাবলী । “
রিমু পড়ছে “ আদর্শ ননদের গুনাবলী । “
বাবার জন্য ভাল শশুরের গুনাবলী নামের কোন বই পাওয়া যায় নি । আম্মার বই এ নাকি লেখা আছে , “ ছেলের বউ কে নিজের মেয়ের মত মনে করবেন “ ।
আম্মা বলছে নিজের মেয়ের মত মনে করলে খবর আছে । মেয়ে কোন দোষ করলে বকা দেয়া যায় । কিছু ছেলের বউ দোষ করলে বকা দিলে কি ঘটে বলা যায় না ।
আমিও পড়ছি , সুখী পরিবার ও পারিবারিক জীবন । ওয়াইফ সম্পর্কে কুরান আর হাদীস সম্বলিত বই । খুব ইন্টারেস্টিং । খুব আগ্রহ পাচ্ছি ।
পাখি তার ঘন কালো চুলগুলো হাত দিয়ে বিলি কেটে বলল , “ আমিও একটা বই পড়ছি । মিস হেনরি ল্যম্ব এর অনুবাদ বই , পুরুষকে বুঝার ১০১ উপায় ।“
আমি আর্তনাদ করে উঠলাম , “ হায় আল্লাহ ! তাহলে তো আমার ভিতর বাহির কোন কিছুই তোমার আর বুঝার বাকি থাকবেনা ।‘
পাখি শুভ্রদাঁতের হাসির ঝিলিক মেখে বলল , “ দুঃশ্চিন্তা নিওনা , ওখানে লেখা আছে আগের ১০০টি উপায় আপনি শুধু শুধু পড়েছেন কারণ পুরুষকে বোঝা আসলে কিছুতেই সম্ভব না । কারণ এদেরকে কোন সূত্রেই ফেলা যায় না । “
- পুরুষ প্রজাতিরে অপমান করছে মনে হইতাছে
- আচ্ছা ? বিয়ের পর আমরা কিন্তু ঝট করে বাচ্চা নিয়ে নিব বুঝলে ?
- হু , তাড়াতাড়ি নিয়ে নেয়াই ভাল ।
-তারপর বাচ্চা বড় হবে । তাকে বিয়ে দেব । তার আবার বাচ্চা হবে ।
স্বপ্নের জাল বুনতে বুনতে আমরা গ্র্যান্ড মা আর গ্র্যান্ডপা হয়ে গেলাম । কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছে ।
- মেয়ে হলেই ভাল ,কি বল ? ভাইয়ার মেয়ে টুনটুন কে এত আদর লাগে । সারাদিন এক প্রশ্ন , এটা কি ? এটা কি ?
আমরা ও বিরতীহীন ভাবে তার উত্তর দিয়ে যাই ।
- তার এখন ভাষা শিক্ষার টাইম ।
-আর বলোনা আব্বা তাকে কি ভাষা শিক্ষা দিচ্ছে কাউয়া , কুত্তা , মুরগা
- নিজেদের আঞ্চলিক ভাষাওজানা দরকার । হাহাহা ।

- আচ্ছা চুল গুলো কিন্তু বড় বড় রাখবো । টুনটুনের চুল ভাবী হাফ ইঞ্চি হলেই নেড়া করে দয় । এত মন খারাপ লাগে । কি বলবো ।
দুজন স্বপ্নের ভেলা ভাষাই । পাখি , রবিন আর একটা ছোট্ট পরীর বাচ্চা । বাচ্চার নাম ও ঠিক করে ফেলেছি আমরা । বাচ্চার নাম হবে রিমঝিম । পাখি , রবিন আর রিমঝিম ।
আমি আগে থেকে কেয়ারিং মনোভাবসম্পন্ন । এনগেজমেন্ট হয়ে যাওয়ার পর নিজেকে আরো দায়িত্ববান মনে হয় । নিজেকে একেবারেই একলা লাগেনা । স্বপ্নের উপর স্বপ্ন দিয়ে আমি আর পাখি বাবুই পাখির বাসা বুনে চলি ।

আমি আর পাখি পূর্বপরিচিত ছিলাম না । ম্যারেজ মিডিয়ার মাধ্যমে পারিবারিক ভাবেই ঠিক হয়েছে বিয়ে । আমার এত দিন মনে হত বিশাল সমুদ্রে একা এক নাবিক । আজ যেন সে নোংগর ফেলেছি এখানেই বাসা বাঁধব ।



আজ আমাদের বিয়ের দিন । আমি সমুদ্রের ব্লকের উপর বসে আছি । ঢেউ গুনছি । আমাদের পরিবারের এত স্বপ্ন হঠাত করে কাঁচের মত ভেংগে গুড়া গুড়া হয়ে গেছে । গায়ে হলুদে দেয়া হাতের মেহেদীর রং আমার সাথে যেন উপহাস করছে । জানি আমাকে সবাই খুঁজে বেড়াচ্ছে । পাখি হাসপাতালে । আমি পালিয়ে গেছি । আমি ওকে দেখতে যেতে পারিনি । পারবোনা ।


আমার পালিয়ে যাওয়াকে সবাই স্বাভাবিক হিসেবেই নিবে । বিয়ের আগের দিন রাতে মেয়ের যদি এত ভয়াবহ অসুখ ধরা পড়ে তাহলে সেই বিয়ে হবেনা এটাই স্বাভাবিক ।
খুব সম্ভব তার ওভারিতে টিউমার । আর আমাদের যাবতীয় স্বপ্ন এখানেই শেষ । আমার রিমঝিম , তার বড় বড় চুলের ঝুটি , তারও মায়ের মত উজ্জ্বল চোখ সব নিমিষেই কোথায় হারিয়ে গেল । বাচ্চা হবার জন্য মেয়েদের ওভারি খুব দরকার । । টিউমার ফেলতে গিয়ে ওভারির যদি ক্ষতি হয় তাহলে আড় কখনোই বাচ্চা হবেনা পাখির ।



এই কদিনে যেন আমার বয়স অনেক বেড়ে গেছে । আচ্ছা সবারই কি জিতে যেতে হবে ? অন্য মানুষের বেঁধে দেয়া সাফল্যের সংগায় নিজেকে সংগায়িত করতে হবে ?

নাহ !শুধু তোমাকে ঘিরে থাকতে পারাই আমার জিতে যাওয়া ।
আমি চলে যাব দূরে । উল্টেপাল্টে কাটাব এক জীবন । যে জীবন সবুজের । ফড়িং এর । তোমাকে যেতে হবে আমার সাথে । তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে উঠ । আমি মনে মনে বললাম । পাখিকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে । আমি প্রার্থনা করলাম পরম দয়াময় আল্লাহর কাছে । আল্লাহ তুমি পাখিকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিও না ।



পাখি র উজ্জ্বল চোখে রাত জেগে থাকার কষ্ট । কিন্তু তার হাসিটা সেই অমলিন ।
সে আমাকে বলল , দেখ রিমিঝিমের জন্য আমি এত কষ্ট করি ।অথচ ও সবার আগে বাবা বলে ডাকলো । দুনিয়ার বাচ্চারা মা বলে ডাকে । বাচ্চারা সবার আগে মা বলবে এটাই তো স্বাভাবিক । এই বাচ্চা সবার আগে বাবা বলছে কেন বলত ?
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৪ রাত ৮:৫৬
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×