একদিন তাকে রাস্তায় পাওয়া গেলো । ঘরের ভিতরে থাকাটাই সে পছন্দ করতো । কড়া আলো জ্বালানো থাকতো ঘরটাতে । অন্ধকারকে তার বড় ভয় ।সে স্বপ্নে দেখেছিল , অন্ধকার ঠাণ্ডা এক রাস্তা দিয়ে সে একা হেঁটে যাচ্ছে ,সে দিন থেকে অন্ধকারকে ভয় । তাও সে সূর্যলোকেও কখনো বেরুতে চাইতোনা । মানুষকেও তার বড় ভয় । সে মানুষটা রাস্তায় বেরিয়ে এসেছে , এসে তার ভালই লাগছে । তার মনে হচ্ছে শুধু শুধু কারণে ঘরে বন্ধী ছিল । যদিও তার কাপড়চোপড় খুব সুবিন্যস্ত নয় । তবে ঢাকা শহরের সুবিধা হল কেউ কাউকে তেমন লক্ষ্য করেনা । পা টা একটু এলোমেলো পড়ছে , দীর্ঘদিন না হাঁটার ফল নিশ্চিত । অনেকদিন কারো সাথে ভাল করে কথাও বলা হয়নি , নিশ্চিত ভাবে সে কোন রিকশাওয়ালাকে ডেকে তাকে কোথাও নিয়ে যাওয়ার কথা বলতে পারবেনা । পকেটে টাকাও নাই । টাকা ছাড়াই বেরিয়ে এসেছে ।
এখন তার মাথা ঠিক মত কাজ করেনা । সম্ভবত শর্টসার্কিট হয়ে গেছে । ইলেকট্রিক তারের মত নিউরন গুলোতে । লেপ্টেগেছে সালকাস জাইরাস গুলো । এগুলো এখন ফ্ল্যাট । কোন তথ্য জমা রাখতে পারেনা । রাতে ঘুমানোর সময় খুব শীত করলে ফ্যান বন্ধ করা বা কাঁথা বা টেনে নেয়ার আদেশ তার ব্রেইন দেয়না । শীতেগুটিশুটি মেরে সে পড়ে থাকে ।
সে ভালই বুঝতে পারে , তার ব্রেইন কয়েকটি ঘটনা সামাল দিতে গিয়ে ঘটনার তীব্রতায় প্রোটেক্টিভ নির্লিপ্ত ভাব আনতে গিয়ে যা কিছু করছে তার সাইড এফেক্ট হিসেবে এগুলি ঘটছে । অনেক বেশি নির্লিপ্ত হয়ে গেছে ।
আজ আবার বেরিয়ে এসেছে সে । চুল গুলো অনেক বড় বড় হয়ে গেছে । চেহারায় একটা ময়লা ভাব । বাসার মানুষ গুলোর চাইতে বাহিরের লোকজনই ভাল ।তার খুব সুখী লাগছে নিজেকে সুস্থ লাগছে । শুধু এখন আরও বেশি কাজ করেনা ব্রেইন । মায়ামমতার সম্পর্কগুলো র মধ্যে আর কোন বাঁধন টের পায়না ।এটা ভাল লক্ষণ না মোটেই ।
কথা না বলতে বলতে সে কি কথা বলতে পারবেনা ? কিন্তু তার খুব গান গাইতে ইচ্ছে করছে । কয়েকটা কুকুর আসছে পিছু পিছু । মানুষের থেকে কুকুরই ভাল । এদের প্রতি অসীম স্নেহ অনুভব করছে ।স্নেহ মমতা ভালবাসা বিশ্বাস এই প্রাগৈতিহাসিক অনুভূতিগুলি এখনো এই নিম্নশ্রেণীর প্রাণীদের মধ্যে রয়ে গেছে ।
লোকটা মাথা ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে গান গাইছে । একটা কুকুর করুণ চোখে লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে । যে জীবন রাস্তার কুকুরের সে জীবন কি লোকটি বইতে পারবে ? হয়ত এ ভাবনাই ভাবছে কুকুরটি
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৬:৫৯