somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধোঁয়া ধোঁয়া ভালোবাসা................ পর্ব- ২

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব- ১


ইকবাল খন্দকার সাহেবের অধিকাংশ সময় একাকী কাটে। উনারা তিন বোন, দুই ভাই। বড় বোন ও মেঝো বোনের পর তাঁর স্থান, এরপর ছোট ভাই ও ছোট বোন। ভাই-বোনদের মধ্যে মেঝো বোন রাবেয়ার সাথেই তাঁর সবচেয়ে বেশী ভাব ছিল। তাদের মাঝে বয়সের ভেদাভেদ ছিল তিন বছরের।
ইকবাল সাহেবের ছোট ভাই ইফতেখার খন্দকার। তিনি গত বিশ বছর যাবৎ পরিবার নিয়ে অ্যামেরিকায় বাস করছেন। তিনি University of Texas এ রসায়নের প্রফেসর। এছাড়াও তিনি একজন কলামিস্ট। তিনি Harvard University থেকে PhD করে University of Texas এ শিক্ষকতা শুরু করেন।
ইকবাল সাহেবের ছোট বোন সুফিয়া নূর খন্দকার ময়মনসিংহে থাকেন। তাঁর স্বামী বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের Plant Pathology ডিপার্টমেন্টের একজন প্রফেসর। সুফিয়া একসময় বেশ নামকরা সাংবাদিক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় অনার্স এবং মাস্টার্স পাশ করে দৈনিক আজাদ, দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক ইত্তেফাক এ সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন।

বড় বোন আলেয়া অনেক আগেই মারা গেছেন। তার একমাত্র ছেলে অস্ট্রেলিয়াতে থাকে। ৮ বছর আগে ব্লাড ক্যান্সারে ভুগে আলেয়ার স্বামী মারা যায়।


বড় বোন আলেয়া আর মেঝো বোন রাবেয়ার মৃত্যুর পর ইকবাল সাহেব অনেকটা ভেঙে পড়েন। হঠাৎ করে তিনি খুব বেশী একা হয়ে যান। অন্য দুই ভাই, বোনের সাথে তাঁর যোগাযোগ হয় না বললেই চলে। কালে-ভাদ্রে হয়তো বছরে দু এক বার টেলিফোনে কথা হয়।

ইকবাল সাহেব স্ত্রীর ভালোবাসাও খুব বেশী দিন পাননি। বিয়ের ৬ বছর পর একটা রোড এক্সিডেন্টে তাঁর স্ত্রী গুলবাহার খাতুন মারা যান।

একাকী থাকতে থাকতে এখন অনেকটা পাল্টে গেছেন তিনি। বাইরের মানুষের সাথে এখন আর আগের মত মিশতে ইচ্ছা করে না। আগে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন, তাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন, তারাও আসতো। এখন যোগাযোগ অনেকটা কমিয়ে দিয়েছেন, নেই বললেই চলে। তিনি সারাক্ষন নিজের মধ্যেই থাকেন।
একমাত্র মেয়ে তিতলীর সাথেও তাঁর তেমন একটা কথাবার্তা হয় না। আসলে বলার মতো তেমন কিছু খুঁজেও পান না। আর মেয়েটাও কেমন যেন চুপচাপ হয়ে থাকে।

ঘরে ভালো না লাগলে তিনি ছাদে অথবা বাগানে পায়চারি করেন। মাঝে মাঝে মেঝো বোনের কবরের পাশে গিয়ে নিরবে অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকেন।
তিনতলার ভাড়াটিয়ার দুটো বাচ্চা প্রায়ই বিকাল বেলা বাগানে খেলতে আসে। তাদের খেলা দেখতে তাঁর ভীষন ভালো লাগে। মাঝে মাঝে বাচ্চাগুলোর সাথে তিনি একটু আকটু গল্প করেন। বাচ্চাগুলো যখন তাঁকে "নানাভাই" বলে ডাকে, তখন তাঁর বেশ ভালো লাগে।


আগে প্রায় প্রতি রাতেই তিনি মেঝো বোন কে স্বপ্নে দেখতেন। মাঝখানে বহুদিন তাঁকে আর স্বপ্নে দেখেননি। কয়েকদিন আগে ভোররাতে হঠাৎ করে তাঁকে স্বপ্নে দেখলেন.................
> রাবু আপা তুমি...........
> কেন রে, আমাকে চিনতে পারছিস না ইকবাল?
> কি যে বলো আপা, আমি কি তোমাকে ভুলতে পারি..........
> শোন তোকে একটা জরুরী কথা বলতে এসেছি। মেয়েটার যে দিন দিন বয়স বাড়ছে এটা কি তোর চোখে পড়ে না? মেয়েকে তো বিয়ে দেবার সময় হয়েছে।
> কি যে আবোল-তাবোল বলো! আমার এইটুকুন ছোট্ট মেয়ে, তাকে কি এখনি বিয়ে দিবো নাকি...!?! তাছাড়া জুলেখার পড়ালেখাও তো শেষ হয় নাই।
> তোর মেয়ে এখন আর সেই ছোট্ট খুকিটি নেই। আর কয়দিন পর তো তোর মেয়ে গ্র্যাজুয়েট হবে। আর আজকাল ভালো ছেলেও পাওয়া যায় না। বিয়ে হলে তো আর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে না।
> দেখি জুলেখাকে জিজ্ঞেস করে। আমার মা মরা মেয়েটার ওপর তো আর জোর করে কিছু চাপিয়ে দিতে পারি না............
> দেখ ভাই তোরও তো বয়স কম হলো না। আল্লা না করুক, যদি একটা কিছু হয়ে যায়। তাই সুস্থ থাকতে থাকতে মেয়ের বিয়ের ব্যাপারটা সেরে ফেল।
> দেখি কি করা যায়......
> আর শোন, মেয়ের বিয়ে কিন্তু বেশ ধুমধাম করে দিবি। আমোদ-ফূর্তি, দাওয়াত-পানির যেন কোন কমতি না হয়।
> ইনশাআল্লাহ্। আল্লার ইচ্ছা থাকলে খুব ভালো ভাবেই আমার মেয়ের বিয়ে হবে।



(চলবে......)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:০৩
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×