somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধোঁয়া ধোঁয়া ভালোবাসা.......... পর্ব- ১

০২ রা নভেম্বর, ২০১২ রাত ১০:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সারাটা রাত একটুও ঘুমুতে পারেনি তিতলি। বিছানায় শুয়ে শুয়ে শুধু এপাশ-ওপাশ করেছে আর মাঝে মাঝে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেছে কটা বাজে। মাথার উপর সিলিং ফ্যানটা অবিরাম ঘট ঘট করে ঘুরছিল.....................

শুয়ে শুয়ে অনেক কিছুই ভাবছিলো সে। মাঝে মাঝে নিজের সাথে, মাঝে মাঝে অন্যদের সাথে চোখ বন্ধ করে কথা বলছিলো।

হঠাৎ রাত সাড়ে ৩টার সময় কফি খেতে খুব ইচ্ছে হলো। রান্নাঘরে গিয়ে দারুন এক মগ কফি বানালো, বেশ খুশবু ছড়িয়েছে। কয়েকদিন আগে ছোটমামা ব্রাজিল থেকে বেশ বড় এক কৌটা কফি বিন এনেছে। ছোটমামার আবার ঘোরাঘুরি করার খুব শখ। হঠাৎ হঠাৎ উধাও হয়ে যায়..............


কফির মগ হাতে নিয়ে সে ড্রয়ইরুমের সোফায় গিয়ে বসলো। হঠাৎ মনে হলো মেঝো ফুপু তার সামনে বসে আছে। তিতলির মেঝো ফুপু মারা গেছে ৪ বছর আগে। তবে মেঝো ফুপুর সাথে তার প্রায়ই দেখা হয়।
> ফুপু ওখানে বসে আছো কেন? আমার পাশে এসে বসো।
> তোকে দেখতে খুব ভালো লাগছে।
> কি যে আবোল-তাবোল কথা বলো!!! আমার কি দিন দিন রুপ বারছে নাকি!!!
> রুপ বাড়বে না তো কি....!!! এই বয়সেই তো মেয়েদের রুপ বাড়ে। কদিন পর তোকে বিয়ে দিতে হবে না........
> বাজে কথা বলো না তো ফুপু। মাথাটা ভীষন ধরেছে, পাশে বসে একটু মাথায় বিলি দিয়ে দাও.................





ভোরবেলা তিতলি বারান্দায় বেতের চেয়ারে বসে ছিল। তাদের বাড়িটা তিনতলা, অনেকটা পুরনো আমলের। তিতলিরা দোতলায় থাকে। বাসার সামনে ও পেছনে বাগান রয়েছে। পেছনের অংশটাকে অবশ্য এখন আর বাগান বলা চলে না, ঐ জায়গাটা এখন ঝোঁপ-ঝাড়ে ভর্তি হয়ে গেছে। বাড়ির পেছনের ঐ জায়গাটায় মেঝো ফুপুর কবর আছে। ফুপু বিয়ে করেননি। দাদা মারা যাবার পর থেকে তিনি তিতলিদের বাড়িতেই থাকতেন। ছোটবেলায় তিতলির মা মারা যাবার পর থেকে তিনিই তিতলিকে আদর, স্নেহ দিয়ে দেখাশোনা করে রাখতেন। ফুপুর মৃত্যুর পর তার শেষ ইচ্ছানুযায়ী তাকে বাড়ির পেছনে কবর দেয়া হয়। প্রত্যেক শুক্রবারে জুম্মার নামাজের পর তিতলির বাবা ফুপুর কবরের পাশে মাদুর বিছিয়ে বসে অনেকক্ষন দোয়া-দুরুদ পড়েন।


তিতলি বারান্দাতে অনেকক্ষন যাবৎ বসে ছিল। হঠাৎ পেছন থেকে বাবার কন্ঠস্বর পাওয়া গেল, "মা জুলেখা এই ভোর সকালে বারান্দায় কি করিস মা?"
বাবা তাকে সবসময় জুলেখা বলে ডাকে। এই নামটা তার একদমই ভালো লাগে না, তবে সেটা সে বাবাকে বুঝতে দেয় না।
> এমনি বসে আছি বাবা। তোমার কিছু লাগবে?
> দুকাপ চা বানিয়ে আন তো মা। চা খেতে খেতে তোর সাথে একটু গল্প করি। ভোরবেলা চা খেতে খেতে গল্প করার মজাই আলাদা।
> আচ্ছা আনছি।


তিতলির বাবা ইকবাল খন্দকার বেশ সহজ-সরল একজন শান্তিপ্রিয় মানুষ। একসময় তিনি ঢাকা ইউনিভার্সিটির পরিসংখ্যান বিভাগের একজন নামকরা প্রফেসর ছিলেন। এখন রিটায়ারমেন্টে আছেন। এখন তিনি বেশীরভাগ সময় বাড়িতেই থাকেন আর পৈতৃক ব্যবসা দেখাশোনা করেন। পেনশন, ব্যবসার লাভ আর বাড়ি ভাড়ার টাকা দিয়ে সংসার বেশ ভালোভাবেই চালিয়ে নিচ্ছেন।


তিতলি ট্রেতে সুন্দর করে দুকাপ চা আর কিছু সল্টেড বিস্কিট সাজিয়ে নিয়ে বারান্দায় গেল।
ট্রেটা ছোট্ট টি-টেবিলটা তে রেখে বাবার পাশের চেয়ারটাতে বসলো।
> তা তোর পড়াশোনার কি অবস্থা মা?
> এইতো বাবা ভালোই। সামনের মাসে মিডটার্ম।
> তোর গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট হতে আর কদ্দিন লাগবে?
> আর প্রায় দের বছরের মতো। গতবছর ইউনিভার্সিটিতে গন্ডগোল হওয়াতে সেশন জটে পড়ে গেছি।
> তোর মেঝোফুপুর খুব ইচ্ছে ছিল ধুমধাম করে তোর বিয়ে দেবে। তার খুব শখ ছিল তোর বিয়ে দেখে যাবার।
> বাবা থাক না সেসব কথা.............
> মা গো, আমার তো অনেক বয়স হয়েছে। মানুষের হায়াত-মওত এর কথা তো বলা যায় না। আমি চাচ্ছি তোর বিয়ের ব্যাপারটা সেরে ফেলতে। আজকাল তো ভালো ছেলেও পাওয়া যায় না। তোর কোন পছন্দ থাকলে বলতে পারিস।
> বাবা আমি এখন এসব নিয়ে ভাবছি না। আমি আমার ক্যারিয়ারের ব্যাপারে ভীষন সিরিয়াস। আর বিয়ে-শাদি কোন ছেলে খেলা নয়।


সকাল সাড়ে ৭টায় রেডি হয়ে তিতলি বাসা থেকে বের হলো ইউনিভার্সিটিতে যাবার জন্য। আজকে ড্রাইভার আসেনি, তাই রিক্সায় করেই সে রওনা দিলো। সে ফার্মাসীতে পড়ছে। সাড়ে ৮টায় বেশ ইমপরটেন্ট একটা ক্লাস আছে।

২০ মিনিটের মধ্যেই ভার্সিটিতে চলে গেলো সে। ক্লাস শুরু হতে এখনো অনেক দেরি। তাই সে হাঁটতে হাঁটতে টি.এস.সি. পর্যন্ত চলে এলো। ডাসে বসে বসে চা খেতে লাগলো আর ভোরবেলা বাবার বলা সেই কথা গুলো ভাবতে থাকলো।



তিতলির যে পছন্দের কেউ নেই তা কিন্তু না। সে আট বছর ধরে একজনকে খুঁজছে। ক্লাস এইটের পর থেকে তার সাথে আর দেখা হয়নি। সেই ছেলেটার নাম বর্ষন। বর্ষন আর তিতলি একই স্কুলে পড়তো। বেশ ভালো বন্ধুও ছিল তারা। ক্লাস নাইনে ওঠার পর বর্ষন অন্য স্কুলে চলে যায়। সেই থেকে তাদের আর যোগাযোগ নেই। তিতলি অনেক আগে থেকেই বর্ষনকে পছন্দ করতো, কিন্তু কখনো বলেনি।



(চলবে.......)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:১৬
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×