somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যাপিত জীবন

২২ শে মে, ২০১৭ ভোর ৪:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১।
অন্তু চোখ মেলতেই দেখলো মিথ্যাময়ী তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সে ধড়ফড় করে উঠে পড়লো।
- তুমি এখানে?
-হ্যা, আমি এখানে!
- কিভাবে আসলে?
- এটা কোনো প্রশ্ন হলো অন্তু? প্রশ্নটা হওয়ার দরকার ছিলো 'তুমি কেনো আসলে?' অথবা 'তুমি হঠাত কি মনে করে?'
- তুমি হঠাত কি মনে করে?
- আমি হঠাত আসিনি। আমি গত পরশুও তোমার মেসে এসে খোঁজ করে গেছি। তুমি গত তিনদিন ধরে মেসে আসনি।
- দিনাজপুর গিয়েছিলাম। ওখানে নাকি একট গণেশ পাওয়া গেছে মাটি খুঁড়ে।
- আমি তোমার কাছে ব্যাখ্যা চাইতে আসিনি।
- কেনো এসেছ? কোন দরকার?
- হ্যা , দরকার। সিনেপ্লেক্সে নতুন একটা মুভি এসেছে। একা দেখতে ইচ্ছে করছেনা।তাই তোমাকে খুজছি।
- আমার মুভি দেখতে ভালো লাগে না।
- আচ্ছা , দেখতে হবে না। এখন যাও ফ্রেশ হও। তোমাকে নিয়ে আজ সারাদিন রিকশায় ঘুরবো।
- আমার রিকশায় ঘুরতেও ইচ্ছে করছে না।
- আচ্ছা , ঘুরতেও হবে না। চল কোথাও থেকে কিছু খেয়ে আসি। আমার সাথে গাড়ি আছে। খাবে, তারপর চলে আসবে।
- সেটা করা যেতে পারে। কাল রাত থেকে কিছু খাওয়া হয়নি।আমার কাছে কিন্তু টাকা নেই।
- জানি। আমার কাছে আছে।
- হুদাই তুমি কেন খাওয়াবে?
- হা হা হা। সেটা যদি তোমাকে বুঝাতে পারতাম! যাই হোক, তোমাকে ফ্রি খেতে হবেনা।বিনিময়ে তুমি আমাকে কবিতা শোনাবে। প্রতিটা কবিটার জন্য একশো টাকা। যতশো বিল হবে ততোটা কবিতা শুনাবে ঠিক আছে?
- এটা চলতে পারে। দাড়াও আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। আর শোন, আমি মত বদলেছি। আমরা খাবো, ছবিও দেখবো এবং ঘুরবো। তুমি তোমার গাড়ি পাঠিয়ে দাও।

মিথ্যাময়ী কিছু বললো না। তার এই মূহুর্তে পৃথিবীর সুখী মানুষের একজন মনে হচ্ছে! সে খেয়াল করলো তার চোখে প্রায় জল চলে এসেছে।সে নিজেকে সামলে নিলো।

২।
অন্তু আর মিথ্যাময়ী একটা অন্ধকার রুমে বসে আছে। তাদের সামনে জায়ান্ট স্ক্রিনে মুভি চলছে। অন্তু সেদিকে তাকিয়ে আর মিথ্যাময়ী অন্তুর দিকে। সে আলতো করে নিজের বাহু দিয়ে অন্তুর হাতটা চেপে ধরলো। অন্তু মনে হয় বিরক্ত হলো। হোক বিরক্ত। তার মনে হচ্ছে এই বাহু ছেড়ে দিলেই অন্তু আবার হারিয়ে যাবে। সে বাহুর চাপ বাড়িয়ে দিলো তবু তার মনে হতে লাগলো সে যথেষ্ট শক্ত করে ধরেনি।

৩।
সিনেপ্লেক্স থেকে বের হতেই মিথ্যাময়ীর সামনে একটি বাচ্চা মেয়ে দাড়ালো।
- আপা, একটা ফুল নেন না? মাত্র পাঁচ টাকা।
- ফুল লাগবে না।
- নেন না আপা। মাত্র তো পাঁচ টাকা।
- ফুল লাগবে না, আমি তোমাকে দশ টাকা দিচ্ছি। তুমি নিয়ে চলে যাও।
মিথ্যাময়ী ফুল লাগবে না বললে আসলে তার ইচ্ছে করছে ফুলটা খোপায় দিতে। আচ্ছা, অন্তু এমন কেনো? সে কি বলতে পারে না ফুলটা নিয়ে নিতে ?

- মিথ্যাময়ী শোন।
- বলো।
- তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমিটা ফুল নিতে চাচ্ছ কিন্তু আমার জন্য নিতে পারছো না।
- আমি ফুল নিবো কেনো ? আমি ফুল দিয়ে কি করবো ?
- ফুল দিয়ে কি করবে সেটা ইম্পোর্টেন্ট না। নিতে ইচ্ছে করছে নিচ্ছো না কেন ?
- তুমি চাও আমি নিই?
- আমি কিছুই চাচ্ছি না । তবে আমার মনে হচ্ছে ফুলটা পেলে তোমার আনন্দ হবে। আমার মানুষের আনন্দ দেখতে ভালো লাগে। আচ্ছা, আমি যদি তোমাকে ফুল গিফট করি তাহলে নিশ্চয় তুমি নিবে?
-তুমি আমাকে ফুল গিফট করবে? এমনটা কখনো হয়নি!
- কখনো হয়নি তারমানে এই না যে হতে পারবে না। এই বাবু, আপুকে দুইটা ফুল দাও। দামটা আমিই দিচ্ছি।

মিথ্যাময়ী চুপচাপ হাত বাড়িয়ে ফুল দুইটা হাতে নিলো। সে কি বলবে ভেবে পেলোনা। সে আজ শুধু অবাকের পর অবাক হচ্ছে। আজ কি হলো? আজকে সে কার মুখ দেখে উঠেছে? সে যাই চাচ্ছে তাই হচ্ছে।তার মনে হতে লাগলো সে স্বপ্ন দেখছে।স্বপ্ন ছাড়া এতোগুলো ইচ্ছা একদিনে পূরণ হওয়ার কথা না।

- এই শোন, সিনেমা দেখে মাথা ধরেছে। চল চা খাই।
- কোথায় যাবে ?
- ঐ যে সামনের টং দোকানটা দেখছ চলো ওখানে যাই।
- তুমি আমাকে নিয়ে ওখানে যাবে?
- হ্যা। রেস্টুরেন্টে চা খেতে ভালো লাগেনা। চায়ের সাথে আমার সিগারেট খেতে হয়। রেস্টুরেন্টে সিগারেট খাওয়া যায় না।
- আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে চা খাবো ?
- আমার সাথে যেহেতু আছো,দাঁড়িয়েই খেতে হবে।
- ও আচ্ছা।
- চলো।

৪।
মিথ্যাময়ীর চা টা কেবলে অর্ধেক শেষ হয়েছে এমন সময়েই বৃষ্টি শুরু হলো। সে চায়ের বিলটা দিতে দিতেই অর্ধেক ভিজে গেলো। রাস্তা পার হয়ে ওপারে ছাউনিতে যেতে যেতে তারা পুরোপুরি ভিজে গেলো। অন্তু অনেক ধাক্কাধাক্কি করে তার জন্য একটু দাঁড়ানোর জায়গা বের করলো। সেখানে তারা বলতে গেলে একজনের উপর আরেকজন দাঁড়ালো।
আকাশ অন্ধকার হয়ে আছে। সন্ধ্যা নেমে যাচ্ছে। একটু পর ঝড় শুরু হলো মনে হলো। কালবৈশাখ। মিথ্যাময়ীর খারাপ লাগছে না। সে অন্তুর গা ঘেষে দাড়িয়ে আছে। তার মনে হচ্ছে ভয়ের কিছু নেই, তার পাশে অন্তু আছে। আচ্ছা, অন্তু যদি সারা জীবন তার পাশে এভাবে থাকতো কেমন হতো ? শপথ, সে এক জীবন এইভাবেই ঠায় দাঁড়িয়ে পার করে দিতে পারে যদি পাশে অন্তু থাকে ।
- মিথ্যাময়ী তোমার বাসায় ফেরা দরকার। এই বৃষ্টি থামবে বলে মনে হয়না।
- কিভাবে যাবো ? আশেপাশে তো কিচ্ছু নেই।
- একঘন্টা তো হয়ে গেলো। আর অপেক্ষা করা ঠিক হবেনা। দাড়াও দেখি একটা রিকশা পাই কিনা!

৫।
একটা রিকশা পাওয়া গেলো। মিথ্যাময়ী রিকশায় উঠলো। সে ভাবলো সে উঠার পরেই অন্তু উঠবে। কিন্তু এমনটা হলো না। অন্তু রিক্শায় উঠলো না।
- তুমি যাবে না?
- না। যেতে পারবে না?
- পারবো। ড্রাইভার যান।

রিকশা ছেড়ে দিয়েছে। মিথ্যাময়ীর চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে '' অন্তু, আমার ভয় করছে।আমি অন্ধকার ভয় পাই। আমি একা যেতে পারবো না। তুমি প্লিজ আমাকে একটূ দিয়ে এসো। প্লিজ। আমি শুধু তোমার হাতটা একটু ধরে থাকবো। প্লিজ অন্তু তুমি এসো। একবার এসো।''




৬।
অন্ধকার ভেদ করে একটা রিকশা এগিয়ে চলছে। সেই রিকশায় একজন মিথ্যাময়ী বসে আছে। তার হাতে দুটি গোলাপ। সে শক্ত করে সেগুলো ধরে আছে। বৃষ্টির তীব্রতায় সে কাঁদছে কিনা বুঝা যাচ্ছে না।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৭ ভোর ৪:২৪
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×