somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্লীলতাহানির খবরটি আসেনি আলো, কণ্ঠ ও সমকালে

০৫ ই জুলাই, ২০১১ রাত ৮:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাকিব ফারহান


সিলেটের দীর্ঘ সীমান্তে বাংলাদেশি জমি অন্যায়ভাবে বাংলাদেশ ভারত মিলে ভারতকে বুঝিয়ে দেয়ার বিষয়টি রুখে দিয়েছে সীমান্তের জনগণ। এক্ষেত্রে জনগণকে নিঃসন্দেহে শক্তি যুগিয়েছে দুতিনটি সংবাদমাধ্যম। সমকাল, কালের কণ্ঠ, প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ও ইত্তেফাকের মতো প্রথম সারির পত্রিকাগুলো যখন সীমান্তে বাংলাদেশিদের জমি ভারতকে বুঝিয়ে দেওয়ার যৌথ অপচেষ্টাকে খবর মনে করছিল না; আমার দেশ, নয়া দিগন্ত এবং সংগ্রামও যদি একই মনোভাব পোষণ করতো তাহলে অনেক জমিই একতরফা বেহাত হতো। সেখানে অন্যায়ভাবে বাংলাদেশি জমি বুঝিয়ে দেয়ার বিপক্ষে একটি সচেতনতা তৈরি হয়েছে যা সমগ্র সিলেট সীমান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। আর কাজটি করেছে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। এটা কি জাতির জন্য ক্ষতিকর হলো!

২ জুলাই শনিবার ‘ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করলেন ভিকারুন্নিসা স্কুলের শিক্ষক’ শিরোণামে নয়া দিগন্তের প্রথম পাতায় একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। বিস্তারিত বিবরণে লেখা হয়েছে, ভিকারুন্নিসা বসুন্ধরা শাখার বাংলার এক শিক্ষক জোরপুর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন ও সে দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করে ব্লাকমেইল করেছে দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে।

মোবাইলে ধারণকৃত ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে মেয়েটিকে শিক্ষক পরিমল জয়ধর দুইবার শিকারে পরিণত করে। ব্লাকমেইলের এ অপচেষ্টা অব্যাহত রাখতে চাইলে মেয়েটি সহপাঠি ও অভিভাবকদের ঘটনা খুলে বলে। অভিভাবকরা ঘটনাটি দায়িত্বশীল শিক্ষককে জানায়।

পরিমল জয়ধর একটি বাসাভাড়া নিয়ে কোচিং করায়। ঘটনার শিকার মেয়েটি তার কাছে কোচিং করতো। একদিন ব্যাচের সব শিক্ষার্থীকে জানিয়ে দেয় পরদিন পড়াবে না। তারা কেউ যেন পড়তে না আসে। ভুক্তভোগি মেয়েটিকে পরে ফোন করে জানায় সে যেনো পরদিন পড়তে আসে। কোচিংয়ে গিয়ে দশম শ্রেণীর ছাত্রীটি দেখত পায় ব্যাচের অন্য কেউ নেই। রুমের ঢোকার পর পরিমল দরজা বন্ধ করে তার ওপর বর্বরতা চালায়। তাকে জানানো হয় এ অপকর্মটি মোবাইলে ধারণ করা হয়েছে। পরিমল তাকে জানিয়ে দেয় কথা মতো না চললে এটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া হবে।

ঘটনাটি মে মাসের প্রথম দিকের। শনিবার প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অভিভাবকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে পরিমলকে প্রশ্রয় দেয়ার। সেদিন পর্যন্ত অধ্যক্ষ বসুন্ধরা শাখায় যাননি। এ ঘটনার আগেও পরিমলের বিরুদ্ধে অন্যান্য শিক্ষকরা অভিযোগ করলে অধ্যক্ষ অভিযোগকারি শিক্ষকদের তিরস্কার করে বলেন, ‘আপনারা বেশি কনজারভেটিভ!’

পরিমলের ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর একই শাখার আরেক শিক্ষক বরুন চন্দ্র বর্মনের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের সাথে অশালীন আচরণের অভিযোগ ওঠে। এক পর্যায়ে পরিমল ও বরুন দুই জনের ক্লাস বর্জন করে শিক্ষার্থীরা। তারা দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এসব অনাচারের কথা সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশ করে হুমকি দেওয়ার পর পরিমল একদল বিক্ষুদ্ধ অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বলেছে, ‘তোমরা আমার কলা করবা!’

উল্লেখ্য ভিকারুন্নিসার অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগম দায়িত্ব নেয়ার পর ছয়জন পুরুষ শিক্ষক নিয়োগ পান। এরা হলেন পরিমল জয়ধর, বরুণচন্দ্র বর্মন, বাবুল কর্মকার, প্রণব ঘোষ, বিশ্বজিৎ ও বিঞ্চু চন্দ্র। তাদের তিনজন অবিবাহিত। ভিকারুন্নিসা একটি বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ। শিক্ষকদের প্রায় ৯৯ ভাগ মহিলা। সাধারণত একটি শাখায় দুই তিন জনের বেশি পুরুষ শিক্ষক থাকে না। সেখানে একসাথে ছয়জন পুরুষ শিক্ষক নিয়োগ দেয়ায় বিস্ময়ের সৃস্টি হয়েছে। (অবশ্য সব শিক্ষক কাকতালীয়ভাবে! হিন্দু হওয়ায় পত্রিকাটি এ নিয়ে সাম্প্রদায়িকতা প্রশ্ন তোলেনি।)

পত্রিকাটি পরিমলের ব্যাপারে আরো বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছে। পরিমল চলমান বিসিএস পরীক্ষায় অ্যাডমিন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগের অপেক্ষায় রয়েছে। ক্যাডার সার্ভিসে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ছাত্রলীগের ৯৫ জনের একটি তালিকা প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদনের যে অভিযোগ রয়েছে পরিমল সে তালিতকারই একজন।

অলিখিত নিয়ম রয়েছে নতুন শিক্ষক নিয়োগের দুই বছরের মধ্যে প্রকাশ্যে তিনি কোচিং বা প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না। ছয়জন শিক্ষক নিয়োগের পর স্বয়ং অধ্যক্ষের কাছ থেকে নির্দেশ আসে তাদের জন্য সব ধরনের সুযোগ উন্মুক্ত করে দিতে হবে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সিনিয়র শিক্ষকদের হটিয়ে উপরের দিকের গুরুত্বপর্ণ ক্লাস তাদের জন্য বরাদ্দকরণ। বিনা বাক্য ব্যয়ে এসব শিক্ষকরা মেনে নিয়েছেন।

প্রথম আলো দেশের প্রধান পত্রিকা। তারা জাতীয় স্বার্থ সংক্রান্ত বিষয়গুলো আগবাড়িয়ে গিয়ে অনুসন্ধানি প্রতিবেদন দেয়। বিশ্লেষণ ব্যাখ্যার মাধ্যমে ঘটনার সরল উপস্থাপন করে। মন্তব্য প্রতিবেদনের মাধ্যমে কল্যাণের পক্ষে জনমতকে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে দুর্নীতি ও সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। পরিবেশ প্রাণ নিয়ে বুড়িগঙ্গা নিয়ে পত্রিকাটির অসাধারণ ভূমিকা মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। সর্বশেষ মুন্সিগঞ্জে বিমানবন্দর নির্মাণের ভুল সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পত্রিকাটি দারুণভাবে জনগণের পক্ষে দাঁড়ায়। একই ধরনের ভূমিকা পালন করতে দেখেছি ডেইলি স্টার ও সমকালকেও।

কিন্তু লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে এ পত্রিকাগুলো কিছু কিছু ক্ষেত্রে সত্যটি প্রকাশের ক্ষেত্রে একেবারেই উৎসাহ পায় না। ভিকারুন্নিসার ঘটনাটি রহস্যাবৃত। এটা নিয়ে অনুসন্ধানি প্রতিবেদন হতে পারে। ধরে নিলাম খবরটি প্রথম আলো পায়নি। কিন্তু নয়া দিগন্তে এটি ফলাও করে প্রকাশের পর তারা এটি নিয়ে জনস্বার্থে একটি ইনডেপথ রিপোর্ট করতে পারতো। সেখানে উঠে আসতে পারতো কেনো একসাথে ছয়জন তরুণ পুরুষ নিয়োগ দেয়া হলো, কাকতালীয়ভাবে কেনো তারা সবাই একই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের (ফেয়ার সিলেকশনের মধ্যে দিয়ে হলে কর্তৃপক্ষের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়তো), অধ্যক্ষ কেনো এই তরুণ শিক্ষকদের অধিকতর সুযোগ সুবিধা দেয়ার জন্য জোর তদবির করলেন। পুরো খবরটি চেপে গিয়েছে পত্রিকাটি। তাদের দৃষ্টিতে হয়তো এটি সংবাদ নয়। একই সাথে দেখা গেল অন্যান্য বেশিরভাগ পত্রিকা যারা ভারত প্রশ্নে রহস্যময় নিরবতা পালন করে তারাও এ বিষয়টি চুপ করে রইল। বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থী অভিভাবকরা এ ধরনের খবর নিয়ে নয়া দিগন্ত, আমার দেশের মতো পত্রিকার দিকে দৌড়াবে। কারণ তাদের জন্য যে দরজা বন্ধ হয়ে গেছে প্রথম শ্রেণীর প্রায় সব পত্রিকার জন্য। কেউ একজন প্রশ্ন তুলতে পারেন এসব ঘটনার প্রকাশ করার মাধ্যমে নয়া দিগন্ত তার কনজারভেটিভনেস সো করছে! যেমনটি ভিকারুন্নিসার অধ্যক্ষ ধমকের সুরে বসুন্ধরার শিক্ষকদের বলেছিলেন, আপনারা এতো কনজারভেটিভ কেনো? শিক্ষকরা একটু আধটু খুনসুটি করলে কি হয়? বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর বেশিরভাগ পত্রিকাও কি জোরপুর্বক অনাচারের ঘটনাটিকে সেভাবে দেখে?
৮টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×