মোগলাই পরোটার কথা এলে আমার শুধু গুড়পুকুরের বাজারের কথা মনে পড়ে। তখন আমি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ি। আবছা মনে আছে সেইসব স্মৃতি। বছরে সম্ভবত বৈশাখ মাসে সাতক্ষীরা শহরে গুড় পুকুরের মেলা হতো। আমরা বলতাম গুলপুকুরের বাজার। সেখানে গেলে মোগলাই পরেটা খাওয়া যেত যার এক একটার দাম ৫ টাকা করে। ঐ মেলায় কাচের রকেট পাওয়া যেত, কাচের চোঙের ভেতর রঙিন জরির পানি আর একটি রকেট, কাত করলেই সাঁ করে উপরে উঠে যেত।
কাঠের একরকম ময়ুর বা মোরগের শব্দ করা খেলনা হতো, লাঠির মতো ধরে চালালেই ক্যাচ ক্যাচ করে শব্দ হতো। মাঠির সাদা গোফ দাড়ির ( এখন মনে হয় তা ছিল সান্টাক্রজ) পাওয়া যেত, তার মাথা ঝাকি দিলে ঘাড়ের স্প্রীং এ মাথা দোল খেত। আড় বাশি পাওয়া যেত, কত রকম সস্তার খেলনা সব…
কিন্তু আমার সেই শৈশবের স্বপ্নময় সময়গুলো যেন পুরোটা টিনের বাক্সের ভেতর এসব সাদামাটা খেলনা আর মোগলাই পরোটার সাথে নেপথালিনের ভাজে শীত পোহাচ্ছে!
তখন সাতক্ষীরায় আসার একমাত্র বাহন ছিল বড় বড় যশোরের বাস। ভাড়া আমার ভুল না হলে ৪ টাকা করে ছিল। বাসে সামনে লেখা থাকতো সাবধান হাওয়া ব্রেক। ঝাউডাংগা বাস স্ট্যান্ড আর চেক পোষ্টে বাস থামতো। কন্ট্রাকটারের গলায় ঝুলতো চামড়ার ছোট ব্যাগ, হাতের আঙুলের ফাকে টাকা কায়দা করে ভাজ করা, টিকিটের দারুন ব্যান্ডিলটির প্রতি আমার খুব লোভ হতো, যদি সবগুলো টিকিট আমি পেতাম!
সাতক্ষীরার গুড়পুকুরের মেলায় আমি ছোটবেলায় কয়েকবার গিয়েছি, লাবনী সিনেমা হলের সামনের রাস্তার পাশের লাল নীল আলো আর মানুষের জমজমাট কোলাহলের ছবি শুধু মনে আছে। আর সব কালের ধুলোয় ঝাপসা হয়ে গিয়েছে।
তবে এর পাশাপাশি ঝাউডাংগার মন্দিরের পাশে যে মেলা বসতো তার কথা বেশ মনে আছে। পাপড় ভাজা, গরম গরম পেয়াজু আর আলুর চপ, মাটির হাড়িকুড়ি, পুতুল এসবের জন্য বিখ্যাত ছিল এই মেলাটি। আমরা কাঠের পুল পার হলেই ভাঙা মন্দির চত্বরে এই মেলা দেখতাম।
সময় বদলে গিয়েছে। জীবন যাপন এখন অন্যরকম। মানুষের রুচিবোধ সময়ের সাথে সাথে জীবনধারণের প্রয়োজনে পাল্টাচ্ছে। আর আমরা যত বয়স্ক হচ্ছি ততই তীব্র হচ্ছে আমার স্মৃতির ঝাঝালো নষ্টালজিক দহন। বারবার মন শৈশব কৈশোরে হাতড়ে খুজে ফিরছে ভাবনাহীন সেই মাটির গরুর গাড়ী, মোগলাই পরোটা কিংবা তল্লা বাঁশের আড়বাশী……